আমি যখন থেকে পড়তে শিখেছি তখন থেকেই বাসার দৈনিক পত্রিকার সেই বিশেষ দিনটিই আমার বিশেষ প্রিয় ছিলো, যেদিন ছোটদের জন্য বিশেষ একটি পাতা থাকতো। ছোটদের জন্য লেখা সেসব ছড়া, কবিতা বা গল্প আমি মনের হরষে পড়ে ফেলতাম। খুব ইচ্ছে হত তখন থেকেই আহা আমার লেখাও যদি ওমন ছাপার অক্ষরে কখনও দেখতে পেতাম। কাব্যচর্চার সেই প্রানান্তকর প্রচেষ্টার শুরু আমার সেই শিশুবেলা থেকেই। একবার আমার মামা আমার এত শখ দেখে আমার লেখা অংবং একটি ছড়া কিছু কারেকশন করে পাঠিয়ে দিলেন ইত্তেফাকে। আর কিছুদিন পর আমাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক ঠিক সেই ছড়াটাই আমার নামে দেখা গেলো দৈনিক পত্রিকার আমার সেই প্রিয় পাতায়। যদিও সেই লেখাটার প্রায় খানিকটাই মামাজানের সাহায্য নিয়ে লেখা ছিলো তাই পুরো ক্রেডিটটা নিজেকে দিতে পারছিলাম না।
এই ভাবে স্কুল, কলেজ পত্রিকা, ছোটখাটো ম্যাগাজিনের গন্ডি পেরিয়ে ও সামুতে নিয়মিত আবোল তাবোল মনের যা খুশী লিখতে লিখতে একটা সময় বুঝতে পারলাম আমি আমার কর্মক্ষেত্রে মানে আমার স্কুলে বাচ্চাদের জন্য অনেক কিছুই লিখতে পারছি। বিভিন্ন নাটক, পাপেট শো এর স্ক্রিপ্ট, উপস্থাপনা বা অনুষ্ঠানের ধারা বিবরণী লিখতে লিখতেই একদিন ষোলোই ডিসেম্বর আমাদের সাংস্কৃতিক স্কুলের বিজয় দিবসের একটা অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের আবৃতির উপযোগী কবিতা দরকার হয়ে পড়লো। কিন্তু মনমত কিছু তেমন পাওয়া যাচ্ছিলো না। আমরা চাইছিলাম পুরো ইতিহাসটাই একটা কবিতায় ছোটো করে। অতঃপর আমি বসে গেলাম ইতিহাসটাকেই ফার্স্ট টু লাস্ট কবিতার ছন্দে লিখে ফেলতে। তারপর মেয়েদেরকে সবুজ শাড়ী আর ছেলেদেরকে লাল পাঞ্জাবী পরিয়ে যখন সেটা আবৃতি করানো হলো । এতটুকু পিচ্চিপাচ্চিদের সেই অসাধারণ পারফরমেন্সে সবচাইতে বেশী মুগ্ধ হলাম আমি। সাথে তাদের বাবা মা ও আমার সকল কলিগেরা। সেই হলো আমার অনুপ্রেরণা।
মনে পড়লো আমার ছেলেবেলা। এরপর একটা বছর বসে বসে শুধু বাবুদের জন্য লিখলাম। আসলে আমাদের বিজয় দিবস, আমাদের পতাকা, বাংলাদেশে ফুল ফল মাছ সবই যেন আমাদের বাবুরা শিখতে পারে মনের আনন্দে, ছড়া ও ছন্দে সে কথাটা মনে আসলো বলেই লিখতে শুরু করলাম ওদের জন্য।
লেখাগুলো শুধুই মজা করে লেখা না বরং কিছু শিক্ষনীয় বিষয় মাথায় রেখে লিখেছি আমি , ভাগ করেছি কয়েকটা ক্যাটাগরীতে। যদিও সেই ভাগাভাগির ব্যাপারটা লেখার সময় মাথাতেই ছিলো আমার। যেমন বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং শিশুদেরও যে বড়দের প্রতি, গরীব মানুষদের প্রতি কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে সে ব্যাপারগুলো আমি আমার কবিতায় আনার চেষ্টা করেছি। ক্রমশ নিষ্ঠুর হয়ে ওঠা এই পৃথিবীতে শিশুরা বড় হয়ে উঠুক সহমর্মিতা, ভালোবাসা আর মমতায় আমার চাওয়া এতটুকুই। গড়ে তুলুক তারা সুন্দর একটি পৃথিবী।
আমার লেখা কবিতাগুলোর মাঝে বাংলাদেশের ইতিহাসে রয়েছে....
