ঘটনা টা খুলে বলি। আমি তখন খুব ছোট। কত যে ছোট টা নিজেরও মনে নাই। এইটুকু মনে আছে যে সবে মাত্র স্কুল এ ভরতি হয়েছি বা হব। প্রতি বছরের শেষে আমি আমার দাদা বাড়ি বেড়াতে যেতাম। এখানে বলে রাখি,আমি এবং আমার ভাই পিঠাপিঠি। ওর সাথে আমার বয়স এর পার্থক্য খুব কম। ১৭ মাস। তাই ২ জন কে শামলাতে আম্মু রিতিমত হিমশিম খেত। আমারাও নাকি খুব দুষ্টু ছিলাম! একজন রাতে উঠে কেঁদে দিলে অন্যজন উঠে যেতাম। তারপর নাকি ঝগড়া শুরু করতাম যে ওকে কলে থাকে নামায় আমাকে নিতে হবে। ও বলত আমাকে কোলে নিতে হবে আমি বলতাম আমাকে! ( আমার অবশ্য এইগুলা কিছুই বিশ্বাস হয়না ) যাই হোক, এমন সময় আমার নানু বেড়াতে এলেন। আম্মুর এই অবস্থা দেখে বললেন, আমি উপমা কে আমার সাথে খুলনায় নিএ যাব। হোলও তাই। নানু আমাকে নিএ আসলেন। বাস করতে লাগলাম আমার ছোট খালা ( আমার দ্বিতীয় মা ) ও নানা নানুর সাথে। সত্যি কথাই বলি, আসলে যখন খুলনায় থাকতাম আমার আম্মু ভাই বা বাবা কারো কথাই মনে পড়ত না। কষ্ট ও লাগত না। কষ্ট টা আমি পেতাম তখনি যখন দাদা বাড়ি তে কিছুদিন বেড়ানোর পর খুলনায় ফিরে আসতে হত। ভয়ংকর ছিল সেই কষ্ট। যার কন সীমা পরিসীমা ছিল না।
ঠিক এমনি একটা সময়, ফিরে আসার। আমার এক ভাইয়া আমাকে নিতে এসেছিলেন। আগেই বলেছি তখন ছোট ছিলাম। কষ্ট চেপে রাখতে জানতাম না। শুরু করলাম কান্না। আমার কান্না দেখে আম্মু ও কেঁদে দিল এবং প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল কান্না চেপে রাখার। আম্মুর সেই মুখ এখন ও আমার চোখে ভাসে। কান্নায় দাদি আর ফুপি ও বাদ গেল না। কিভাবে যে তারা আমাকে বাস এ উঠায় দিল কে জানে! বুকের ভিতরটা গুড়ায় গেছিল সেইদিন।
বাস এর ভিতর ও আমি কাদতে লাগলাম এবং এক সময় কাঁদতে কাঁদতেই ভাইয়ার কোলে মাথা রেখে ঘুমায় গেলাম। (এ থেকে আমার সাইজ সম্পর্কে ধারনা করতে পারেন ) ঘুমের ভিতর ও আমার কান্না থামল না। আমি কাঁদতেই থাকলাম। কিছুক্ষন পর পর ফোঁপায় উঠছিলাম। এই সময় আমার কোন দিকেই খেয়াল ছিল না তাই দেখতে পারিনি একটি লোক আমাকে খুব ভাল করে লক্ষ করছিল। তিনি পরে আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলে সব কিছু শুনলেন। আমাকে কেন এভাবে যেতে দিয়া হচ্ছে তার তীব্র প্রতিবাদ করলেন। এবং এ পর্যন্ত করেও খেন্ত দিলেন না। ভাইয়ার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বিশাল এক চিঠি ও লিখে ফেললেন। আমি তার কিছুই জানতে পারলাম না।এ সব ই পরবর্তীতে শোনা। ভদ্রলোক এ পর্যন্ত করলেও মেনে নিতাম। এরপর তিনি যা করলেন তা প্রায় অবিশ্বাস্য। তিনি ঝিনাইদাহ থেকে আমার দাদা বাড়ি "রাজবারি" তে চলে গেলেন আম্মুর সাথে আমার ব্যাপারএ কথা বলতে। তাকে সবকিছু বুঝায় বলার পরেও তিনি এটি মানতে কিছুতেই রাজি হলেন না।
যাই হোক, সেবার তিনি ফিরে গিয়েছিলান। যাওার আগে আমাদের তাদের বাসায় যাওয়ার দাওাতও দিয়ে গিয়েছিলেন। আর জানেন? আমরা গিয়েছিলাম তার বাসায়। এখানেও আরেক ঘটনা। আমাদের রিসিভ করতে এসে বেচারার সাইকেল টা চুরি হয়ে গিয়েছিল! দিনটির কথা এখনও আমার মনে আছে।
অচেনা সেই লোকটি আমার জন্যে যা করেছিলেন তার কারন খুজতে গেলে ভালোবাসা ছাড়া আমি আর কিছু খুজে পাইনা। কারন শুধুমাত্র সহানুভূতি থেকে কেউ এতটা করে না। তিনি আমার প্রতি যা অনুভব করেছিলেন তাকে অকারন ভালোবাসা ছাড়া আর কি বলব বলুন?
যেই ভালোবাসার উৎস ছিল মনে হয় আমার মনে জমে থাকা কষ্ট। যা তাকেও সমানভাবে স্পর্শ করেছিল।
আমার প্রায়ই আবার ঝিনাইদাহ যেতে ইচ্ছা করে। সে যদি দেখে সেদিকার এই এতটুকুন মেয়েটা এত বড় হয়ে গেছে, কি অবাকই না হবেন তিনি!