আমরা ঈমানদার, মুসলমান ও জজবা ওয়ালা ভাইবোনেরা, আরো একটি গোল দিয়ে আবারও ১-০ গোলে জিতলাম। একজন নিরস্ত্র নিরপরাধ নাস্তিকরে (নাস্তিক আবার মানুষ নাকি) চাপাতি দিয়ে কোপায়ে মারল ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান আমাদের কিছু ব্রাদার। গুড, ভেরি গুড। আর আমরা বাকি জজবা ওয়ালারা ইনায়ে বিনায়ে তারে মারাটা জায়েজ করছি। গুড, ভেরি গুড।
যারা সরাসরি গোল দিল তাদের নিয়ে আমার কোন কথা নেই, বাট যারা গোলে সাহায্য করছি বা গোলের সৌন্দর্য্য বর্ণনা করছি তাদের নিয়ে দুটি কথা আছে।
নাস্তিকতা যদি কোনো অপরাধ হয় তার বিচারের দায়িত্বটা আল্লাহর কাছেই থাকনা, আলাহর উপর এইটুকু আস্থাও নাই? কিছু কাজ উপরওয়ালার জন্যে রাখেননা ভাই, সব যদি আমরাই করে ফেলি শেষ বিচারের দিন দেখা যাবে কাজ না পেয়ে আমাদের নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবেন, খুটিয়ে খুটিয়ে আমাদের ফল্ট গুলি বের করবেন, এতে আমরাই বিপদে পড়ব। কোথাকার কে ব্লগে, ফেসবুকে কি লিখল তাতে আপনার ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, ইসলাম আপনার কাছে এত ঠুনকো কেন। আরে ভাই এটা বুঝেননা কেন, ১৪৫০ বছর ধরে এইটা টিকে আছে। ফেসবুক ব্লগে নামে বেনামে নিরীহ বিরুদ্ধাচরণ নয়, কত জ্ঞানী গুণী, রাজা বাদশাহ বিরুদ্ধাচরণ করেছেন বল প্রয়োগের মাধ্যমে, অস্ত্রের মাধ্যমে। তাও টিকে আছে। নিশ্চিত থাকেন আরো ১৪ হাজার বছরও টিকে থাকবে। আপনের টেনশন না নিলেও চলবে। আপনের কাজটা আপনি ঠিক মত করেন।
ইসলামের বিরুদ্ধে হইলেই কোপাবেন, এই নীতি যদি নবীজি নিতেন তাইলে আর মুসলিম পাওয়া যাইতনা। শুরুতে সবাই তার বিরুদ্ধে ছিল। কোপাইতে কোপাইতে উনার দিন রাত যাইত। ইসলাম আর প্রচার করা লাগতোনা। আর কোরান হাদিসের যেসব রেফারেন্স দিয়ে কোপাকুপি জায়েজ করেন সেগুলি পড়ে একটু মাথা খাটান। সেইসব রেফারেন্স গুলির সময়, পরিবেশ, পরিস্হিতি, রাজনীতি, শাসন ব্যবস্থা আর ওই ঘটনার পুর্বাপর ঘটনা ও তার কন্সিকোয়েন্স গুলি বোঝার চেষ্টা করেন। সব কিছুর পরেও যদি আপনার চুলকানি অবশিষ্ট থাকে তাইলে ইয়েমেনের মুসলমানদের জীবন যে সৌদি আরব বাংলা লিংক দামে নিয়ে নিচ্ছে সেটা নিয়ে চুলকাতে পারেন।
ইসলামের ইতিহাসতো টুকটাক নিশ্চয় পড়ছেন। চরম পাপিরও কোন এক উসিলায় ঈমানদার হওয়ার উদাহরণ ভুড়ি ভুড়ি। মারাত্নক অবিশ্বাসী কাফিরের ইসলামের সিপাহশালার সাহাবিতে পরিণত হওয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অবশ্য ইতিহাস পড়ার আর সময় কই, কোপাকুপি এর চেয়ে অনেক থ্রিলিং। যাই হোক যাদের কোপালাম তাদের মধ্যে কেউ যে ইসলামের সেবক হয়ে উঠতোনা সে নিশ্চয়তা নিয়ে কি কারো উপর কোন ওহি নাযিল হয়েছে? সে সুযোগটা আমরা এন্টারটেইন করলামনা। আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবেন সেটা এখন থেকেই ঠিক করা শুরু করেন।
বুঝলাম নাস্তিক, হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, নাসারা সবাইরে ঘৃণা করেন। এতো ঘৃণা বুকে নিয়ে বেঁচে আছেন কেমনে সে প্রশ্নে না যাই। শুধু এটুকু বলি, বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ নয়, ইসলাম ও একমাত্র ধর্ম নয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও আমরা মুসলমানরা থাকি এবং সেসব দেশে যেসব ধর্মরে ঘৃণা করেন তারা সংখ্যায় অনেক অনেক বেশি। এখন তারা যদি আমাদের ঘৃণা করা শুরু করে আমরা কই যামু ভাই। ইন ফ্যাক্ট সেটা যে একেবারে শুরু হয়নি তা নয়, এর জন্যে আপনারাই দায়ী।
নাস্তিক, বিধর্মিরা ব্লগে, ফেসবুকে আল্লাহ, নবীরে গালাগালি করছে, পর্ণ সাহিত্য রচনা করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। আপনার অনুভুতিতে আঘাত লাগছে। কোপাকুপি না করলেও আপনিতো প্রতিবাদ করবেনই। খুবই স্বাভাবিক। এখানে আমার ছোট্ট একটা কথা আছে। আপনিতো জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যান। যুগ যুগ ধরে সেখানে বিধর্মিদের প্রতি যে ঘৃণা ছড়ানো হয় সেটার প্রতিবাদ করেছেন কখনো? কিছু কিছু হুজুর অন্য ধর্মের দেব দেবীদের নিয়ে যে রসালো অশ্লীল আলোচনা করেন সেসবের প্রতিবাদ করেছেন কখনো? এমনকি মাঝে মাঝে মুসলিম মেয়েদের নিয়ে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে যে ইঙ্গিতপূর্ণ আলাপ হয় সেসবের প্রতিবাদ করেছেন কখনো? যদি না করে থাকেন আপনের অনুভুতিরে বর্ম পড়ান যাতে আঘাত না লাগে।
সব কথার শেষ কথা, ব্লগ ফেসবুকের জিনিস ব্লগ ফেসবুকেই রাখেন। রিয়েল লাইফ কোপাকুপি না, বেশি ইচ্ছে হলে ভার্চুয়াল। আমি সেইরকম ডরাইছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:২৪