ষোলোই ডিসেম্বর বা আমাদের বিজয় দিবসের কথা-
ষোলোই ডিসেম্বর
রোজ সকালে পাখির ডাকে ভাঙ্গে আমার ঘুম,
মায়ের ভাষায় মাকে ডাকি, মা চোখে দেয় চুম।
লাল সুরুযের আলো মেখে ভোরের গান গাই,
সবুজ সজীব হাওয়ায় ভেসে প্রান্তরেতে ধাই।
আমার দেশের মতন এমন দেশটি যে নেই কোনো,
একাত্তরের গল্প বলি চুপটি করে শোনো।
২৫শে মার্চ কালোরাতের অসীম অত্যাচারে,
শত্রুরা যে দিলো হানা হঠাৎ অন্ধকারে ।
লাল সবুজের প্রতিবাদে মুখর হলো দেশ,
উঠলো রুখে বীর বাঙ্গালী মুক্তি অনিঃশেষ।
নয়টি মাসে তিরিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে,
মুক্ত করে নিলো স্বদেশ নিজের পরিচয়ে।
হাতে নিয়ে বিজয় কেতন আসলো ফিরে ঘরে,
বাংলাদেশের মুক্তিসেনা ষোলোই ডিসেম্বরে।
আমরা আমাদের পতাকাকে ভীষন ভালোবাসি। একটি পতাকা যেন একটি দেশের প্রতিচ্ছবি। পুরো একটি দেশকে বহন করে একটি পতাকা। পতাকার মূল্য ও পতাকার ঐ লাল সবুজের মানেটা শিশুরা বুঝে নিতে শিখুক মনে প্রাণে তাই আমাদের প্রিয় পতাকাকে নিয়ে আমার লেখা-
ঐ পতাকার মানে
লাল সবুজে গড়া মোদের বাংলাদেশের কেতন,
কি তার মানে জানো তুমি, করো কি তার যতন?
নতুন দিনের সূচনাতে লাল সূর্য্য ওঠে,
তাহার আলোর পরশ নিয়ে কাননে ফুল ফোটে।
শস্য হাসে মাঠের পরে, ভাসে রোদের আলো,
রক্ত রাঙ্গা সূরুয তোমায় অনেক বাসি ভালো..........
প্রিয় পতাকার কথা লিখতে গেলে যেন শেষই হয়না। বার বার লিখতে ইচ্ছে করে প্রিয় পতাকাকে নিয়ে আর তাই -
লাল সবুজের ঐ পতাকা
লাল সবুজের পতাকাটা উড়ছে উর্ধাকাশে,
বাংলাদেশের বিজয় গাঁথা ঐ পতাকায় ভাসে।
বলছে সে তো তাদের কথা ষোলোই ডিসেম্বরে,
বিজয় নিয়ে ফিরেছিলো যেই ছেলেরা ঘরে।
ফুটিয়েছিলো মায়ের মুখে বোনের মুখে হাসি,
মাতৃভুমি সোনার বাংলা তোমায় ভালোবাসি.......
শত শত বীর শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী সেই সব মহান সৈনিকদের অবদান ভুলে যাবার নয়। তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে গড়েছি আমরা স্মৃতিসৌধ। সেই প্রতিদান ভুলে যাবার নয় আর তাই তো স্মৃতিসৌধ আমাদের কাছে এতটা তাৎপর্য্যবাহী।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
চল মা যাই স্মৃতিসৌধে, ওদের চরণতলে,
দিয়ে আসি স্মৃতির অর্ঘ, ওদের বেদীমূলে।
জানিয়ে আসি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আমার,
প্রানের বিনিময়ে যারা দিলো এ দেশ উপহার........
আমরা বাংলাদেশী। আমাদের আছে জাতীয়, ফুল, ফল ও বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ঠ আর সেসব নিয়ে লিখেছি-
জাতীয়তা
বাংলা দেশে বাস করি আমরা বাংলাদেশী
বাংলা মোদের জাতীয় ভাষা, আমরা বাংলা ভাষী ।
শাপলা শালুক ঝিলের জলে ঝিলমিলিয়ে দোলে
জানো নাকি শাপলা ফুলকে জাতীয় ফুল বলে ........
