ঢাকা: সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ছয় মাস নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বিরোধী ঝড় উঠেছে ফেসবুকে। সব শ্রেণী পেশার মানুষ যোগ দিয়েছেন এ আলোচনায়। এদের বেশির ভাগই দোষ দেখেছেন বিসিবির।বাদ যাননি সংবাদকর্মীরাও। নিজেদের ওয়ালে স্ট্যাটাস লিখে জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া।
তবে কারো কারো চোখে আবার সাকিবও নির্দোষ নন।এ নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
একাত্তর টেলিভিশনের ডিরেক্টর নিউজ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘পুরোটাই ব্যবস্থাপনার ত্রুটি…কিন্তু কে বলবে?…লোটা, পাপ্পুরাই ভালো থাকে সবসময়…’
এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন লিখেছেন, ‘যে ক্রিকেট বোর্ডের পিওন থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত সবাই নিয়োগ পায় তোষামোদী বা স্বজনপ্রীতি করে, তারা প্রতিভার মূল্য কি বুঝবে? সাকিব, তোমার ভালো খেলোয়াড় হবার দরকার নেই, তুমি ভালো চামচা হয়ে যাও, তোষামোদকারী হয়ে যাও, তাহলে তোমাকে ফুলের মালা দিয়ে দলে ফিরিয়ে নেয়া হবে।’
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী লিখেছেন, ‘সাকিবকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু তাকে শাস্তির সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। দেশের ক্রিকেটে শৃংখলা আনার স্বার্থে এমন একটি সিদ্ধান্ত কঠিন হলেও দরকার ছিল। অস্ট্রেলিয়া-ভারত যে কোনো দেশের কোনো খেলোয়াড় এমন করলে তাদের ব্যাপারেও দেশগুলো একই সিদ্ধান্ত নিতো। একই রকম অপরাধে ক্রিস গেইলের মতো ক্রিকেটারের বিরুদ্ধেও শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ। সেই সাজা শেষে গেইল আবার দলে ফিরেছেন। তবে সাকিব যদি আপিলের আবেদন করেন তাহলে সাজার মেয়াদ কিছুটা কমানোর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ক্রিকেট বোর্ডকে এড়িয়ে আকরাম খানসহ যারা সাকিবকে নিয়ে অনৈতিক চর্চা করেছেন (সাকিবের দাবি মতো), তাদের ব্যাপারে বিসিবি কী ভেবেছে তা জানার আগ্রহ রইলো।
চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘৬ মাসের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাকিব নিষিদ্ধ। দেড় বছর আইপিএলসহ বিদেশি লিগ খেলতে পারবেন না। নেইমারের চেয়েও এ মুহূর্তে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় খবর অথবা দুঃসংবাদ। বোর্ডের সঙ্গে সাকিবের এতো বড় সমস্যা যে অন্যভাবে সমাধান করা গেলো না!’
এটিএননিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, সাকিব আল হাসান ৬ মাসের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ। আগামী দেড়বছর দেশের বাইরের কোনো লিগে খেলতে পারবেন না। সাকিবের ভালোর জন্যই শাস্তিটা দরকার ছিল। আশা করি এ শাস্তিতে সাকিবের বোধোদয় হবে। ৬ মাস পর ফিরে আসবে অন্য সাকিব। বাংলাদেশের ক্রিকেট সাকিবকে মিস করবে।’
গাজী টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক রাকিবুল আহসান মুকুল লিখেছেন, আমাদের প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলো। আসলে কোথাও একটা গণ্ডগোল হচ্ছে মনে হচ্ছে। একসময়ের জনপ্রিয় ফুটবলের মতো হালের ক্রেজ ক্রিকেটকে ধ্বংস করার জন্য কোনো একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। সাকিব দেশে ফিরে তো বললো যে সে দেশের হয়ে খেলবে না এমন কথা বলেনি। তাহলে সেই কথা ছড়ালো কারা। কারা ফাঁসানোর চেষ্টা করলো সাকিবকে। আবার ম্যাচের পর ম্যাচ গোল্লা খেয়েও চাচার কোমর ধরে বাংলাদেশের তরুণদের জ্ঞান দিয়ে বেড়াচ্ছে তামিম… হচ্ছে কি এসব? আমরা চাই কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি পাক। কিন্তু তার বিনিময়ে দেশ যেন ভালো কিছু পায়। সাকিব বিহীন ক্রিকেটের ভালো কিছু দেখার অপেক্ষায়………
প্রথম আলোর হেড অব রিপোর্টিং শওকত হোসেন মাসুম লিখেছেন, এই ক্রিকেট বোর্ডে আমি অনাস্থা দিলাম, সব দুই নম্বরগুলা এক হইছে।
যমুনা টেলিভিশনের জয়েন্ট নিউজ এডিটর মাহমুদুল হাসান, ‘ইদানীং সাকিব কাউকে গুনছে না, ওর চললে-বলনে হাববড়া, ডেমকেয়ার ভাব’- এমন অভিযোগ আমরা সাংবাদিকরাই করেছি, সেই সাথে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিসহ আচরণগত নানা কেলেংকারির তো ছিলই। কিন্তু তাই বলে, দেশ সেরা ক্রিকেটারকে ৬ মাস ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কি মানা যায়? শুধু তাই নয়, দেড় বছর বিদেশে খেলতে যেতে পারবে না বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার! সাকিব- যার অল-রাউন্ড নৈপূণ্যে কলকাতা নাইটরাইডার্স আইপিএল জিতলো টানা দু’বার, ধুঁকতে থাকা জাতীয় ক্রিকেট দলের একমাত্র নক্ষত্র যিনি, যার বদৌলতে বাংলাদেশের নাম সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয় ক্রিকেট বিশ্বে, তাকে এমন শাস্তি দেয়া কতটুকু সমীচীন?’
