somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর কতো কৃষ্ণারা জ্বলবে?

২৪ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বরিশালের নিভৃত পল্লী বালিগ্রামের কৃষ্ণা রাণী দত্ত। বিয়ে হয়েছিল ১০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাদল কুমার দত্তের সাথে কোনো এক শুভক্ষণে। বাবা অনিল কুমার দাস চার মেয়ের ছোট মেয়ে কৃষ্ণাকে সুখী করতে কোনো কার্পণ্য করেনি সেদিন। যৌতুক দেয়া-নেয়া সমাজের চোখে অপরাধ হলেও মেয়েকে সাজিয়ে দেয়া কিংবা জামাইয়ের জন্য দু’চার লাখ টাকা উপহার দেয়া যৌতুকের মধ্যে পড়ে না। কেননা হিন্দু আইনে ছেলে বাবার ভূ-সম্পত্তির অধিকারী হলেও মেয়ে নয়। তাই বাবা-মা মেয়ের বিয়েতে কোনো কিছুতেই কমতি রাখে না। অনিল কুমার দাসও রাখেননি। আদরের ছোট মেয়ে বলে ধার দেনা করে জামাই-মেয়ের হাসি দেখতে সবকিছুই দিয়েছিলেন। বেশ সুখেই কাটছিল কৃষ্ণার দাম্পত্য জীবন। তিন বছর পেরোতেই তার কোলজুড়ে আসে চাঁদেরমতো ফুটফুটে সন্তান। আদর করে নাম রাখেন প্রান্ত কুমার দত্ত। এরই মধ্যে অনেকবার স্বামী বাদল দত্ত স্ত্রীকে দিয়ে নানা অজুহাতে টাকা আনাতেন শ্বশুড়বাড়ি থেকে। অনিল কুমার একজন পল্লী চিকিৎসক। তাই তার অবস্থাও খুব ভালো ছিল না। তাছাড়া ছেলে সন্তান না থাকায় একার উপর ছিল তার সম্পূর্ণ পরিবারের ভরণ-পোষনের ব্যয় ভার। বিষয়-সম্পত্তি যা ছিল তা চার মেয়ে বিয়ে দিতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও মেয়ের মুখের হাসি অমলিন রাখতে নানাভাবে টাকার জোগাড় করে দিতেন তিনি। দিন যায়... বছর পেরোয়....। এভাবে একদিন জামাই সরাসরি শ্বশুড়ের কাছে ফোন করে দুই লাখ টাকা দাবি করেন ওষুধের ব্যবসা করবেন বলে। দরিদ্র্য অনিল কুমার বিশাল এই টাকার পাহাড় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কপাল পোড়ে কৃষ্ণা রাণী দাসের। শুরু হয় স্বামীর অমানুসিক অত্যাচার। দিনের পর দিন চলতে থাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। হায়রে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক! একসাথে একই ছাদের নিচে কাটিয়েও একে অপরের কতো অচেনা! কতো নির্মম!
স্বামীর নির্যাতন যখন নিত্যদিনের হয়ে ওঠে তখনও সন্তান আর অসহায় বাবা-মার কথা ভেবে কৃষ্ণা শুধু ভগবানকে ডাকতেন স্বামীর সুমতি দেবার জন্য। প্রার্থনা করতেন অন্ধকার দিনগুলো পেরিয়ে আলোর দিনগুলোর জন্য। অনেকেই তাকে বাবার বাড়ি গিয়ে আইনের আশ্রয় নেবার কথা বলেছেন। কৃষ্ণা কখনও দেবতারূপী স্বামীকে আইনের মুখোমুখি করতে চাননি। শত নির্যাতনেও স্বামীর প্রতি তার কর্তব্য ও বিশ্বাস ছিল অটুট। আর এই বিশ্বাসই তার কাল হয়ে দাঁড়াল। দেবতারূপী স্বামী বাদল দত্তের হাতে খুন হতে হলো কৃষ্ণা রাণীকে।
আইন প্রামাণ চায়। আর সেই প্রমাণকে মুছে দিতে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পেট্রোল ঢেলে কৃষ্ণার মৃতদেহ পুড়িয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়া হলো। চিতায় তুলে দিয়ে ফোন করা হলো বাবা-মাকে মেয়ের অসুস্থতার কথা বলে। ছুটে এলেন বাবা-মা। কিন্তু তারা মেয়ের মুখ শেষবারের মতো দেখতে পেলেন না। শুধু দেখতে পেলেন আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলছে। যেমন আগুন জ্বলছে বুকের ভেতর। যৌতুকের বলির সাথে নতুন করে যোগ হলো কৃষ্ণা রাণীর নাম।
সম্প্রতি নির্মম এ ঘটনাটি কোনো পত্র-পত্রিকায় আসেনি। আসেনি কোনো ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে। অলোচিত হয়নি বিবেকবান মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু যৌতুকের ব্যাপারে মা-বাবা অবগত থাকার কারণে মেয়ের এই করুণ পরিণতি মেনে নিতে পারেননি। তারা কৃষ্ণা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের জন্য বাকেরগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। হেলেদুলে চলছে অপরাধী নিরুপণের দাঁড়িপাল্লা। আগুনে পুড়ে যাওয়ার মতো কৃষ্ণা হত্যার প্রমাণ সত্যি কি নিঃশেষ হয়ে যাবে নাকি সত্য চির জাগরুক হয়ে থাকবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৩৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×