প্রচন্ড তাপদাহ। আমার মেজাজ খানা যেন একশ ডিগ্রী। আর হাটতে মন চাচ্ছে না কিছুতেই। গ্রামের মেঠোপথ। তারপরেও রোদের তীব্রতা অতিষ্ঠ করে তুলেছে আমাকে। বার বার লামিয়ার দিকে শুধু চোখ পাকিয়ে দেখছি। তবুও চলছি পথ। কিছুদুর গিয়ে দেয়ালের প্রাচীর। গেটে লেখা শ্যামল ছায়া। জোড়ে জোড়ে শব্দ করলো লামিয়া। প্রায় পাচ মিনিট পর দরজা খুললো এক বৃদ্ধা। লামিয়া যেন দাদী.. দাদী বলে বুকে লেপটে গেল। এদিকে উনি যেন আমার দিকে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন! পাকা চুলে মেহেদীর রং লাগানো। কতিকায় চশমা। দীর্ঘদেহী। গায়ে এখনো হলুদের আভা ছড়িয়ে আছে। একটা বিহারী দামী সাদা শাড়ী পড়া। আমার দিকে তাকিয়ে - তুমি তাহলে ওর কাব্যিক মানুষ। লজ্জাবনত একটা স্মাইল হাসি দিলাম মাত্র। বললো ভেতরে এসো।
বিশাল বাড়ী। ৫৬ শতাংশের এক বিশাল বাড়ী। গাছ-গাছালীতে ভরা। ঠিক শ্যামল ছায়া। লামিয়া দাদা-দাদী ছিলেন ইউনির্ভাসিটির টিচার। অধ্যাপনা থেকেই প্রেম। তারপর বিয়ে। এরপর থেকেই একসাথেই পথ চলা দুজনের। দাদা মারা গেছে দশ বছর আগে। দাদা-দাদীর একমাত্র ছেলে লামিয়ার বাবা। বিসিএস পুলিশ কোরের অফিসার থেকে লামিয়ার বাবার চাকুরী জীবন শুরু। খুলনায় থাকা কালীন লামিয়ারা দুই বোন এক ভাই রেখে হার্টএ্যাটাকে মারা যান তিনি। ছেলে মারা যাবার একমাস পর বাবাও মারা যান। লামিয়ার দাদা নিজের এলাকায় সম্পত্তি ছাড়াও গ্রামের এমন একটা বাংলো তৈরী করে গেছেন। এমন প্রকৃতি নির্ভর আবাসের মধ্যেই দিন কাটে দাদীর।
আগের সময়ের আর এখনকার সময়ের অনেক তফাত। দাদী আর লামিয়াকে দেখলে তা মনে হয়। দাদী রক্ষণশীল ও আধুনিকায় পরিবারের মানুষ। মর্যাদা আর মূল্যবোধ তার সবকিছুর মধ্যে ফুটে আছে। লামিয়া? লামিয়া বর্তমান সময়ের মেয়ে। এখনকার আধুনিকতা মানে আবেদনময়ী পোশাক শরীরে বিচরণ করা। সবার সামনে হাতে হাত ধরে প্রিয় মানুষের পথে চলা। ঘুরে বেড়ানো । খুনসুটি। লিভটুগেদার। আধুনিক শিক্ষিত সমাজের এটা এখন নিত্য বৈশিষ্ট্য। সৃজনশীলতার নামে উন্মুক্ত বিচরণ আর স্বাধীনতা আর সমান অধিকারের নামে অশ্লীলতার এক অন্যতম প্রতিযোগীতা।
দাদীর অনুরোধে আজকে রাতটাতে থাকতেই হলো। আমাকে উপরে চিলে কোঠায় জায়গা করে দিয়েছে। জার্নিতে ক্লান্ত আমি মুহুর্তেই নিদ্রা দেবীর কোলে। একটা শব্দে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। শুধু এটুকু দেখলাম কে যেন দরজাটা খুললো। এরপর কি হলো জানিনা। পারফিউমের গন্ধে আমি মৌমিত। শুধু দেখলাম উতকন্ঠার আরষ্ঠতায় ক্ষধার্ত মানবীর দিশেহারাময়তার এক প্রতিচ্ছবি। কি করছো....? কানে শুধু এটুকু শুনলাম, দাদীকে রাতে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়াতে হয়। একটার জায়গায় একেবারে দুটো ট্যাবলেট পুরে দিয়েছি। বাইরে জোস্নার আকাশ। সুনসান নিরবতা। রাতের গভীরতা বাড়ছে। ভেতরে লামিয়া নিজে ঝড় তুলতে গিয়ে নিজেই পড়েছে ঝড়ের মধ্যে। লন্ডভন্ড হচ্ছে সে। তখনও আমি মাঝনদী বরাবর। বৈঠা ধরে নৌকা চালাচ্ছি দুরন্ত গতিতে। যখন নৌকা ভিড়েছে তীরে তখন লামিয়ার মুখ থেকে শুধু এ শব্দটি কানে এসছিলো- তুমি ভেতরে ভেতরে এই, আর এই জন্যই বুঝি খুজেছিলাম এমন একটা নিরবতার সুযোগ!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