আমার জীবনে বিশ্বকবি বা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের যে বিস্তৃত প্রভাব তা আমি কখনও ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা। জগৎ সংসারের অনেক কিছুই ভালোভাবে বুঝে উঠবার আগে থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা রবিঠাকুরের গান মিশে গিয়েছে আমার আত্মার সাথে। আমার রক্ত মাংস, হাড় মজ্জায়, প্রতি তন্ত্রীতে মিশে আছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের বাণী। রবীন্দ্রনাথের গান বা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুধু যে আমারই সকল অনুভুতিতেই বেজে চলে আমার হৃদয় মাঝারে আমি তা বিশ্বাস করিনা। আমি নিশ্চিৎভাবেই জানি, প্রতিটি বাঙ্গালীর অনুভুতি, চেতনায়, সকল আবেগ ও উপলদ্ধিতে এই রবিঠাকুরের বাণীগুলি প্রভাব ফেলে চলেছে প্রতিনিয়ত। মাঝে মাঝে মনে হয় উনি বুঝি আমাদের বুকের গভীরে বসে বসেই লিখেছিলেন এক একটি পূজা, প্রেম, প্রকৃতি বা অনুভুতির বাণী।
খুব ছোটবেলায় স্কুলের অনুষ্ঠানেগুলিতে হয়তো বা আমরা সবাই কম বেশি শিখেছি কবিগুরুর সেই অসাধারণ সৃষ্টি আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে এই গানটি। এই গান দিয়ে আমারও অভিষেক হয়েছিলো রবিঠাকুরের গানের সাথে। এরপর ছিলো আরও আনন্দের গানগুলি যা ছেলেবেলার স্মৃতির সাথে মিলে মিশে থাকে সর্বদা যেমন- মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি, আজ আমাদের ছুটিরে ভাই আজ আমাদের ছুটি, তারপর হারে রে রে রে রে আমায় ছেড়ে দেরে দেরে কিংবা আমরা নতুন যৌবনেরই দূত।
পরে একটু বড় হবার পর জেনেছি রবীঠাকুর গান লিখেছিলেন অগুনিত। হয়তবা তিনি সেসব লিখেছিলেন জীবনের নানা ক্ষনে, নানা অনুভুতিতে কিংবা নানা উদ্দেশ্যেই। সেসব গানগুলি নানা পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে- পূজা, প্রেম, প্রকৃতি ও বিচিত্র বা বিবিধ! এছাড়াও রবিঠাকুর লিখেছেন কবিতা, ছোটগল্প ও গীতি নৃত্যনাটিকা। কবিগুরু সকল সৃষ্টিই অমূল্য কিন্তু গানগুলি যেন আমাদের প্রাণ বা প্রানের সত্বা, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের নানা পর্যায়-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারা জীবনে ২,২৩০টি গান রচনা করেছিলেন।রবীন্দ্রনাথের গীতবিতানে পর্যায়গুলি, পূজা, প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ, আনুষ্ঠানিক, বিবিধ, পরিশিষ্ট ইত্যাদি।রবীন্দ্রনাথের সম্পূর্ণ সঙ্গীত ভাণ্ডারকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করলে দেখা যাবে, একটি গীতধর্মী, অর্থাৎ এক্ষেত্রে গানগুলির সাংগীতিক বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ রাগ, সুর, তাল, লয় ইত্যাদি বিবেচিত হয়েছে। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের রচনাভাণ্ডারের এক বিরাট অংশ কাব্যধর্মী, যেখানে গানের কাব্যাংশের ভাবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুসারে সেগুলিকে আলাদা আলাদা পর্যায়ে ভাগ করা সম্ভব।
কবির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গানে কাব্যাংশকে গুরুত্ব দেওয়া। হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নানা রকম বিধিনিষেধকে অতিক্রম করে কবি তার নতুন তাল এবং মিশ্র রাগের রচনাগুলিকে সৃষ্টি করেছেন, ফলে এই সময় থেকেই সঙ্গীতে কাব্য ধর্মী বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পেল। শেষ যুগে বা পরিণত সৃষ্টির যুগে আমরা পেলাম কবির স্বকীয় রচনাগুলি যেগুলো কথা ও সুরের রূপ। রবিঠাকুরের গানের কথা ও সূরে প্রাচীন হিন্দু ধর্মশাস্ত্র উপনিষদ ও মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলি ও বাউল গানের প্রভাব রয়েছে। সুরের দিক থেকে হিন্দুস্তানি ও কর্ণাটিক শাস্ত্রীয় সংগীত, কীর্তন, শ্যামাসংগীত, বাউল গান, কখনও ইংরেজি, আইরিশ ও স্কটিশ লোকসংগীতেরও প্রভাব দেখা যায়।
আমার চোখে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পূজা পর্যায়-
গীতবিতান খুলেই প্রথমেই চোখে পড়ে কান্না হাসির দোল দোলানো পৌ্ষ ফাগুনের পালা, তারই মধ্যে চিরজীবন বইবো গানের ডালা গানটি। তখন আমার মত হয়তো অনেকেরই মনে হবে এটা প্রকৃতি পর্যায়ের গান। কিন্তু আদতে রবিঠাকুর এ গান লিখেছিলেন সৃ্ষ্টিকর্তা বা বিধির এ মায়াময় জগৎসংসারে নিবিষ্ট হয়ে। তাই এটি পূজা বা ভক্তি পর্যায়ের এক অপূর্ব অসাধারণ গান। তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী, আমি শুনি শুধু অবাক হয়ে শুনিগানটি মনে হবে কোনো গায়কের গান শুনেই বুঝি লিখেছিলেন কবি অপার মুগ্ধতায়। কিন্তু এও কবির এক মোহময় মায়াময় জগৎবিধাতার প্রতি বিস্ময় ও মুগ্ধতার জিজ্ঞাসার গান ।
সূরের আলোয় ভুবন ফেলে ছেয়ে
সূরের হাওয়া চলে গগণ বেয়ে
পাষান টুটে ব্যাকুল বেগে ধেয়ে
বহিয়া যায় সূরের সূরধ্বনি।
মুগ্ধতা কবির গানে! মুগ্ধ কবি বুঝি এ জগতের লীলাখেলার টানে। পূজা বা ভক্তিতে কবি সৃষ্টি করেছেন, আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান, তার বদলে আমি চাইনে কোনো দামকিংবা তুমি যে সূরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে কবি সূর মেলাতে চেয়েছেন গানে গানে, কবি হার মেনেছেন এই বিচিত্র পৃ্থিবীর লীলাখেলায়। তাই বুঝি লিখেছেন আমার বেলা যে যায়, সাঝ বেলাতে তোমার সূরে সুরে সূর মেলাতে।। ভক্তি ভরে চক্ষুমুদেই তিনি সঁপেছেন প্রাণ, লিখেছেন বিধাতার প্রতি, তোমার ঐ ঝরণাতলার নির্জনে, মাটির এই কলস আমার ছাপিয়ে গেলো কোন ক্ষণে?কবির সকল গানের ওপারেই দাঁড়িয়ে থাকা ভুবনেশ্বরের উদ্দেশ্যেই বুঝি লিখেছেন তিনি, দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে। গানকেই নিয়েছেন তিনি বন্দনার শ্রেষ্ঠ ও শেষ উপকরণ হিসাবে আর তাই বুঝি তিনি লিখেছেন আমার শেষ পারানির কড়ি কন্ঠে নিলেম গান, কন্ঠে নিলেম।
মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে
একেলা রয়েছ নীরব শয়ন পরে
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥
রুদ্ধ দ্বারের বাহিরে দাঁড়ায়ে আমি
আর কতকাল এমনে কাটিবে স্বামী
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো !!
