দেখতে টমেটোর মতই পার্থক্য শুধু উপরে আবরণ বা বৃতি দ্বারা আবৃত থাকে। নতুন প্রজাতির এই সবজিটির নাম টমাটিলো। যার বৈজ্ঞানিক নাম ঢ়যুংধংষরং রীড়পধৎঢ়ধ / ঢ়যরষধফবষঢ়যরপধ এর বিভিন্ন পরীৰা নীরিৰার পর বাংলাদেশে সবুজ ও বেগুনী রংয়ের টমাটিলোর জাত চলতি বছরে কৃষক পর্যায়ে অবমুক্ত হওয়ার দ্বারপ্রানেৱ। কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করতে জাত অবমুক্ত করার বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। বাংলাদেশের চারটি অঞ্চলে এর পরীৰামূলক চাষাবাদ কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হয়েছে। নতুন জাতের এই টমাটিলো সোলানেসি গোত্রের অনৱভূক্ত একটি সবজি যার ফল সবুজ ও বেগুনী রংয়ের হয় এবং দেখতে টমেটোর মতই গোল। টমাটিলো বর্ধিত বৃতি দ্বারা আবৃত থাকে বলে পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে পুরোপুরি রৰা করা যায় কোন রকম রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই। টমাটিলো ছোট অবস'ায় বৃতি দ্বারা আবৃত থাকে, এই সময় টমাটিলো দেখতে দেশের বুনো বেগুন বা ফোসকা বেগুনের মত। টমাটিলো বৃতের ভিতরে গাঢ় সবুজ রংয়ের হয় এবং টমাটিলো বড় হওয়ার সাথে সাথে রংয়ের পরিবর্তন হয়। পরিপক্ক হলে বৃত ফেটে যেতে পারে তখন টমাটিলোর রং কিছুটা হলুদাভ হয়। বৃতটি তখন বাদামি বর্ণ ধারণ করে। টমাটিলোর ভিতরের অংশ টমাটোর মত খালি বা ফাঁকা অংশ থাকে না। টমাটিলোর ভিতরের অংশ ভরাট থাকে। এই টমাটিলোর গাছ টমেটো গাছের মতই দেখতে এবং চাষ পদ্ধতিও একই রকম। বর্তমানে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে সাউ টমাটিলো এক ও সাউ টমাটিলো দুই নামক দুইটি জাতের টমাটিলোর উপর গবেষণা করে সফলতা অর্জন করেছেন ড. নাহিদ জেবা। মেক্সিকোর এই সবজিটি আমাদের দেশের মাটিতে চাষাবাদ করার উপযোগী। শুধু তাই নয়, উৎপত্তিস'ল মেক্সিকোর চাইতে বাংলাদেশে এর উৎপাদন প্রায় আড়াই গুন বেশি। কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই টমাটিলো উৎপাদন করা সম্ভব বলে কৃষকরাই খুবই কম খরচে টমাটিলোর চাষ করতে পারবে। টমাটিলোর উপরে বৃত দ্বারা আবৃত থাকায় পোকামাকড় কোন ৰতি করতে পারে না এমনকি টমেটার মত টমাটিলোর পাতা মোড়ানো রোগও হয়না এবং ভাইরাস রোগ থেকে মুক্ত থাকে। দেশের নতুন জাতের এই সবজিতে রীড়পধৎঢ়ধষধপঃড়হব-ধ নামক এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। টমাটিলোতে উচ্চমাত্রায় পেক্টিন থাকে যা ডায়েটারি ফাইবার হিসাবেও কাজ করে এবং রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। টমাটিলোতে আরো আছে ভিটামিন সি সহ অন্যান্য ভিটামিন। টমাটিলো চাষে কৃষকরা দ্বিগুন লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে কারণ টমেটোর চেয়ে টমাটিলোর ফুল ও ফল আগে ধরে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এই ফসলটি পাওয়া যাবে বিধায় কৃষকরা মধ্যবর্তী ফসল হিসাবে অন্য আরেকটি ফসল চাষ করতে পারবে। টমাটিলো সালাদ, সস ও তরকারী হিসাবে রান্না করে খাওয়া যাবে।
নতুন জাতের সবজি এই টমাটিলোর ফলন টমেটোর চেয়ে অনেক বেশি, যার উৎপাদন হেক্টর প্রতি প্রায় ৭০-৮০ টন। এর বীজ কৃষক নিজেই সংগ্রহ ও সংরৰণ করতে পারবেন। আর তাই এই টমাটিলোর চাষাবাদ যদি কৃষকপর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে দেশের কৃষিখাতে যোগ হবে নতুন একটি সবজি, যা দেশীয় চাহিদা পূরণ করে পাশ্ববর্তীদেশগুলোতে রপ্তানী করে অর্জন করা সম্ভব হবে বৈদেশিক মুদ্রা এমনটা ধারণা করছেন কৃষিবিদরা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৯