কাল একটা বিশেষ দিন-শিউলি অনেক ঘুরাঘুরি করবে,অনেক জায়গায় যেতে হবে ওকে -তাই আজ একটু আগেই ঘুমোতে যায় ও। শীত প্রায় বিদায় নিয়েছে,তবু কাঁথা গায়ে শুয়ে থাকে শিউলি, অত সহজে ঘুম আসে না। শুয়ে শুয়ে আবোল -তাবোল ভাবতে থাকে সে।কাল সে কোথায় কোথায় যাবে। প্রথমেই যাবে টিএসসি। কপোত কপোতিরা তো ওখানেই বসে থাকে, কত সেজেগুজে, সবাইকেই খুব সুন্দর লাগে ওর। পাশে সোহরোওয়ার্দী উদ্যানেও যায় অনেকে। সেদিন শেষ বিকেলে যখন ও গিয়েছিলো ওখানটায় দেখেছিলো এক যুবক চুমু খাচ্ছে পাশের মেয়েটির ঠোঁটে আর...। দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো ও,কোন এক নিষিদ্ধ আকর্ষণে চোখ ফেরাতে পারছিলো না।বাসায় এসে সেদিন অনেকক্ষন আয়না দেখেছিলো ও, দেখেছিলো কিশোরী শরীরের আকস্মিত পরিবর্তনগুলো।
লাল পাড়ের একটি হলুদ রং এর শাড়ী পরে টিএসসিতে বসে আছে শিউলি।চারদিকে অজস্র কমলা আর লাল রং -বাসন্তি রং এর শাড়ি, গাঁদা,গোলাপ আরও কত ফুল সবার হাতে হাতে শুধু শিউলির কোন কাজ নেই,কোন ব্যস্ততা নেই,ও অপেক্ষা করছে কারও জন্য। এ জায়গাটা শিউলির খুব পরিচিত। এখানকার প্রতিটি কোন,আইসক্রিম বিক্রেতা,ফুলবিক্রেতা,ঝাড়ুদার সবাই ওর খুব চেনা। এভাবে কেটে যায় বেশ কিছুক্ষন। তারপর যখন সূর্যমামা বসন্তের প্রথম সকালে কাঁচা রোদ ছড়াচ্ছে তখন শিউলি দেখতে পায় নীল পাঞ্জাবী পরনে যুবকটি এগিয়ে আসছে ওর দিকে,হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ। গোলাপগুলো এগিয়ে দেয় ওর দিকে। 'গোলাপ এতো তাজা হয়! 'ফুল হাতে নিয়ে ভাবে শিউলি।কই ও তো কতো গোলাপ দেখেছে,গোলাপ তো এতো তাজা হয় না।
"কিরে শিউলি,আইজ এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাইলে হইবো? "মায়ের ডাকে হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে শিউলির। সত্যি অনেক বেলা হয়ে গেছে। মাইকে গানের সুর ভেসে আসছে, আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোঁটে.... "
বেড়িয়ে পড়ে শিউলি, হাতে অনেকগুলো লাল গোলাপ। টিএসসি গিয়ে পৌছায়।চারপাশে অজস্র কমলা রং এর গাঁদা ফুল। কারো হাতে,কারো খোঁপায়।
নীল পাঞ্জাবী পরে বসে আছে যে ছেলেটি,তার দিকে এগিয়ে যায় ১৪ -১৫ বছরের কিশোরী শিউলি,একগুচ্ছ গোলাপ দিয়ে বলে, "কয়ডা ফুল লইবেন ভাইজান,অহনও একটাও বেচি নাই, লন না দুইডা ফুল, আফারে দিয়েন। "ছেলেটি হাত বাড়িয়ে ফুল নেয়। পাশের হলুদ শাড়ি পরিহিতা মেয়েটির দিকে তাকায় শিউলি। খুব চেনা লাগছে,কোথায় যেন দেখেছে গতকাল।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৪