এই গল্পটা হিমুর ছায়া অবলম্বনে লিখবো বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু লিখার পর দেখলাম কোনোভাবেই হিমু ছাড়া এটা কম্পলিট করা সম্ভব না। তাই হিমুর নামেই লিখলাম। জনাব হুমায়ুন আহমেদ স্যার , আমি আপনার অনেক বেশী বড় ভক্ত, আমি হিমুকে বিকৃত করার জন্য নয় , বরং ভালোবেসে লিখেছি। দয়া করে এই গল্প না পড়লেও, কেউ বললে বা স্বপ্নে দেখলেও ক্ষমা করে দিবেন।
হিমু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীত্ব ( প্রথম পর্ব) ১৮+
৫)
“প্রথমে ওর কলিজাটা ধরমু, দিমু ধইরা টান। ওর গুর্দা শুদ্ধা খুইল্লা লাউম, বুঝসেন হিমু ভাই?” জগলু হাত দিয়ে দেখাতে লাগলো কিভাবে কলিজায় চাপ দিতে হয়।
- কলিজা বের করা লাগবেনা, তুমি শুধু পিন্টুর সাথে আমার দেখা করিয়ে দাও।
- হেয় তো অপজিশন পার্টি! হেরে দেইক্ষা কি করবেন? তার থেইক্কা চলেন ছামাদ ভাই এর লগে পরিচয় করায় দেই। তল্লাটে তল্লাটে হের ডরে মাইনষে মুইত্যা ভাসায় দেয়!
- যা বলেছি তা করো, আর এখন সামনে থেকে যাও। তোমার গায়ে থেকে মুতের গন্ধ আসছে।
পিন্টু ছাত্রদলের সর্বেসর্বা। তবে সে এখনো দাপটে চলে, ছামাদ আর সে পার্টনার। ৬০-৪০% এর লেনদেন তাদের।
হিমু বাদল কে ফোন দিলো ।
- তোর বউ চলে গেছে, আমাকে জানিয়েছিস?
- তোমাকে জানাবো কেনো? তোমার উচিত ছিলো আমাকে আগে ওয়ার্ন করা, তুমি তো আগেই টের পাইসিলা, পাওনাই?
- তুই চটি পরিস কেনো ওর সামনে?
- তা কি করবো? এটা একটা সাহিত্য, ভুলে গেলে চলবেনা! তাছাড়া, ছোটোবেলা থেকেই আমি সাহিত্য প্রেমী, ইউ নো দ্যাট!
- তাই বলে চটিতে যা লিখা থাকে বউ এর সাথে তাই করবি?
- করলাম কখন? ও তো করার আগেই চলে গেলো। ডিসগাস্টিং ! 69 কি জিনিষ, সে জানেইনা! এমন বৌ নিয়ে সংসার করা যায়না।
- তোর বউকে নিয়ে তুই রেখা’র কামাসুত্রা দেখতে পারিস, কাজ হইতে পারে। আজই গিয়ে ১টা কামাসুত্রা ডিভিডি কিনে স্বশুরবাড়ি চলে যা!
- গুড আইডিয়া! আচ্ছা রাখি হিমু ভাই, রসময় গুপ্তের খুব্বি ইন্টারেস্টিং ১টা চটি পড়ছি। নাম –
(পাঠকের সম্মানার্থে নাম উল্লেখ করা হলোনা)
৬)
- স্যার, পিন্টু স্যার আপনারে ডাকে।
হিমু দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। দেখলো পিন্টু ইজি চেয়ারে ঢুলছে আর ১টা ললি আইস্ক্রীম খাচ্ছে, ভ্যানিলা ফ্লেভারের। তার চুকচুক শবটা অন্য রকম, অনেকটা চুকুম চুকুম, এইরকম।
- বলেন হিমু সাহেব, কি করতে পারি?
- ১ কাপ চা খাওয়াতে পারেন। ডানো দুধ দিবেন , চিনি ৪ চামচ আর সাথে অল্প কফি, আর ১টু কফিমেট দিলে ভালো হয়।
- আমার কাছে এসেছেন চা-কফির অর্ডার দিতে? ফাইজলামী পেয়েছেন?
- এত্তো রাগ হচ্ছেন কেনো? ছামাদ ভাই কি টাকা দিতে দেরী করেছে নাকি? নয়াবাজারের রাস্তা ঠিক করার টেন্ডারের ৪০% পেয়েও দেখি রাগে আপনার চুল খাড়া হয়ে আছে। আপনাকে দেখতে লুতফুজ্জামান বানরের মতো লাগছে।
- তুই কি চাস?
- আপনে থেকে তুই? বাহ, বেশ ভালো ! তবে আমি আপনি করেই বলবো। আমি বাংলাদেশের সবার জোরপুর্বক মা, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাস্তের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে চাই। আপনি আমাকে সাথে নিয়ে যাবেন।
- এতো শখ ক্যান? জীবনে বিয়া দেখস নাই?
- দেখেছি, তবে বড়লোকদের বিয়া দেখিনি। ইনারা কি রকম জামা পরে, আদৌ পরে কিনা দেখার খুব শখ! শুনলাম দেশের নামী দামী মডেল রাও নাকি আসবে? উনাদের ভিডিও দেখাবে নাকি? আপনার বৌ এরো তো ইউরোকোলার মালিকের সাথে আছে মনে হয়? দেখেন তো এইটা নাকি?
- ফাইরা ফালামু কইলাম, তুই জানস না তুই কার সামনে দারায় আছিস।
- খুব ভালো করে জানি। আপনিও জানেন না আপনি কার সাথে কথা বলছেন।
পিন্টু প্রচন্ড ভয় পেলো। আমি জানিনা কেনো ভয় পেলো, হিমুই বা কিভাবে ভয় দেখালো। মিসির আলি সাহেব থাকলে হয়তো বলতেন হিমু পিন্টুকে হিপ্নোটাইজ করেছে অথবা সে কোনো কথা বলেছে যার কারণে তার amygdale থেকে রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরন হয়ে তার মস্তিষ্কে ভয় পাওয়ার মতো কিছু সৃষ্টি করেছে।
৭)
- এই, তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছো?? ইয়াক! হাউ ন্যাস্টী!!!
- এইটাকে বলে পতিতালয় বা বেশ্যাপাড়া, বুঝেছো স্বতী?
- নো !!
- হোটেল রেজেন্সীতে থার্সড্যা নাইটে তুমি যা করো, ওরাও এখানে তাই করে।
- ও! আই সি! ইউ মীন চিগি উইগী !!
- কি জানি! আমি তো জানি োদাুদী!
স্বতী ঢাকা ঘুরতে চায়, কি দেখাবে বুঝতে না পেরে স্বতীকে এখানে নিয়ে এসেছে। জগতের সবচেয়ে জঘন্য সত্যটা জানুক যে কেউ োদার জন্য টাকা দেয় কেউ টাকার জন্য োদা খায়।
হিমু এরপরে স্বতীকে নিয়ে ঘুরতে যায় সদরঘাট লঞ্ছ টার্মিনালে। সেইখান থেকে যায় গুলিস্তানে। গুলিস্তান থেকে হিমু ১জোড়া FATA জুতা কিনে স্বতীকে নিয়ে চাংখারপুলে যায়। সন্ধ্যার পর বাসায় পৌছে দিয়ে হিমু বুঝতে পারে স্বতী আর জীবনেও হিমু’র সাথে ঘুরতে বের হবেনা।
৮)
র্যাডিসনে বিয়ে। হিমু তার নন-ইস্ত্রী হলুদ পাঞ্জাবী পরে এসেছে যার পরনাই সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছে। হিমুর সাথে এসেছে আঙ্গুল কাটা জগলু। র্যাডিসনে এসে নাকি তার মাথা ঘুরাচ্ছে।
আধা ঘন্টা পরে সারা হোটেলে দৌড়াদৌড়ি পরে গেলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন! সে কি ছবি তোলার হিরিক , যেনো ফ্ল্যাশ লাইটের জোরেই তাকে ফর্সা বানিয়ে ছাড়বে!
- মা, ভালো আছেন?
- আরে সান্টু না? ভালো আছি বাবা? তোমাদের টেন্ডার নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছেনাতো? সাবধানে থেকো, ছাত্রদল আর শিবিরের ছেলেরা কিন্তু ছাত্রলীগে ঢুকে ঝামেলা করছে। কাউকে নতুন নিবানা, বুঝছো?
- জ্বী আম্মা! আম্মা, একটা দরকার ছিলো, আপনার কাছে কি কামাসুত্রা সিনেমাটা আছে?
- এই বিষয়ে এখন কিছু না বলাই ভালো ।
- আম্মা, লোক্মুখে অনেক কথা শুনি আপনারে নিয়ে, আপনার জন্য অনেক খারাপ লাগে, চোখে পানি চলে আসে।
- কেন? আমারে কেউ কিছু বলছে? আরে, আমি এইসব এ কিছু মনে করিনা। নিন্দুকেরা তো বলবেই। তুইই বল “দেশের আইন-শৃংখলা আগের থেকে কত্তো ভালো হইছেনা?”
- তা তো অবশ্যই!
তৈলাক্ত করার পরে হিমু তেনার থেকে একটি কাগজে সই নিলেন যে “আমি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই সনদ দিচ্ছি যে, সনদধারণকারী একজন সমাজসেবী এবং সে কোনো রাষ্ট্রদ্রোহীতার সাথে যুক্ত নয়। ছাত্রলীগের কর্মীদেরকে তার আহবানের প্রতি সর্বদা সাড়া দেবার জন্য আমি নির্দেশ জানাচ্ছি”
৯)
হিমু আর ছামাদ এখন টং এর দোকানে, ডিজুস চা খাচ্ছে। আর জগলু পাশে পিনিক চা খাচ্ছে।
- তাইলে আপনে কইতে চাইতাসেন যে ম্যাডামে আর মন্ত্রী থাকতে চায়না?
- না। উনি মন্তিত্ব বাতিল করে এখন মুরগীর ফার্ম আর কুকুরের ফার্ম দিবে। কিন্তু ওনাকে মন্ত্রিত্ব থেকে ছাড়তে প্রধান্মন্ত্রী রাজী নন।
- ম্যাডাম কি চায় আসলে? ঝাইড়া কন।
- তিনি চায়, তোমরা আমার সাথে মিলে ছাত্রদল আর শিবিরের গুলারে শেইভ করায়া এক সাথে ভাংচুর করো যে উনারে আর মানোনা। মিছিলে বলবা – “ *হারার চামড়া, খুলে নেবো আমরা”।
- আপনে সত্য কইতাসেন তো?
- ও মা! উনার নিজের লিখা সার্টিফিকেট দেখেও বিশ্বাস হয়না? তোমাদের দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। এই জগলু চল যাই, ম্যাডামরে বলি যাদের দুধ-কলা দিয়ে পুষেন তারা আপনাকে বিশ্বাস করেনা।
- খাড়ান খাড়ান হিমু ভাই। কবে, মিছিল শুরু করমু কবে থেইক্কা?
- লাল শুক্রবার থেকে আর ম্যাডাম বলেছেন উনি ভান ধরবো যে উনি কিছু জানেনা , উনি বারবার বলবেন যে এইসব বিএনপি’র চাল। কিন্তু তোমরা পাত্তা দিবানা । বুঝছো না?
- আরে, এইসব কত্তো করলাম! তারেক ভাই কত্তো করাইলো এইডি! ভাইয়ের কোমোর ভালা হইচে তো?
- আবার বলে! উনি এখন রেগুলার কনডম কিনে!
- তাইলে মনে হয় সুস্থ্য হয়া গেসে! আল্লায় উনারে ভালা রাখুক! বড্ড দিল-খোলা আদমী ভাই! মিছিলে গেলে সবাই দেয় ১০০ কইরা, হেয় দেয় ৩০০ কইরা, চা-পানি তো আছেই!
১০)
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন এডভোকেট পাহাড়া খাতুন
গত ৯ দিনের তীব্র আন্দোলনের মুখে গতকাল রাত ৯টা ৪৩মিনিটে স্বরাষ্টমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন এডভোকেট পাহাড়া খাতুন। তার কাছে পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন – “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো আছে, কোনো অবনতি হয়নি। “ সাহারার দাবি, ” সরকারকে বিপাকে ফেলার উদ্দেশ্যেই এ সব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।“ তিনি বলেন, "বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া সহ বিভিন্ন কাজের কারণে সরকারকে বিপাকে ফেলতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ সব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হতে দেওয়া হবে না।" উনি উনার পদত্যাগের কথা নিজেও জানতে পারেন নি, তার আগেই উনাকে চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয়। উনি একজন সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। দেশকে, দেশের মানুষকে আইনী নিরাপত্তাই দেয়া ছিলো তার স্বপ্ন।
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক গতকালের কন্ঠ
১১)
শুনশান নীরবতা। জোছনা খেতে রাস্তায় হাটছে হিমু, শুধু মাঝে মাঝে রাস্তায় ২-১টা লোক পোস্টার লাগাচ্ছে। আবার এসেছে নির্বাচন। হিমু কোনো জেল লাগানো খাড়া চুলে ইংলিশ বক্তাকে, চুল ফোলানো কোনো মডেল্, কোনো নেতা যার ভাঙ্গা সুটকেস থেকে বের হয় হাজার কোটি টাকা, যে নিজের সন্তানের বুকে গুলি বিধলেও বলে এটা কোনো ব্যাপারনা চায়না এমন কাউকে। জোছনার এই শুদ্ধ আলো ধুয়ে যাক এ দেশের নেতাদের, ধুয়ে দিক তাদের চিন্তা-ভাবনা।
হিমু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীত্ব pdf. ( ডাউনলোড লিংক)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৭