"দেশের তুলনায় ক্রিকেট অতি ক্ষুদ্র একটা ব্যাপার। একটা দেশের অনেক ছোট ছোট মাধ্যমের একটা হতে পারে খেলাধুলা; তার একটা অংশ ক্রিকেট। ক্রিকেট কখনও দেশপ্রেমের প্রতীক হতে পারে না। সোজা কথায়-খেলাধুলা হলো বিনোদন"
"খেলা কখনও একটা দেশের প্রধান আলোচনায় পরিণত হতে পারে না। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে যা সমাধান বাকি। সেখানে ক্রিকেট নিয়ে পুরো জাতি, রাষ্ট্র এভাবে এনগেজ হতে পারে না। আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় তারকা বানানো হচ্ছে, বীর বলা হচ্ছে, মিথ তৈরি হচ্ছে। এগুলো হলো বাস্তবতা থেকে পালানোর ব্যাপার"
"আমি ক্রিকেটার, একটা জীবন কি বাঁচাতে পারি? একজন ডাক্তার পারেন। কই, দেশের সবচেয়ে ভালো ডাক্তারের নামে কেউ তো একটা হাততালি দেয় না! তাদের নিয়ে মিথ তৈরি করুন, তারা আরও পাঁচজনের জীবন বাঁচাবেন। তারাই তারকা। তারকা হলেন লেবাররা, দেশ গড়ে ফেলছেন। ক্রিকেট দিয়ে আমরা কি বানাতে পারছি? একটা ইটও কি ক্রিকেট দিয়ে বানানো যায়? একটা ধান জন্মায় ক্রিকেট মাঠে? যারা ইট দিয়ে দালান বানায়, কারখানায় ওটা-ওটা বানায় বা ক্ষেতে ধান জন্মায়, তারকা হলেন তারা"
"বীর হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আরে ভাই, তারা জীবন দিয়েছেন। জীবন যাবে জেনেই ফ্রন্টে গেছেন দেশের জন্য। আমরা কি করি? খুব বাজে ভাবে বলি--টাকা নেই, পারফর্ম করি। একটা অভিনেতা, গায়কের মতো পারফর্মিং আর্ট করি। এর চেয়ে এক ইঞ্চি বেশিও না। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে এইজন্য দাঁড়ায় নাই যে জিতলে টাকা পাবে। কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা রে! ক্রিকেটে বীর কেউ থেকে থাকলে রকিবুল হাসান, শহীদ জুয়েলরা"
"রকিবুল ভাই ব্যাটে জয় বাংলা লিখে খেলতে নেমেছিলেন, অনেক বড় কাজ। তার চেয়েও বড় কাজ, বাবার বন্দুক নিয়ে ফ্রন্টে চলে গিয়েছিলেন। শহীদ জুয়েল ক্রিকেট রেখে ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছিলেন। এটাই হলো বীরত্ব। ফাস্ট বোলিং সামলানার মধ্যে রোমান্টিসিজম আছে, ডিউটি আছে। বীরত্ব নেই"
"আমি বলি, এই যারা ক্রিকেটে দেশপ্রেম দেশপ্রেম বলে চিৎকার করে, এরা সবাই যদি একদিন রাস্তায় কলার খোসা ফেলা বন্ধ করত, একটা দিন রাস্তায় থুথু না ফেলত বা একটা দিন ট্রাফিক আইন মানত, দেশ বদলে যেত। এই প্রবল এনার্জি ক্রিকেটের পেছনে ব্যয না করে নিজের কাজটা যদি সততার সঙ্গে একটা দিনও সবাই মানে, সেটাই হয় দেশপ্রেম দেখানো। আমি তো এই মানুষদের দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটাই বুঝি না!"
"কিছু হলেই আমরা বলি, এই ১১ জন ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। আন্দাজে! তিন কোটি লোকও হয়ত খেলা দেখেন না। দেখলেও তাদের জীবন-মরণ খেলায় না। মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন রাজনীতিবিদেরা, তাদের স্বপ্ন ভবিষ্যত অন্য জায়গায়। এই ১১ জন মানুষের ওপর দেশের মানুষের ক্ষুধা, বেঁচে থাকা নির্ভর করে না। দেশের মানুষকে তাকিয়ে থকতে হবে একজন বিজ্ঞানী, একজন শিক্ষাবিদের দিকে"
(দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীমূলক বইয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:২৩