প্রিয়তম হে, জাগো জাগো জাগো ॥
কি আকুল আকুতি। কি গভীর প্রেম! স্রষ্ঠাকে বুঝি এভাবেই ডাকতে হয়। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি তোমায় দেখতে আমি পাইনি। তিনি অদৃশ্য, তিনি অবিনশ্বর, হিয়ার মাঝে লুকিয়ে থেকেই পরিচালনা করেন দশদিক, আমাদের এই সত্বা। তার হাতেই দোলে এই ভ্যুলোক দ্যুলোক, তার হাতেই তো দোলে আমাদের হৃদয়। আমার হৃদয় তোমার আপন হাতে দোলে, দোলাও দোলাও দোলাও আমার খেলা যখন ছিলো তোমার সাথে, তখন কে তুমি তা কে জানতো বা আমার সকল রসের ধারা তোমাতে আজ হোক না হারা, সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সূর-সেই সীমাহীন অসীমের প্রতি এ কি ভক্তির প্রকাশ। এ কি ভালোবাসা।
যত তারা তব আকাশে, সবে মোর মন ভরি প্রকাশেকি আশ্চর্য্য অপার বিস্ময়ে বিধাতা রচেছেন এই ধরিত্রী, ধরিত্রীর বাইরের জগত। আর তাই তো আমাদের হৃদয় ভরে ওঠে, পূর্নতায়, সৌন্দোর্য্যে।আমি তারেই জানি তারেই জানি আমায় যে জন আপন জানে তারেই জানিহ্যাঁ তারেই তো জানবার কথা যে আমারে চিনতে পারে সেই চেনাতেই চিনি তারে গো। ভুবনেশ্বর হে, মোচন কর বন্ধন তব, মোচন করো হে----বিধাতার প্রতি এ আকুল আবেদন! মুছে যাক সকল বন্ধন, ঘুচে যাক হৃদয়ের সকল গ্লানিমা ও মোহ।
বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি- শুস্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়ায়ে উর্ধমুখে নরনারীপ্রার্থনার এক সুশীতল বহিপ্রকাশ। আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পুন্য করো দহন দানে শুনেছি প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যু পরবর্তী চিতার আগুন দেখে কবিমনে এ ভাবের সৃষ্টি ও স্রষ্টার প্রতি এ আবেদন।
আমার এ দেহ খানি তুলে ধর,
তোমার ঐ দেবালয়ে প্রদীপ করো। মৃত্যুর পর সকল মোহমায়ার উর্ধে উড্ডয়মান এ দেহ ও আত্মায় প্রজ্বলিত হোক দীপশিখা, ঐ উর্ধাকাশের দেবালয়ে আলো জ্বালাক সে পুন্যের আলো।
এই করেছো ভালো নিঠুর হে কেনো এবং কি কারনে কোন অভিমানে লিখেছিলেন তিনি জানা নেই। নয় নয় নয় এ মধুর খেলা --- অসম্ভব প্রিয় এ গানটি কেনো পূজা পর্যায়ের বুঝতে পারিনা আমি। পূজার থেকে এটি অধিক শ্রেয় বুঝি প্রেম পর্যায়েই মানানসই এমনই মনে হয় আমার।পিনাকতে লাগে টঙ্কার- বসুন্ধরার পঞ্জর তলে সৃষ্টির অপরুপ সৃষ্টতা দেখেই বুঝি কবির হৃদয়ে এ গান। কিংবা সৃষ্টির এই অপার আনন্দে যে গান বাজে হৃদয়ে- আনন্দধারা বহিছে ভুবনে- অন্তযামীকে দেখা যায় যেন এ গানে- চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে এ মনিহার আমায় নাহি সাজে কিংবা এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুন্দরআমার মন যখন জাগলি নারে-আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে একই ঘরানার গানগুলিতে আধাত্মিক সাধনার বাণী সুষ্পস্ট। তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছি আমি ডুবতে রাজি আছি- বিশ্ব বিধাতার পায়ে একি আকুল সমর্পন। আমি জ্বালবোনা মোর বাতায়নে প্রদীপ আনি--আমার অতি প্রিয় একটি গান,
তবে আমার চোখে রবিঠাকুরের সেরা পূজার গান-প্রতিদিন আমি হে জীবন স্বামী, দাঁড়াবো তোমার সন্মুখে
সেরা সৃষ্টির গান- প্রথম আদি তব শক্তি আদি পরমোজ্বল জ্যোতি তোমারই হে গগণে গগণে-
সেরা বন্দনা সঙ্গীত- আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে
আমার মনে স্বদেশ পর্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলি-
