এমবিএ শেষ করার পর থেকেই বাসা থেকে প্রায় প্রতিদিন কিছু কথা শুনে শুনে মানসিকভাবে সিক হয়ে যাচ্ছি বেশি। দেশের জায়ান্ট একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে ১৩০০ দিন কাজ করার পর ২ মাস রেস্ট নিলাম, সাথে করে এমবিএ শেষ করলাম এরই সাথে সাথে ফ্রিন্যান্স কাজও করলাম। আর এখন নতুন কোম্পানীতে চাকরি পাবার পর আরো কথা বেশি শুনতে থাকলাম। এর পর সেটাও ছেড়ে আবার আরেকটা গ্রুপ অফ কোম্পানিজে ঢুকলাম, মনে করছি হয়তো এবার কিছু কথা শুনা কমবে, বাট কিয়ের কি? ৬ মাস যাবার আগেই বাসায় ঘ্যান ঘ্যান! অমুকের পোলা ব্যাংকে ৬০/৭০ হাজার কামায়! আর তুই? বিয়া করে বউ চালাবি কেমনে? এখনকার মাইয়ারা চিনে টাকা, ব্লা ব্লা ব্লা. মেইন কথা হইলো এবার ভালো স্যালারী না হলে বউ টিকবে না! শালার ৬ মাস কাজ করেই নিজের স্যালারির ইনক্রিমেন্ট হল ৭০০০ টাকা, এডি চোখে পড়ে না!
এমন না যে ব্যাংক এর জন্যে ট্রাই করি নাই, এক সময় ফেড আপ হয়ে গিয়েছি এপ্লাই করতে করতে ইন্টারভিউ রিটেন দিতে দিতে। যারা সেইখানে করে চাকরি তাদের লাইফ তো দেখি, আমার সেটা ভালো লাগে না! টাকার জন্যে লাইফ কেনো নস্ট করবো? এটাই আমার কথা। ব্যাংকে ভালো চাকরি, ভালো টাকা, সাথে বিয়ের বাজারে ভালো দাম-তাই বলে আর কেউ কিছু করে না? বিয়ে হচ্ছে না? ভালো বউ ভাগ্যের বেপার, সেটা আল্লাহ তালার হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
আব্বার কথা ব্যাংকের চাকরি ছাড়া আর কোন চাকরি চাকরিই না। প্রতিদিন এর সাথে ওর সাথে তুলনা করে, ওর মেয়ে ব্যাংকে আছে, ওর ছেলে ডাক্তার, আরেকজনের ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বিসিএস ক্যাডার। আর উনার ছেলেরা আকাইম্মা। আমি শুনে যাই, কোন কথা বলার মত গলা নাই। কারন উনার ছেলে তো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার অথবা ব্যাংকার না। আর সরকারী মানুষকে বুঝানো যায় না। কথায় কথায় গরম দেখানো আর আমার থেকে বেশি বুঝোস টাইপ ডায়ালগ।
কইত্তে শুনছে আবার এমবিএম করলে নাকি ব্যাংকে ডাইরেক্ট ঢুকায়। এই নিয়া গরম কথাবার্তার পর আর আগের মত আমার সাথে কথাও কয় না। আর প্রতিদিন সকালে রাতে রুটিন করে আম্মারে হাজার কথা শুনায়। আর আম্মুর কথা হল পড় পড় আরো পড়, বিসিএস দে সরকারি চাকরি কর, টাকা দিয়ে কি হবে? সম্মান দরকার। জানি সব বাবাই চায় উনার ছেলে মেয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার হউক, সেটা তো হয়ে দেখাইতে পারি নাই, একটাই অপশান ছিলো ব্যাংকার সেটাও এখন লাখ লাখ টাকার পোস্ট। এক্সামের এডমিট কার্ড আসে, এক্সাম দি! আর দেখি দুনিয়া।
আর নিজের না আছে টাকা ব্যবসা করার, না যেতে পারতেছি বিদেশ। ব্যবসাও করতে দিবে না, বিদেশ যেতেও দিবে না। আরো প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা ভাবনা করলে মাথায় আর কিছু ধরে না। লাইফ স্টাইল চেইঞ্জ হয়ে গেছে। বিয়াশাদি করে আর টিকা লাগবে না ঢাকা শহরে, যা পাই/পাবো তাই দিয়ে চলবে না কারো। পোলাপানের স্কুল/কলেজ/ভার্সিটি খরচ (সেইকালে যদি বাঁচি আর কি) দিতে পারবো কি না সেই নিয়া টেনশান। আর সেই টেনশান তো আমাদের আব্বু আম্মু বুঝবে না। কারন উনার ছেলে মেয়েরা পড়ে আসছে ১০ টাকা মাসিক বেতনের সরকারি স্কুলে।
মাথায় আর কিছু খেলে না। আপাতত লিনকিন পার্কের পেপারকাট শুনি। মাথার ভেতর হাজারো পোকা। সমাধানের পথ কি তাও জানা নাই আপাতত।
আর আমাদের জীবন সামগ্রিক, যেকোন অভিজ্ঞতাই অবমূল্যায়ন করার সু্যোগ নেই।
আপডেটেড
০২/০৫/২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০