Khuda kay Liye (In the name of God) মুভিটা ২০০৭ সালে রিলিজ হলেও এর সম্পর্কে জানতে পারি কয়েকদিন আগে, ইউটিউবে Naseeruddin Shah এর একটা ভিডিও দেখে (লিঙ্ক-১)। পরিচালক Shoaib mansoor এর কাজের সাথে আগেই পরিচয় ছিল, ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া নারীস্বাধীনতা নিয়ে তৈরি Bol মুভি দেখে। ছয়টি ভাষায় মুক্তি পাওয়া Geo TV এর প্রযোজনার তারকাবহুল বিতর্কিত এই ছবিটির IMDB রেটিং 8.4 । ১৭০ মিনিটের (লিঙ্ক-২)এই ছবিটি সম্পর্কে গুগল সার্চ দিলে প্রথমেই যে তথ্যটি পাওয়া গেল তা ছিল “Muslims and Pakistanis experience difficulties after Sept. 11, 2001”
টুইন টাওয়ার হামলার পর কেটে গেছে চৌদ্দ বছর। পক্ষে বিপক্ষে অসংখ্য মুভি, ডকুমেন্টারি দেখে শুনে তাই অনেকটাই ক্লিশে হয়ে গেছে অনুভুতি। এক নির্দোষ মুসলিম পাকিস্তানি গায়ক, যে আমেরিকায় মিউজিকের উপর পড়তে যায়, আটকে যায় সন্দেহের ফাঁদে, নিজেও জানেনা, পুলিস কেন তাকে নির্যাতন করছে, খুব নতুন মনে হয়না। এত বছর পর এই ছবি দেখতে গিয়ে তাই অন্য এক দৃশ্য চোখে পড়ে, আমাদের হিপোক্রিসির।
ছবির গল্প শুরু হয় লন্ডনে। এক বাবার হিপোক্রিসি দিয়ে। যিনি বহুবছর বিদেশে আছেন, দেশের সাথে কোন যোগাযোগ নেই, বিয়ে করেছিলেন এক শ্বেতাঙ্গীনিকে, ডিভোর্সের পর থাকছেন আরেক শ্বেতাঙ্গীনির সাথে, কিন্তু মেয়ের বিয়ে তিনি একজন শ্বেতাঙ্গের সাথে মেনে নিতে পারেন না, এতদিন পর তার মনে হয় নিজের বংশ তাহলে ক্রিশ্চিয়ান হয়ে যাবে!
মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে আসলে দেখা যায় পুরো সমাজের হিপোক্রিট চেহারা। আধুনিক মা ছেলের নামাজ-টুপি-দাঁড়ি কিংবা গান ছাড়ার প্রশ্নে চুপ থাকলেও বেঁকে বসেন যখন ছেলে তাকে হিজাব করতে বলে। বাবা সরব হন ছেলে তালেবানে যোগ দিলে। আর সবচাইতে উদারপন্থী ছেলে যে ভাইকে যুক্তি দেয়, চাচাকে জানায় সে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বিয়ে করে পাপ করতে পারবেনা, সেও ধাঁধায় পড়ে যায়, আমেরিকান ক্রিশ্চিয়ান মেয়েকে বিয়ে করা উচিত কিনা, কালচার আর ধর্মের চিন্তায় তখন তাকে চাচার চেয়ে আলাদা করা যায়না।
গতানুগতিক ভিলেন এখানে কেউ নয়। মাওলানা তাহিরি (Rasheed Naz) কে ভিলেন মনে করা গেলেও তার যুক্তিগুলোও ফেলে দেয়ার মত নয়। এমনকি তখনকার প্রেক্ষিতে তিনি যখন বলেন, রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে CNN আমাদের মুজাহিদীন বলত, আমেরিকার সাথে যুদ্ধে বলে টেররিস্ট...তাঁকে ভুল বলা যায়না। পশ্চিমা মিডিয়ার হিপোক্রিসি টের পাওয়া যায়, ব্রিটিশরা যুদ্ধ করেছিল চীনে আফিমের ব্যবসার জন্য- এই তথ্যের দৃশ্যটুকু কেটে দেয়ার মাঝে।
হিপোক্রিসির এই সিলসিলা থেকে আমরা কেউই দূরে নই। তাই পরিচালক যখন কাহিনীর সমাপ্তি টানটে মাওলানা ওয়ালির (Naseeruddin Shah) আবির্ভাব ঘটান, তিনি যুক্তি তো দেন, কিন্তু যুক্তিতে ফাঁক থেকে যায়। পরিচালক নিজ দেশ সম্পর্কে গর্ব প্রকাশ করতে গায়ক মানসুরের (Shaan Shahid) মুখে শাহজাহানের গল্প বলান, তখন ভারত-পাকিস্তান-মুঘল-মুসলিম সব মিলিয়ে এক জগাখিচুরি তৈরি হয়, মনে হয় পুরো উপমহাদেশে একটাই মুসলিম দেশ, পাকিস্তান! সে-ই আবার দেশের গান গায় ভারতীয়। সাংস্কৃতিক জাতি আর জাতীয়তার বিতর্কে পরিচালক ও তাই বিভক্ত হয়ে যান।
কিন্তু পরিচালকের এই বিভক্তিবোধ ক্ষমা করে দেয়া যায় কিছু দৃশ্যে তাঁর মুনশিয়ানায়। নির্যাতনের সমাপ্তি টানতে মানসুর নিজের হাতে লেখা USA কে USAMA করে দেয়, আর তাঁর রক্তাক্ত মাথা ঠোকা হয় LOVE শব্দের ওপর। নায়ক সারমাদ (Fawad Afjal khan) আযানের সুরেও গানের তাল খুঁজে ফেরে নিজের অজান্তেই, আফগানিস্তানে জোর করে আটকে রাখা মেরি (Iman Ali) আর নিজ জীবনে ফিরে যাওয়ার মানসিকতা রাখতে পারেনা, বেণী বাঁধতে থাকে আফগান কায়দায়। কিন্ত যেমন দেখা যায় পরের ছবি Bol এ, নারী হেরে যায়না, বিচার চায়; পরিবারে ফেরেনা, ফেরে আফগানিস্তানে, মেয়েদের শিক্ষা দিতে।
শেষপর্যন্ত মুভিটা তাই আর পাকিস্তানের থাকেনা, আমাদের সবার হিপোক্রিসির হয়ে যায়। শিয়া-সুন্নি, আসল-নকল, এসব তর্ক তো বহু পুরোনো। এখন কট্টরপন্থী-উদারপন্থী, প্র্যাক্টিসিং-ননপ্র্যাক্টিসিং কত ধরনের মুসলিম। বৃদ্ধা দাদী তাই পুরো মুভিতে ডায়ালগ দেন একটাই, সত্তর বছর আগে প্রশ্ন উঠেছিল, বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে স্কুলে যেতে চায়, পর্দা করবে কি করবেনা, সত্তর বছর পর প্রশ্ন উঠেছে মা পর্দা করবে কি করবে না! Khuda ke liye মুভিটা তাই উত্তরের না, প্রশ্নের। গল্পটা তাই হিপোক্রিসির, আমার-আপনার-তার, সবার!
লিঙ্ক-১ লিঙ্ক-২