somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাইটার সিরিজ - সুখোই - ২৭ . "দি সোভিয়েত বিষ্ট":)

২৮ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Sukhoi Su-27 সোভিয়েতদের তৈরি চতুর্থ জেনারেশনের একটা ২ ইন্জিনের সুপার ম্যনুভারেবল ফাইটার এয়ারক্রাফট। যদিও সুখোই ২৭ কে বেশির ভাগ সময়েই এয়ার সুপিউরিটির কাজে দেখা যায় কিন্তু এই বিমান যে কোন ভুমিকায় আক্রমনে সক্ষম। Sukhoi Su-27 এর হেভি আর্মামেন্ট , শক্তিশালী এভিওনিকস যেমন : নেভিগেশন , কমিউনিকেশন , হাই ম্যানুভারিটি এবং অবিশ্বাস্য রকমের ক্ষিপ্ততা একে দুনিয়ার কাছে "দি সোভিয়েত বিষ্ট" হিসাবে পরিচিত করে তোলে।


ভিয়েতনামে ফাইটার এয়ারক্রাফট নিয়ে ভালো ধাক্কা খাবার পরে আমেরিকা ১৯৬৯ সালে নতুন ফাইটার তৈরির জন্য কঠোর গোপনীয়তার "এফএক্স" নামে একটা প্রোগ্রাম হাতে নেয়। এখান থেকেই হেভিয়েট ফাইটার হিসাবে এফ ১৫ এবং লাইট ওয়েট ফাইটার হিসাবে এফ ১৬ এর ডিজাইন হয়। ১৯৭২ এর জুন নাগাদ ইউএস এয়ার ফোর্স 71-0280 নামে সিন্গেল সিটের একটা প্রোটোটাইপ কমপ্লিট করে ।এই প্রটোটাইপ কে পরে ইউএস এয়ার ফোর্স তাদের পরবর্তি এয়ার সুপিয়রটি ফাইটার এফ ১৫ হিসাবে ঘোষনা করে। ১৯৭৬ সাল নাগাদ এই বিমান সার্ভিসে আসে।


এফ ১৫
সার্ভিসে আসার আগেই সোভিয়েতরা জানতে পারে যে আমেরিকানরা তাদের এয়ার সুপিয়রটি ফাইটার রিপ্লেস করতে যাচ্ছে । সোভিয়েতরা পাল্টা ব্যবস্তা হিসাবে PFI এবং LPFI নামে ২টা প্রোগ্রাম শুরু করে। এই ২ প্রাগ্রামের মধ্যে PFI (Prospective Front-line Fighter) এর দায়িত্ব দেয়া হয় Sukhoi OKB কে। যার মেইন টার্গেট ছিলো আমেরিকান এফ ১৫ কে কাউন্টার করতে একটা লং রেন্জ মাল্টিরোল এনাবেল ফাইটার তৈরি করা।


কেজিবি কে এফ ১৫ ব্যাপারে ইনফো কালেক্ট করতে বলা হয়। কেজিবি এর দেয়া ইনফো আর PFI গাইড লাইন অনুসারে তৈরি করা হয় T 10 .



এটা ছিলো অনেকটা মিগ ২৯ এর বিগ ভার্শন। T 10 ফার্স্ট ফ্লাইট ছিলো ১৯৭৮ সালে। আর কিছু টেষ্ট ফ্লাইট এর পরেই ডেভলপার টিম এটা বুজে যান যে এই বিমানকে ব্লু প্রিন্ট এ যতটা ক্ষিপ্ত ভাবা হয়েছিলো এটা বাস্তবে তার থেকেও বেশি ক্ষিপ্ত।

কিন্তু এর বেশ কিছু ঝামেলাও ধরা পড়ে। যার মধ্যে এর বেশি ওজন, এর ইন্জিনের ফুয়েল কনজিউম রেট, আর এর‌্যোডাইনামিক স্ট্যাবিলিটির সমস্যা অন্যতম ছিলো। এর সব সমস্যা গুলোর সমাধান করা ১৯৮০ এর দশকে মোটামুটি অসম্ভব ছিলো এক রকম। কারন ওজন বাড়ার কারন ছিলো ভারি ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট যার সমাধান তৎকালিন সোভিয়েতদের কাছে ছিলো নাহ। তাও এর‌্যোডাইনামিক বাদে বাকি সব গুলার একটা মোটামুটি ব্যবস্থা করে টেস্ট করা হয় T 10D কে এবং এটি প্রোডাকশন লেভেলের অনুমতি পায়।

কিন্তু নাটকিয় ভাবে প্রোডাকশন শুরুর ৪ দিন আগে Sukhoi OKB এর ডিরেক্টর আর কেজিবি একসাথে বসে এই প্রযেক্ট কে আবার ডেভলপমেন্ট কোরে এ পাঠিয়ে দেয় এর আরও উন্নতির
জন্য।
এবার এর রিডিজাইন এর দায়িত্ব পালন করে অজানা কেউ। এবং তার দায়িত্বে এর রিডাজাইন এর পরে কোন কিছুই আর আগের ডিজাইনের মতো ছিলো নাহ । এর‌্যোডাইনামিক্যাল বডি স্ট্যাকচার চেন্জ করা হয়। স্লিম করতে ছেটে ফেলা হয় এর ফুসেলজ কে যার ফলে সুখোই পেয়ে যায় সেমি স্টেলথ কভার ।ইন্জিনের পজিশন কে আর ও পিছিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে এই বিমান হয়ে যায় এর‌্যোডাইনামিক্যাল ইনস্ট্যাবল একটা বিমান কারন এর সামনের দিকের ওজন হালকা হয়ে পড়ে। এর কভার কিভাবে দিয়েছে তা

বাড়ানো হয় উইং এরিয়া, যাতে বেশি উইপন লোড নিতে পারে। এর পরে চেন্জ করা হয় এর ইলেকট্রনিকস সিস্টেম এর। কেজিবি ব্যাবস্থা করে এর ইলেকট্রনিকস এর। যোগ করা হয় Phazotron N001 Myech রাডার সিস্টেম যা ইলেকট্রিক পালস ব্যবহার করে এই বিমান কে ২২০ কিলোমিটার ৩৬০ ডিগ্রি রাডার সাপোর্ট দেয়।এবং একি সময় ১০ টা টার্গেট লক আর ৪টা টার্গেট শুট করার ক্ষমতা রাখে। এ ছাড়াও এতে ৮০ কিলোমিটার রেন্জের এ্যাকটিভ ইনফ্রোরেড রাডার ছিলো।



সু ২৭ জন্য তৈরি করা হয় আলাদা মিসাইল আর রাডার। এয়ারব্রেক,টেইলপ্লেট এড করা হয়। এতে বাড়ে এর ক্ষিপ্ততা । এই বিমান পায় কোবরা নামে এক বিশেষ সুপার ম্যানুভারিটি। সু ২৭ ম্যাক ২ + গতিতে ১১০ ডিগ্রি স্ট্যান্ডআপ ম্যানুভারবল ছিলো যেখানে আলাদা ভাবে মডিফাই করা এফ ১৫ এর ক্ষমতা ছিলো মাত্র ৭০ ডিগ্রি ।


মেক্যানিক্যাল কন্টোল সিস্টেম এর জায়গায় লাগানো হাইড্রোলিক কন্টোল সিষ্টেম বা বেসিক্যালি ইলেকট্রোনিক কন্টোলিং সিস্টেম। এটি পরিচিত fly by wire নামে। যা সেই সময় জাম্বো বা মাঝারি আকৃতির বিমানর জন্য ব্যবহৃত হত। কারন ফাইটার এয়ার ক্রাফট গুলোর উপযোগি fly by wire তৈরি ছিলো ভয়াবহ ক্রিটিকাল ব্যাপার। সু ২৭ প্রথম fly by wire কন্ট্রোলড ফাইটার।

সর্বশেষ বিশাল এই বিমানের জন্য তৈরি করা হয় আলাদা জাতের টার্বোফ্যান। যাতে থ্রাষ্ট ছড়িয়ে দেবার আলাদা থ্রাষ্ট কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট।সব কিছু শেষে এই বিমান প্রোডাকশন হয়ে সার্ভিসে আসে ১৯৮৪ তে।


এই বিমান সার্ভিসে এসেই প্রমান করে এর ক্যপাবিলটি কে। ১৯৯০ এর দিকে আমেরিকা আর সোভিয়েত একটা ডেমো এয়ার ফাইটের আয়োজন করে ভার্জিনিয়া তে। যেখানে সব গুলো ডেমো ফাইটে সু ২৭ জিতে যায়। এর পরে আমেরিকান রা সু ২৭ কে নাম দেয় "দি সোভিয়েত বিষ্ট"। এই বিমানের প্রায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩২ টার মত বিশ্বরেকর্ড আছে যা এখনো অটুট।




টোটাল স্পেফিকেশন :


পাইলট : ১ জন
লেংথ: ৭২ ফিট
উইং স্প্যান : ৪৮ ফিট ৩ ইন্চি
শক্তির উৎস: 2 × Lyulka AL-31F turbofans সিরিজ টার্বোফ্যান

পারফরমেন্স -

সর্বচ্চো গতি :
হাই অলটিটউড : ম্যাক ২.৩৫ (২৫০০ কি.মি./ ঘন্টা)

রেন্জ :
কমব্যাট রেন্জ :৩৫০০ কি.মি.


*সার্ভিস সিলিং : ৬৩০০০ ফিট

আর্মামেন্ট :

*১৫০ রাউন্ড সহ একটা ৩০ এমএম GSh-30-1 cannon
* ১০ টা হার্ড পয়েন্টে যার মাঝে ফিক্সড ২ টা এয়ার টু এয়ার ( সিরিজ )মিসাইল বাকি ৮ টায় যখন যা লোড করা হয়।
*এর বাইরে এই বিমানের ৮০০০ কেজি বোমা নেবার ক্ষমতা আছে



এই বিমানের একটাই বড় সীমাবদ্ধতা এর মেইটেইন্যান্স কস্ট। এর বাইরে এর তেমন কোন অভিযোগ নাই। ফুয়েল কনজিউম রেট হাই কিন্তু এর পারফরমেন্স এর কাছে তা গৌণ। মেইন কথা এই বিমান ফ্লিটে রাখতে গেলে পকেটের জোর থাকা দরকার।

সু ২৭ এর পরে ৩০ - ৩৫ পর্যন্ত বিভিন্ন সিরিজ এসেছে । বর্তমানে রাশিয়া ,ইন্ডিয়া, চায়না সুখোই এর বড় অপারেটর।





বাংলাদেশের এই বিমান কেনার কথা শোনা যাচ্ছিলো রাশিয়া এর ঐ ডিল এর আগে, যেখানে কেনা হচ্ছে Yak-130 ,


যা বেসিক্যালি ৪.৫ - ৫ জেনারেশন ট্রেইনার + লাইট এট্যাক ফাইটার । এই দিকে আমার মনে হয় এয়ার ফোর্স এর এই ডিসিশন টা বেটার কারণ ট্রেইনার ছাড়া ৪ বা ৪.৫ জেনারেশনের সুখোই কেনাটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে ডেবার মতো হত। আর মিগ ২৯ কেনার পরে এ ধরনের বেশ ভালো ঝামেলায় পরেছিলো এয়ার ফোর্স ।তখন সব পাইলটদের রাশিয়া আর ইউক্রেন এ পাঠিয়ে কাজ সেরেছিলো তারা। যেহেতু ট্রেইনার কেনা হচ্চে সো আশা করা যায় আমরাও কোন এক দিন সুখোই দেখবো ।







ফাইটার এয়ারক্রাফট এর উপর আগের পোষ্ট গুলো :

এফ - ১৬ ফাইটিং ফ্যালকন

মিগ ৩১ ফক্সহাউন্ড - আইকন ইন্টারসেপ্টর ফাইটার


" মিগ ২৫" "ফক্সব্যাট" - স্নায়ু যুদ্ধের সোভিয়েত কিংবদন্তি

মিগ ২৯ - সোভিয়েত স্টেট ওফ আর্ট ফাইটার

আমেরিকান স্টেলথ ফাইটার : লকহিড মার্টিন এফ ২২ র‌্যাপটর (Lockheed Martin F-22 Raptor) B-) B-)

কিংবদন্তী জেট ফাইটার - মিগ -২১

ফাইটার সিরিজ - এফ - ১৫ ঈগল :):)

২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×