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি- আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত যার তুলনা আর কোনো গানেই চলেনা। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে-- এ সংকল্প, এ এক মনোবল! এ এক কঠিন প্রত্যয় অথবা আমি ভয় করবো না ভয় করবো না -আমরা সবাই রাজা-সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান-নাই নাই ভয় হবে হবে জয়-আমাদের যাত্রা হলো শুরু- বুকের গভীরে এক সু কঠিন রিনরিনে সূর যা রক্তে বাজায় রণনাকাড়া।
সেরা স্বদেশ আমার চোখে- ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা আপ্লুত হই যতবার শুনি কিংবা চক্ষুমুদে গাই।
প্রেম পর্যায়- আমার রক্ত মাংস আর অস্থিতে-
তোমায় গান শোনাবো, তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো ওগো দুখ জাগানিয়া-প্রিয়তমের প্রতি এ আকুলতা! এ যেন এক বিহ্বল উপহার। মনে রবে কিনা রবে আমারে- প্রিয় মানুষটির প্রতি জিজ্ঞাসা, প্রিয়তমের কি মনে থাকবে তাকে? তার ভালোবাসাকে? এই কথাটি মনে রেখো - মনে রেখো আমায় প্রিয়। মনে রেখো আমার এই গান । অনাদরে অবহেলায় গাওয়া এই গান মনে রেখো প্রিয়।ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দীরে। প্রিয়ার মনে চিরজীবন রয়ে যাবার এ আকুল বাসনা। দিয়ে গেনু বসন্তেরও এই গান খানি- বরষ ফুরায়ে যাবে, ভুলে যাবে জানি- মানুষ তো ভুলেই যায় কিন্তু আমাকে কি থাকবে তার মনে? নাই বা থাকুক। চাহিনা রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা, তখনই চলিয়া যাবো শেষ হলে খেলা। হুম অকারণে থাকতে চাইনা আমি। তোমার অপ্রয়োজনে নেই বৃথা সময় নষ্টের আশা। তবু তো ফাল্গুন রাতে, এ গানের বেদনাতে, আঁখি তব ছলো ছলো , এই বহু মানি---- ভুলে যেও আমাকে , সকল কর্মব্যাস্ততায়, কাজের ফাকে ভুলে যেও প্রিয়, তবুও যদি আমার এ গানের বাণী মনে পড়ে তোমার কোনো ফাল্গুনের ভেসে আসা বাতায়নের বাতাসে, একটুখানি পড়ে আমায় মনে, সেই অনেক আমার কাছে। তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা, তুমি আমার সাধের সাধনা- আশ্চর্য্য উপমায় উপমায় ছা্ওয়া এ গানের বাণী! প্রিয়তমার জন্য বুঝি এমন সোন্দর্য্য বর্ণনার উপমাগুলি আর কিছুতেই হয়না। ফিরে যাও কেনো ফিরে ফিরে যাও- অভিমানে বেদনায় এ গান যেন।হলোনা গো হলো না সই। পুরানো জানিয়া চেয়োনা চেয়োনা আমারে আধেক আঁখির কোনে।অভিমানে অভিমানে গড়া এসকল গানের বাণী। যদি জানতেম আমার কিসের ব্যাথা, তোমায় জানাতাম- ব্যার্থতায় বেদনায় এ গান যেন হৃদয়ের এক অব্যাক্ত আঁকুতি যা অনেক কথা না বলেও বলে দেওয়া যায়।হৃদয়ের একূল ওকূল দুকূল ভেসে যায়, হায় সজনী- সজনী বোঝেনা দুকূল ভাসা দুঃখস্রোতের জ্বালা। তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম- যেখানেই যাই যতদূরেই থাকি তুমি আছো আমার মনে , তুমি থাকবে আমার হৃদয়ে। সারাজীবন!আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া- আমার জীবনপাত্রের ধারন ক্ষমতার বাইরে ভালোবাসা দিলে আমায় প্রিয়। যার মূল্যের পরিমান জানা নেই তোমার।আমরা দুজনা স্বর্গ খেলনা গড়িবোনা ধরনীতে- এ জগতে নাই বা হোলো মোদের মিলন কিন্তু স্বর্গের ওপারের জগতে মিলন হবে প্রিয়। আমার মন মানেনা, দিন রজনী - তার কথা সদা ভাসে হৃদে, তার ছবি আমার জেগে থাক কিংবা নিদে।আমি যে একটা মুহূর্তেও ভুলতে পারিনা তাকে। এসো আমার ঘরে এসো আমার ঘরে - প্রিয়তমাকে স্বাগত জানাবার এ ভাষা আর কারই বা জানার আছে?
