বসন্তের শেষ লগ্নে বাউরি বাতাস ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছে বাগানটায়। পাতা ঝড়ছে। বাগানের নিচে শুধু ঝড়া পাতা। মাঝে মাঝে বাতাসে উড়ে যাচ্ছে ঝড়া পাতা গুলো। প্রকৃতির এমন বৈশিষ্ট্য জানান দিচ্ছে আসছে বৈশাখ। বৈশাখ আমাদের সার্বজনীন উতসব। কখনও সাদা, কখনো লাল আর নানা সমারোহে বৈশাখ আসে দুরন্ত গতিতে। মন দোলে বাউরি বাতাসে। এমন উন্মাদনা আমাদের বাঙ্গালীদের খুব একটা আসেনা। একি! এটা তো একটা প্রবন্ধ হয়ে যাচ্ছে! না ..। এটা হবে একটা ভালোবাসার গল্প-
সময়টা স্নিগ্ধ সকাল। ক্লাসে যাবার পথে একটা বই হাতে দিয়েছিলো নিহা। বলেছিলো বইটা রাখেন, আমি যাবার পথে নিয়ে যাব। আমিও আর মাথা ঘামালাম না। দুপুর গরিয়েছে যখন তখন একটু আরাম করবো বলে বিছানাতে গা-টা এলিয়ে দিলাম। মনে হলো নিহা তো বইটা রেখে গেছে। শুয়ে শুয়ে দেখি একটু বইটা। শুয়ে বইটা একটু মেলাতেই নিচে পড়েগেল কার্ডটা। দেখি বৈশাখের একটা কার্ড। একটা গোলাপ। দেখে কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমনন দু:সাধ্য কল্পনা আমার চিন্তার মধ্যেও আসেনা। কার্ডের ভেতরের লেখাগুলোতে ভালবাসার আহবান। কিন্তু আমি এখন কি করবো? শহরের একটা বড় বাঙলোতে এখন আমার বাস। নিহার চাচা অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী। আমার পড়ালেখার সুবাদে এই বাংলোর তদারিকির বদৌলতে আমার বাস। দুপুরে অবসাদের বদলে শরীরে পড়া শুরু হলো ঘাম। গিয়ে নিচে বকুলগাছের পাশে সানবাধা সিটে বসে রইলাম। বসেই মনে পড়ে গেল কিছুদিন আগেও এখানে বসে লিখেছিলাম, বকুলের তলে। লেখা আমার নেশা। কিন্তু কখনো লেখনীর এমন সৃজনশীল পরিবেশ পাওয়া আমার তিনকুলেও সম্ভব ছিলনা। পায়াচারী করতে থাকলাম গোলাপের বাগানে। চারিদিকে এতো স্নিগ্ধতা আমাকে প্রতিদিন আচ্ছন্ন করতো আজ কোন কিছুই আচ্ছন্ন করছে না। ভাবনার এমন সময় গেটের বেলের শব্দ শুনি। চমকে যাই। গেট খুলতেই দেখি নিহা। আমি নিহাকে যেন অপলক দেখছি। ভালবাসায় না উতকন্ঠায় বলতে পারবোনা। আমার এমন পরিস্থিতিতে সে শুধু একটা হাসি দিলো। ভেতরে এসে ওর জন্য কফি করি। ও খুব খুশী হয়। কার্ড আর গোলাপ রেখে ওকে বইটা দেই। ও বইটা হাতে নিয়ে ভেতরে উল্টিয়ে দেখলো। তারপর বললো, আপনি আর কিছু বলছেন না যে, কথা শুনে আমি যেন তন্ত্রা লেগে গেলাম। ওর সরল উত্তর- লেখক মানুষেরা বুঝি এমনই হয়। কাল পহেলা বৈশাখ। কালকে বৈশাখে আপনাকে নিয়ে ঘুরবো। আমি কিন্তু দশটায় আসবো আপনি রেডি থাকবেন কিন্তু.... যেতে যেতে এমন কথা বললো নিহা।
এই রংপুর শহরে আর কোথায় ঘুরবে নিহা। বৈশাখী সাজে রিকশায় ওকে খুব সুন্দর লাগছে। চিরিয়াখানা গিয়ে লেচুবাগানের পাশে সানবাধা ছিটে বসলাম দুজন। আমার হাতের উপর ও রাখলো হাত। কি বলবো! কোন উত্তর খুজে পেলাম না। বৈশাখের এমন দিনে ভালবাসার বোঝাপড়া ওর মন কে কষ্ট দেবে। ভালোবাসা হৃদয়ের সৃজনশীল রুপ। হৃদয়ের শ্বাশ্বত বন্ধন। এটাকে কোন সীমারেখায় বাধা যায়না। ওর সৃজনশীল মনে আজ আমি কখনই কষ্ট দিতে পারিনা। আমার সকল ভাবনায় ছেদ পড়লো মুহুর্তেই। ভুলে গেলাম সব। হেরে গেলাম ওর সৃজনশীল মেলবন্ধনের কাছে। উন্মাদনের আতিশয্যে ওর ভালোবাসার আহবানে সারা দিলাম।
সারাদিন ঘুরে ঘুরে বিকালে বাংলোতে ফিরি। নির্জন আর ভালোলাগার এক মোাহনীয় পরিবেশে ওকে পেয়ে হয়ে গেলাম শৃংখলহীন। ওর হাতের মুঠোতে পুরলাম আমার শক্ত হাত। উফ... লেখকরা বুঝি সুযোগ পেলে সবার চেয়ে এমন সাহসী আর ভয়ংকর হয়? ওর যাবার সময় যখন ওকে আবারো পেছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরি। এমনি ও পাশ ঘুরে বুকে আলতো করে কিল মারতে মারতে- খালি দুষ্টুমি, খালি দুষ্টুমি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩২