ঈদ চলে গেলো প্রায় এক সপ্তাহ হতে চললো কিন্তু এবারে আমার ঈদসংখ্যাটা প্রকাশ করতে একটু দেরী হয়ে গেলো । দেরীর কারণটা অবশ্য আর কিছুই না আমার এবারের ঈদ এত এত খানাপিনা, সাজুগুজু, ঘুরাঘুরি আর অতিথি আপ্যায়ন আর তাদের বাড়িতে দাওয়াৎ খেতে খেতে কেটেছে যে আমার এবারের সামু ঈদসংখ্যা প্রকাশের সময়ই ছিলোনা।
অনেকেই বলে, আগের দিন আর নাইরে ভাই। সেই ছোটকালে ঈদ ছিলো ঈদের মত্, এখন আর ঈদ আগের মত ভালো লাগেনা। দূর একটা দিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেই বা এমন কিছু। অনেকেই আবার এই একটা দিনকে নিয়ে এত আদিখ্যেতার মানেই খুঁজে পায়না আবার অনেকেই ভাবে ঈদ মানেই ছোট বাচ্চাদের আনন্দ। আমি এটা একদম মানতে রাজী না আমার কাছে ঈদ এখনও সেই ছোট্ট বেলায় মা আমাকে হারিয়ে যাবার ভয়ে পায়ে নুপুর পরাতো সেই বেলাটা থেকে এই এতটা বয়সবেলা পর্যন্ত মনে হয় একই রকম আনন্দময় আর সুন্দর।
সেই ছোট্টবেলার ঈদে মানে ঈদ শুরুর সেই একমাস আগ থেকেই প্রথম রোজা থেকেই ফেরদৌসী খালামনির এসো গান শিখি অনুষ্ঠানের গান, তিরিশ দিনে রোজার শেষে ঈদ হবেরে ভাই, এখন থেকে খুশীতে মোর ঘুম আসেনা তাই, ঈদ হবে রে ভাই সেখান থেকেই শুরু হত আমার ঈদের আনন্দ। আমি খুব মন দিয়ে যেমনি গানটা শিখে ফেলতাম তেমনি গানের কথাগুলোর মতই মন দিয়ে ফিল করার চেষ্টা করতাম ঈদের আনন্দটা। এখনকার দিনে কোনো বাচ্চা সেটা করে কিনা আমার জানা নেই। মনে হয় করেনা।
সে যাইহোক, আমার ছোটবেলায় আমি খুবই দয়ালু এবং বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্য বা তাদের শিশুদের জন্য তাদের কষ্টটা একদম বুকের ভেতরেই ফিল করতাম। ঠিক এই কষ্টটা আমি ফিল করতে শিখেছিলাম যখন, তখন শুনেছিলাম কাজী নজরুলের সেই অসাধারণ ঈদের গানটা, নাই হলো মা বসন ভুষন এই ঈদে আমার, আল্লাহ আমার মাথার মুকুট রাসুল গলার হার। আধ্যাত্নিক ব্যাপার স্যাপারগুলো তেমন তখনও বুঝতাম না তবে এই গানের মাঝে সবচেয়ে যে কষ্টের দৃশ্য আমার চোখে ফুটে উঠতো একজন গরীব বাচ্চা, ঠিক আমারই মতন বয়সী বাচ্চা এই ঈদে বুঝি একটা নতুন জামা পায়নি। এই ব্যাপারটা আমাকে খুব কষ্ট দিত।
আমার ছোটবেলায় শুনেছিলাম, ২৭শে রোজায় মেহেদী লাগালে নাকি অনেক সওয়াব হয় তাই সেদিনই মেহেদী লাগানোর নিয়ম। তখন এক একটা পাড়া আর ছেলেমেয়েরা এত আপন ছিলো । বড় আপুরা ছোটদেরকে নিজের ইচ্ছায় যত্ন করে কাঁঠি দিয়ে মেহেদী লাগিয়ে দিত নানা রকম নক্সায়। মেহেদী লাগানো হত ২৭ রোজার বিকেলে কারো বাড়ির খোলা ছাঁদে আর তারপর মাত্র দুদিন কি তিনদিনের অপেক্ষা। এর পর চাঁদ দেখা। তারপর বাজীর আওয়াজ, তারাবাজী, আতশবাজী আকাশে আকাশে আলোর ঝরণা। সে এক মজার ভুবন। এখনকার পুরান ঢাকার বাচ্চারা ছাড়া এইসব আনন্দের দেখা আর কেউ পায় কিনা জানা নেই আমার।
যাইহোক, একটু বড় হবার পর শুরু হলো সাজুগুজু নিয়ে চিন্তা, ঘরবাড়ি সাজানো বা সুন্দর থালাবাটিতে করে ঈদের দিনে খানাপিনা পরিবেশ। এ অভ্যাসটা আমি পেয়েছিলাম আমার প্রচন্ড সৌন্দর্যবিলাসী মায়ের থেকেই। সেই অভ্যাসটা এখনও আছে এবং ঈদ আনন্দের সাথে মিশে আছে সে ভালোলাগাটাও। সেই মেহেদী আজও দেই আমি। মেহেদী ছাড়া ঈদ হয়না তবে মিস করি সেই ছাঁদ আর তাতে পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই, একসাথে মেহেদী দেই আর ঈদের আনন্দ নেই সেইরকম ব্যাপারটা আর কি?
আর ঈদে কি পরবো না পরবো , কি রান্না হবে, ঘর বাড়ি কেমনে সাজানো হবে সবই এখন নিজের মাথায় ঘুরে। আমার আজও ঈদ মানেই আনন্দ এবং স্পেশাল আনন্দ, যেটা আসলেও হারিয়ে যায়নি আমার ছেলেবেলার সাথে সাথে।
যাইহোক এবারে বলি আমার ঈদসংখ্যা -২০১৫ এর কথা-
ঈদের সকাল শুরু হলো আলার্ম শুনে ঠিক ৬ টায়। ঘুম ভেঙ্গে জানালার পর্দা খুলে ঈদের সকালটা দেখলাম। তারপর কি কি নাস্তা খানাপিনা হবে সেটার একটু ব্যাবস্তা করা হলো-
এবারের ঈদের স্পেশাল আইটেম ছিলো - প্রন শাসলিক-
এটা যে এত্ত সুন্দর দেখতে হবে আর খেতে আরও আরও মজা তা স্বপ্নেও ভাবিনি আগে
মোগলাই মোরগ
বানানো হয়েছে সিদ্দিকা কবির (আমার এক রকম নানুর) রেসিপি বুক থেকে
এটা বিফ মুঠি কাবাব-
ইন্টারনেট রেসিপি
মগজের কারিকুরি
এটা আমার মাইক্রো কুকিং টিচার দীপা আমিনের কাছে শেখা রেসিপি ফাইল থেকে নেওয়া
এটা চিকেন স্ট্রিপস
আমার এফ এফ সি খেয়ে খেয়ে বুঝে ফেলা রেসিপি
এটা গরুর মাংস
এটার রেসিপি আমি জন্ম থেকেই জানি
এটা পোলাও
এটা ছানা
আমাদের আনোয়ারার রেসিপি
এটা জর্দা-
রীতা মুজিব রেসিপি- যখন আমি কুকিং কোর্স করিয়াছিলাম সেই ফাইল হইতে
এটা হালিম ও ফিরনী
আমাদের পাশের বাসা দিয়েছে - রেসিপি তারাই জানেন বা রাঁধুনী হালিম মিক্স রেসিপি
খানাপিনা শেষ হলো এইবার সাজুগুজু-
ঈদের দিনে সাজুগুজুর পর আমার প্রিয় ঈদের শাড়ি
ঈদের পরদিন দাওয়াৎ খেতে গিয়ে তুললাম তাদের খানাপিনা ছবিসসস
চিংড়িমাছের ভাজাভুজা
রোস্ট
সালাদ
সব্জী
গরুর মাংস আর পোলাও এর ছবি আর দিলাম না।
পরদিন এক কাজিন এলো তার পিচ্চিকে নিয়ে
তখন তো কিছুই ছিলোনা তার জন্য ভাজা হলো রুপচাঁদা আর পোলাও । সাথে অবশ্য সালাদ, ফিরনী সেসবও ছিলো।
এইবার আমি একটা গিফট জামা পরে বেড়াতে যাই মামাবাড়ি
পরেরদিন যমুনা সিনেপ্লেক্স- টারমিনেটর দর্শন
এই আপাতত আমার ঈদসংখ্যা ২০১৫ কাহিনী-
প্রতি বছর নতুন দিন আসে, আসে আমাদের জীবনের নতুন ভালোলাগা, আনন্দ ব্যাথা বা বেদনার ইতিহাস। মানুষের জীবনের প্রতিদিনের ইতিহাস লিখে রাখা হয়না কোনো ইতিহাস বই এ। সে সব জমে থাকে শুধুই বুকের গভীরে। জমতে জমতে একদিন হয় স্মৃতির পাহাড়। স্মৃতির পাহাড়ে একের পর এক স্মৃতি চাপা পড়ে পুরোনো স্মৃতিগুলি ঔজ্বল্য হারায় তাদের নাম হয় তখন বিস্মৃতি। স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরালে একটা সময় কত স্মৃতিই হারিয়েও যায়। তো এই ব্লগগুলো মানে আমার এসব আবল তাবল কথার ঝাঁপি পোস্টগুলোও আমার তেমনি স্মৃতির পাতা। আমার জীবনের ইতিহাস বই এর একটা পাতা।
সে যাই হোক এবারের ঈদ নিয়ে কতগুলো ঘটনা না বললেই না।এবারের ঈদের কিছু মজার স্মৃতি যা না বললে ঈদ-২০১৫ স্মৃতিচারণ সম্পূর্ণ হবেনা।
ঘটনা-১
ঈদের সকালের খানাপিনা সেরে সাজুগুজু করতে বসলাম। মুখে ফেস পাউডারের পাফ বুলাতেই মনে পড়লো শতদ্রু শত্রু ভাইয়াটার কথা। আমি নাকি মুখে দুই স্তর বেসন লাগায় বসে থাকি। তাও আবার শুধু বসেই থাকা না ঈদের দুইদিন আগে থেকেই নাকি বসে থাকি!!!!!!!!!! এটা ভেবে আমার হাত থেমে গেলো। তারপর ভাবলাম নো পাত্তা শতদ্রু শত্রুভাইয়ার কাজ শত্রু করেছে বলেছে বেসনের কথা হিংসা করে তাই বলে কি সেটা ভেবে আমার সাজুগুজু বন্ধ করা যায়!!!!!!!!!!!! কাভি নেহি!!!!!!!!!!!!!! আাবার মনের আনন্দে, ফেস পাউডার, ব্লাসন, আই লাইনার, লিপিত্তিক কিছুই বাদ না রেখে মনের আনন্দে সাজুগুজু করে ফেললাম।
ঘটনা-২
এরপর বলি খানাপিনার গল্প। এই সারামাস রোজা রেখেও আমার এত্ত এত্ত খিধা যে কই থেকে আসলো আল্লাহ জানে। যা খাই তাই মজা লাগে। তখন মনে পড়লো জেন রসি ভাইয়া আর শত্রুভাইয়া আমাকে না দেখেও কেমনে বুঝলো আমি ...........
ঘটনা-৩
এরপর সবচেয়ে অবাক কান্ড। সিনেমা দেখতে বসেছি। প্রথম ৩/৪ মিনিটস থ্রি ডি চশমা চোখে কিছুক্ষন অবাক হয়ে রইলাম। কিন্তু একটু পরেই মনে হলো হায় হায় চারিদিক অন্ধকার ঘুটঘুটে। বাইরের আলো বাতাস কিচ্ছু ঢুকছে না। হায় হায় হায় আমার তো নিশ্বাস বন্ধ হয়েই যাবে। আম্মা!!!!!!!!!!!! আর একটু হলে এটা ভেবে আমি হার্ট এ্যাটাক করতাম। চোখ থেকে চশমা খুলে এদিক ওদিক উশখুশ শুরু হলো আমার। তারপর অনেক দোয়া দরুদ পড়ে নিজের মান সন্মান লজ্জা শরম নিয়ে কষ্ট করে বসে থাকলাম চোখ বুজে মিঃ বিনের মত। উফ!!!!!!!!!!!! রিকি আপু যে কেমনে এত সিনেমা দেখে বুঝিনা।
যাইহোক ঈদ কাটলো এভাবে .......হাসি, আনন্দ, খানাপিনা, সাজুগুজু, বেড়াবেড়ি, ঘুরাঘুরি আর শেষে একটুখানি ভয়ে ভয়ে........
আমার এবারের ঈদসংখ্যা ২০১৫ উৎসর্গ করছি আমার অনেক অনেক প্রিয় চারজন, শতদ্রু নদী শত্রুভাইয়া, জেন রসি শত্রুর দোসরভাইয়া,, দর্পন আতেল কবিভাইয়া লুকাই লুকাই শত্রুর দলে যোগ দেওয়া ভাইয়া আর শত্রুদের সাথে আঁতাতকারী রিকি আপুনিকে।
আরও দুজন প্রিয় মানুষ ইপ্ষিমনি আর উর্বি আপুনির জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা আর শুভকামনা।
সবাই কে আবারও বাসী ঈদ মুবারাক!!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:২৬