সাংবাদিক পুলক ঘটক লিখেছেন, সাকিব ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় আমি ব্যথিত। এর ফলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হল, একজন ভালো খেলোয়াড় হিসেবে তার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হল। কিন্তু এই সাজা তার প্রাপ্য। খেলোয়ারদের জন্য শৃঙ্খলা থাকা উচিৎ। সাকিবের যে অসভ্যতা এর আগে দেখেছি, তাতে ওর উপর শ্রদ্ধা রাখা যায় না। একজন বিশ্বমানের খেলোয়ারের আচরণ এরকম হতে পারে না। এরপর থেকে সব ক্রিকেট খেলোয়াড় দায়িত্বশীল আচরণ করবে, এটাই কামনা।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মুকিমুল আহসান হিমেল লিখেছেন, ভুল বোঝার কোনো সুযোগ নাই…. সাকিবকে সব ধরনের খেলা থেকে নয়, শুধুমাত্র সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ছয় মাস নিষিদ্ধ করছে করেছে বিসিবি। কার লাভ? কার ক্ষতি??
তরুণ সাংবাদিক ও কথাশিল্পী মেহেদি উল্লাহ লিখেছেন, সাকিবের এই শাস্তিতে বিশ্ব-ক্রীড়া জানবে, বাংলাদেশ নামের একটা দেশ আছে আর সে দেশে একটা ক্রিকেট বোর্ড আছে, যারা কোনো মগের মল্লুকি বরদাস্ত করে না। অথচ সাকিব আর বিশ্বের জন্য বড় দুঃসংবাদ, সাকিবের দেশে এর চেয়ে জঘন্যতম অনিয়মগুলোকে অপরাধই মনে করা হয় না। বিচার থাক দূরে।
রাঙামাটির সংবাদকর্মী ফজলে এলাহী লিখেছেন, সাকিব সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ছয়মাসের জন্য নিষিদ্ধ! দেড় বছরের জন্য তার অনাপত্তিপত্র স্থগিত (তার মানে সামনের আইপিএল, বিগব্যাস, সিসিএল এ সে খেলতে পারবে না )……………….এগুলো কি এক অপরাধের শাস্তি নাকি অতীতের সবগুলো মিলিয়ে ??…………………………..তবুও দলে শৃংখলা ফিরে আসুক, ক্রিকেটাররা ঐক্যবদ্ধ থাকুক………আরেক বেয়াদব তামিম্যারেও একটু টাইট দেয়া উচিত……….’
প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার শরীফুল হাসান লিখেছেন, সাকিবকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বিসিবি আসলে কি চায়? তারা কি চাইছে সাকিব ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিক; নয়তো তাদের পা ধরে ফিরে আসুক! একটা কথা সবার মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে হাজার হাজার বেয়াদব আছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী আছে লাখ লাখ। কিন্তু সাকিব আছে একটাই। কাজেই শাস্তি দিতে গিয়ে আমরা যেন তার ক্যারিয়ারই ধ্বংস না করে দেই। কারণ তাতে সাকিবের চেয়ে বেশি ক্ষতি বাংলাদেশের ক্রিকেটের। বিসিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চাইছি…’
গাজী টিভির জয়েন্ট নিউজ এডিটর কবি সাঈফ ইবনে রাফিক লিখেছেন, ‘প্রতিভাবানদের বেয়াদবি না সহ্য করতে পারলে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মধ্যম মানের ডিসিপ্লিন্ড প্লেয়ার দিয়া কমনওয়েলথ গেমসে প্যারেড করানো যায়, ওডিআই-টেস্ট জেতা যায় না।’