somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প- আসলেই তুমি একটা বোকা!

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটু দেরী করেই বাস ষ্টান্ড আসলাম। মহাখালীতে এসেই দেখি এনা বাস ছেড়ে দিয়েছে। টিকেট না কেটে তরিঘড়ি করে বাসে উঠলাম। মাঝখানে একটা ছিট ফাকা। অপর পাশে একটা মেয়ে বসে আছে। দেখে চারপাশটায় লক্ষ্য করলাম। কিন্তু দেখি অন্য কোথাও ছিটে ফাকা নেই। অগত্যা বসে পড়লাম। একটা পলক পড়লো শুধু ওর। বাস ছাড়ার পর এয়ারফোনটা দু'কানে পুরে নিল। গাজীপুর চৌরাস্তা পার হবার পর গানের উন্মাদনায় ওর পা-টা আমার পায়ের উপর পড়লো। মুর্হুতেই কানের এয়ার ফোনটা খুলে একটা বিনয়ী সুরে- সরি....।
না, না, ঠিক আছে; ও কিছুনা।
আপনি কোথায় যাবেন? ময়মনসিংহ।
আর আপনি?
আমিও ......
ওর নাম রিচা। লম্বা গায়ের গরণ। মেয়ে মানুষ পাচফুট চার ইঞ্চি হলেই অনেক লম্বা দেখা যায়। চোখে একটা আধো রঙিন চশমা। কথা বলতে ইজি করতে চশমাটা খুললো। আবার বলতে শুরু করলো-
এখানে কি করেন?
আমি একটা প্রজেক্টে কাজ করছি। দুর্গাপুরের উপজাতিদের কালচারাল বিষয়ে।
আমারও খুব শখ ছিলো, বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করবো আর ঘুরবো। কিন্তু হলোনা। বাবার ইচ্ছে ডাক্তার হবো।
রিচা ময়মনসিংহ মেডিকেলের ছাত্রী। বাবা ইন্ঞ্জিনিয়ার। মা-বাবা আর দুইভাই বোন ঢাকাতেই থাকেন। বাবা এসে বাসে উঠেদিয়েছেন। মেয়ের পাশে আর একজন নারী আসলে বসবে বলে আমার এই ছিটে আর কাউকে আসন দেয়নি কাউন্টার থেকে। এজন্যই ছিটটি ছিলো ফাকা।
রিচার সাথে আর বেশী কিছু বললাম না। আমার নিরবতা দেখে সে বার বার একটু করে তাকাচ্ছিলো শুধু। বাস ত্রিশাল পার হবার পর আমাকে বললো, আপনার ফোনটা একটু দেবেন, আমি একটু ফোন করতাম? আমার মোবাইলের ব্যালেন্স নেই। আমি ফোনটা দিলাম। সে নম্বর বের করে দু'বার কানে নিলো। ও পাশ থেকে কোন রিপ্লে পেলোনা। আমাকে ফোনটা দিয়ে বললো, ফোনটা বন্ধ । ছরি....।
বেলা বারোটা। দুর্গাপুর থেকে বিরিশিরি যাবার পথে নৌকাতে । এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।
হ্যালো..
পাহাড়ের দেশে দেশে দুর্গাপুরের রাজ্যে কি করছেন? কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলাম না কে? তবে ময়মনসিংহের স্থানীয় পত্রিকায়একটা নিবন্ধ লিখেছিলাম- পাহাড়ের দেশে দেশে। মনে হলো, হয়তো লেখাটা কারো ভালো লেগেছে বলে ফোন করেছে। স্যালো চালিত নৌকায় শব্দ করছে বলে ওর কথা আর কোনকিছু বুঝতে পারছিলাম না। তাই বললাম, লেখাটা পড়েছেন বলে ধন্যবাদ। এরপর লাইনটা কেটে দিলাম। বিরিশিরি গিয়ে ফোন করলাম।
কোথায় থেকে ফোন করেছেন। বললো আমি রিচা। অবাক হলাম। জিঙ্গেস করলাম, ফোন নম্বর পেলেন কোথায়? বললো, গ্রামীন ফোন সেন্টার থেকে অনকে কষ্টে আপনার ফোন নম্বর নিয়েছি। বললাম, এখন কি ময়মনসিংহ আছেন ?
বললো, কলমাকান্দা পার হয়ে পাহাড়ের কাছে শিবমন্দিরে মেলা দেখতে এসেছি। বললাম আমিও তো যাচ্ছি।
তবে আমার একটু দেরী হবে। বিকেলে মেলায় গেলাম। রিচার সাথে দেখা হলো। সাথে ওর বান্ধবী।এখানেই ওদের বাসা। নাম নিহারীকা। উপজাতি। ওর এখানেই বেড়াতে এসেছে। পাহাড়ের কাছে ওদের বাসা। মেলায় ঘুরে নিহারীকার অনুরোধ বান্নীর দিনে আগত অতিথিদের আমাদের বাড়ীতে যেতেই হবে। না হলে অমঙ্গল হবে। মেলার পাশ দিয়ে পাহাড়ের ভাজে ভাজে যাচ্ছি আমরা। পাশেই ভারতের হিমালয়। এসব রাস্তায় পুলিশ দাড়িয়ে আছে। কেউ যাতে ওদেশে বহিরাগত ভাবে যেতে না পারে। মেলার সময় বলে এই পাহাড়া। শুধু নীহারিকাদের বাড়ী কাছে বলে আমাদের যেতে দিলো। কিছুক্ষণ পরে আমরা পৌছলাম। পাহাড়ের মধ্যে এমন সুন্দর বাড়ী ! পুলকিত হয়ে গেল মনটা। অতিথিদের এমন সব রকমারী খাবার দেখে আশ্চর্য হলাম। তারপরেও দু-একটা খেলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আকাশের অবস্থাও ভালো না। বাইরে বাউরি বাতাস ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। আমি যেতে চাইলাম। কিন্তু নীহারিকা বললো, এখন তো যেতে পারবেন না। পুজো শেষ না হলে অতিথিদের যেতে নেই। এখন ওরা সবাই মন্দিরে যাবে। পুজো দিতে। রিচা আর আমি রইলাম। ওর অপলক দৃষ্টি। বললাম, সত্যিই করে বলেন তো, নাম্বারটা কোথায় পেলেন? চমকে গেলেন? মনে নেই আপনার ফোনটা নিয়ে যখন কাউকে ফোন দিয়েছিলাম। ওটা কারো নাম্বার ছিলোনা। ওটা ছিলো আমার নাম্বার। আমি ফোনটা বন্ধ করে ফোন করেছিলাম। মিছকল এলার্ট ছিলো। পরে আমি নাম্বারটা সেভ করে নিয়েছি। ও ... তাহলে এই। ও একটা হাসি দিয়ে- আসলে আপনি একটা বোকা! অনেকটা আবেগের সুরে- তাহলে কি সাহসী হতে বলেন? আবার একটা হাসি দিয়ে- প্রজেক্টের মানুষ এতোটা বোকা হয়, বুঝলাম না। আর পাশে এমন একটা মেয়ে মানুষ পেয়েও নাম্বারটাও নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না। এজন্যই আমার জেদ হয়েছিলো। ওর মনের হাসি আর ভেতরের আকাংখা দেখে মনের মধ্যে একপ্রকার শিহরণ খেলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাইরের ঝড়ো বাতাস ঘরে এসে জোড়ে একটা ধাক্কা দিলো। বিদ্যুত চলে গেল। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাইরে বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এক জোড়া হাত হাতড়িয়ে খুজে পেল আমার হাত। সামনে কোন এক নরম আবরণে আটকে গেলাম। মোহনীয় পরশ নিয়ে গেল অজানা জগতে। যে জগতে শুধুই যেন অমৃত্যের স্বাদ। উন্মদনায় যেন হাতরাতে থাকি এক শৈল্পিক চিত্রকর্মের ভাজে ভাজে থাকা ভালোলাগা আর ভালোবাসা গুলো। সাহসী এই আমি তাকে বৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড করে তার সর্বত্রে আকি এক দীপ্ত পদরেখা। ভেতর-বাইরের ঝর থামে। ঝড়ের পর আসা ম্লান আলোতে দুজনের পরিশ্রান্ত চাহনী এর মুখটেপা হাসি। এমনি সময় নীহারিকার পুজো শেষে বাড়ী ফেরা। এসে দুজনের নিরবতা আর ক্লান্ত ভাব দেখে নীহারিকার দৃষ্টি এড়ায় না। আমার পাশে সোফার উপর ছিলো দুটো কাচের চুরি ভাঙ্গা। চুরির টুকরো গুলো কুরোতে কুরোতে বলে- রিচা যা ফ্রেশ হয়ে নে। কোন জবাব দেয়না রিচা। নীহারিকা যখন চুরির টুকরো গুলো ফেলতে যায় তখনি রিচা উঠে যেতে যেতে বলে- আসলেই তুমি একটা বোকা!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×