বাংলার নারী ও শাড়ি যেন একে অন্যের সাথে জড়িয়ে রয়েছে হাজার বছর ধরে। একজন বঙ্গললনার ছবি সে এক অতি সাধারণ মানুষের ভাবনা থেকে শুরু করে বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকের কল্পনাতে আসলেও সে শাড়ি পরেই আসে। এই শাড়ি কিংবা বারো/তেরো হাতের একটি বস্ত্রখন্ড ঘিরে রয়েছে একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি। বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে অঞ্চলভিত্তিক নানা রকম শাড়ি তৈরী হয়। এই শাড়ি তৈরীর কারিগরেরা তাদের সবটুকু শ্রম, সাধ্য, শিল্পমনস্কতা ও ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তোলেন এক একটি শাড়ি। সেই শাড়ি এক একটি বাঙ্গালী রমনীর জীবনে নানা ক্ষনে নানা পালা পার্বণ ও উৎসবে জড়িয়ে থাকে এক একটি ভালোবাসা, ভালোলাগা, প্রেম উপহার অথবা অতি সাধারণ কোনো ইতিহাস হয়ে।
ঢাকাই মসলিন
আমাদের দেশের বস্ত্রশিল্পের ইতিহাস বড়ই সমৃদ্ধ। ঢাকাই মসলিন বা আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই সোনালী ইতিহাসের কথা সকলেরই জানা। এই মসলিন শাড়ি নাকি এতই সুক্ষ আর পেলব কোমল সুতোয় বোনা হত যে, তা ভাঁজ করলে বিশাল ১৩ হাত শাড়ীটাও ঠিকঠাক ভরে ফেলা যেত একটি ছোট্ট দিয়াশলাই বাক্সে। ভালো সুতোর মসলিন শাড়ী তো একটা ছোট আংটির মধ্যে দিয়েও ঢুকিয়ে নেওয়া যেত ঈসা খাঁ এর আমলে! এমনই নানা রকম কিংবদন্তী ছড়িয়ে আছে ঢাকাই মসলিন নিয়ে। মসলিন নিয়ে গল্প-গাঁথা আর কিংবদন্তীর কোনো শেষ নেই । এছাড়াও শোনা যায় মসলিন কারিগর যাতে তার শিক্ষা আর কাউকে না শিখিয়ে দিতে পারে তার জন্য নাকি তাদের আঙুল কেটে ফেলা হত। এসব কতটুকু সত্যি আর কতটুকু মিথ্যা তার কোনো হদিস প্রমান অবশ্য পাওয়া যায়না তবে যুগে যুগে এসব গল্পই প্রচলিত হয়ে আসছে মসলিন শাড়ি নিয়ে।
মসুল বা মসলিনের ইতিহাস
মসলিনের নামারকণের কারন নাকি মসুল নামক ইরাকের এক ব্যবসা কেন্দ্র। সেই আমলে ইরাকের প্রখ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র মসূলে তৈরি হত সূক্ষ্ম সব কাপড় আর তাই ইংরেজরাই আমাদের এই সূক্ষ্ম কাপড়ের নাম দিয়েছিলেন মসলিন। মুঘল আমলে সতেরো শতকে মসলিন শিল্প বিকাশ লাভ করেছিল ঢাকার সোনারগাঁ আর তার আশেপাশের অঞ্চলগুলোয়। বিস্ময়কর সৌন্দর্য্যের এই সুক্ষ কাপড় মসলিন রপ্তানি হতো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। মসলিন কাপড় বুনতে সাধারনত মেয়েরাই সুতা কাঁটা আর সূক্ষ্ম সুতা তোলার কাজগুলো করতো। সুতা তোলার সময় কম তাপ এবং আর্দ্রতার দরকার হতো। তাই একেবারে ভোর বেলা আর বিকালের পরে এ কাজ করা হতো। অবাক করা ব্যাপার শোনা যায় আর্দ্রতার খোঁজে নাকি অনেক সময় এমনকি নদীতে নৌকার ওপর বসে সুতা কাটার কাজ চলত। মসলিন তৈরি নিয়ে আরও একটি গল্প প্রচলিত আছে যে মেয়েদের বয়স ২০ পেরিয়ে গেলেই তাদেরকে দিয়ে নাকি মসলিন কাপড় বানানো হত না। মসলিন কাপড় বোনার জন্য চাই কোমল পেলব হাত। ২০ বছরের পরের বয়সী মেয়েদের হাতে নাকি সেই পেলবতা পাওয়া যায়না। আর তা ছাড়াও মসলিনে সূক্ষ্ম সুতা কাটার জন্য তরুণী মেয়েদের ব্যবহার করার আরেকটি কারণ তাদের তরুন দৃষ্টিশক্তি ও হাতের সাহায্যে যে সূক্ষ্মতা অনুভূত হয় তা মসলিন তৈরীর জন্য বিশেষ জরুরী। বয়স বাড়লে সেই অনুভূতিগুলো নাকি নষ্ট হয়ে যায় এমনি ধারনা ছিলো তখনকার মসলিন কারিগরদের। যাইহোক মসলিন তৈরির কাজটি ছিল ভীষন জটিল, কঠিন, সময়সাধ্য আর তারচাইতেও বড় কথা, সেটা তৈরির জন্য দরকার হতো অসামান্য নৈপুণ্য আর পরম ধৈর্য।
মসলিন তৈরি করার জন্য দরকার হতো বিশেষ ধরনের তুলা বা কার্পাস। এই কার্পাস জন্মাতো মেঘনা নদীর তীরে। আরও একটি মজার ইতিহাস কাপাসিয়া জায়গাটির নামটাও নাকি এসেছে এই কার্পাস তুলা হতেই। মুঘল আমলে ঢাকা যখন রাজধানী হয় তখন থেকেই এই মসলিনের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে নানাদিকে । সম্রাট নবাবদের কাছে এই মসলিন কাপড়ের কদর ছিলো অনেক বেশী। সে যুগে মসলিন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল ঢাকা, ধামরাই, সোনারগাঁ, টিটবাদি, জঙ্গলবাড়ি আর বাজিতপুর। জঙ্গলবাড়ি থেকে কিছু দূরে বাজিতপুরে জন্মাতো উচুঁমানের কার্পাস আর তাই থেকে তৈরি হতো সেই জগৎ বিখ্যাত মসলিন। জানা যায় ঢাকাতে সাতশ' ঘরের বেশি ছিলো এই মসলিন কারিগর।মসলিন কাপড় ধোয়াটাও নাকি এক বিশেষ যত্নের ব্যাপার ছিলো। সম্রাট আকবর এর আমালে সোনারগাঁ'র কাছে এগোরো সিন্ধুর পানি কাপড় ধোয়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। আসলে এটা যে শুধু পানির গুনে হতো তা নয়, এর সাথে ছিল ভাল ক্ষার বা সাবান আর ধোপার দক্ষতা।
মসলিন নিয়ে আরও কিছু বিস্ময়
১৮৫১ সালে লন্ডনে এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে এই মসলিনের এক পাউন্ড সুতার দৈর্ঘ্য নাকি প্রায় আড়াইশো মাইল ছিল ! মসলিন সম্বন্ধে, "মর্নিং ক্রনিকল" পত্রিকায় লেখা হয়- হাবিবুল্লাহ তাঁতির বোনা দশ গজ লম্বা একখন্ড মসলিনের ওজন ছিলো মাত্র তিন আউন্স ! 'India of Ancient and Middle Age' বইটিতে পাওয়া যায়, ঘাসের ওপর বিছানো একটি সুদীর্ঘ মসলিন শাড়ি একটি গরু খেয়ে ফেলেছিল। এর কারণ ছিলো কাপড়টির স্বচ্ছতা ! অবশ্য মহামূল্যবান এই শাড়িটি খেয়ে ফেলবার জন্য গরুটির মালিককে দন্ডিত করা হয়।
মানে গুণে ও বিচারে মসলিন
মসলিনের মূল্যমান নির্ধারিত হত সুতার সূক্ষ্মতা, বুনন আর নকশা বিচারে। সূক্ষ্মতা, স্বচ্ছতা বা মানের ওপর ভিত্তি করে মসলিনের বিভিন্ন নামকরণ করা হতো। যেমন মলমল (সূক্ষ্মতম বস্ত্র), তানজেব (দেহের ভূষণ), আবই-রওয়ান (প্রবহমান পানির তুল্য বস্ত্র), খাস (মিহি বা জমকালো), শব-নম (ভোরের শিশির), আলাবালি (অতি মিহি), ডোরিয়া (ডোরাকাটা) ইত্যাদি। "মলবুস/মলমল খাস" ছিল সবচেয়ে নামী, সেরা মসলিন। সম্রাটের জন্য তৈরি হত এই মসলিন।
দশ গজ লম্বা আর এক গজ চওড়া মলমল খাসের ওজন হত মাত্র ছয় তোলার মতো, যা অনায়াসে ছোট্ট একটা আংটির ভিতর দিয়ে গলে যেত! মলবুস খাসের সমগোত্রীয় আরেকটি মসলিন "সরকার-ই আলা"। দশগজ লম্বা আর একগজ চওড়া 'সরকার-ই আলা'-র ওজন হত দশ তোলার মতো। ঝুনা মসলিনে সুতার পরিমান থাকতো কম- দেখতে হত অনেকটা জালের মত। ঝুনা হিন্দী শব্দ যার অর্থ 'সূক্ষ্ম'। নকশা করা মসলিনকে বলা হতো জামদানি, কিন্তু আজকের জামদানির সাথে আদি জামদানির বলতে গেলে কোনো মিলই পাওয়া যাবেনা।
১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজরা বছরে আট লাখ টাকার মসলিন রপ্তানী করতো। সেই সময়ে ফরাসিরা কিনেছিলো প্রায় তিন লাখ টাকার মসলিন। এরা ছাড়াও ইরানি, তুরানি, আর্মেনীয়দের পাশাপাশি দেশী ব্যবসায়ীরাও এ নিয়ে ব্যবসা করতেন।
পরবর্তীতে মসলিন রপ্তানীর ব্যবসা প্রায় পুরোটাই করায়ত্ত করে নেয় ইংরেজ কোম্পানি। তাদের রপ্তানী হত মূলত ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে। পলাশীর যুদ্ধের আগ পর্যন্ত দালালরা বিভিন্ন জায়গা থেকে দামি মসলিন সংগ্রহ করে কোম্পানিতে সরবরাহ করতো। ইংরেজরা নাকি মসলিন তাঁতীদের আঙুল কেটে ফেলতো। আবার এও শোনা যায় যে তাঁতীরা নিজেরাই নাকি নিজেদের আঙুল কেটে ফেলতো, যাতে করে এই অমানুষিক পরিশ্রম আর কম পারিশ্রমিকের কাজে তাদের বাধ্য না করা হয়।
হারিয়ে যাওয়া মসলিন ও হৃত গৌরব পুনুরুদ্ধারের প্রচেষ্টা
আজ কালের গর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়েছে সেই অসামান্য যাদুকরী সৌন্দর্য্য! সেই জগৎ বিখ্যাত মসলিন আর নেই । মসলিনের এমন বিলুপ্তির কারন সম্পর্কে ১৮৪৪ সালে ঢাকার কমিশনার আই. ডানবারের মতামতগুলি ছিলো-
১) ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে সস্তায় সুতা আর কাপড় উৎপন্ন হতে থাকে। ফলে দামি মসলিনের চাহিদা কমে যায়।
২) বিলেতের সস্তা সুতা ঢাকায়, ভারতে আসতে থাকে, সে থেকে তৈরি হতে থাকে কাপড়, হারিয়ে যেতে থাকে মসলিন।
৩) বিলেতে ঢাকাই মসলিনের ওপরে উচ্চহারে কর আরোপ করা হয়, ফলে মসলিনের দাম ওখানে বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। স্বভাবতই বিক্রি কমে যায় মসলিনের।
মসলিনের পড়তির সময়টায় পতন ঘটতে থাকে আমাদের নবাব-সম্রাটদেরও। তাছাড়া মুঘল সম্রাট, নবাব, ব্যবসায়ী-কেউই এ শিল্প রক্ষা কিংবা প্রসারে কোন সময়ই তেমন কোন উদ্যোগ নেননি এভাবেই ধীরে ধীরে আমাদের আরও অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মত হারিয়ে গিয়েছিলো মসলিনের গৌরব মন্ডিত সেই সোনালী দিন বা গোল্ডেন এইজ!!!।
গত বছরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মসলিনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প হাতে নেয়। তাঁত বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নিয়ে এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালের শেষদিকে মসলিন কাপড় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলো দৃক। মসলিনের বুনন কৌশলটি ঠিকঠাকভাবে লিপিবদ্ধ না থাকাটা সঠিকভাবে মসলিনের বুননকার্য্যটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দৃকের প্রধান নির্বাহী ও মসলিন প্রকল্পের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম তিন বছর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মসলিন কাপড় নিয়ে গবেষণা ও অধ্যয়ন করেন। তিনি বুঝতে পারেন, জামদানি আসলে মসলিনেরই একটি ধরন। তৈরি হয় সর্বোচ্চ ১০০ কাউন্ট সুতা দিয়ে।
জানা যায় ভারতে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার মসলিনের ব্যবসা হয়। এগুলোকে বলা হয় বেঙ্গল মসলিন। মসলিন তৈরির উপকরণ ফুটি কার্পাসের আবাদও আছে ভারতে। আমাদের কারিগরদের যে দক্ষতা রয়েছে, তা দিয়ে ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের তাঁতিরা সাধারণত ৩০ কাউন্ট সুতার কাপড় তৈরি করে। অথচ মসলিনের জন্য দরকার ৩০০ কাউন্ট সুতা। বহুবার প্রচেষ্টার পর তাতীরা সফল হয়েছেন। সাইফূল ইসলাম ভারত থেকে ফুটি কার্পাসের বীজ এনে তুলা গবেষণাকেন্দ্রে চাষ করেছেন। সাম্প্রতিককালে ২৫০ কাউন্ট সুতার তৈরি কাপড়কেও মসলিন বলা হচ্ছে। দৃক সাত মাস সময় নিয়ে ৩০০ কাউন্ট সুতার মসলিন কাপড় তৈরি করেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ডেমরার তাঁতিরা এ কাজে যোগ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি এসব কাপড়ের নাম দিয়েছে ‘নতুন যুগের মসলিন’। একটি মসলিন শাড়ি তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, দৃকের এ উদ্যোগে বাংলাদেশে মসলিনের ফিরে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
জামদানি
প্রায় হারিয়ে গেছে মসলিন কিন্তু বেঁচে আছে আজও বাংলার নানা ঐতিহ্যবাহী শাড়ি জামদানি, টাঙ্গাইল, রাজশাহী সিল্ক, মিরপুরী কাতান, খাদি ও আরও নানা রকম বর্ণ ও বৈচিত্রের শাড়ি। এর মাঝে সবার প্রথমেই আসে জামদানি শাড়ির নাম। ঢাকাই মসলিনের মত জামদানিও কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের সূক্ষ্ম বস্ত্র। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি রেশম এবং তুলার সুতার সংমিশ্রনে প্রস্তুত এই শাড়ী যা মোঘল আমল থেকে এখনও সর্বজন সমাদৃত । জামদানি শাড়ীর ডিজাইন গুলো জ্যামিতিক, ওজনে হালকা এবং ব্যবহারে অনেক আরামদায়ক হয়। তাই অভিজাত মহিলাদের কাছে এই শাড়ীর কদর অনেক।
জামদানি শাড়ী ২ প্রকারঃ
১) হাফ সিল্ক জামদানি – যার আড়াআড়ি সুতাগুলো হয় রেশমের আর লম্বালম্বি সুতাগুলো তুলার হয়।
২) ফুল কটন জামদানি- যা সম্পূর্ণ তুলার সুতার তৈরি।
প্রাচীনকানের সেই মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারীই এই জামদানি শাড়ি।
জামদানির নামাকরণ
জামদানির নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের মত। ফার্সি শব্দে জামা অর্থ কাপড়, দানা অর্থ বুটিদার সেই বিচারে জামদানিকে বুটিদার কাপড় বলা যেতে পারে। আরেকটি মতে, ফার্সিতে জাম অর্থ এক ধরনের উৎকৃষ্ট মদ এবং দানি অর্থ পেয়ালা। জাম পরিবেশনকারী ইরানী সাকীর পরনে থাকতো মসলিন সেই হিসাবে জামদানী নামের উৎপত্তি ঘটেছে বলেও মনে করা হয়।
জামদানি নকশা
জামদানি বিখ্যাত ছিল তার বিচিত্র নকশার কারণে। প্রতিটি নকশার ছিল ভিন্ন নাম, পান্নাহাজার, বুটিদার, দুবলিজাল, তেরসা, ঝালর, ময়ূরপাখা, কলমিলতা, পুইলতা, কল্কাপাড়, কচুপাতা, আঙুরলতা, প্রজাপতি, শাপলাফুল, জুঁইবুটি, চন্দ্রপাড়, হংসবলাকা, শবনম, ঝুমকা, জবাফুল ইত্যাদি।ভিন্ন জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্যের বয়নশিল্প হিসেবে প্রাচ্যের বয়নশিল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল জামদানী মোটিভ। এই মোটিভে খুব সহজেই কাপড়ের ভেতর ছায়ার মাঝে তৈরি করা যায় নকশার প্রতিবিম্ব। মোটিভগুলো জ্যামিতিক আইন অনুসরণ করলেও তা শুধুমাত্র রেখা, চারকোনা কিংবা ত্রিভুজ নয় বরং তা দিয়ে ফুল, লতা-পাতা থেকে শুরু করে ফুটে উঠে নানা রকম ডিজাইন বিন্যাস।
মোটিফ গুলো বির্মূত দেখালেও এগুলো সরাসরি প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত এবং ফুল, লতাপাতা, প্রাণীকূলেরই সুন্দর বিন্যাস। একটি বিশেষ ফুলের মোটিফ যদি বিচ্ছিন্ন ভাবে জমিনে বিছানো থাকে তাকে বলা হয় বুটিদার। ফুলের কোনাকোনি বিন্যাসকে বলা হয় তেসরি এবং মোটিফের সংযুক্তিকে বলা হয় জাল। মোটিফ গুলো তাঁতীর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবিত বিধায় মোটিফ গুলোর নাম তাঁতীভেদে পরিবর্তিত হয়। প্রচলিত বুটি বা বুটাগুলোর নাম- বাঘনলী, হাঁস, ডালিম, ডুরিং, কাঁকড়া, সন্দেশ, প্রজাপতি, সাবুদানা, ছোটবুটি, পাতাবাহার, এরোপ্লেন, শাপলা, পানবুটা, বাঘের পাড়া, চিতা ফুল, ডুমুর ফুল, তারফুল, আমের কড়া, কানবালা ইত্যাদি। তেসরি কোনাকোনিভাবে অলংকরনের নাম- করাত, আদার ফনা, করলা, নিমপাতা, হাঁটুভাঙ্গা, পুঁই লতা, জুঁই, পুনা, চেলা ইত্যাদি গুলো বেশী প্রচলিত। ঐতিহ্যবাহী জাল গুলো হলো- চন্দ্রহার জাল, বুন্দির জাল, শাঁখা জাল, বেলপাতা জাল, মটর জাল, মুরুলি জাল, পান জাল, গনড়া জাল ইত্যাদি।অনেক গুলো মোটিফের সমন্বয়ে পাড়ের ডিজাইন করা হয়। অধিক ব্যবহৃত পাড় গুলো হলো- আঙুর লতা, গোলাপ ঝাড়, কিরিলতা, ময়ূর প্যাঁচ, কঁচুপাতা, খাঁড়া, সাল, টিন পাতা, ইঞ্চি, সুপারি ট্যাঙ্কি, কান্তি, বড় আম, কলসি, গাছ, চাদর কচিপাতা, ঘুরান পাড়, জাতি-পিঠা, পুঁইডগা ইত্যাদি। জামদানির পাড় ও জমিনে অপেক্ষাকৃত মোটা সুতায় বুননের মাধ্যমে ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই মসলিন বা জামদানী কাপড় তৈরির জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় বরাবর পুরাতন সোনারগাঁ অঞ্চলটিই ছিল মূল কেন্দ্র। বর্তমানে রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ এবং সিদ্ধিরগঞ্জে প্রায় ১৫৫টি গ্রামে এই শিল্পের বর্তমান নিবাস।
বিকাশ
ঢাকাই মসলিনের স্বর্ণযুগ বলা হয় মুঘল আমলকে। এ সময় দেশে-বিদেশে মসলিন, জামদানির চাহিদা বাড়তে থাকে এবং শিল্পেরও ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। তৎকালীন সময়ে ঢাকা থেকে প্রায় একলক্ষ টাকা মূল্যমানের মলমল-খাস মোঘল দরবারে রপ্তানি করা হত।
১৭৪৭ সালের হিসাব অনুযায়ী দিল্লীর বাদশাহ, বাংলার নবাব ও জগৎ শেঠের জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার জামদানি কেনা হয়। এছাড়া ইউরোপীয় ব্যবসায়ীগণ প্রায় নয় লাখ টাকার মসলিন কেনে। তবে আঠারো শতাব্দীর শেষের দিকে মসলিন রপ্তানি অনেকাংশে হ্রাস পায়। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে। এদের নিযুক্ত গোমস্তারা নিজেদের স্বার্থে তাঁতিদের উপর নির্যাতন শুরু করে। তাঁতীরা কম মূল্যে কাপড় বিক্রি করতে রাজী না হলে তাদের মারধোর করা হতো।
জামদানি তৈরীর কৌশল ও প্রক্রিয়া
জামদানির জন্য প্রথমে চরকায় সুতা মোড়ানো হয়। সুতা বের করে তা রঙ করা হয়। তারপর সুতাকে বিমে মুড়িয়ে নেওয়া হয়। একটি বিমে মোড়া সুতা দিয়ে ৪টি কাপড় বোনা যায়। মোটিফ তৈরী, পাড়, আঁচলে রঙ ভেদে বিভিন্ন মাকু ব্যবহৃত হয়। তেঁতুল গাছের কাঠ বা বাঁশ থেকে উন্নতমানের মাকু তৈরী করা হয়। বুটির একটি সূতা চালানোর পর পড়েনের একটি সূতা চালিয়ে সানা দিয়ে খাপানো হয়। তারপর আর একটি বুটির সূতা, এভাবে পর্যায়ক্রমে সূতা চালিয়ে বুটি শেষ করা হয়।
১: রেশমি গুটি থেকে প্রস্তুত সুতা মূল শাড়ি প্রস্তুতের জন্য তাতে সাজানো হয়।
২: গুটি থেকে প্রস্তুত সুতা রঙ করা হয়।
৩: রঙ করা সুতা বোনার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
৪: সুতাকে শক্ত করার জন্য কয়েক ধাপে ভাতের মাড় দিয়ে শুকানো হয়।
৫: রোদে শুকানো সুতা তাতে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
৬: সাধারণ হাত-তাঁতে মূল শাড়ি রেখে তাতে রঙিন সুতা দিয়ে নকশা করা হয়।
৭: নকশা করার সময় আরো একবার ভাতের মাড় দেয়া হয়।
৮: তারপর শাড়িতে নকশা তোলা শুরু হয়।
৯: রকমারি রঙের সুতা আর নকশায় শাড়ি সাজানো হয়।
জামদানি শাড়ীর বুনন শেষ হলে চলে ধৌতকরন ও মাড় দেয়ার প্রক্রিয়া। অতঃপর এটি স্থানীয় হাট অথবা অন্যান্য বাণিজ্য প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। একটি জামদানী শাড়ি বোনা শেষ করতে ৭ দিন থেকে ৬ মাস সময় লাগে। জরি ও লাচ্ছি জরির শাড়ির জন্য সময় লাগে বেশি। বাজারে একটি জামদানী শাড়ির দাম ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৩০-৪০ হাজার এমনকি লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু একটি শাড়িতে মাত্র ৪শ-৫শ টাকার সুতা লাগে। আসলে টাকার চেয়ে শ্রম ও সময় বেশি লাগে বলেই জামদানীর এত দাম।
যুগ যুগ ধরে জামদানী তাঁতীরা কাগজের প্যার্টানকে তাদের মুখস্ত মৌখিক কৌশলে রূপান্তর করেছে, যাকে বলা হয় বুলি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় জামদানী তাঁতীরা বেশিরভাগই অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার অভাবে সত্ত্বেও তাদের মস্তিস্ক একজন গণিতবিদের মতোই ধারালো। যত জটিল প্যার্টানই হোক না কেন তা ওস্তাদের মনে গাঁথা থাকে এবং বংশানুক্রমিক ভাবে তা অনুসরণ করা হয়। তাঁতীরা কেবল জানে একটি মোটিফ তৈরীতে কিছু গাণিতিক সংখ্যা- কোন লিখিত বা অলংকিত দলিল নয়।
জামদানির সমাদরের কারণ
জামদানি বিখ্যাত ছিল তার বিচিত্র নকশার কারণে। প্রতিটি নকশার ছিল ভিন্ন ভিন্ন নাম, পান্নাহাজার, বুটিদার, দুবলিজাল, তেরসা, ঝালর, ময়ূরপাখা, কলমিলতা, পুইলতা, কল্কাপাড়, কচুপাতা, আঙুরলতা, প্রজাপতি, শাপলাফুল, জুঁইবুটি, চন্দ্রপাড়, হংসবলাকা, শবনম, ঝুমকা, জবাফুল ইত্যাদি। ভিন্ন জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্যের বয়নশিল্প হিসেবে প্রাচ্যের বয়নশিল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল জামদানি মোটিভ।
বর্তমান সময়ে লুপ্তপ্রায় গৌরবের আলোকশিখাকে দীপ্যমান করবার প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন। সকল প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জামদানি শিল্পের সেই স্বর্ণযুগের পুনঃস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণের দায়িত্ব আমাদের সবার।
রাজশাহী সিল্ক
গুটিপোকা থেকে বানানো রেশম সুতা আর তাই নিয়ে বানানো সিল্ক কাপড়ও কম আশ্চর্য্যময় নয়। আর তাই বাংলাদেশে রাজশাহীর রেশমপোকার সিল্ক শাড়িগুলিও দেশে বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে।
শাড়ির মডেল সোহানী আপু
পৃথিবীতে রেশম এলো যেভাবে
চীনের প্রাচীন গ্রন্থে নানা প্রকার উপাখ্যানের উল্লেখ আছে, এমনি একটি উপাখ্যানে ‘হুয়াংতি’ নামে এক অত্যন্ত প্রভাবশালী সম্রাটের কথা জানা যায়। নানা উপজাতিদের নিজের অধীনস্থ করেছিলেন তিনি। কথিত আছে, তার স্ত্রী ‘সম্রাজ্ঞী লেইজু’ সর্বপ্রথম রেশমগুটি থেকে সুতা তৈরি ও রেশম গুটিপোকার চাষ প্রবর্তন করেন।
ইতিহাসে ‘চৌ ডাইনেস্টি’ (১১২২ থেকে ২৫৫) খ্রিস্টপূর্ব চীনাদের স্বর্ণযুগ বলা যায়। চৌ ডাইনেস্টির আমলে পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিক কনফুসিয়াস, লাওতেজ ও সুন্দর সিল্কের জন্ম ঘটে।
বাংলার রেশম ও রেশম কারিগর নিয়ে এ প্রসঙ্গে একটি কাহিনী আছে
সাল ১৯১১। নভেম্বর মাসে লর্ড কারমাইকেল বিলেত থেকে মাদ্রাজে গভর্নর হয়ে এসেছেন। কারমাইকেল বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষের কাছে অপরিচিত নন, ১৯১২ সালে বাংলার গভর্নর ছিলেন। রংপুরের কারমাইকেল কলেজ তাঁর নামেই প্রতিষ্ঠিত। বিলেতে থাকার সময় এডিনবরা শহরের দোকান থেকে কেনা এক বিশেষ ধরনের রেশমী রুমাল ব্যবহার করতেন কারমাইকেল। লম্বা ও চওড়ায় ২০ ইঞ্চি, ঘন নীল রেশমি কাপরের ওপর লাল-হলুদে নানা রং মিলিয়ে ছোট ছোট মোরগের ছবি ছাপা এই রুমাল ছিল তাঁর ভীষণ পছন্দের। শুধু তাঁরই নয়, সমসময়ের বিলেতের অভিজাত মহলেও বেশ চল ছিল এই ছাপা রেশমী রুমালের। তার সেই অতি প্রিয় বিলেতের এডিনবারগে পাওয়া রেশমী রুমাল ও সেই রুমাল কারিগরের সন্ধান পান তিনি এই বাংলাতে এসে।
লর্ড কারমাইকেল জানতেন এই রুমাল কারিগর বাংলার মানুষ আর তারই খোঁজে তিনি ছুটেছেন অনেক খানেই। শেষে বহরমপুর শহরে এসেই পেলেন তার উত্তর!
টাঙ্গাইল শাড়ি
‘নদী, চর, খাল, বিল, গজারির বন,
টাঙ্গাইল শাড়ি তার গর্বের ধন।’
টাঙ্গাইলে নদী, চর, খাল, বিল বা চমচম যা কিছুই বিখ্যাত হোক না কেনো টাঙ্গাইলের নাম প্রসিদ্ধ বুঝি তার প্রসিদ্ধতর শাড়ীর কারণেই। টাঙ্গাইল শাড়ির সুনাম আজ দেশ পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে সুপরিচিত। ঈদ কিংবা পুজা পার্বণে অথবা বাঙ্গালী রমণীর বিয়ের স্যূটকেসে কাতান, বেনারসীর পাশাপাশি পছন্দের শাড়ির তালিকায় তাই প্রায়শই দেখা যায় টাঙ্গাইল শাড়ি। আমাদের দেশের শাড়ির সুখ্যাতির ইতিহাস বহু প্রাচীন। ঢাকাই মসলিন, জামদানীর মত টাঙ্গাইল শাড়িও আমাদের বাংলার ঐতিহ্য। এছাড়াও রাজশাহীর সিল্ক, নরসিংদীর তাঁত বা পাবনাই তাঁতের শাড়ির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তো সবারই জানা। দেশের বৃহত্তম তাঁত শিল্পেরই অঞ্চল এই টাঙ্গাইল। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির মান যেমনই ভালো, তেমনি তা দেশের সবস্থানেই সহজলভ্য কাজেই এ শাড়ির কদর অম্লান।
খাদি বা খদ্দর
স্বদেশী আন্দোলনে এই খাদি বা খদ্দররের প্রচলন শুরু হয়।জাতীয় কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধীর কারণে খদ্দর শব্দটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় খদ্দর বোনা এবং পরিধানে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এটি ছিল সেই অহিংস আন্দোলনের অন্যতম কার্যকর রাজনৈতিক হাতিয়ার। তখন ইংরেজ শাসনামল। পুরো উপমহাদেশ জুড়ে ইংরেজদের পণ্য। এমন সময়ে শুরু হলো স্বদেশী আন্দোলন। বিদেশী পণ্যকে 'না' বলে নিজেদের পণ্য ব্যবহারে ঐক্যবদ্ধ হলো এই উপমহাদেশের মানুষ। নিজেদের পোশাকের চাহিদা মেটানোর জন্য চরকায় খাদি কাপড় বোনা ও তার ব্যবহার জোরেসোরে শুরু হলো! কার্পাস তুলা থেকে তৈরি হতো সুতা এবং সেই সুতা ব্যবহার করে চরকায় তৈরি হতো খাদি কাপড়। কাজেই শতবর্ষের ঐতিহ্যের এই খাদি সবচাইতে বেশি আলোচনায় এসেছিলো ১৯২১ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়। মহাত্মা গান্ধীর আহবানে বিদেশী পণ্য বর্জন করার জন্য যখন সর্বত্র আওয়াজ উঠেছিলো ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’।আর তখন সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের কুমিল্লায় খদ্দর বা খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাই খাদি শুধু কাপড়েরই নাম নয়, নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতনতার ইতিহাসের এক অণন্য নামও এই খাদি!
নামের পেছনের ইতিহাস
খাদি কাপড়ের নামাকরণের মজাটাও বেশ মজার। এ কাপড় খাদে বা গর্তে বসে তৈরি করা হয় বলেই নাকি এর নাম দেয়া হয়েছে খাদি। খাদি কাপড় দ্রুত বুননের জন্য বা দ্রুত তাঁত চালানোর জন্য পায়ে চালিত প্যাডেলের নীচে মাটিতে গর্ত করা হতো। এই গর্ত বা খাদ থেকে কাপড় উৎপন্ন হতো বলেই এই কাপড়ের নাম খাদি। আবার কেউ কেউ মনে করেন খদ্দর নামটি মহাত্মা গান্ধীর দেওয়া। কারণ খদ্দর শব্দটি গুজরাটি শব্দ। মহাত্মা গান্ধীর বাড়ি ভারতের গুজরাটে। এর আভিধানিক অর্থ কার্পাস তুলা থেকে হাতে কাটা সুতা দিয়ে হাতে বোনা কাপড়। স্বদেশি আন্দোলনের জনক মহাত্মা গান্ধী এই বিশেষ বয়ন পদ্ধতিতে তৈরি সুতি কাপড়কে 'খদ্দর' নামকরণ করেন।
এক সময়ের সংগ্রামী মানুষ আর গরীবের পোষাক বলে পরিচিত খাদিই আজ ফ্যাশনের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। সেই মোটা কাপড়ে আজ লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। কুমিল্লার খাদি এখন শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত হচ্ছে। খাদি কাপড় আজ রপ্তানী হচ্ছে বিশ্ববাজারে।
খাদি কাপড়ের তাঁতী বা শিল্পীরা
জেলায় মোট কতজন পেশাজীবী তাঁতী এ শিল্পের সাথে জড়িত, এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের খাতায় নেই। জানা যায়, ১৯৮২-৮৩ সালে ন্যায্য মূল্যে সুতা সরবরাহ করার লক্ষ্যে তাঁতীদের একটি সংখ্যা নিরূপনের জন্য জরিপ চালানো হলেও প্রকৃত তাঁতীর সংখ্যা কত সেটা বের করা সম্ভব হয়নি।
স্বদেশী পণ্যের ব্যবহারে খাদি শিল্প থাকুক চিরঅম্লান
একটা সময় ছিল যখন খাদি মানেই ছিল সাদা বা মেটে রঙের কোরা কাপড়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বৈচিত্র্য এসেছে রঙে এবং সেইসাথে পোশাকের ডিজাইনেও! এক সময় ফ্যাশন জগতে খাদি দিয়ে শুধু পাঞ্জাবি তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়াসহ আরো নানা পোশাক তৈরি হয়। শুধু পোশাক নয়, খাদি কাপড় দিয়ে তৈরি বিছানার চাদর, বালিশের কভার, সোফা ও কুশনের কভার, পর্দা, শীতের শালও জনপ্রিয় এখন!
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলোর মধ্যে খাদি একটি অনন্য নাম। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে স্বদেশী পণ্য ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সকলকেই।
মণিপুরি শাড়ি
মণিপুরি নারীদের হাতে তৈরী তাঁত কাপড়ের জন্য রয়েছে পৃথিবীব্যাপী সুখ্যাতি। শ্রীমঙ্গল ও বিশেষ করে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের প্রায় ৬০টি গ্রাম বিখ্যাত মণিপুরি তাঁতশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ । এটি বাংলাদেশের প্রাচীন হস্তশিল্পগুলোর মধ্যে একটি । আসলে নিজেদের তৈরি পোশাকের চাহিদা মেটাতেই মণিপুরি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে তাদের তৈরী মনহরণকারী বস্ত্রশিল্প বাঙালি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নকশা করা ১২ হাত মণিপুরি শাড়ি, নকশি ওড়না, মনোহারী ডিজাইনের শীতের চাদর এসবের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশসহ প্রবাসীদের মাঝেও দেখা যায়।
এই শাড়ির মডেল নীল দর্পণ আপু
মণিপুরি তাঁত ও তাঁতে বুনন পদ্ধতি
মণিপুরিদের বস্ত্র তৈরির তাঁতকল বা মেশিন প্রধানত তিন প্রকার যেমন, কোমরে বাঁধা তাঁত, হ্যান্ডলুম তাঁত ও থোয়াং। এই তাঁতগুলো দিয়ে সাধারণত টেবিল ক্লথ, স্কার্ফ, লেডিস চাদর, শাড়ি, তোয়ালে, মাফলার, গামছা, মশারী, ইত্যাদি ছোট কাপড় তৈরি হয়।
চাকমা তাতিদের মতো মণিপুরি তাঁতিদেরও তাঁতে কাপড় বুননের জন্য নিজস্ব তাঁত আছে। তাঁতে বুনন পদ্ধতিটা মোটামুটি চাকমাদের বুনন পদ্ধতির মতই । তাঁতে ব্যবহৃত উপাদান গুলোর নাম ও কাপড়ে তোলা নক্সার ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ।
ডিজাইন
জনপ্রিয় মণিপুরি ডিজাইনগুলো ঝাউ গাছ, শেফালি ফুল, এবং মন্দির বা মইরাং ফি । রাজকুমারি মইরাং থইবি নাম অনুসারে এই নামকরণ হয়েছে ।তাঁতে কাপড়ে নকসা তোলার জন্য তাঁতি এক ধরণের সুচালো যন্ত্র ব্যবহার করে মণিপুরি জামদানীর ক্ষেত্রে ।
কি ধরণের কাপড় বুনা হবে তা অনেক সময় স্থানীয় আবহাওয়ার উপরও নির্ভর করে । যেমন তাঁতিরা শীতকালে কাপড় বুনার জন্য উল ও পলিয়েস্টারের সূতা ব্যবহার করে অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে তুলার সূতা ব্যবহার করে গামছা ও ফিদু তৈরির জন্য । সাধারণত তারা তুলা ত্রিপুরা সম্প্রদায় থেকে সংগ্রহ করতো । তবে বর্তমানে বাজার থেকে সুতি সূতা ক্রয় করে । মণিপুরিদের তৈরি ফানেক খুব আকর্ষণীয় উজ্জলও বিপরীতমুখী রং ব্যবহার করা হয় শরীরের অংশে আর বর্ডারের । প্রতিদিন পড়ার কাপড়ে তারা সমতল পাড়ের কাপড় তৈরি করে । কিন্তু বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি কাপড়ে “টেম্পল মোটিফ” ডিজাইন থাকে ।
মণিপুরি মেয়েরা বাড়িতে বসেই নিজের হাতে তাঁতে বুনে থাকে অসাধারণ সব শাড়ি, বিছানার চাদর, সালোয়ার কামিজ, শাল, ওড়না, ব্লাউজ পিস ইত্যাদি। মণিপুরি দের বুননে রং আর নকশার রয়েছে এক অপূর্ব সমন্বয়। বৈচিত্র্য থাকার কারণে এক নজরেই সবাই পছন্দ করে মণিপুরি তাঁতের পণ্যসামগ্রী। মণিপুরি সালোয়ার কামিজ, শাড়ি ইত্যাদি যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি ব্যবহারেও আরামদায়ক।
মণিপুরি শাড়ির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাঢ় বা হাল্কা যে রংয়েরই শাড়ি হোক না কেন পাড়ের রং হবে গাঢ়। সাধারণত শাড়ির পাড়ের নকশাটি হয়ে থাকে ত্রিভুজাকৃতির আর শাড়ির ভেতরে থাকে হালকা সুতায় বোনা লতা পাতা । এই নকশাটি মণিপুরিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য । সুতি সুতা দিয়ে বোনা হয় মণিপুরি শাড়ি, ব্লাউজ পিস, সালোয়ার কামিজ, ওড়না, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি ইত্যাদি। চাদর বা শাল বোনা হয়ে থাকে অপেক্ষাকৃত মোটা সুতা দিয়ে।
বাংলার বেনারসী বা মিরপুর কাতান
বাঙ্গালী রমনীদের হৃদয়ে তাদের বিয়ের দিনটি এবং এ দিনে বউসাজের চিরায়ত স্বপ্নটি ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে প্রায় একই থাকে। প্রতিটি বঙ্গললনার হৃদয়ের মনিকুঠুরীতে তাদের এই বিশেষ দিনটির বিশেষ সাজসজ্জাটি ঘিরে লুকিয়ে থাকে একটি বিশেষ স্বপ্ন আর বিয়ের দিনের সেই বিশেষ সাজটিতে অপরিহার্য্যভাবেই যেন এসে যায় একটি শাড়ির নাম "বেনারসী শাড়ি"। একজন বিয়ের কণের স্বর্ণকমল অঙ্গ ঘিরে চিরায়ত লালটুকটুকে বেনারসী শাড়ির সৌন্দর্য্যের সাথে বুঝি আর কোনো শাড়ীরই তুলনা হয়না। একটি নারীর বেনারসী শাড়ির মাঝে যুগ যুগ বেঁচে থাকে একটি পরিবারের বংশ পরম্পরার ইতিহাস। একটি বেনারসী বহন করে একটি নারীর জীবনের বিশেষ সুখময় স্মৃতির লুকানো গল্পগাঁথা।আলমারীর তাকে তুলে রাখা তার বিশেষ দিনের বিশেষ লগ্নের বেনারসীটি ছুঁয়ে বুঝি সে ভুলে যেতে পারে তার সারাজীবনের যত দুঃখ বেদনা ,চাওয়া এবং না পাওয়ার ব্যাথা। বেনারসী কোনো হেলাফেলার শাড়ী নয়। এই শাড়ি খুব যতনে তুলে রাখার মত মূল্যবান এক সম্পদ, এ যেন মোহনীয় ভালোলাগা ও স্বর্গীয় ভালোবাসায় রচিত এক অনবদ্য সঙ্গীত।
কোথা থেকে এলো এই বেনারসী, কোথায়ই বা তার জন্ম?
যদিও মিরপুর কাতান বা মিরপুর বেনারসী নাম এই শাড়ির কিন্তু বেনারসী শাড়ির জন্ম বাংলাদেশে নয়। ভারতের একটি বহুল পরিচিত শহর "বেনারস"। মুঘল আমল থেকে এই বেনারস প্রসিদ্ধ ছিলো সেখানকার তাঁত শিল্পের জন্য। সোনালি, রুপালি জরির মনোমুগ্ধকর কারুকার্য্যময় সৌন্দর্য্যের জন্য সকলের অতি পছন্দের ছিলো এই বেনারসের শাড়ি। কাজেই বেনারসী শাড়ি নামাকরণের ইতিহাসটি সুস্পষ্ট। বেনারসী শাড়ি এসেছে ভারতের বেনারস থেকে আর তাই এ শাড়ির নাম বেনারসী।
সূচনার ইতিহাস
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বেনারস থেকে কিছু মুসলিম পরিবার আসে বাংলাদেশে। তারা আশ্রয় নেয় পুরান ঢাকা আর মিরপুরে। জীবিকার তাগিদে তারা বুনতে শুরু করে শাড়ি। বেনারস থেকে আসা তাঁতিদের তৈরি শাড়িগুলি আমাদের দেশে পরিচিত হয় বেনারসি শাড়ি নামে। ছোট ছোট তাঁত কল থেকে হাতে তৈরি সেই সব শাড়ি মন হরণ করে নেয় বাঙ্গালী রমণীদের। ঢাকা ছাড়িয়ে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে আর দেশ থেকে দেশান্তরে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর মিরপুরের রিফিউজি ক্যাম্প গঠন করে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। রিফিউজি ক্যাম্পের বসবাসকারীরাও ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে নানারকম জরি পুঁতি, জারদৌসির কাজ করা পোষাক ও বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজে। বর্তমানে এক লাখের বেশি মানুষ বেনারসি শাড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। মিরপুরের এ বেনারসী শাড়ির প্রাপ্তিস্থলটি আজ “মিরপুর বেনারসী পল্লী” নামে পরিচিত। প্রায় অর্ধশত বছর পূর্বে জামাই ও শ্বশুরের মাত্র ২টি দোকান নিয়ে বেনারসি পল্লীর যাত্রা শুরু হয়েছিলো। বর্তমানে এখানে ১৩০ টি দোকান আছে। দিনদিন বাড়ছে এখানকার ব্যবসায়ের পরিধি।
কিভাবে বানানো হয় এই অপরূপা বেনারসী?
বেনারসি শাড়ি তৈরির মূল উপাদান কাঁচা রেশম সুতা।এর সাথে ব্যাবহৃত হয় জরির সুতা।এগুলো আমদানি হয় মূলত চীন থেকে কারণ দেশীয় কাঁচা রেশম সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁতিরা বেনারসি তৈরিতে এখন চায়না সিল্ক সুতা ব্যবহার করে থাকেন।এছাড়া জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম থেকেও এসব সুতা আমদানি করা হয়। এরপর তৈরি হয় শাড়ির নকশা। সাদা কাগজে প্রথমে শাড়ির গ্রাফ বা ডিজাইন আঁকা হয়। কাগজে তৈরি ওই গ্রাফ শক্ত কাগজের বোর্ডে পাঞ্চিং করা হয়। গ্রাফে বর্ণিত রং অনুসারে সুতার রং করা হয়। রঙিন সুতা এবং পাঞ্চিং করা বোর্ড তাঁতে তোলা হয়। তাঁতিরা এটিকে বলে ‘জাকট করা'। জাকট শেষে ধীরে ধীরে শুরু হয় বুননের কাজ। একটি শাড়ি বুনতে সময় লাগে ৫ থেকে ৭ দিন। মিল ফিনিশিং শেষে সেগুলোতে জরি, চুমকি বসানোসহ নানান ধরনের হাতের কাজ করা হয়। সব মিলিয়ে একটি শাড়ির কাজ করতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় প্রয়োজন হয়।
বেনারসী ও কাতান
বেনারসিরই আরেকটি ধরণ কাতান শাড়ি। বেনারসী ও কাতান এই দুই নামে পার্থক্য হওয়াতে দুধরনের শাড়ি মনে হলেও মুলত বেনারসীরই আরেক নাম কাতান।বেনারসি শাড়ির ধরন বা নকশার ওপর ভিত্তি করে রাখা হয় নানান নাম। যেমন ব্রোকেট কাতান, পিরামিড কাতান, মিরপুরী রেশমি কাতান, বেনারসি কসমস, চুনরি কাতান, প্রিন্স কাতান ইত্যাদি। শুরুর দিকে বেনারসির মোটিফগুলো পার্সিয়ান ধরনের, এরপর আসে মুঘল মোটিফ।
আমাদের দেশীয় নানা সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানগুলিতে, যেমন ঈদ, পূজো, পহেলা বৈশাখ, বিয়ে, বৌভাত, গায়ে হলুদ ইত্যাদিতে ব্যাবহার করা হয় বেনারসী শাড়ি। অঙ্গে বেনারসী ও সাজে বাঙ্গালীয়ানার এই সৌন্দর্য অনুধ্যান নারীকে করে তোলে মোহনীয়। কবি বা প্রেমিকেরা তার মানস প্রতিমাকে খুঁজে পায় সে সৌন্দর্য্যের মাঝে হাজারও দুঃখ, বেদনাকীর্ণ এই মর্ত্যের পৃথিবীতেই। নারী হয়ে ওঠেন তিলোত্তমা। এই সৌন্দর্য অনুধ্যানের সমন্বয়ের দায়িত্বটি পালন করে বেনারসী শাড়ি। এটি একজন নারীকে দেয় পূর্ণতা, কোমনীয়তা, মোহনীয়তা ও স্বকীয়তা আর তাই ঐতিহ্যে, আভিজাত্যে আর বাঙালিয়ানায় বিয়ে, বৌভাত বা যে কোনো উৎসবে বেনারসী শাড়ি হতে পারে বাঙ্গালী রমণীর অনন্যতার প্রতীক ।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শাড়িগুলির সমাদর রয়েছে সারা পৃথিবী জুড়ে আর আমাদের বাংলাদেশী নরীদের কাছে তো এর কদর সর্বকালে এবং সর্বযুগেই বিরাজমান। বেঁচে থাকুক বাংলাদেশের শাড়ী যুগ যুগ ধরে সাজুক বাঙ্গালী রমনীরা বাংলার সকল পালা পার্বন আর উৎসবে শাড়িতে, চুড়িতে আর বেলফুলের মালায়।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র
বই- ঢাকাই মসলিন- ডঃ আবদুল করিম
Dhakai Jamdani: A Concise History Including 101 Design Motifs
ছবি-সব শাড়ির মডেল আমরা ব্লগার আপুরা......
এই লেখাটি ১৪ তম বাংলা ব্লগ দিবস উপলক্ষে ‘ফিচার’ লেখা প্রতিযোগিতার শিল্প ও সাহিত্য বিভাগের জন্য লিখেছি। ফিচার পড়া এবং লিখতে চেষ্টা করা আমার অনেক প্রিয়। তবে ফিচার প্রতিযোগিতায় বিষয়গুলির মাঝে "শিক্ষা " বিষয়টির অভাব বোধ করছি। শিশুশিক্ষা নিয়ে মজার আইডিয়া নিয়ে বা শিশুদের মনস্তত্ব নিয়ে কিছু লিখতে পারলে আমার ভালো লাগতো।
বাংলা ব্লগ দিবস শুভ হোক। ১৪ তম বাংলা ব্লগ দিবসের জন্য শুভকামনা রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩০