somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাতের লেখায় চিনি তোমায় - গ্রাফোলজীর তন্ত্র মন্ত্র

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুধুমাত্র সুন্দর হাতের লেখার চর্চা ছেড়ে মন গিয়েছে যখন লেখালিখির নানান দিকে। একদিন হঠাৎ একটা গল্পের বই, সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের একটা গল্প পড়েই জানতে পারি হাতের লেখা দিয়ে নাকি মানুষ চেনা যায়। আমি কেমন মানুষ, আমার মেন্টালিটি কি মানে আমার পুরো ব্যাক্তিত্বই নাকি বলে দেবে আমার বেঁকা তেড়া বা ঝরঝরে সুন্দর যেমনই হোক তেমনই হাতের লেখাটাই। মুগ্ধতার উপর বিস্ময়!! জানলাম সেই পদ্ধতিটির নামই নাকি গ্রাফোলজী।

এই উদ্ধৃত অংশটুকু আমার একটি পুরোনো লেখা থেকে নেওয়া। যা আমি লিখেছিলাম সেই সুদূরে ২০১১ এর ২৪ শে মার্চের এক দুপুরে।
গ্রাফোলজী - হাতের লেখায় মানুষ চেনার বিস্ময়!!

এরপর কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি বছর। সেদিনের কিশোর কিশোরীরা আজ অনেকেই তরুন তরুনী, তরুণ তরুনীরা আজ বুড়া বুড়ি। তাদের হাতের লেখাতেও নিশ্চয় ব্যাপক পরিবর্তন এসে গেছে। গ্রাফোলজী ব্যাপারটা কিন্তু তাতে ছেড়ে যায়নি কাউকেই।
যাইহোক এটি একটি বিজ্ঞান। হাতের লেখার বৈশিষ্ট্য দেখে ব্যক্তিত্ব বোঝার বিজ্ঞান। আমার কাছে অবশ্য একে এক রকম যাদুবিদ্যাই বলে মনে হয়। সেই অ্যারিস্টটলের সময় থেকেই গ্রাফোলজী নিয়ে চলছে সাধনা। তবে এর প্রয়োজনীয়তা আজও বর্তমান। অসংখ্য প্রয়োজনে এই গ্রাফোলজী বিদ্যার প্রয়োগ ঘটানো হয়। যেমন -
অপরাধী শনাক্তকরণ
চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ
মানুষের স্বাস্থ্যগত তথ্য
ব্যাক্তিত্বের বৈশিষ্ঠ ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।

যাইহোক এই গ্রাফোলজী নিয়ে যখন লিখেছিলাম আমি এই ব্লগের পাতায় তখন আমার এই বিদ্যা সম্পর্কে যতটুকু গিয়ান গরীমা বা বিস্ময় ছিলো তার থেকে আরও কিছু বর্ধিত গিয়ান গরীমা শেয়ার করতেই আমার আজকের এই লেখাটি। কারণ সদা ও সর্বদা এই বিষয়টি যেমনই আমার প্রিয় তেমনই আমি আমার প্রিয় বা ভালোলাগার জিনিসগুলি সকলের সাথে শেয়ার করতেও ভালোবাসি।
যাইহোক - এবার বলি ,

১.হাতের লেখা যদি হয় বড় বড় তাহলে এ লেখা দেখে বোঝা যায়, লেখক যেকোনো বিষয় বুঝতে ও খেয়াল করতে চেষ্টা করেন। আর যাদের লেখা ছোট্ট ছোট্ট ক্ষুদি ক্ষুদি তারা হচ্ছেন অতীব মনোযোগী এবং অতি সূক্ষ্মদর্শী তবে অন্তর্মুখী স্বভাবের। আমার নিজের লেখা বড় বড় আর আমার বাবার লেখা ছিলো এতই ছোট যে মনে হত পিঁপড়ার সারি হেঁটে চলেছে। যাইহোক কাজেই বোঝা গেলো হাতের লেখার
অক্ষর ও শব্দের আকার একটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে।


উপরের লেখাগুলি বড় বড় আর নিচেরগুলি ছোট ছোট ..... কাজেই এবার বুঝে নাও কে কেমন লেখো আর স্বভাবখানা কার কেমন হতে পারে।

২. বাম দিকে হেলিয়ে লিখেন যারা তারা হৃদয়কেন্দ্রিক, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বন্ধু ও পরিবারের মূল্যায়ন করে। সোজা সুজি খাড়া করে লেখেন যারা তারা যুক্তি দিয়ে চলেন, অকারণ আবেগ দিয়ে নয়। আর ডানদিকে হেলিয়ে লেখেন যারা তারা বিভিন্ন জিনিস নিয়ে মানুষের ওপর কাজ করতে চান । বার বার দেখে নেন সবকিছু। ভেরী সচেতন! আমি কিন্তু সোজা সোজা লিখি যদিও আমি ভালোই সচেতন! :)


ডানদিকে হেলানো, সোজা সোজা লেখা আর বামদিকে হেলানো লেখাগুলি।

৩. চাপ প্রয়োগ বা লেখার প্রেসারের উপরেও নাকি বৈশিষ্ঠ আছে মানুষের! কিন্তু...... চিন্তায় পড়ে গেলাম এবার। চাপ দিয়ে লেখেন যারা তারা নাকি অনেক আবেগী, তাদের আবেগ নাকি অনেক গভীর এবং সবকিছু চরমভাবে অনুভব করেন। খুব বেশি প্রতিক্রিয়াশীল। তবে এটা কি হলো আমি তো চাপ দিয়ে লিখি আবার সোজাসুজিও ! B:-) কিন্তু ২ নং এ যে জানলাম সোজা সুজি খাড়া করে লেখেন যারা তারা যুক্তি দিয়ে চলেন, অকারণ আবেগ দিয়ে নয়। এখন তো আমার এই পঠিত বিদ্যায় চলিবেক না। সোজা গ্রাফোলজিস্টের কাছেই ছুটিতে হইবেক। আচ্ছা ঠিক আছে পরে তা দেখা যাবে। এখন দেখি হালকা প্রেসারে লেখেন যারা তারা বিভিন্ন স্থানে সহজ ও স্বাবলীল থাকতে পারেন। আবেগ দিয়ে পরিচালিত হন না। এইভাবে লিখেন আমার মা আর আমি চাপ দিয়ে কলম ভাঙ্গতাম বলে একদা আমাকে কতই না তিরষ্কার ভর্ৎসনা করিতেন। আহা কোথায় গেলো সেই হারানো দিনগুলি। নাহ আবেগী হওয়া চলবে না মোটেও ...



৪. লেখার মাঝে লুপ বা ফাঁকা গোলাকার অংশুটুকুও লেখকের চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ প্রকাশ করে।


১নং লেখায় এল লেটারের উপরের অংশটুকুর মত যারা লিখেন তারা আশাবাদী এবং স্বপ্নবিলাসী। ২নং লেখায় বোঝা যায় এমন লিখেন যারা তারা আশা ও স্বপ্ন চাপা দিতে পারেন। ( মাই গড আমি তো দুই রকমই লিখি। সদা ও সর্বদা ২ নং, তাড়াহুড়ায় ১নং এর মত!!! আমার কি হবে!! :( ৩নং টি লেখাটার মতন লেখেন যারা তারা সমালোচনায় স্পর্শকাতর। ৪ নং এর মতন যারা চেপে চুপে টি লিখেন তারা কর্মী হিসাবে ভালো। গোছালো এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ রয়েছে আপনার মাঝে। একদম আমার মতন! আমি এইভাবেই লিখি আর বলি টি টাহ, টেডি!!! হা হা হা ......

৫. চিকন চাকন লেখা আর মোটা সোটা লেখা। বিশেষ করে ওয়াই। যারা চিকনচাকন ওয়াই লিখেন তারা সত্যিকার বন্ধু বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানী। আর যারা লিখেন মোটাসোটা ওয়াই তাদের বন্ধুমহল বেশ বড়। যারা বেশ লম্বাটে লেজ ঝোলানো ওয়াই লিখেন তারা নাকি হয় ভ্রমন পিপাসু আর ছোটখাটো ওয়াই এর মানুষেরা নাকি নিজ বাড়িতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। :)


ছবিতে দেখো সব ধরনের ওয়াই। :)

৬. জড়ানো লেখা ও গোটা গোটা ফাঁকা ফাঁকা লেখা। যারা জড়িয়ে লিখেন তারা যৌক্তিক, পদ্ধতি অনুযায়ী চলে এবং সাবধানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঝকঝকে গোটা গোটা ফাকা ফাকা লেখকেরা বুদ্ধিমান ও ঝকঝকে। :)


এই যে উপরেরটা জড়ানো বা পেচাইল্লা মানুষের লেখা! আর ২নং টা আমার মত ঝকঝকে ও তকতকে! :)

৭. ইলিংশ হরফের আই দেখেও বুঝা যায় কে কেমন মানুষ। আই এর ডটে যারা ফাকা গোল্লা দিয়ে লিখেন তারা নাকি শিশুসুলভ এবং শৈল্পিক। যারা বেশ আটোসাটো ডটের আই লিখে তারা গোছালো, এলোমেলো কিছুই পছন্দ নহে। আমি কিন্তু এলোমেলো কিচ্ছু সহ্যই করতে পারি না। :)


উপরের ফাঁকা গোল্লার বাচ্চামনের লেখক আর নীচে গোছালো পরিপাটি লেখক। :)

৮। 'টি' লেটারটির ক্রসের গড়নেও গ্রাফোলজিস্টরা ধরেন ব্যক্তিত্ব। যাদের টি এর গলা কাটা মানে উপরের দিক কাটা তারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু টি লিখতে গিয়ে যারা পেট কেটে ফেলে তারা দূর্বল চরিত্রের, লক্ষ্য শক্ত নয় এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। আহারে আমি জীবনেও পেট কাঁটা মুর্ধন্য ষ ছাড়া কিচ্ছুর পেট কাটিই না।


এই যে উপরেরটা গলা কাটা টি আর নীচেরটা পেট কাটা টি। :)

৯. লাইনের মাঝে ঝিজিমিজি আর লাইনের মাঝে সুন্দর করে ফাঁকা অংশ রেখে লেখা দেখেও বুঝা যায় কে আসলেই ঘিজিমিজি মানুষ আর কে আসলেও পরিছন্ন পরিপাটি!


এই দেখো ছবিতেই বুঝা যাচ্ছে। ঘিজিমিজিম্যান সময়মতো কাজ করতে অদক্ষ। নীচের পরিপাটি ওম্যান লেখাতেও পরিপাটি।

গ্রাফোলজিস্টরা দাবী করেন একজন মানুষকে শতকরা নব্বই ভাগেরও বেশি চেনা সম্ভব মানুষটির হাতের লেখা দেখে। ওহ গ্রাফোলজিস্ট তারা, যার লেখা, নকশা, ছবি প্রভৃতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন। সম্প্রতি গ্রাফোলজিস্টরা জানিয়েছেন, একজন মানুষকে না দেখেও তার চরিত্র বা মনের নানা দিক, এমনকি সেই মানুষটি সাম্প্রতিক- অতীতে কী কী করেছেন তা প্রায় নির্ভুলভাবে বলা সম্ভব। বাপরে !ভাগ্যিস টাইপিং আছে এখন!

তবে ইহাও সত্য এবং অতীব সত্য যে একজন মানুষের হাতের লেখা বিভিন্ন সময়ে আবেগের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হয়। তাড়াহুড়া বা উত্তেজনায় হাতের লেখা হয় অসংলগ্ন, লাইন হয় আঁকাবাঁকা। মধ্যবর্তী অক্ষরগুলি হয় প্রায় দুর্বোধ্য। য-ফলা, র ফলা, রেফ এসব চিহ্নগুলো খুব বড় বড় হয়ে যায়। সেই একই মানুষই যখন আনন্দে থাকেন, তখন সই করার সময় একটু জোরে চাপ দিয়ে লেখেন এবং অক্ষরগুলো খুব স্পষ্ট হয়। আবার বিষন্ন পরিস্থিতিতে হাতের লেখা হয়ে যায় খুব ছোট, অক্ষরগুলো হয় খুব গায়ে ঘেঁষা এবং বড় বড় টান প্রায় থাকে না বললেই চলে। এসব ক্ষেত্রে যেমন তাৎক্ষণিক মানসিক অবস্থার একটা পরিচয় হাতের লেখায় পাওয়া যায়।

সে যাইহোক, এতক্ষন গেলো অক্ষর আর তার গড়ন গাড়নের কথা। এবার আসি সাক্ষর প্রসঙ্গে। প্রতিটা মানুষই তার সাক্ষরের ব্যাপারে যত্নশীল থাকেন আর তাই প্রত্যেকের সাক্ষরে থাকে স্বকীয়তা যা থেকে স্বাক্ষরকারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যকে আলাদা করা যায়।

মানুষের সামগ্রিক মানসিকতার একটা প্রতিফলন তার সাক্ষর থেকে পাওয়া যায়। গ্রাফোলজিস্টরা দেখিয়েছেন, কীভাবে নর্তকীর সইয়ে পাওয়া যায় নৃত্যভঙ্গিমার ইঙ্গিত, বিজ্ঞানীর সইয়ে লক্ষ্য করা যায় সুষম শৃঙ্খলা। আবার জনপ্রিয় মানুষেরা সই করেন খুব বড় বড় অক্ষরে ও কলমে জোরে চাপ দিয়ে এবং তাদের টানগুলো হয় বিরাট, তা পাতার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে চলে যায়। বলা বাহুল্য, এই বিশ্লেষণগুলো শতকরা একশভাগই যে মিলে তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও ঘটে। তবে প্রায়ই এরকমটা দেখা গেছে।তবে জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম মানসিক অবস্থার প্রভাব যে সাক্ষরে পড়ে তা গ্রাফোলজিস্টরা দেখিয়েছেন।
জীবনের বিভিন্ন সময়ে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সাক্ষরের তারতম্য-


নেপোলিয়নের সই প্রথম জীবনে ছিল অনেকটা ছড়ানো।
ক্ষমতার শীর্ষে থাকার সময় তার সই হয়ে যায় কিছুটা ছোট, অক্ষরগুলো অনেক আঁটসাঁট, কিন্তু অক্ষরগুলো ভীষণ চাপ দিয়ে লেখা এবং স্ট্রোকগুলোও খুব শক্তিশালী।
১৭৯১ সালে তরুণ সাবলেফটেন্যান্ট নেপোলিয়নের সই এবং ১৮০৫ সালের ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়নের সই পাশাপাশি রেখে গ্রাফোলজিস্টরা এই পার্থক্য দেখিয়েছেন।
যখন নেপোলিয়নের পরাজয়ের সময় শুরু হয়, তখন তার সইয়ে আগের সেই দৃঢ়তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে
আর জীবনের শেষদিকে তার সই হয়ে যায় খুব ছোট এবং প্রায় দুর্বোধ্য ও হিজিবিজি।


হিটলারেরও উত্থান ও পতনের সময়কার সই অনেকটা আলাদা। হিটলারের জীবনের শেষ দিকে নেওয়া সই বেশ দুর্বোধ্য, পড়ে বোঝা প্রায় অসম্ভব। এই সই যেন একটু প্রতীকীভাবেই নীচের দিকে নেমে গেছে। অসম্ভব দুশ্চিন্তাগ্রস্থ, কিন্তু কঠিন এক মানুষের সই। এখানে অক্ষরগুলো অনমনীয়।


মার্কিন চিত্রাভিনেতা ফ্রেড অ্যাস্টায়ার তার নাচের জন্য খুব বিখ্যাত ছিলেন। তার সইটা এমন কিছু আহামরি নয়, কিন্তু ওপরের দিকের টানগুলোতে নাচের একটা ইঙ্গিত খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং এটাই তার সইকে আলাদা সৌন্দর্য দিয়েছে। ফ্রেডের নাচের ভঙ্গির একটা আভাস তার অদ্ভুত `F’ লেখার মধ্যেই পাওয়া যায়।

যাই হোক সাক্ষর নিয়ে অনেক হলো বক বক। বাকী আরও জানতে চাইলে নীচেে লিন্ক থেকে পড়ে নিতে হব মানে আমি যেখান থেকে জেনেছি, নিজেরাই পড়ে নাও :)

তবে আর একটু বলে যাই, বিভিন্ন রকম মানুষের সাক্ষরের তারতম্য কেমনে হয় -

অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় - মানুষের সাক্ষর নাকি ডান দিকে ঝুঁকে থাকে। অটোগ্রাফের আকার হয় বেশ বড়, অক্ষরের ওপরের ও নীচের দিক যথেষ্ট পরিমাণে লম্বা হয়।

কল্পনাপ্রবণ- মানুষের সাক্ষর হয় বিশাল। এক অক্ষরের সাথে অন্য অক্ষরের কোনো সংযোগ থাকে না। অত্যন্ত আনমনে সই করেন এরা।

অমায়িক- মনোভাবের মানুষের সাক্ষরের আকার হয় মাঝামাঝি। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে কখনোই খুব বড় হবে না। এদের সই হয় অত্যন্ত কাব্যিক, অক্ষরে ঢেউ খেলানো অংশ এবং গোলাকার ভাব দেখা যায়।

গতানুগতিক মনোভাব - সাক্ষরের আকার মাঝারি অথবা ছোট। সোজা সোজা রেখাংশের সাহায্যে সামান্য ডানদিকে হেলানো সামঞ্জস্যপূর্ণ সই। এ ধরণের মনোভাব যাদের, তাদের নামের মাঝখানের অক্ষরগুলো অন্যটির সঙ্গে যুক্ত থাকে।

আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব - এ ধরনের মানুষদের বাঁ দিকে হেলানো ছোট সই হয়। অক্ষরের মাঝখানের অংশগুলো খুবই সঙ্কুচিত থাকে।

অন্যকে দমিয়ে রাখার মনোভাব - এদের সই সর্বদা বড় হয়, বিশেষত অক্ষরের ওপরের ও মাঝখানের অংশ। মোটামুটি চাপ দিয়ে লেখা সইগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অক্ষরের রেখাংশ ওপরের দিকে উঠে যায়। ( মাই গড এটা তো আমিই মনে হচ্ছে)

স্থিরতা- এই প্রকৃতির মানুষদের সই হয় বাঁদিকে সামান্য হেলানো এবং একটানে করা। সইয়ের অক্ষরগুলোতে গোলাকার ভাব বেশি চোখে পড়ে।

উদারতা- বড় অক্ষরের ঢেউ খেলানো সই। সাধারণত এরা ছোট হাতের ‘i’ এর মাথায় ফোঁটা বা `t’ –এর মাথাটা কেটে দিতে ভুলে যান।

বহুমুখী প্রতিভা- এদের সইয়ের কিছু অক্ষর বিচ্ছিন্ন থাকে, আবার কিছু অক্ষর যুক্ত। অত্যন্ত ছন্দবদ্ধ সই। প্রতিটি অক্ষরই প্রায় নতুন নতুন ছাঁচে লেখা। অটোগ্রাফ এদের প্রতিভার সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করে।

শান্ত স্বভাব - বাঁদিকে হেলানো, ছোট, টান টান সই। অটোগ্রাফের মাঝখানে অক্ষরগুলো পরস্পরের কোণাকুণি থাকে।

উচ্ছ্বলতা- ডানদিকে বাঁকানো বড় অক্ষরের সই। অক্ষরের মধ্যে প্রায় কোনো ফাঁকই থাকে না। অক্ষরের মাঝখানের অংশ গায়ে গায়ে লেগে থাকে।

দক্ষতা- একটানে করা সই। প্রতিটি অক্ষরের সাথে প্রতিটি অক্ষরের জোর কৌণিকভাব থাকে। ইংরেজিতে করা সইয়ে অত্যন্ত যত্নের সাথে এই প্রকৃতির মানুষ ছোট হাতের ‘i’ এর মাথায় ফোঁটা বা `t’ এর মাথাটা কেটে দেন।

আত্মবিশ্বাস - সইয়ের আকার বেশ বড় হয়। সইয়ের ধরণ সুবিন্যস্ত এবং ইংরেজীতে বিরাট করে এরা ‘I’ লেখেন।

অন্যমনস্কতা- ছেঁড়া সুতোর মতো ছাড়া ছাড়া সই। সইয়ের অক্ষরগুলোও এবড়োখেবড়ো ও অসম্পূর্ণ।

অমিতব্যয়ী- বড় বড় অক্ষরের বিরাট সই। সইয়ের আকারও যেমন বড় হয়, তেমনি অক্ষরের মাঝপথের ফাঁকগুলোও বিরাট।

দ্বিধাগ্রস্ত - সুতোর মতোই পাকানো সই। সইয়ের কোনো ছিরিছাঁদ থাকে না। অক্ষরগুলো যে কোনটা কী তার মাথামুন্ডু কিছু বোঝা যায় না।

হীনমন্যতা- হালকাভাবে লেখা বাঁদিকে হেলানো ছোটখাটো সই। অক্ষরের অধিকাংশ রেখা সবসময় নিচের দিকে নেমে যায়।

নম্রতা- এদের লেখাও যেমন ছোট হয়, সইও তেমনই ছোট হয়। অক্ষরগুলোর ওপরের এবং মাঝখানের অংশ বেশ ছোট হয়।

আশাবাদী- ওপরের দিকে টান করা সুন্দর দেখতে হয় এদের সই। অক্ষরগুলোর মধ্যে গোলাকার ভাব বেশি দেখা যায়। অত্যন্ত স্পষ্ট ও পরিষ্কার দেখতে হয় এসব মানুষের অটোগ্রাফ।

নৈরাশ্যবাদী- এদের সইয়ের অক্ষরগুলো কৌণিকভাবে নিচের দিকে নেমে থাকে। অক্ষরগুলো দেখতেও হয় ভাঙাচোরা।

নিয়মনিষ্ঠা- খুবই সুন্দর দেখতে হয় এ ধরনের মানুষের অটোগ্রাফ। অক্ষরগুলোর বিন্যাস দেখবার মতো। ‘হ্য’ –এর ‘য’ ফলা ঠিকমতো দেওয়া হলো কি না, মাত্রা ঠিকঠাক আছে কি না- এদিকেও থাকে তাদের সতর্ক দৃষ্টি।

গোপনীয়তা- অক্ষরগুলো একসাথে যুক্ত থাকে। ইংরেজি অক্ষরে ‘O’ অথবা বাংলা অক্ষর ‘ব’- এসব অক্ষরের রেখাংশে কখনোই কোনো ফাঁক থাকে না। কখনো কখনো এরা নিজেদের সইয়ের ওপর আবার কলম বুলিয়ে সইকে উজ্জ্বল করে তোলেন।

বাক্যবাগীশ- বড় ঢেউ খেলানো সই। অক্ষরগুলো একেবারে গায়ে গায়ে লেগে থাকে।

রাগ- খুব চাপ দিয়ে ডান দিকে খেলিয়ে সই করেন। কৌণিকভাবে বেশি দেখা যায় নামের অক্ষরগুলোতে। অত্যন্ত রূঢ়ভাবে এরা ‘t' এর মাথা কিংবা ‘ষ’ এর পেট কেটে দেন।

যার গতিবিধি বোঝা যায় না বা মিচকা শয়তান- এসব মানুষের সই কখনো ডান দিকে বাঁকানো হয়, আবার কখনো বাঁদিকে। এদের সই হয় বিচ্ছিন্ন। ( ও মাই গড! কত্তবড় শয়তান!!)

গ্রাফোলজিস্টদের করা এসব বিচার বিশ্লেষণ সবসময় যে সঠিক হয় তা কিন্তু নয়। কিন্তু তারপরও কোনো ব্যক্তির সইয়ের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও খুঁজে পাওয়া যায় সেই মানুষটির চারিত্রিক নানা বৈশিষ্ট্য, বেশ অবাক করার মতোই।
অনেক গবেষকই এই প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চান না। অনেকেই গ্রাফোলজি নিয়ে হাসি ঠাট্টাও করে থাকেন। তবে, গ্রাফোলজিস্টদের তরফেও যুক্তি যে কম আছে তা কিন্তু নয়। তারা নানা তথ্য প্রমাণ দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন গ্রাফোলজির মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তির চরিত্রকে বিশ্লেষণ করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব।


এবার টেস্ট-


এটি আমাদের এপার বাংলার সর্বোচ্চ জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক আমাদের সকলের প্রানের মানুষটির সাক্ষর


এটি ওপার বাংলার আমার ও সকলের প্রিয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখপাধ্যায়ের সাক্ষর ...

টেস্ট নং ১ - এখন সাক্ষর দেখে এতক্ষন গ্রাফোলজী লেখাটা ঠিক ঠাক পড়া হলো কিনা বুঝার জন্য বলতে হবে কে কেমন বৈশিষ্ঠের মানুষ! :) :) :)


আমাদের প্রিয় রুনা লায়লা


ও আরেক প্রিয় মানুষ শ্রীকান্ত আচার্য্য। যার গান শুনে তার পদতলে হৃদয় বিলীন হয়ে যায়। আমার হৃদয় তাহার আপন হাতে দোলে ....

টেস্ট নং ২ - রুনা লায়লা আর শীকান্ত আচার্য্যের বৈশিষ্ঠগুলিও বলতে হবে।




রবিঠাকুরের সাক্ষর থেকে আমার জটিল মনে হয়েছিলো..... একটু ভয় পেয়েছিলাম


কাজী নজরুল ইসলামেরটা দেখার পরে বুঝলাম........ এই সাক্ষরের গ্রাফোলজী উন্মোচন কাহারও সাধ্য নহে।

টেস্ট নং ৩- তোমরা যদি কেহ পারো তো ট্রাই করে দেখতে পারো.... না পারলে নো প্রবলেমো! :)

কারণে আগেই বলেছি ইহা কাহারো পক্ষে সম্ভব কিনা বলেই আমি সন্দিহান......

এবার বলতে হবে নীচের এটা কার সাক্ষর?




যাইহোক এই ছিলো গ্রাফোলজীর সাত কাহন। আবার কখনও হাজির হতে পারি গ্রাফোলজীর আট কাহন নিয়ে.....


http://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2016/10/18/418174

https://roar.media/bangla/main/lifestyle/graphology-a-strange-process-of-understanding-the-character-of-a-person-from-autograph
https://www.pinterest.com/pin/306455949616601267
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:০৯
১৬৬টি মন্তব্য ১৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×