বিপিএল স্পোর্টস রম্য লেখার পর আগ্রহ ছিলো এশিয়া কাপ নিয়েও স্পোর্টস রম্য টাইপের কিছু লিখবো।বাংলাদেশের পরাজয়ে পরিকল্পিতভাবে ওরকম কিছু লিখতে পারছিনা।মাথায় যা আসছে তাই লিখছি।লখাটি কীভাবে নেবেন সেটা আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি!
সবার মন খারাপ এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের পরাজয়ে।কিন্তু এ কথাটি অনস্বীকার্য, বিগত কিছুদিন কি বিস্ময় আর উত্তেজনার সময়গুলোই না উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।আমাদের প্রাপ্তি এখানেই।সেই প্রাপ্তির স্মৃতি ধরে রাখার তাড়না থেকেই এশিয়া কাপের ম্যাচগুলোর আবার ব্লগীয় রিপ্লে করছি সম্পূর্ণ অক্রিকেটিয় দৃষ্টিকোণ থেকে।
Bangladesh Vs Pakistan
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ শুরু করেছিলো আন্ডারডগ হিসেবে।সেই ডগ টাইগারের মত হুঙ্কার দিতে লাগলো প্রথম ম্যাচ থেকেই।প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বোলিং-এর অধিকাংশই মিস করেছি।টিভি যখন খুললাম দেখি উমর গুল ৩৯ রান করায় পাকিস্তানের সংগ্রহ ২৭০ এর মতো হয়ে গেলো! মনে মনে বললাম, “উমর গুল গুল মারার আর টাইম পাইলো না”। বাংলাদেশের ব্যাটিং-এ তামিম ছিলো শুরু থেকেই সাবধানী যদিও নাজিম মেরে সেটা পুষিয়ে দিচ্ছিলো।কিন্তু চল্লিশের ঘরেই সে পোষ মানলো।তামিম ফিফটি করলেও ৫ উইকেট পড়ে গেলো দ্রুত।সেই চিপা গলি থেকে সাকিব-নাসির পরিবহন যখন বাংলাদেশকে মহাসড়কে উঠালো তখন-ই গুলের বলে নাসির আউট।উমর গুল আবারও গুল মারার টাইম পাইলো না।বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার লোয়ার ক্লাস ব্যাটিং করলো।রাজ্জারক আর মাশরাফি আজমলের ছোড়া মলে (পড়ুন বলে) পা পিছলালো।শফিউলকে ফিরিয়েয়ে গুল আরেকবার গুল মারলো।জয়ের জন্য তখন বাংলাদেশ শেষ জুটি সাকিব আর শাহাদাতের কাছে ঠেকা।শাহাদাত বেশ কিছু বল ঠেকালো,কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী।সাকিবের আউটের মাধ্যমে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন শাহাদাত বরন করে নিলো।
Bangladesh Vs India
ভারতের সাথে ম্যাচে এতদিন পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা টেন্ডুলের শততম সেঞ্চুরির স্বপ্ন পূরন হলো।শচীনের এই সেঞ্চুরির সেঞ্চুরী রেকর্ড আর কেউ চুরি করতে পারবে বলে মনে হয় না।প্রথমবারে আম্পায়ারের করুনা পাওয়া বিরাট কোহলীকে দুইবার আউট করাটাও বিরাট ব্যাপারা।নাজিমের উইকেট হারানোর পর জহুরুল আর তামিমের সময় নিয়ে ক্রিজে থেকে ফিফটি করে বিদায় নিলেও ২৮৯ রান-কে তখনো চেজ করা সম্ভব বলে মনে হছিলো না।সাকিবের একের পর এক এফোড়-ওফোড় শটে ম্যাচ-এর মোড় ঘুরলো।রাতকানা থার্ড আম্পায়ারের পাল্লায় পড়ে সাকিব প্যাভিলিয়নে ফেরার পর মুশফিক এসে ইরফান পাঠানকে দুই-দুইবার ছয় মেরে সীমানার বাইরে পাঠান।ফিফটি করে নাসির যখন আউট হলো ততক্ষনে বাংলাদেশের তরী জয়ের তীর ছুয়ে ফেলেছে।চার মেরে তরী ভেড়াবার কাজটি সারলেন মাহমাদুল্লাহ।টেন্ডুলের শততম সেঞ্চুরির উদযাপন ভুন্ডুল হয়ে গেলো।
Bangladesh Vs Srilanka
নাজমুলের সাথে মূলোমূলিতে লঙ্কান প্রথম তিন ব্যাটসম্যান আউট হতেই টাইগারদের লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে বসার ইঙ্গিত।চামারা কাপুগেদুরা চামারের মতো একটি ফিফটি করে বসায় ৫০ ওভারে শ্রীলঙ্কার হলো ২৩২।বিরতিতে নিও স্পোর্টস চ্যানেলে ইন্ডিয়ান ধারাভাষ্যকারেরা শ্রিলঙ্কার নামে মন্ত্র জপতে শুরু করলেন।জয়বর্ধনের অধিনায়কত্ব ২৩২-কেই ৩০০ বানিয়ে দেবে,মালেঙ্গা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের লেঙ্গা বানিয়ে ছাড়বেন ইত্যাদি।নাজিম জহুরুল আর মুশফিক দ্রুত বিদায় নিলে ব্যাটিং-এ হাল ধরে সর্বদা ভরসাবান সাকিব-আল-হাসান আর গত দুই ম্যাচে ফর্মে ফিরে ফর্ম ফিল আপ করে জমা দিয়ে দেয়া তামিম।তামিম ও সাকিব আউট হলেও জয় নিশ্চিত করে নাসির আর মাহমাদুল্লাহ।খেলা শেষে দেখা গেলো আতহার আলী খানের সাথে দাঁড়িয়ে এক ধারাভাষ্যকার (সম্ভবত শ্রীলংকান) বলছেন “শ্রীলংকা গত কয়েক মাস অনেক বেশি ক্রিকেট খেলেছে,তাই তাদের ক্লান্তির প্রভাব পড়েছে এই ম্যাচে”।আমাদের আতহার মামুও চান্স পেয়ে বলে বসলেন, “গত কয়েক মাস বেশী বেশী ক্রিকেট খেলার কারনেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের এমন উন্নতি”!!!
Bangladesh Vs Pakistan (Final)
মুশফিকের টস জয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের উদযাপন শুরু হয়েছিলো।তবে পাকিস্তানের উইকেট ফেলে যতবারই তাদের বেধে ফেলা হয় ততবার-ই গিট আলগা করে দিয়ে যায় শাহাদাত।শাহাদাত চাইলেই গাইতে পেরে, “আলগা করো গো রান রেটের বাধন, বল মেরা তো পিট গায়ী”!!!তবে জম হয়ে উঠবার আগেই হাম্মাদ আজম আর বুম বুম আফ্রিদি একটু ধুম ধুম করে বিদায় নিলে পাকিস্তানকে ২০০-এর আশেপাশেই গেথে ফেলার সভাবনা উকি দেয়।এমন সময়েই সর্পরাজ হিসেবে আবির্ভূত হলেন সর্ফরাজ।শাহাদাতের শেষ ওভারটা ছিলো ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।বোলিং-এর সময় নব্য সন্তান সম্ভবা নারীর বমি করার মতো শব্দ করলেনন বটে কিন্তু ডেলিভারি দিলেন দু-দুটো অবৈধ সন্তান (নো বল)।ফলাফল এক ওভারে ১৯ রান!!
বাংলাদেশের বোলিং শেষ হতে ফেসবুকে ঢু মেরে দেখি bal (বাল) আর ball (বল) মিলেমিশে একাকার।কেউ বলছে “Shahadat ki ball korlo” আবার কারো মতে “shahadat ki bal korlo”. বাংলাদেশের ব্যাটিং-এর কাহীনি কি আর বলবো!!সবাই নিশ্চই দেখেছেন কীভাবে নাজিম টেষ্ট ম্যাচ খেললো,জহুরুল এলো এবং গেলো,নাসির ধুকলো,আর মুশফিকের ছয়টা কী করে যেন ক্যাচ হয়ে গেলো।এতসব দুর্ভাগ্যের মাঝেও ম্যাচটা বাংলাদেশের দিকে ঘুরালো হাফ সেঞ্চুরি করে এক থেকে চার পর্যন্ত গুনতে শেখানো তামিম আর সুপারম্যান,স্পাইডারম্যান এবং ব্যাটম্যানের সমতুল্য ব্যাটসম্যান সাকিব।মাথা ঠান্ডা রাখা রিয়াদ ও ভয়ডরহীন ব্যাট করা মাশরাফির কথাও না বললে নয়।ভেবছিলাম কাপ পেয়ে হাহা করে হাসবো, কিন্তু ম্যাচশেষে ২ রানের হাহাকার!! চোখের জল ফেলবার জন্যই গোটা একটা চায়ের কাপের প্রয়োজন হয়ে পড়লো।এই আবেগটাই হয়তো আমাদের সবচেয়ে দূর্বলতা আবার এটাও মানতে হবে এই আবেগ থেকেই আমরা আবারো ঘুরে দাড়াবার শক্তি পাই!