বাংলা আমাদের মাতৃভাষাা। পৃথিবীতে একমাত্র আমরা বাংলাদেশীরাই লড়াই করে জিনে নিয়েছি মায়ের ভাষাকে। সেই সব ভাষা শহীদদের অবদান কখনও ভুলে যাবার নয়।
বাংলা ভাষা
ভুলবোনা কোনোদিন, ভাষা শহীদের ঋণ
যে ভাষায় কথা বলি শুরু হয় প্রতিদিন
যে ভাষায় গান গাই প্রাণ খুলে হাসি
যে ভাষায় মাকে ডাকি মাকে ভালোবাসি........
স্বাধীনতা ছাড়া নিশ্বাসটুকু অর্থহীন। আর আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে-
স্বাধীনতা
স্বাধীনতা মানে মায়ের গলায় ঘুম পাড়ানিয়া গান
স্বাধীনতা মানে খুব ভোরে জাগা শিউলী তলার ঘ্রাণ।
স্বাধীনতা মানে লাঙ্গল জোঁয়ালে বাবার মুখের হাসি
স্বাধীনতা মানে এ দেশ আমার বাংলাকে ভালোবাসি .....
যাদের অবদানে পেয়েছি এ দেশ, পেয়েছি বাংলার কবিতা, সেসব মানুষের অবিস্মরণীয় অবদান, তাদের দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনী, জীবনী জানতে সেই সব বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে -
বীরশ্রেষ্ঠদের কথা
ছিলো তারা সাতজনা, ছিলো সাত প্রাণ
সতেজ, সজীব দেহ, বুক ভরা গান।
এ দেশকে বেসেছিলো, বড় বেশী ভালো
আশা ছিলো জ্বালাবেই, ঘরে ঘরে আলো।
মুক্তিযুদ্ধে তারা শপেছিলো প্রাণ
ভুলি নাই ভুলবোনা তাহাদের দান .....
যার কারণে পেয়েছি এ দেশ। স্বাধীন দেশের আলো হাওয়ায় শ্বাস নিয়ে বেঁচে আছি। বাংলাদেশের জনক যিনি। সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের জীবনি নিয়ে-
বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশে বাস করি বাংলা মোদের কৃষ্টি
জানো তুমি তোমার এ দেশ কে করলো সৃষ্টি?
বাংলাদেশের জনক তিনি বাংলাদেশের প্রাণ
জীবনবাজি করেছিলেন রাখতে দেশের মান।
উনিশো বিশ সতেরই মার্চ জন্মেছিলেন তিনি
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বলে সে গ্রাম চিনি ........
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। দুঃসাহসী, বিদ্রোহের সূর থেকে চির মমতা ঝরে পড়ে যার গান ও কবিতায় সেই জাতীয় কবির জীবনি নিয়ে-
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
বর্ধমানের আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে
জৈষ্ঠমাসের এগারো তারিখ তেরোশো ছয় সনে,
জন্ম নিলেন দুখু মিয়া বাংলার বুলবুল
তিনিই মোদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল.......
বাংলাদেশের প্রকৃতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে-
বাংলাদেশের ঋতু
বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু ছয়টি রকম রঙে
নানান সূরে গান গেয়ে যায় খেলে নানান ঢঙে
গ্রীস্মকালে তালের পাখায় জুড়োয় আদুল গা
নানান রকম ফলের স্বাদের হয়না তুলনা ........
নানান পেশায় বাংলাদেশ
কৃষকভায়া ধান বুনে যায় রোদ বৃষ্টি ঝড়ে
সে ধান ওঠে, চাল হয়ে যে আসে মোদের ঘরে।
ডাল সব্জী আলু পটল রোপন করেন চাষী
কৃষকভায়া, চাষীভায়া তোমায় ভালোবাসি......
বাংলাদেশের ফল
আমার দেশের ফলের কথা কি বলবো ভাই
নানান স্বাদে নানার পদে তুলনা তার নাই।
মধুমাসে মধুর স্বাদের নানান রকম আম
রঙিন মুখে খেতে মজা বাংলাদেশের জাম......
বাংলাদেশের পাখি
গানের পাখি দোয়েল, শ্যামা, পাপিয়া, বুলবুলি
রোজ সকালে গান গেয়ে যায় ভোরের দূয়ার খুলি
তোতা, টিয়া, ময়না দোলে সোনার খাঁচাটিতে
শিষ দিয়ে যায়, বলে কথা আকাশটা তার মিতে ........
