somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

- বিবেকের তাড়না

২০ শে মে, ২০১৬ রাত ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেইসবুকে লিখালিখি করা মানে একটা বড় দুশ্চিন্তার বিষয় যদি সাবজেক্ট রাজনীতি কেন্দ্রিক হয়। তাই এড়িয়ে চলার চেষ্টা থাকে। এমনকি একটা লাইক দিতেও ভয়। তবুও মাঝে মাঝে মাথাটা ঝিম ধরে যায়, বিবেকটা নেড়ে ওঠে। পারা যায়না।

লেখা যদি জামাত শিবির এর পক্ষে যায় তাহলে বিপদ এর শেষ নেই। স্বাধীনতার বিপক্ষ সীল ছাপ্পড় পড়ে যাবে। দেশদ্রোহ এর ভয় আছে। মৌলবাদের তকমা আছে। ইত্যাদি।

যারা শিল্প সাহিত্য চর্চা করেন তারা নিশ্চয় হত্যা, মৃত্যু, খুন এসবকে খুব ঘৃণা বা ভয় পান আমার ধারণা। কারন তাদের মনটা সবসময় কাদা মাটির মতো নরম থাকে। তারা অধিক চিন্তা করেন বলে এসব বিভৎসতা তাদেরকে খুব নাড়ায়। একাত্তুর এর বিভৎসতা তাদের খুব তাড়া করে, তায় তারা স্বভাবতই জামাত শিবির নামটা শুনলেই তেলে বেগুনে জলে উঠেন। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা অস্বাভাবিক বলে মনে হয়না। যদিও অনেক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রাখে। সেই ইতিহাস আর টানলামনা।

সেদিন এক কবি টাইমলাইনে লিখলেন, ফাঁসি ব্যাপারটা তার পছন্দ নয়। তবে একটা ফাঁসি বাকি আছে সেটা হলো দেলোয়ার হোসাইন সাইদী। সেটা হয়ে যাবার পর তিনি ফাঁসীর দন্ডের বিরোধীতা করতে আগ্রহী। সেখানে সহমত জানিয়ে জনৈক পাঠিকা কমেন্ট করলেন তারা যেহেতু মানুষ এর পর্যায়ে পরেনা শুতরাং ফাঁসীটাই ন্যায্য বিচার।

ফাঁসীর ব্যাপারটা আমারও পছন্দ না। তবে কি সেটা সাইদীদের প্রতি দূর্বলতা আছে সেই কারণে? ভাবলাম অনেক্ষণ। ফাঁসী যে আমার পছন্দ না সেটাতো আগে কখনো আমি বলিনি, আজ কেন বলছি? নিজামীদের রক্ষা করার জন্য? নিজেকেই প্রশ্নটা করলাম।

কিছুদিন আগে রাষ্ট্রপতি জনৈক ছাত্রলীগ এর ফাঁসী মওকুফ করেছেন। আমি ব্যাপারটা ইচ্ছেকৃত ভাবেই ফেইসবুকে প্রকাশ করিনি। রাষ্টপতির প্রতি বিষেদাগার করলে হয়তো দু'চারটা লাইক পেতাম ফেইসবুকে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে রাষ্ট্রপতি ক্ষমাটা করেছেন আমার খুব একটা মন্দ লাগেনি। একটা জীবন আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলো। তবে একটা ব্যাপার মনে হয়েছে রাষ্ট্রপতি কি সেই আসামীর খোঁজ খবর নিয়েছিলেন? সেই আসামীর চরিত্র কি বদল হয়েছে? মৃত্যুর হাত হতে বেঁচে গিয়ে আসামী কি অনুধাবন করতে পারছে কেন তার মৃত্যুদন্ড হয়েছিল? একদিন হয়তো সেও মুক্ত হবে, সেদিন কি সে অন্য একজন মানুষ এর বিপদে এগিয়ে আসবে? নাকি বীরদর্পে প্রতিশোধ নেবে যার বা যাদের জন্য সে জেল খেটেছে। আবারো দুচারটা লাশ ফেলে দিয়ে ঘোষণা দেবেন আমি মহারাজ। রাষ্ট্রপতির এই দায়িত্বটা ছিল। আসামী সম্পর্কে জানা এবং বুঝা তার মনমানসিকতার কি পরিবর্তন হলো সেটা জানা। এটা একটা নৈতিক ব্যাপার, কেউ কাউকে বাধ্য করতে পারেনা।

এইযে মূল্যবোধের জায়গাটা আমরা সংকুচিত করে ফেলছি তার ফলটা যে নিম্নগামী হয়ে আমাদেরকেই গিলে খাবে তার ধারাবাহিকতা একটু দেখুন। নিজামী সাইদীরা যেহেতু মানুুষ নয় তাদের ফাঁসী দিতেই হবে। বিষয়টা যেখানে স্বাভাবিকতা এবং উল্লাস এর ব্যাপার হয়ে গেছে তার পরের স্তরটা কোথায এবং কেমন? নতুন প্রজন্ম যারা একাত্তুর দেখেনি, তারা যখন নিজামী সাইদের দলটাকেই নিজেদের আদর্শ প্রচার এর বাহন হিসেবে মানতে ইচ্ছুক তাদেরও কি ফাঁসি দিতে হবে? সেই কবির কি মতমত আমি জানিনা। তবে সেই পাঠিকা হয়তো বলবে অবশ্যই। এরাও মানুষ না।

একটু কি ভেবে দেখবেন দয়া করে? একজন ছাত্র, থেলাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। তিন মাস পর পর রক্ত বদলাতে হত। ঘরের বাইরে খুব একটা বেরুতেন না।
পুলিশ তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যাকণ্ডে জড়িত বলে পুলিশেরই হেফাজতে ছাত্রের মৃত্যু। এই ছেলের কি ক্ষমতা আছে একটু খুন করার? দৈহিক এবং মানসিক? আপনারা শিল্প চর্চা করছেন আপনাদের চিন্তাশক্তি কিছুটা ভিন্ন। তায় সাধরণদের কথা আনলামনা। যারা লিখালিখি করছেন তারা একটু ভাবতে পারেন।

ব্যাপারটা এখানেই কি থামছে? এবার আসুন রাজনীতিমুক্ত একটা হত্যাকান্ডে, যেটা একই সময়ে সমসাময়িক।
নরসিংদীতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে দ্বীন ইসলাম (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। দ্বীন ইসলাম শহরের ভেলানগর মহল্লার (আজিজ বোর্ডিং) মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
পুলিশের দাবি গ্রেফতার এড়াতে পালানোর সময় গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পর জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে নিহতের পরিবারের অভিযোগ সকালে তাকে ঘুম থেকে তুলে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরে পুলিশের দাবি অনুযায়ী ৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

বুঝতে কি পারছেন? মৃত্যুগুলোর ধারাবাহিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? প্রথম মৃত্যুটা রাজনৈতিক এবং একাত্তর, দ্বিতীয় মৃত্যুটাতে একাত্তর বিয়োগ হয়ে শুধুই রাজনৈতিক, আর শেষটাতে? হুম। যে অন্যায়টাকে অন্যায়ভাবে ন্যায্য ভেবেছেন সেই অন্যায়টা ন্যয্যভাবেই ন্যায্যতা পেয়েছে শেষ মৃত্যুটাতে।

আমরা অনেকেই ভালো আছি এসব চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে। তবুও বলি, কিছুই করতে না পারুন চিন্তাটা যেন নিজের কাছেই স্বচ্ছ থাকে। আমার বিবেক বলেছে অন্তত দুইটা লাইন যেন লিখি তাই সেটা প্রকাশ করলাম। দেশটাকে সত্যিকারেই ভালোবাসি। বাংলাদেশ তুমি চিরজীবি হও।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৬ রাত ৩:২৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×