আমার নিশীথরাতের বাদলধারা, এসো হে গোপনে, আমার স্বপনলোকের দিশাহারা-
কেটেছে একেলা বিরহের বেলা
ওলো সই ওলো সই- বিরহী ব্যাকুল হৃদয়ে এ গানই তো আকুলতার ভরষা।
চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে
আমি চিনি গো চিনি
আমার প্রাণের মাঝে সুধা আছে চাও কি?
তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা
আমারও পরাণ যাহা চায়
আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি
তবু মনে রেখো
কাঁদালে তুমি মোরে
আমার মনের কোনের বাইরে
ডাকবোনা ডাকবোনা অমন করে বাইরে থেকে ডাকবোনা
তোরা যে যা বলিস ভাই- আমার সোনার হরিণ চাই
ওহে সুন্দর মম গৃহে আজি পরমোৎসব রাতি
সেদিন দুজনে
সেই ভালো সেই ভালো
আমার প্রানের পরে চলে গেলো কে?
যে ছিলো আমার স্বপনচারিনী
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে
এমন দিনে তারে বলা যায়
তোমার গীতি জাগালো স্মৃতি
এ পথে আমি যে গেছি বার বার
আমার এ পথ তোমার পথের থেকে
তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিম্ত্রনে
দিবস রজণী আমি যেন কার
প্রাণ চায় চক্ষু না চায়
সুখে আছি সখা আপন মনে
ভালোবেসে যদি সুখ নাহি
তুমি কোন গগনের ফুল
আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল- কত শত প্রেম সঙ্গীত!! তবে আমার চোখে সেরা প্রেম পর্যায়ের গান –
ভালোবাসি ভালোবাসি এই সূরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাঁজায় বাঁশী
আমার হৃদয়ে রবিঠাকুরের প্রকৃতি পর্যায়ের গানগুলি-
আকাশ ভরা সূর্য্য তারা বিশ্বভরা প্রাণ-
তাহারই মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান!!!!
এ অপরূপ সৃষ্টির মাঝে এ ক্ষুদ্র আমিকে স্থান দেবার জন্য কৃতজ্ঞতা বিধাতার প্রতি!!!
বন্ধু রহ রহ সাথে আজি এ সঘন সজল প্রাতে- সজল সঘন মন কেমন করা প্রাতে মন তো এভাবেই বলে।
নীল নবঘনে আষাঢ় গগণে - কি অপরূপ বরষা দিনের চিত্র!!! এ গানটি আমার বিশেষ প্রিয় কারণ চোখের সামনে যেন আঁকা হয়েছে এক জলছবি গানে গানে। রবিঠাকুরের লেখনীর চোখে দেখা হয়েছিলো আমার সেদিনের বরষা। ধেনু ঘন ঘন রব। ধবলীরে গোহালে আনছে রাখাল বালক। মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিক দিগন্তেরও পানে, মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো- আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে,পাগলা হাওয়ার বাদলদিনে- মন হারায় এ বরষায়!!!! বর্ষার বাদলে রবিঠাকুরের মন যে কতটাই আবেগী উতলা হত এসব গান শুনে সে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। শ্রাবনের গগণের গায়- এসো শ্যামল সুন্দর- এসব গানে গানে বরন করি বরষাকে, জানাই স্বাগতম। শুধু কি বরষা? শরৎকেও এঁকেছেন কবি- আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়া,তোমার মোহন রূপে কে রয় ভুলে, দেখো দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলে চায় - শরতের শুকতারা বা নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা জানা দিয়ে যায় শরৎ এসেছে। হিমেরও রাতে ঐ গগণের দীপগুলিরে- হেমন্তের হিমের রাতে মন করে গুনগুন! পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে- পৌষ ডাক দেয় শীতঋতুকে, একি মায়া লুকাও কায়া জীর্ণ শীতের মাঝে!!! জীর্ন শীতের দিন পেরিয়ে পাতা ঝরিয়ে আসে বসন্ত। আসে ফাগুন, বাতাসে ভাসে আমের মুকুলে অপরূপ ঘ্রাণ!! ও মঞ্জরী ও মঞ্জরী, ওরে গৃহবাসী কিংবা খোল দ্বার খোল , প্রান করে আনচান!!!মনে বাজে সূর-একটুকু ছোঁয়া লাগে এক টুকু কথা শুনি,আজি দখিন দূয়ার খোলা, ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে, যদি তারে নাই চিনি গো সে কি, তোমার বাস কোথা যে পথিক, তুমি কোন পথে যে এলে পথিক, মধুর বসন্ত এসেছে, আহা আজি এ বসন্তে- ফাগুনের উদাসী হাওয়ায় কতই না গান জাগে এ উতলা মনে। আমার কাছে সেরা ফাল্গুনী সঙ্গীত- এতদিন যে বসেছিলেন পথ চেয়ে আর কাল গুনে,
বিচিত্র
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন
রাঙিয়ে দিয়ে যাও
স্বপন পারের ডাক শুনেছি
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলোনা
খরবায়ূ বয় বেগে
সে কোন বনের হরিন ছিলো আমার মনে
তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা
কে যাবি পারে
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি
তুমি কি কেবলি ছবি
ওগো নদী আপন বেগে
দূর দেশী সেই রাখার ছেলে
জোনাকী কি সুখে ঐ ডানা দুটি মেলেছো
প্রেম ও প্রকৃতি
কতবারও ভেবেছিনু
দুজনে দেখে হলো
পুরানো সে দিনের কথা
বঁধু মিছে রাগ করোনা
নানা ক্ষনে নানা আবেগ ও অনুভুতির এ কি অসাধারণ সৃষ্টি!!! ধন্য হলো এ নশ্বর জীবন, কবিগুরুর কথা ও সূরে!!!!!!!!
রবীন্দ্র সঙ্গীতের সবচাইতে প্রিয় শিল্পী রেজওয়ানা বন্যা ও সাদী মোহাম্মাদ। তারপরেও আছেন শাহানা বাজপেয়ী। আমার কাছে শ্রীকান্তের রবীন্দ্রসঙ্গীত তুলনাহীন। শ্রাবনী সেনও অনেক অনেক প্রিয়।
বেঁচে আছি অনেকগুলো দিন রবিঠাকুরকে সাথে নিয়ে। হৃদয়ে ধারণ করেছি তাকেই -তাই তারই ভাষায় বলছি- আমি তারেই জানি তারেই জানি , আমায় যে জন আপন জানে তারেই জানি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তিনি আপনার চেয়ে আপন যে জন । ভালো থাকুন তিনি পরলোকে। কোনো কোনো আত্মার মৃত্যু নেই। রবিঠাকুরও অমর তাই আমাদের হৃদয়ে, প্রতি বাঙ্গালীর ভালোলাগায়, ভালোবাসায় বা সুখে ও দুঃখে, বেদনায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩০