স্বর্ণকেশী বা স্বর্ণকেশিনীদের নিয়ে অনেক কৌতুক পশ্চিমে প্রচলিত আছে। এসব কৌতুকের একটাই বিষয়, প্রমাণ করার চেষ্টা যে, এদের মাথায় বুদ্ধি কম।
যেমন একজন স্বর্ণকেশিনী ইলেকট্রনিকসের দোকানে ঢুকে বলল, ওই টেলিভিশনটার দাম কত?
দোকানি উত্তর দিল, আমরা স্বর্ণকেশিনীর কাছে জিনিস বেচি না।
স্বর্ণকেশিনী দোকান থেকে বেরিয়ে সোজা গেল একটা বিউটি পারলারে। নিজের চুলের রং কালো কুচকুচে করল। চেহারারও পরিবর্তন ঘটাল। এমনকি পোশাকও পাল্টে ফেলল। না, এবার তাকে চেনাই যাচ্ছে না। সে ফিরে এল সেই দোকানে। বলল, ওই টেলিভিশনটার দাম কত?
দোকানি নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, আমরা কোনো স্বর্ণকেশিনীর কাছে জিনিস বেচি না।
স্বর্ণকেশিনী বিস্মিত। দোকানি বুঝল কী করে যে সে স্বর্ণকেশিনী! সে আবার বাইরে গেল। এবার সে এল একটা বোরকা পরে। গলার স্বর বদলে সে বলল, এই টেলিভিশনটার দাম কত?
দোকানির একটাই জবাব, স্বর্ণকেশিনীর কাছে আমরা কোনো কিছু বিক্রি করি না।
মেয়েটি তার মুখের ঢাকনা সরিয়ে বলল, আচ্ছা, বলুন তো, আপনি কী করে বুঝছেন যে আমি একজন সোনালি চুলের মেয়ে?
দোকানি অন্যমনস্কভাবে জবাব দিল, একমাত্র স্বর্ণকেশিনীরাই মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে টেলিভিশন বলে থাকে।
একজন স্বর্ণকেশিনী গাড়ি চালাচ্ছে। তার গাড়ি গিয়ে ধাক্কা দিল একটা ট্রাককে। ট্রাকচালক খুব খেপে গেল।
ট্রাক থেকে নেমে সে স্বর্ণকেশিনীকে বলল, গাড়ি থেকে নামুন।
স্বর্ণকেশিনী এই আজ্ঞা পালন করল।
ট্রাকচালক চক দিয়ে একটা বৃত্ত আঁকল রাস্তায়। তারপর সোনালিচুলোকে বলল, তুমি এই বৃত্তের মধ্যে থাকবে। একদম নড়তে পারবে না।
তারপর ক্ষিপ্ত ট্রাকচালক মেয়েটির গাড়ির সামনের কাচ দিল ভেঙে।
মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগল।
ট্রাকচালক মেয়েটির গাড়ির পেছনের কাচ ভেঙে দিল। মেয়েটি হেসে উঠল আবারও। বিস্মিত ট্রাকচালক বলল, আপনি হাসছেন কেন?
স্বর্ণকেশিনী জবাব দিল, আপনি যখন আমার গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন, এই ফাঁকে আমি আপনার আঁকা বৃত্ত থেকে দুবার বাইরে বেরিয়েছিলাম। আপনি টেরও পাননি।
সম্মানিত পাঠক, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ব্লন্ড বা সোনালিচুলোদের বোকামি নিয়ে কী রকম নিষ্ঠুর রসিকতাই না চালু আছে।
একবার একটা রেস্তোরাঁয় একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঘোষণা করল, আমি কি স্বর্ণকেশিনীদের নিয়ে একটা কৌতুক বলতে পারি।
তখন রেস্তোরাঁর একজন বেয়ারা বলল, শোনো। কৌতুকটা বলার আগে তোমার একটা তথ্য জানা উচিত। আমি এই রেস্তোরাঁর বেয়ারা, আমার চুল সোনালি, আমি একজন মুষ্টিযোদ্ধা, আমার ম্যানেজার তিনিও সোনালিচুলো, তিনি একজন কুস্তিগীর, আর দুজন খদ্দের উপস্থিত আছেন এখানে, এঁরা দুজনও সোনালি চুলের, একজন হকি খেলোয়াড়, তাঁর হকিস্টিকটা তাঁর হাতে আছে, আরেকজন শ্যুটার, তাঁর হাতে আছে পিস্তল। এবার তুমি চিন্তা করে দেখো, তুমি এখানে ব্লন্ড জোকস বলবে কি না।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী খদ্দেরটি তখন বলল, না, আমি কোনো কৌতুকই বলব না। আমার পক্ষে একই কৌতুক পাঁচবার পাঁচজনকে বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়।
আমি এতক্ষণ ধরে যে ভূমিকাটি পাড়ছি, তা-ও এই কথা বলার জন্য যে, আমি এই কলামে নানা কৌতুক পরিবেশন করে থাকি কোনো বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য থাকলে তা গল্পের ছলে পেশ করার জন্য। আশা করি, আমার পাঠকেরা স্বর্ণকেশী বা স্বর্ণকেশিনী নন।
এইবার যে একটিমাত্র কৌতুক বলার জন্য আমি এত বড় ভূমিকা পাড়লাম, সেটা বলি।
একটা পানশালা। একজন খদ্দের এল সেই রেস্তোরাঁয়। বেয়ারাকে বলল, তোমাকে একটা জাদু দেখাব। যদি তোমার ভালো লাগে, আমাকে একটা পানীয় দিয়ো বিনি পয়সায়।
আচ্ছা, আগে জাদুটা দেখি।
খদ্দেরটি তার পকেট থেকে একটা ছোট্ট ইঁদুর বের করল। আরেক পকেট থেকে বের করল একটা ছোট আকারের পিয়ানো। ইঁদুরটিকে সে পিয়ানোর ওপরে ছেড়ে দিল। ইঁদুরটি পিয়ানোর কি-বোর্ডের ওপরে লাফিয়ে লাফিয়ে একটা গান বাজাতে লাগল।
বেয়ারা বলল, ঠিক আছে, আমি আপনাকে এক গেলাস পানীয় বিনি পয়সায় দিচ্ছি।
সেই গেলাস খালি করে খদ্দের বলল, আমি আরেকটা জাদু দেখাই। এটা ভালো লাগলে তুমি আমাকে আরেক গেলাস পানীয় দিয়ো।
আচ্ছা, দেখান।
এবার ওই ইঁদুর আর পিয়ানোর সঙ্গে খদ্দেরটি বের করল একটা ছোট্ট ব্যাঙ। ইঁদুর পিয়ানো বাজানো শুরু করল, আর তার সঙ্গে ব্যাঙটি গান গাইতে শুরু করল।
এর মধ্যে আরেকজন খদ্দের ব্যাপারটা লক্ষ করে এগিয়ে এল। সে বলল, আপনি আপনার এই ইঁদুরটাকে বিক্রি করবেন?
জাদুকর বলল, না। ওটা বিক্রির জন্য নয়।
তাহলে ব্যাঙটাকে বিক্রি করবেন?
হ্যাঁ, যদি ভালো দাম পাওয়া যায়।
এক লাখ টাকা?
না, এত কম দামে বিক্রি করব না।
পাঁচ লাখ টাকা?
না, হবে না।
১০ লাখ?
আচ্ছা নিন।
১০ লাখ টাকা নগদ গুনে নিয়ে জাদুকর ব্যাঙটা তুলে দিল ক্রেতার হাতে। ক্রেতা চলে গেলে বেয়ারা বলল, এত সস্তায় কেন এ রকম একটা ব্যাঙ বিক্রি করে দিলেন। এটা এক কোটি টাকায় কেনার লোকও এই শহরে ছিল।
জাদুকর বলল, আরে ভাই, আসলে গান করে ইঁদুরটি। ওই ব্যাঙটা শুধু হাঁ করে শ্বাস নেয়। তাই মনে হয় ব্যাঙটা গান গাইছে।
ইঁদুরটা গান গাইছে, এটা বোঝা যায় না তো।
ইঁদুরটা হলো ভেন্ট্রিলকিস্ট। এর মানে হচ্ছে, ইঁদুরটা ঠোঁট না নড়িয়ে কথা বলতে পারে। তাই সে যখন গান করে, মনে হয়, পাশের কেউ গান করছে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে বাংলাদেশে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বাইরে একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে বলে শুনছি। সেখানে নাকি মুম্বাই থেকে বলিউডের তারকারা এসে নাচগান করবেন। আমাদের ভূমিকা কী হবে? আমরা কি ব্যাঙের মতো বলিউডি তারকাদের গানের সঙ্গে মুখ নাড়ব। ওই ব্যাঙের যে কোনো দাম নাই, এই কথা কিন্তু একজন ব্লন্ডও বুঝবে। আমাদের কর্তাব্যক্তিদের বুদ্ধি-বিবেচনা আশা করি তার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের শিল্পীদের কি শ্রীলঙ্কায় আর ভারতে গিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেওয়া হবে?
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো অলিম্পিক গেমস বা বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হওয়ার জন্য কী প্রাণান্ত চেষ্টাই না করে থাকে। কারণ, এ ধরনের আয়োজন সেই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে, অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেয়। সারা পৃথিবীর কাছে নিজেদের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলো তুলে ধরার এই সুযোগ কেউই ছাড়তে চায় না। ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ আর বিশ্বকাপের অন্যতম স্বাগতিক দেশ হওয়ার এই বিরল সুযোগটা পেয়ে আমরা কি একটা ব্যাঙের ভূমিকা নিতে যাচ্ছি?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
copy & paste from:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-01-18/news/124314
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩১