“লেট নাইট”
একটা কল সেন্টারে খুব পরিচিত নাম, আমরা যারা ২৪/৭ সার্ভিস দিচ্ছি গ্রামীনফোনের গ্রাহকদের খুব কাছে রাখার জন্য, রাতের ঘুম হারাম করে, আবেগকে দূরে ঠেলে আমরা কাজ করে যাচ্ছি দিন-রাত।
অনেকে যারা মনে করে রাতের বেলা আবার কে কল দেয় তাদের কথা না হয় আজ নাই বললাম-
রাতের কথা বলতেই হচ্ছে কারন মানুষ রাতের বেলা খুব দরকার হলে অথবা বিপদে না পড়লে হটলাইনে কল দেয় না।
হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে একটা কলের কথা না বললেই নয় আজ-
রাত তখন ২.৩০ এর কাছাকাছি, প্রায় ৭০ জন গ্রাহককে সার্ভিস দেয়া শেষ অলরেডী।
হটাৎ করে একজন কল দিয়ে বলে,
-ভাই এটা কি গ্রামীনফোন?
-জি স্যার, বলুন আপনাকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি?
-ভাই আমাদের বাঁচান
-কেন স্যার কি হয়েছে বলুন?
-স্যার আপনে আমাকে ফায়ার সার্ভিসের নাম্বার দেন, আমাদের মিরপুরে আগুন লাগসে, বাংলালিঙ্কের ১২১-এ কল দিলাম, ওরা আমাকে ভুল নাম্বার দিছে, আপনার কাছে অনুরোধ আমাকে সঠিক নাম্বার দেন..
-ঠিক আছে স্যার একটু অপেক্ষা করুন আমি দেখছি
ভদ্রলোকটি আর বেশি কিছু বলতে পারছিল না, উনার সারা শরীর কাঁপছিল আর কথাও বলতে পারছিল না গলা কাঁপছিল-
আমি সময় নিয়ে ডিরেক্টরি থেকে মিরপুরের ফায়ার সার্ভিসের কন্টোল রুমের নাম্বার নিয়ে দিলাম কল-কন্টোল রুমের অপারেটর আমাকে আর একটা নাম্বার দিলো, ওই নাম্বারটা আমি গ্রাহককে দিলাম।
-উনি আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন নাম্বার কি সঠিক?
-আমি বলি আপনি ১০০% নিশ্চিত থাকুন স্যার- আর আপনি ওই নাম্বারে কল করুন আর দ্রুত উনাদের ঠিকানা দিবেন আপনাদের যেখানে আগুন লেগেছে।
ধন্যবাদ, সাবধান থাকবেন, ভাল থাকুন বলে ফোনটা রাখার পরেও কেন জানি মনে মনে বার বার চিন্তা করছিলাম কলটার কথা,
তাই আমি আবার ১০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের কন্টোল রুমের নাম্বারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপডেট-
কন্টোল রুমের অপারেটর যা বললেন- শুনেই আমার একটু আপাতত শান্তি লাগলো
১০ মিনিট আগেই এক ব্যক্তি ফোন দিয়েছেন, ঠিকানাও দিয়েছেন, আমাদের ফায়ার সার্ভিসের তিনটা ইউনিট অলরেডী রওনা দিয়ে দিয়েছে।
ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে ভাবলাম এখনো আমরা রোবট হয়ে যাইনি, এখনো আমাদের মানবিকতা কিছুটা হলেও আছে।
হয়ত আমার এই একটা ফোন অনেক ঘুমন্ত মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, হয়ত হাজার মানুষের ঘরবাড়ী আগুন থেকে রক্ষা করতে পেয়েছে, হয়ত কোন ঘুমন্ত শিশুর স্বপ্নকে ভবিষ্যত বাস্তবে রুপ দিতে পেরেছে, কোন ভাই হয়ত এবার তার বোনের আবদার রাখার জন্য লাল ফিতে এনে দিতে পেরেছে, কোন ছেলে হয়ত তার মায়ের জন্য প্রথম চাকরির প্রথম উপহার শাড়ি কিনে দিতে পেরেছে, কোন বাবা হয়ত তার ছোট ছেলেটির জন্য বিকেলে ক্লান্ত শরীরে আবদার মিটাতে বাইরে হাটঁতে অথবা খেলতে নিয়ে যাবে- কিন্তু এবার বাবা ছেলেটির হাতটি ধরবে অনেক শক্ত করে।
এই মনে করেই ভাবতে ভাবতেই পরের কল-
- "এক্স" বলছি, আপনাকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি?