বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। যদিও দারিদ্রসীমার নিচে এখনো অনেক মানুষ বাস করে। তারপরও আমরা মনে করি, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অর্থনৈতিক নানান প্রতিবন্ধকতা, শিল্পের চতুর্মুখী বিভাজন সত্ত্বেও আমরা বলতে পারি- স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছাতে আমাদের ভালোই লাগে।
সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যদিও প্রশ্ন রয়ে গেছে। সীমাবদ্ধতা আমাদের পিছু ছাড়ছে না। কল্যাণের নামে অকল্যাণকর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত সত্যিই আত্মবিসর্জনের মতোই।
বর্তমান সময়ে একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে ছেলে-মেয়ের বিয়ের বয়স পূন:নির্ধারণ। বাংলাদেশ সরকার এবং মন্ত্রিপরিষদ এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত সংসদে উপস্থাপন করেছেন। চলছে আলোচনা-সমালোচনা এবং পর্যালোচনা। কেউ কেউ বেফাঁস কথাও বলে ফেলছেন।
আসুন আমরা লক্ষ্য করি, ঠিক কি কারণে বিয়ের বয়স নিয়ে সরকারের এরকম সিদ্ধান্তের সূচনা হলো?
১. পূর্বের যতো শিশু অধিকার প্রতিবেদন জাতিসংঘে উপস্থাপন করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে পূনরায় পাঠাতে হয়েছে।
২. উক্ত প্রতিবেদনে শিশু বিয়ে/বাল্য বিয়ের যে ব্যাপকতা তা বিশ্ব সমাজে বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
৩. বাস্তবে শিশুর যে অধিকারগুলো পূরণ করার ওয়াদা করেছিল বাংলাদেশ সরকার, তার কিছুটা বাস্তবায়িত হলেও অধিকাংশই আলোর মুখ দেখেনি।
অন্তত শিশু বিয়ে তথা বাল্যবিয়ের হারকে কমিয়ে আনতে সরকার এ চিন্তা করতে পারে।
আসলেই কতোটা যুক্তিযুক্ত এই সিদ্ধান্ত তা যদি আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি তাহলে অনেকটাই পরিস্কার হতে পারে বিষয়টা।
১৮ বছর বয়সী একটি ছেলে কিভাবে একটি পরিবার রচনা করতে পারে? যেখানে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিপূর্ণতাই অর্জিত হয় না। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী কিংবা অধ্যয়নরত একটি ছেলেকে যদি বিয়ে দেয়া হয় তাহলে তা কি একধরণের অদূরদর্শীতা নয়?
অপরদিকে মেয়েদের জন্য তো তা আরো বিপদজনক। তাদের স্বাস্থ্যচিন্তা এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধির পথে কি রকম প্রভাব ফেলে তা একমাত্র চিকিৎসকরাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা যারা সচেতন আছি তারা তো জানি।
যদি এরকম হতো যে, আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষাপদ্ধতি কর্মমুখী শিক্ষা। ছেলেরা যে কোনো সময় আয়ের উৎস খুঁজে পাবে। তাহলেও একটু ভেবে দেখা যেতো। আরো কতো যুগ যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এই কর্মমুখী শিক্ষার জন্য।
অনেকেই বলছেন- ধর্মীয় বিষয়কে কিংবা বাংলাদেশের আবহাওয়াগত অবস্থান বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে।
আমরা যারা শিশু অধিকার নিয়ে এ দেশে কাজ করছি তাদের কাছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বিয়ের এই নতুন বয়স নির্ধারণ বিষয়টি। ইতোমধ্যে শিশুদের সংগঠন এনসিটিএফ এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সত্যিই তারা সাধুবাদ পাবার যোগ্য। আমরা সবাই এগিয়ে আসি।
কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি-
"আঠারোর কমে নয় মেয়েদের বিয়ে
জনমত গড়ে তুলি সবাইকে নিয়ে।।"