ছোটবেলার কিছু ধারণা... যা লালন করে বেড়ে উঠেছিলাম অনেকটা সময়। বয়স বাড়লো... সাথে সাথে ধ্যান ভাংলো। ধ্যান না ভাঙ্গলেই মনে হয় ভাল ছিল।
১) পৃথিবীতে দুইটা দেশ আছে বাংলাদেশ আর বিদেশ।
২) বিয়ে করলে বাচ্চা হয় না করলে হয় না।
৩) সাড়ে বারোটার পর বাজে সাড়ে একটা, সাড়ে একটার পর সাড়ে দুইটা। দেড়টা-আড়াইটা বলে কিছু নাই।
৪) কারো মাথার সাথে যদি নিজের মাথা একটা গুঁতা খায় তাহলে শিং ওঠে, সাথে সাথে আরেকটা গুঁতা খেলে আর ওঠে না।
৫) কোন ফলের বিচি খেয়ে ফেললে পেটের মধ্যে সেই ফলের গাছ হয়।
৬) সিনেমার মধ্যে নায়ক নায়িকারা নিজের গলায় গান গায়।
৭) "আই লাভ ইউ" খুব খারাপ একটা কথা, একেবারে অশ্লীল।
৮) মোরগ যখন দাব্রাইয়া ধরে মুরগীর উপর উঠে তখন আসলে ওরা মারামারি করে। তাই কোন মোরগ কোন মুরগীরে দৌড়ানি দিতেসে দেখলে আমিই উলটা ঐ মোরগরে দৌড়ানি দিয়ে দূর করে দিতাম।
৯) যে যত ভালো ছাত্র তার রোল তত কম, আর যত খারাপ তত বেশি এইটা কেমন সিস্টেম?
১০) সিনেমার গানের মধ্যে নায়ক নায়িকা এত তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে কিভাবে? নিশ্চয়ই একটার উপর আরেকটা পরে থাকে,হুট করে উপরেরটা খুলে ফেলে দেয়।
১১) নিউজপ্রেজেন্টাররা নিশ্চয়ই সংবাদ মুখস্থ করে।
১২) বাচ্চা দোকান থেকে কিনে আনে...
১৩) এক গালে থাপ্পড় খেলে বিয়া হবেনা, যদিনা আরেক গালে সেরাম আরেকটা রাম থাবড়া না খায়Ĭ
১৪) আমাকে বলা হয়েছিলো, আম্মু নামাজ পড়ছিলো তখন আমি আকাশ থেকে পড়ি। এই জন্য আম্মু যখন নামাজ পড়তো আমি তখন আমার একটা জুনিয়রের জন্য আল্লাহ’র কাছে দোয়া করতাম আর আকাশের দিকে আকুল হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। (এইটা আমার এক ফ্রেন্ডের কথা)
১৫) টিভিতে মানুষ টিভির পিছন দিক দিয়া ঢুকে!
১৬) টিভির ভিতরের মানুষগুলো আমাদের দেখতে পায়। এই চিন্তা করে আমার এক বড় আপু তার ছোটবেলায় সেজেগুজে টিভি দেখতে বসতেন।
১৭) ছোটোবেলায় একবার রেডিও ভেঙে ভিতরে দেখি ছোট ছোট ক্যাপসুলের মতো অনেকগুলো বস্তু। সেগুলো দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আসলে রেডিও বাজার সময় ওগুলোই গান গায়, কথা বলে....
১৮) বেজোড় ভাতের নলা খাইলে পানিতে পড়ে মরা লাগে !
১৯) কুকুর-বিড়ালের হাগু পায়ের নিচে পড়ে গেলে পুকুরে সাতটা ডুব দেওয়া লাগে।
২০) লাল পিপঁড়া হিন্দু, কাল পিপড়া মুসলমান ৷
২১) কাল পিপড়া খেলে সাতাঁর শিখা যায় ৷
২২) আমি কৈশোর পর্যন্ত চান্দের দিকে তাকাইলেই সালাম দিতাম।
২৩) বাংলা বই এ বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে লেখা গল্পের শেষে একটা লাইন থাকতো, ‘ইতিহাসের পাতায় এইসকল বীরদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’। অনেক বড় হওয়া পর্যন্ত ভাবতাম ইতিহাস একটা বই আর সেই বইয়ের অনেক পাতা । যারা ভালো কাজ করে তাদের নাম সেই বইয়ের পাতায় পাতায় স্বর্ণ দিয়া লেখা হয়।
২৪) আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না নায়ক -নায়িকাকে সত্যি সত্যি কোলে নিচ্ছে । আমার ধারণা ছিল হুদাই কোলে নিবে ক্যান, মেয়েটার কী লজ্জা শরম নাই ? সম্ভবত সব ক্যামেরার কারসাজি।
২৫) আমার ধারণা ছিল বিয়ে করলেই মানুষ মরে যায় পরপর কয়েকটা সিনেমায় বিয়ের আসরে নায়ক-নায়িকার মৃত্যু দেখে এই ধারণা হইছিল।
***************************************************
# পোষ্টটি লেখা হয়েছে ফেসবুকে দেওয়া আমার একটি স্ট্যাটাস থেকে। স্ট্যাটাসে আমি প্রথম ১১ টি পয়েন্ট দিয়েছিলাম, সেখানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষ নানান কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়েছে তাদের ছোটবেলায় তারা কি কি উদ্ভট ধ্যান ধারণা নিয়ে বড় হয়েছেন। চাইলে আপনারাও কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন। পরবর্তীতে তা পোষ্টে অ্যাড করে দেওয়া হবে।
# পোস্টের ছবিগুলোর জন্য স্পেশাল থ্যাংকস টু নাফিস ইফতেখার।
আমার মূল পোষ্টটি ছিল এই পর্যন্তই। কিন্তু এই পোষ্ট দেওয়ার পর মন্তব্য করতে এসে অনেকেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাদের ছোটবেলার বিভিন্ন উদ্ভট জ্ঞান-ধ্যান ধারণার কথা জানিয়েছেন।
তাদের সেই সব অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি আমি এখানে তাদের নাম সহ তুলে দিচ্ছিঃ
১) খেয়া ঘাট বলেছেন: আমি ছোটকালে মনে করতাম আরেকটু গেলেই আকাশ ছুঁতে পারবো।
প্রায় কাছাকাছি একটি ধারণা থেকে দি সুফি বলেছেনঃ মনে হত একটু দূরে গেলেই আকাশ ধরা যাবে। আকাশ ধরার জন্য একবার আমি ও আমার এক মামাতো ভাই সকাল থেকে দূপুর পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় হাঠছিলাম!
আর, দেখি তাই বলি’ বলেছেনঃ পৃথিবী গোল তার প্রমাণ হইল আকাশ গোল। মানুষ হাটতে হাটতে দূরে গিয়া আকাশ বেয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। তবে আকাশ ধরা খুব কঠিন। কারণ আকাশের কাছে গেলে আকাশ আরো দূরে পালিয়ে যায়।
২) হাসান মাহবুব বলেছেন: দুধ খাওনের পর আনারস খাইলে মাইনষে মইরা যায়।
৩) জান্নাতুল এন পিয়াল বলেছেন: রাত্তিরবেলা ঘুম পড়লে পরীরা এসে আমাকে তাদের দেশে নিয়ে যাবে। (এই লোভ দেখিয়ে মা আমাকে ঘুম পাড়াতেন)
৪) ইয়ার শরীফ বলেছেন: আকাশে অনেক গুলা পানির কল আছে যেগুলো বৃষ্টির সময় ছাড়া হয়।
৫) শান্তির দেবদূত বলেছেন: কেউ শুয়ে থাকলে তার উপর দিয়ে ডিঙ্গিয়ে গেলে সে আর বড় হবে না, তাই আবার উলটা করে ডিঙ্গাতে হবে।
৬) দেখি তাই বলি বলেছেন: গিরগিটি দেখলে বুকে থুথু দিয়ে কনিষ্ঠা আঙ্গুল মুখে নিয়ে চুষতে হয়, না হলে ওরা দূর থেকেই শরীরের সমস্ত রক্ত শুষে নেবে। তার প্রমাণ হিসেবে ওদের গলা লাল হয়ে যেত। আমরা ওদের ডাকতাম রক্তচোষা।
৭) টুম্পা মনি বলেছেনঃ-দাঁত ইঁদুরের গর্তে ফেললে ইঁদুরের মত শক্ত দাঁত হয়।
৮) আমার এক বান্ধবী এই পোষ্ট পড়ে আমাকে ফোন করে আরেকটি পয়েন্ট যোগ করে বলেছে, বালিশের উপরে বসলে পাছায় ফোঁড়া হয়।

৯) এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন: ময়ূরের পাখা যত্ন করলে ময়ূর হয়।
একই প্রসঙ্গে ভাঙ্গাচুরা যন্ত্রপাতি বলেছেন: ময়ূরের পেখম বইয়ের ভেতর রাখলে সেই পেখম বাচ্চা দেয়।
১০) মাক্স বলেছেন: পোকাওয়ালা ফল খাইলে সাতার শিখা যায়!
১১) রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: টিভি দেখার সময় কেউ মারা গেলে ভাবতাম সত্যি বুঝি তাদের মৃত্যু হয়েছে।
১২) মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেনঃ পরিক্কার আগে ডিম খেলে পরিক্কায় ডিম পাওয়া যায়।
প্রায় একই ধরণের কথা বলেছেন এম ই জাভেদ। তিনি বলেছেন, “অংক পরীক্ষার দিন ডিম খেলে পরীক্ষা খারাপ হয়।”
১৩) সরকার আলী বলেছেন: হাসপাতাল মাটির নিচে অর্থাত পাতালে থাকে।
১৪) পলক শাহরিয়ার বলেছেন: অনেকগুলোই মিলে গেছে।ছোটবেলায় নামাজ পড়াতে বড় আপু কয়েন,চিনি/শুকনা মিষ্টিজাতীয় খাবার(যেহেতু আমি মিষ্টি পছন্দ করতাম) জায়নামাজের নিচে লুকিয়ে রাখত।নামাজ শেষে আমাকে বলত এগুলো ফেরেশতা দিয়ে গেছে।ছোট্ট বাচ্চারা নামাজ পড়লে আল্লাহ খুশি হয়ে এসব পাঠিয়ে দেন...
১৫) নাছির হাসান বলেছেন: ছোটকালে নামায পড়ার পর মোনাজাত করার সময় দুই হাতের মাঝে অনেকখানি ফাক রাখতাম যাতে করে আল্লাহর কাছে যা চাই তা বেশি বেশি করে পাই।
১৬) এম ই জাভেদ বলেছেন: আমার কিছু পয়েন্ট মনে পড়েছে যা ছোট বেলায় খুব বিশ্বাস করতামঃ
(ক)গায়ে রঙ্গিন মাকড়সা উঠলে নতুন জামা পাওয়া যাবে।
(খ) কুটুম পাখি ডাকলে বাসায় মেহমান আসবে।
(গ) প্যাঁচার ডাক অশুভ।
(ঘ) তেঁতুল গাছের নিচ দিয়ে হাঁটলে ব্রেন মানে মেধা কমে যায়।
*******************************
পরবর্তীতে কমেন্টে আরো কিছু নতুন অভিজ্ঞতার কথা আসলে সেটাও অ্যাড করে দেওয়া হবে।