২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠেই আমরা বিডি রেঞ্জারস ১টা গাড়ী আর ৫ টা বাইকে করে ঢাকা থেকে বের হব হব এই উত্তেজনায় আমি বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে
কিন্তু কিসের কি যাব? সবাই বের হতে হতে ৯টা বাজালো। যাক শেষ পর্যন্ত ৯.৩০-এ সবাই নাস্তা খেয়ে বাঘের বাজারের দিকে গমন করলাম, বলে রাখা ভালো সকাল সকাল খুব ঠান্ডা পড়ছিল, বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঠান্ডা গমন হয়ে গেলো। পথে কয়েকবার রেস্ট নেয়া হচ্ছিল। এর মাঝে আমার আবার গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে গাড়ি থেকে নেমে বাইকের ভ্রমন শুরু হল।
আমি যার বাইকে ছিলাম রাকেশ ভাই, উফ উনার কথা আর কি বলব-মনে হয় ধুম-৩ এর আমিরের বাইকে উঠলাম। ২ জনকে পিছনে নিয়ে সেই কি টান উনার সারা রাস্তায়- আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে গেলাম। এরকম লাইভ ডেয়ারিং বাইক রাইডিং খুব কমই হয়েছে আমার। মনে হচ্ছিলো ঘোস্ট রাইডারের বাইকে উঠলাম, এছাড়া সজিব আর সোহাগ আমকে আগেই বলেছে রাকেশ ভাইয়ের হাড্ডিগুড্ডি নাই-লাইফ মানেই তার কাছে বাইক, আর হাত পা কয়বার ভাংসে তার নাকি হিসাব নাই। নাহ এই মেমরি কোনদিন ভুলবো না। উনার আর একটা ফ্রেন্ড আমাদের সাথে জয়েন করে গাজিপুর থেকে। আমরা রওনা দিয়ে যখন গাজিপুর চার রাস্তার জ্যামে, তখন উনার ফ্রেন্ড ঢাকা থেকে বাইক নিয়ে আমাদের সাথে জয়েন করে। ও তো ঘোস্ট রাইডারের বাপ!! যাই হোক সেইফলি বাঘের বাজার দিয়ে সাফারি পার্কে গেলাম আমরা। টিকেট কেটে ভিতরে গিয়ে এদিক সেদিক করে সজিব আমাদের বিডি রেঞ্জারস এর এক্স-ম্যানেজার বলে, আগেই কোর সাফারিতে না গিয়ে চল পাশেরটাতে যাই নইলে পরে সবাই অইডা দেখবে না। আমি কইলাম চল।
যাবার পর ম্যাকাও পাখি আর আর তার বাচ্চা কাচ্ছা দেখতে তাদের খাঁচায় ঢুকলাম, চিড়িয়াখানা আর সাফারির পার্থক্য মনে হয় সেইখান থেকেই বুঝতে পারছিলাম। চারদিকে খাঁচা কিন্তু অনেক স্পেস যেখানে আমার মাথার উপর ম্যাকাও উড়ে, বাচ্চাগুলো কিচির মিচির। হাহা। ম্যাকাও কতগুলো ছবি তুলার সময় যে পোজ দিচ্ছিলো হাহা মনে হচ্ছে প্রফেশনাল!!
Photo Credit: Sumit Bikram Rana
যাই হোক একে একে কুমির পার্ক, লিজার্ড পার্ক, ফেন্সি ডাক গার্ডেন, ক্রাউন্ড ফিজ্যান্ট এভিয়ারি, প্যারট এভিয়ারি, ধনেশ পাখিশালা, ম্যাকাউ ল্যান্ড, মেরিন একোয়ারিয়াম, অর্কিড হাউজ, প্রজাপতি বাগান, ক্লাইমেট হাউজ, ভালচার কর্নার, ঝুলন্ত ব্রিজ, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ফোয়ারা দেখে কোর সাফারি দেখার জন্যে লাইনে দাঁড়িয়ে দেখলাম টিকেট বেচা বিক্রি নাই, লাইন অনেক বুঝেই লাইনে দাড়াই গেলাম ১০ জন, বাকিরা সামনে গিয়ে হাব ভাব বুঝতেছিল। এর মাঝে গেইট ধাক্কাধাক্কি চলল-সজল খুব গরম হয়ে কয়েক বার আঙ্গুল দিয়ে শাসাইলো।
কোর সাফারিতে ঢুকার পর তো মাথা নষ্ট। সাফারি পার্কের নিজস্ব কোষ্টারে করে আমাদের ১৬ জনকে নিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল আফ্রিকা। আসলে পরিবেশ দেখে আমি ১০০% দিবো আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সাফারি পার্ককে, ডিসকভারি নেটজিও-তে আফ্রিকা থাইল্যান্ডের সাফারি দেখে দেখে একটা ধারনা তো আছে। যাই হোক কথা না বাড়াই ছবি দেখে বাকিটা আপনাকে বুঝতে হবে। আমি আর কিছু বলছি না।
Photo Credit: Sumit Bikram Rana
আর আমাদের সাথে এবার ফটোতে ছিল অনি আর আমাদের সবার নেপালী বন্ধু সুমিত-সুমিতের কথা কিছু বলে রাখি, সে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটে পড়ছে সজলের সাথে, অরিজিনাল ফ্রম নেপাল। সে এক্স আর্মি ম্যান। ২ বছর পর হাতে বাইক পেয়ে আমাকে নিয়ে গাজিপুর সাফারি থেকে ঢাকা নিয়ে এসেছে- ঘোস্ট রাইডাররা তার রাইডিং মার্ক ১০০/১০০ দিয়েছে। বাট ঢাকায় কিন্তু তার কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। যেভাবে লাস্ট ৩০মিনিট চালিয়েছে মনে থাকবে অনেকদিন। আসার পথে অনেক জ্যাম পেয়েছিলাম, সুমিত খুব ভালো ভাবে চিপাচাপা দিয়ে বাইক বের করে উত্তরা নিয়ে এসেছে। ধন্যবাদ পাওনা থাকলো-তার এনার্জির তারিফ করতে হবে আরেকবার- সবাই যেখানে বাসায় এসে মরার ঘুম সে সারাদিনের আমাদের সব ফটো এডিট করে রাতে ফেইসবুকে আপলোড করেছে।
আগের আমার সাজেক-২ ব্লগে রিসেন্ট কিছু সাজেকের পিকচার দিয়েছিলাম, সেগুলো তারই তোলা। আর অনিকে আবার ধন্যবাদ ভিডিওটা শেয়ার করার জন্যে। ইউটিউব লিঙ্কটা শেয়ার করে দিবো। দেখে নিবেন লাইভ আমাদের সাফারি ট্যুর।
বিডি রেঞ্জারস-এর সবাইকে আবারো ধন্যবাদ, ফয়সাল জাহিদ রানা বাধন জিতিয়া সবাইকে একসাথে পেয়ে অনেক ভালো লেগেছে। সারাদিন অনেক ভালো কেটেছে।
বলে রাখা ভালো সেইদিন আমার অফিস ছিল, কিন্তু আমি সিক লিভ কাটাইছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিক হইতেই হয় নইলে লাইফে মজা থাকে না।
এবার আসেন কিছু জানি আমাদের সাফারি পার্ক সম্পর্কে-
Difference between zoo and safari park
Zoo is the place where people are free and the animals are confined. On the other hand, the environment is opposite in a safari park in which jungle environment is maintained. The safari park is much better than any kind of zoo.
সাফারি পার্কের অবস্থান ও আয়তন
ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা – ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাফারী পার্কটির অবস্থান।
আমি এখানে জিপিএস এর মাধ্যমে গুগল ম্যাপ দিয়ে লোকেশানটা দেখিয়ে দিলাম-কাজে লাগবে।
Bus fare from Dhaka to Bagher Bazar: Per person TK 50(normal), TK 80 (sitting service)
Auto rickshaw fare from Bagher Bazar to Safari Park: Per person TK 15
সাফারী পার্কের আয়তন ৩৬৯০.০ একর। এর মধ্যে ৫৫০.০ একর ব্যাক্তি মালিকানধীন ভূমি রয়েছে যা সিংহভাগ অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে ৩৪০০.০ একর এলাকায় প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং ৪০০.০ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন বাইদ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট এলাকা পর্যায়ক্রমিক ভাবে উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। বাঘের বাজারের প্রবেশ পথে বাঘের মডেল সম্বলিত ফটক নির্মাণ করা হয়েছে।থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সাফারী পার্কের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে এ পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।
সাফারি পার্ক
এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, পার্ক অফিস, বিশ্রামাগার, ডরমিটরি, বন্যপ্রাণী হাসপাতাল, কুমির পার্ক, লিজার্ড পার্ক, ফেন্সি ডাক গার্ডেন, ক্রাউন্ড ফিজ্যান্ট এভিয়ারি, প্যারট এভিয়ারি, ধনেশ পাখিশালা, ম্যাকাউ ল্যান্ড, মেরিন একোয়ারিয়াম, অর্কিড হাউজ, প্রজাপতি বাগান, ক্লাইমেট হাউজ, ভালচার কর্নার, ঝুলন্ত ব্রিজ, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ফোয়ারা, বাঘ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ, সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, ইকো-রিসোর্ট, ফুট কোর্ট, এলিফেন্ট শো গ্যালারি, বার্ড শো গ্যালারি, এগ ওয়ার্ল্ড ও শিশুপার্ক।
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে আছে ২৬ প্রজাতির কয়েক হাজার পশু ও পাখি, যার মধ্যে আছে ১১টি বাঘ, তিনটি সাদা সিংহসহ ১০টি সিংহ, ১০০টি ময়ূর, দুই শতাধিক হরিণ, চারটি জিরাফ, ছয়টি জেব্রা, ১৩টি বন গরু, চারটি হাতি, পাঁচটি ভল্লুক ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এরা এখন পার্কে উন্মুক্ত বিচরণ করছে।
এসব প্রাণী দেখার জন্য রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
বাঘ ও সিংহের বেষ্টনীতে সাফারী বাস ও জিপে করে পর্যটকরা প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণরত বাঘ, সিংহ ও ভল্লুক দেখতে পারবেন। এছাড়া আফ্রিকান সাফারী পরিভ্রমণে জিরাফ, জেব্রা, ব্লু ওয়াইল্ড বিস্ট, ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্ট, ব্লেস বকসহ বিভিন্ন প্রাণী দেখতে পারবেন।
পার্কে প্রবেশ ফি
প্রতিজন বয়স্ক ৫০টাকা,
অপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছরের নিচে) ২০ টাকা,
শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা,
শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থী গ্রুপ (৪০-১০০ জন) ৪০০ টাকা,
শিক্ষা সফরে আগত শিক্ষার্থী গ্রুপ (১০০ জনের বেশি) ৮০০ টাকা,
বিদেশি পর্যটকদের পাঁচ ইউএস ডলার প্রবেশ ফি ধার্য করা হয়েছে।
পার্কিং ফি
প্রতিটি বাস/কোচ/ট্রাক ২০০ টাকা,
মিনিবাস/ মাইক্রোবাস ১০০ টাকা,
কার/জিপ ৬০ টাকা,
অটোরিকশা ২০ টাকা।
গাড়িতে সাফারী পার্ক পরিদর্শন অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিজন ৫০ টাকা,
বয়স্ক প্রতিজন ১০০ টাকা।
এছাড়া ক্রাউন্ড ফিজ্যান্ট এভিয়ারি পরিদর্শন ১০ টাকা,
ধনেশ এভিয়ারি ১০ টাকা,
প্যারট এভিয়ারি ১০ টাকা।
Food Arrangement
Outside food are not allowed. You can have your food from "Tiger Restaurant" or "Lion Restaurant" inside Bangabandhu Sheikh Mujib Safari Park.
Lunch: 160 Tk ( Chicken Birany) You may take or change your food with extra payment.
Photo Credit: Onyrul Anam