বিকালে বারান্দায় বসে সাফিন। এমনি সময় আফিফা চৌধুরীর ডাকে নিচে যায় সে। উনি যে অনুরোধ করলো সে রকম কাজ সে কোন দিন করেনি। দুজন লোকের সাথে দোতলায় একটি আলমারি তুলতে হবে। অগত্যা যেতেই হলো। নামাতে গিয়ে পায়ের পাতা তলে পড়ে যায়। বের করতে গিয়ে কেটে রক্ত বেরোয়। উনি দেখে অনুশোচনা আর ঘাবড়ানোর পরিবর্তে বাকি লেবার দুটোকে মুখে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছিলেন আর নামছিলেন অবশিষ্ট মালামাল গুলি আনাতে। সাফিন তখনও উপরে ঠায় দাঁড়িয়ে। দেখে কষ্ট পায় নবনীতা। সেভ্লন হাতে নিয়ে পা ছুঁতে গেলে অমনি কেঁপে ওঠে সাফিন। না, না ছোঁবেন না! আমি করিয়ে নিচ্ছি। নবনীতার মায়ের যে অদ্ভুত আচরণ এই অবস্থায় দেখলে ঝড় কোন দিকে বহে এই ভেবে দ্রুত চলে যায় সে।
সকালে দোতলার বারান্দা থেকে নিচে তাকাতেই নবনীতা দেখে, পা খুঁড়িয়ে হাঁটছে সাফিন। দেখে একটা কষ্ট পায়। সাফিনের গন্তব্যের দিকে অপলক তাকিয়েই থাকে সে। কাল থেকে সাফিনকে মনে করে বুকে একটা কষ্ট অনুভব করে।
ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে ডিপার্টমেন্টের সামনের বিল্ডিং এ তাকাতেই দেখে সাফিন। দেখে কষ্টে হাটছে। কাছে গিয়ে জিঙ্গাসা করে আনমনে-
কেমন আছেন?
জি এখন একটু ভালো।
আপনি আমাদের ডিপার্টমেন্টে পড়েন? হ্যা....।
ছরি..... আমাদের জন্যই আপনার কষ্ট হচ্ছে।
না- না! ঠিক আছি। ও কিছুনা। পায়ের আঘাতে কাধের ব্যাগটা নিতে সাফিনের খুব কষ্ট হচ্ছে দেখে নবনীতা এগিয়ে যায়-
দিন দিন আপনার ব্যাগটা আমাকে দিন?
আপনার কষ্ট হচ্ছে?
না...না... লাগবেনা! দিন তো? এই বলে অনেকটা জোড় করে ব্যাগটা হাতে নেয় নবনীতা। তারপর কাধে। এরপর দুজন পথ চলতে থাকে। এরপর নবনীতা যেন কথা বলেই চলেছে। মা একটু অন্যরকম! বাবা এ কথা জানলে ভিষন কষ্ট পেত। বাবা কখনো এমনটি করতেন না। মা জোতদার পরিবারের মেয়ে। নানার রক্তের গন্ধটা এখনও লেগে আছে তার কাছে। জানেন, আমার খুব খারাপ লাগে। কখনো নিজের ইচ্ছা গুলোকে পূরণ করতে পারিনা। কষ্ট গুলো আমার বুকে জমাট বাধে। মুহুর্তেই যেন মেঘমালা বয়ে যায় নবনীতার। সাফিন শুধু একবার তাকায় তার দিকে। আবার বলতে শুরু করে- এতো শাসনের মাঝে কেউ চলতে পারেনা এই পৃথিবীতে। এ জন্য বন্ধবান্ধব কেউ নেই আমার। কেউ ফোন করলে, বা কারো সাথে কথা বললে বা যেতে একটু দেরি হলে শাসনের শেষ থাকেনা। এ জন্যই আমার পাশে কেউ থাকেনা। আমার তেজপাতার জীবন। বলতে বলতে অস্ফুট কান্না আসে নবনীতার মনে। সাফিন কি বলবে ভেবে পায়না। এমনকি সান্তনা দেবার ভাষা সাফিনের নেই। এবার একটু দাড়ায় নবনীতা। সাফিনের চোখের দিকে তাকায়।আপনি কে থাকবেন আমার সাথে আমার চলার পথে? শুনে সাফিন যেন একটু দম বন্ধ করে থাকে। শুধু এটুকু বলে, আমার ব্যাগটা কি দেবেন? আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। ব্যাগটা নিয়ে সাফিন সামনের দিকে যাচ্ছে। পেছনে ধপাস করে কিছু পড়ার শব্দ শোনে। উতকন্ঠায় পাশ ঘুরে তার দৃষ্টি ফিরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