somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষি অগ্রাধিকার পেলেও ভাবেত হবে উপখাতগুলো নিয়ে

০৬ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১০ তারিখে ঘোষিত হতে যাচ্ছে ২০১০-১১ অর্থবছরের ১ লাখ ৩০/৩২ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট। বর্তমান সরকারের এটা দ্বিতীয় বাজেট যাতে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে জ্বালানি ও কৃষি খাত। বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ ইতিমধ্যেই এডিপিতে সন্নিবেশিত হয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ ও ডিজেল খাতে চলতি বছরের চেয়ে অতিরিক্ত ৬শ কোটি টাকা দিয়ে মোট ভর্তুকি দাঁড়াচ্ছে চার হাজার ১শ কোটি টাকা। প্রাক-বাজেট আলোচনায় ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের সঙ্গে ৪এপ্রিল আলাপকালে এ কথাই জানান অর্থমন্ত্রী।
আগামী বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে কৃষি খাতের জন্য ৭ হাজার ৬শ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষি খাতে ৫৯টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ ও ইক্ষু খাতে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৬শ কোটি টাকা। বিদ্যুতের রেয়াত কৃষকরা ২০ শতাংশ হিসেবে পাবেন। এর বাইরে আরো ৯শ কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৬শ কোটি টাকা দেওয়ার সন্মতি প্রকাশ করেছে। সাত হাজার ৬শ কোটি টাকার মধ্যে কৃষি খাতের উন্নয়ন বাজেটে ১২শ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন খাতে অর্থাৎ ভর্তুকি খাতে পাঁচ হাজার কোটি, বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মসূচি খাতে ৩শ কোটি এবং বেতনভাতা খাতে ১১শ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আয়তন হবে ৩৮ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি আর মোট দেশজ উৎপাদনের বা জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ১ লাখ ১৩ হাজার ৮শ’ ১৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ৩০ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৭.৮ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয় মৎস্য, পশুপালন ও পানিসম্পদসহ সার্বিকভাবে কৃষি খাতের জন্য। বাজেটে সেচ ব্যবস্থার স¤প্রসারণসহ কৃষি খাতে অবকাঠামো জোরদারকরণ, আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ানো ও নদীভাঙন রোধের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে কৃষি ও গ্রামীণ অবকাঠামো জোরদার করতে এডিপির আওতায় বরাদ্দ করা হয় ১ হাজার ৩’শ ৯ কোটি টাকা। কৃষিখাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ জন্য বরাদ্দ করা হয় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পরে আবারো ভর্তুকি বাড়ানো হয় ৭০০ কোটি টাকা। যা মূলত দেয়া হয় ডিজেল ভর্তুকি বাবদ। এছাড়া ভর্তুকির আওতায় ২০০৯ সালের নভেম্বরে এসে দ্বিতীয়বারের মত আবার সারের দাম কমানো হয়। শস্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার কৃষি গবেষণা ও কৃষিখাতে পুনর্বাসন সহায়তা বাবদ ১৮৫ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ করে। চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেট মিলিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেয় ৫ হাজার ৯’শ ৬৫ কোটি টাকা।
দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কৃষিকে এগিয়ে নিতে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। তারপরও নানাভাবে কৃষক হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। আলুচাষিরা আলু উৎপাদন করে হিমাগারে রাখতে পারেনি আবার বিক্রি করতে পারেনি। টমেটো চাষিরা রাস্তার উপর ঝুড়ি ঝুড়ি টমেটো ঢেলে প্রতিবাদ করেছে তাদের ফসলের দাম না পাওয়ায়। বোরো মৌসুমের শুরুতে বীজের সংকট ছিল, কোল্ড ইনজুরিতে বীজতলার ক্ষতি হয়েছে, লোডশেডিং-এর কারণে ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন। এদিকে হাওরাঞ্চলের কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে অনাকাক্সিক্ষত ঢলে। পোল্ট্রি খামারিরা সকারের ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনায় খুশি না। ধুকে ধুকে চলছে পোল্টি খাত। কথা হল গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের মাওনা গ্রামের পোল্টি খামারি হাবিবুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, খাদ্যের দাম বেশি, একদিনের বাচ্চার ৬০/৭০ মূল্য; অথচ উৎপাদন করতে ২০ থেকে ৩০ টাকা লাগে। ব্যাংকের ঋণ পান না ঝুঁকিখাত বলে। তারা সরকারের কাছে কোনো প্রণোদনা চান না, তারা চান স্বল্পসুদে খামারিরা যাতে ঋণ পায় সে ব্যবস্থা যেন সরকার বাজেটে রাখে।
ময়মনসিংহের মাছ চাষি মোঃ তোজাম্মেল কবিরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মৎস্য আইনের ফাঁক-ফোকড়ে মাছ চাষ আজ নীরব সন্ত্রাসের শিকার। অনেকেই শত্রুতার রেশ ধরে পুকুরে বিষ দেয়, লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয় মাছ চাষিদের। প্রমাণ না থাকার কারণে কোনো আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। আবার আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পরবর্তীতে আরো ক্ষতির শিকার হবে বলে অনেকই চুপ করে থাকে। তারপর ভাল মানের পোনা পাওয়া যায় না। অনেক সময় পোনা কেনার পর সঠিক খাবার দেওয়ার পরও মাছের বৃদ্ধি পায় না। খাবরের দাম বেশি, ব্যাংক তেমন ঋণ না দেওয়ার কারণে আমাদের মাছ চাষ বিস্তার ঘটলেও কাক্সিক্ষত সাফল্য আনতে পারছে না। সবচেয়ে বড় কথা হল কৃষির উপখাত হিসেবে মাছকে সরকারের স্বীকৃতি চায় মাছ চাষিরা।
একই অবস্থা বিরাজ করছে ডেইরি ও মধুচাষ খাতে। সিরাজগঞ্জের দুগ্ধ খামারিরা সঠিক দাম না পেয়ে রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছে। বিদেশ থেকে মধু আমদানির কারণে মার খাচ্ছে আমাদের দেশের মধু চাষিরা। তারা মধু উৎপাদন করেও বিক্রি করতে পারছে না।
কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, আমাদের বিপণন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। যাতে কৃষক তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়। মহাজনদের ঋণ শোধ করতে দরিদ্র, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা যাতে ফসল উৎপাদনের পর কম দামে তাদের ফসল বিক্রি না করে এ জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার এই কৃষকদের ফসল কিনলে তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন। তবে ব্যাপারটি সোনা নয়। কিন্তু করতে হবে। কারণ কৃষকের কল্যাণ ছাড়া দেশের কল্যাণ হবে। জনতা ব্যাংক কৃষককে সুদবিহীন ঋণ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কৃষক কখনো ঋণের টাকা মারে না। কৃষক নিজে এসে ঋণের টাকা শোধ করে দিয়েছে।
কৃষি এবং কৃষকদের কথা জানতে হলে তাদের কাছে যেতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের কথা ভেবে বাজেট তৈরি করতে হবে। চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষের কৃষি বাজেট কৃষকের বাটেজ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, দীর্ঘদিন আমি কৃষির সাথে জড়িত ছিলাম। এখনো আছি। কৃষকের সাথে আলাপ করেই কৃষকের বাজেট করা উচিত। কৃষকরা ভাল আছেন বলেই আমরা ভাল আছি।
কৃষকের উপরই নির্ভর করছে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। কৃষিপ্রধান এ দেশে আগামী বাজেটে কৃষিকে গুরুত্ব দেবার পাশাপাশি মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি, মধু খাত, কৃষির উপখাতগুলোর স্বীকৃতি পাবে, আলু-টমেটো, দুধের মত উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সঠিক মূল্য পাবে, উপখাতগুলোতে স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ এমনটাই আশা করছেন দেশের কৃষক।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×