পুতুল
আমার আছে মাটির পুতুল, পটুয়া রঙ দিয়ে
এঁকেছে তার রঙিন শাড়ি, অনেক যতন নিয়ে,
একেছে চোখ, এঁকেছে নাক, এঁকেছে তার চুল
কুমোর বাড়ির পুতুল সে যে, নেই তো কোনো ভুল .....
বাংলাদেশের পিঠা
আমার বাড়ি গন্ডগ্রামে শহর থেকে দূরে
রহীমুদ্দীর আসমানীদের সেই যে রসুলপুরে।
কাঁদি ভরা খেঁজুর গাছে পাকা খেঁজুর দোলে
শীতের দিনে সেই গাছেতেই রসের হাড়ি ঝোলে .......
হাজার নদীর গড়া মোদের সোনার বাংলাদেশ
কর্ণফুলী, শীতলক্ষা, পদ্মা, মেঘনা
কুশিয়ারা, তিতাসনদী, সুরমা, যমুনা
চিত্রা, করোতোয়া নদী, গড়াই আর সোনাই,
বাংলাদেশে নদীর খবর এবার বলে যাই .......
বাংলাদেশের পর্যটন
অবারিত সাগরের অনাবিল হাওয়া
দিগন্ত ছুঁয়ে যেথা করে আসা যাওয়া
প্রকৃতির সাথে মাতে উত্তাল স্রোত
ঘুরে এসো সেথা থেকে পতেঙ্গা সৈকত।
সুন্দর বন
সুন্দরী গাছে ভরা সুন্দর বন
গেওয়া, কেওয়া, ধুন্দুল, পশুর, গড়ান
তিনশত চৌত্রিশ প্রজাতির গাছে
সুন্দরবন সেথা সদা ভরে আছে ।
বাংলাদেশের ফুল
গোলাপ, বেলি, যুঁই, চামেলী, টগর, পলাশ, বকুল
আমার দেশে ফোটে যে ভাই নানান রকম ফুল ।
নাগকেশর আর কাঠালচাঁপার গন্ধে ব্যাকুল প্রাণ
রাতের বেলা সুবাস ছড়ায় হাস্নাহেনার ঘ্রান।
বাংলাদেশের খেলা
এক্কা দোক্কা
ছকঘর কেটে কেটে এক্কা ও দোক্কা
তেক্কা ও চৌকাতে পঞ্চমে ছক্কা
গুটি ফেলে এক পায়ে লম্ফ ও ঝম্প
খুকুমনি খেলে তাই হলো ভূমিকম্প ...
গোল্লা ছুট
গোল্লার দল থেকে দাও এক ছুট
হই হই রই রই ধর ধর হুট
পহেলা বৈশাখ
টাক ডুমা ডুম বাজছে ঢাক
তারই সাথে বাজছে শাঁখ।
আবার এসেছে ফিরে পহেলা বৈশাখ .......
ছোট, বড় ধনী, দরিদ্র ,সকল জাত পাত ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে আমরা একই পরিচয়ই ধারণকারী আর তা হলো আমরা বাংলাদেশী। ঝড়, জল শীতে একজন কষ্ট পাবে অন্যেরা আয়েস করে ঘুমাবে এমন স্বার্থপরতার বেড়াজাল ছিন্ন করে আমাদের শিশুরা যেন শিশুকাল থেকেই বেড়ে ওঠে বুক ভরা মমতা ও একে অন্যের জন্য সহানুভুতি নিয়ে-
শীতবস্ত্র দান
মনে আছে ব্ল্যাকশীপ আর ছোট্ট ছেলের কথা,
বাস করতো পথের ধারে ছিলো অনেক ব্যাথা।
দুঃখী ছেলে অনাথ শিশু কেউ ছিলো না তার,
ছিলো না তার গরম জামা, ছিলো না আহার।
কালো ভেড়া তারে দিলো এক বস্তা উল
গরম জামা পরলো ছেলে আনন্দে দুলদুল।
এমন অনেক দুঃখী ছেলে আছে পথে পথে
নেই তো একটা গরম জামাও ভীষন শীতের রাতে ............
আমাদের অনেকের বাড়িতেই নানা রকম কাজে সহায়তা করেন দরিদ্র কিছু মানুষ। তাদের প্রতি আমাদের ব্যাবহার সদা ও সর্বদা যেন সুন্দর হয় সেই অভ্যাসটি শিশুকাল থেকেই গড়ে উঠতে হবে আমাদের শিশুদের মাঝে-
গরীবদের প্রতি ব্যাবহার
সকালবেলা যখন তুমি ঘুম ভেংগে রোজ ওঠো
নাস্তা খেয়ে টিফিন নিয়ে স্কুলেতে ছোটো
তোমার টিফিন, কাপড়, জামা সব গুছানো থাকে
ঘর বাড়ি সব ঝা চকচক সেই ঠিকঠাক রাখে।
তোমায় নিয়ে চড়িয়ে গাড়ি স্কুলে সে নেয়
যখন যেথায় ইচ্ছা তোমায় সেই যে নিয়ে যায়
সিটবেল্টটা বেঁধে দিয়ে সাবধানেতে রাখে ..........
পথশিশুদের জন্য-
বকুল
নামটি আমার বকুল, আমার বাড়ি পথের পরে
রোজ সকালে গাঁথি মালা অনেক যতন করে।
একটা গাড়ি যেই ছুটে যায়, মালা নিয়ে ছুটি
শিশু মনের নানা রকম আনন্দ আর আবিষ্কার এবং তাই নিয়ে লেখা কবিতা-
ছেলেবেলায় রঙ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেনা এমন কাউকেই মনে হয় খুঁজেই পাওয়া যাবেনা। আর শুধু তাই নয় রঙের সাথে রঙ মিলিয়ে নানা রঙ তৈরীর খেলাও যে কত মজার-
রঙ্গের খেলা
এক দুপুরে আবিষ্কারে ভীষন অবাক হলাম
রঙ্গের খেলা যাদুর খেলা জানতে আমি পেলাম।
লাল আর সাদা মিলিয়ে দিলে গোলাপী রঙ হয়
লাল কালোতে খয়েরীটাও দেখতে মন্দ নয় ......
ছেলেবেলায় গান, নাচ বা আঁকাআঁকি শেখার অভিজ্ঞতাটাও কম মজার নয়। একেকজনের জন্য অবশ্য একেকরকম। তবে মজার সেই স্ম্বতিগুলি নিয়ে লেখা-
গান শেখা
হারমোনিয়াম বাজিয়ে আমি গাইছি নিধাপাধা
সেটাই নাকি করতে হবেই সেটাই গলা সাধা ।
পাশের বাসার রুম্মামনি হারমোনিয়াম নিয়ে
তরতরিয়ে বাজায় কেমন আলগোছে মন দিয়ে
ইষ্টি কুটুম মিষ্টি কুটুম কুটুমপাখির ছা ............
শামার নাচ
প্রথম শামা নাচতে গেলো স্টেজটার পরে
সাজিয়ে দিলেন মা যে তাকে অনেক যতন করে।
লাল শাড়িটা কুঁচিয়ে তাতে লাগিয়ে জরীর লেস
ঘাঘরি করে দিলেন যেন দেখতে লাগে বেশ ........
ছবি আঁকা
ছোট্ট ববি আঁকছে ছবি মনের সুখে রঙ্গে
কত্ত কিছু আঁকছে ববি নানান রকম ঢঙ্গে,
আঁকছে পুশি, বাঘের মাসী, আঁকছে হলুদ হুলো ..........
ছবি আঁকা
ডরু যখন ছোট্ট তখন শিখলো প্রথম আঁকা
যা দেখে তা আঁকতে হবেই হোক না আঁকা বাঁকা।
স্কুলেতে ছবির খাতায় আঁকলো মন দিয়ে
নদীর ঘাটে বউ চলছে কলসী কাঁখে নিয়ে।
কলাগাছটা দাঁড়িয়ে আছে নদীর ধার ঘেসে .........
ছোটবোন তো সকলেরই অনেক অনেক আদরের। তেমনি একজনকে নিয়ে লেখা-
ছোট বোন
সে যে আমার ছোট বোন
প্রানের চেয়েও প্রিয় আমার ভালোবাসার কোন
লাল নীল রঙ সবুজ জামায় সাজিয়ে দিতাম ওকে
কি সুন্দর লাগতো ওকে বলতো পরী লোকে ............
কবিতাগুলো লিখছিলাম বটে এবং সেসব কখনও কোনোদিন ছাপার অক্ষরে বের করবার সুপ্ত বাসনাটুকুও হয়তো মনের মাঝারে মাঝে মধ্যে উঁকিঝুকিও দিত কিন্তু তারপরও কখন বা কবে সেটার বাস্তবায়ন ঘটাবো এমন কোনো ভাবনা মাথায় ছিলোনা। কিন্তু একদিন ফেসবুকে হানিফ রাশেদীন ভাইয়া বললো ভাইয়া নাকি তার প্রকাশনী থেকে এবারে কিছু বই ছাপাবে এবং আমাকে আমার খোকাভাই সিরিজসহ কবিতার বই বের করবো কিনা জিগাসা করলো। যদিও আমার খোকাভাই কবিতাগুলি আর বসন্তদিন সিরিজ আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা ও গল্প সিরিজ। তবুও আমি ভাইয়াকে বললাম এই সব কে পড়বে ভাইয়া তার থেকে বাচ্চাদের জন্য লেখা আমার এই কবিতাগুলো দেখো। ভাইয়া কবিতাগুলো দেখে বললো, আপু আমার তো এখনই এইগুলো ভাল লাগছে আর বাচ্চাদের জন্য এটা হবে দারুন উদ্যোগ! ব্যাস ভাইয়াকে কথা দিয়ে দিলাম যে ভাইয়া এ বছরেই হবে বাচ্চাদের জন্য আমার কবিতার বই। আর তার পর আমার স্বপ্ন আর ইচ্ছেটাকে সফল রুপে চোখের সামনে হাজির করলো আমার প্রিয় হানিফ রাশেদীন ভাইয়া।
তবে এই ব্যাপারে যখন কথা হচ্ছিলো এবং ভাইয়া আরও দু একটা কবিতা চাইলো আর ঠিক সেদিনই সারাদেশ রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিলো একটি ভয়ংকর নাটকীয় মুহুর্তের জন্য। আমরা অপেক্ষা করছিলাম ছোট্ট শিশু জিহাদকে যেন মৃত্যুকুপ হতে মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সবার সব আশা নিরাশা করে দিয়ে জিহাদ চলে গেলো না ফেরার দেশে। শিশুর নিরাপদ বাসস্থানের চাহিদাটুকু পূরনের স্বপ্ন বা অভিমান নিয়েই বুঝি এই ভাবে প্রতিবাদ করে গেলো সে। আমার মনটা খুব খারাপ ছিলো- লিখলাম আমি জিহাদের জন্য-
জিহাদের স্নপ্ন
রন্টু বাবুল, দুলাল, সেতু ডাকলো ওরে আয়
শীতের ডরে ডরেনা বীর খেলতে মোরা যাই।
বিকেল বেলা ঘরের মাঝে বসে কি কেউ থাকে?
শিগ্গিরি আয় বোকনু ছেলে সঙ্গীরা সব ডাকে।
শিশুদের জন্য চাই নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র , শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যাবস্থা।
৩৫ টি কবিতা নিয়ে আমার লেখা শিশুকিশোরদের উপযোগী বই " হৃদয়ে বাংলাদেশ" বাংলাদেশের সকল শিশুদের জন্য উৎসর্গ করলাম। বইটি গত বৃহস্পতিবারে বইমেলায় এনেছে হানিফ রাশেদীনভাইয়া তার প্রতিকথা প্রকাশনী থেকে যা লিটল ম্যাগ চত্বরে ভাইয়ার প্রতিকথা স্টলেই পাওয়া যাচ্ছে।
"হৃদয়ে বাংলাদেশ" এই বইটি বিষয়ক কিছু কথা-
বই এর নাম- হৃদয়ে বাংলাদেশ
বই এর ধরন- শিশু কিশোর বিষয়ক কবিতাবলী
বিষয়- বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি
মানবিক উন্নয়ন ও সুঅভ্যাস চর্চা
শিশু মনের নানারকম অনুভুতি
প্রকাশনী- প্রতিকথা
প্রচ্ছদ - মোস্তাফিজ কারিগর
পাওয়া যাবে- প্রতিকথা স্টলে ( লিটিল ম্যাগ চত্বর)
মূল্য : ৮০ টাকা
উপযোগীতা- বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস, পহেলা বৈশাখ ও দেশাত্ববোধক এবং শিশুদের যে কোনো অনুষ্ঠানে আবৃতিযোগ্য।
সবাইকে ভাষার মাসের শুভেচ্ছা---
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৯