নির্দিষ্ট ট্রেনটা মিস হয়ে গেলে যাত্রাপথটা আর সুখের হয়না অনেক সময়। বিকল্প পথ খুঁজতে হয়। এমনকি উল্টো যাত্রাও হতে পারে।যদি সেটা থাকে দিনের বা রাতের শেষ ট্রেন। বাস, টেক্সি, রিক্সায় বা হেঁটে এক একজন চলে যেতে পারে একএক গন্তব্যে। কারো আবার কপাল ভালো, ট্রেন মিস হওয়াতে তার কপালে প্লেইন এর টিকেটও চলে আসতে পারে। জীবনটাই আসলে জুয়া খেলা। কার কপালে কোন কার্ড লিখা আছে কেউ জানেনা। ভালো কার্ড পেয়ে ট্রাম করার পর দেখলো ওভার ট্রাম পড়েছে। কপালের লিখন এমনও হতে পারে।
ত্রিশ পার হয়ে গেলে চাকরীর ট্রেন আর ধরা যায়না। চাকরীর নোটিশবোর্ডের ইন্টারভিউতে বয়সসীমা ত্রিশেই সীমাবদ্ধ। তারপর বিকল্প পথ খোঁজা। যে ছকটা বাঁধা হলো এই ত্রিশ বছর পর্যন্ত সেটার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া না গেলেও ক্ষতি নেই। জীবন থেমে থাকেনা। উত্তীর্ণ হলেও যে আখেরে ফল ভালো হয় তাও নয়। সবাই পরিশ্রম এর কথা বলে কিন্তু তার সাথে যদি কপাল এর সমন্বয় না থাকে তাহলে যুদ্ধের আর শেষ নেই।
যে যুদ্ধটা পদেপদে করতে হয় সেটা হলো অনিয়ম এর বিরুদ্ধে। অনিয়ম আসলে কোথায় নেই? সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিটাই যেন অনিয়ম দিয়ে গড়া।বাঘ যখন হরিণ শিকার করে কিংবা সাপ যখন বেঙ সেটা কোন নিয়মে পড়ে? একটা প্রাণ কি করে অন্য একটা প্রাণ এর খাবার হতে পারে? কি করুণ দৃশ্যইনা নিয়ত ঘটছে প্রকৃতিতে। প্রকৃতিকে অনেকটা মানুষের অধীন করে রাখা হয়েছে। তাকেও নিয়ত প্রাণবধ করে করেই জীবনধারণ করতে হয়। মাছ মাংস, শাক সবজী এগুলোতো সবই প্রাণ।
বার্ধক্যে এসে অনিয়মটাই আবার নিয়ম হয়ে যায়। বাঘ, সাপরা যখন আর শিকার করতে পারেনা তখন তারাই আবার অন্যের খাবার হয়ে যায়। খাওয়া খাওয়িতেই যেন জীবনের শুরু আর শেষ। প্রত্যেকে অন্যের খাবার। বাঘের খিদে পেলে নাকি নিজের বাচ্চাকেও খায়! মানুষকি খায় কখনো নিজেদের? হুম খায়তো, এইযে একে অপরকে জেনেশুনেই ঠকায়, চুরি করে, ডাকাতি করে, জুলুম করে, খুুন করে এগুলোতে একপ্রকার খাওয়ারই মতো।
না হচ্ছেনা। গল্পটা কোনভাবেই শুরু করা যাচ্ছেনা আজ রায়হানের। অপিষে কাজের ফাঁকে গল্প লিখা তার স্বভাব। সেটা আবার ব্লগ ফেইসবুকে শেয়ারও করে। আজকে কোনভাবেই গল্পটা ধরা দিচ্ছেনা। সবাই আসতে যেতে আড়চোখে তাকাচ্ছে রায়হান এর দিকে। সে সেটা বুঝতে পারছে তবে কাউকে কিছুই বলছেনা। তার মাথার ব্রেইনটা এখন দুইভাগে বিভক্ত। একটা অংশ দিয়ে সে অপিষ এর কাজ করছে অন্যটা দিয়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছে একটা গল্পের প্লট।
গত দু'তিন বছর যাবৎ এই দিনটাতেই সবার আগ্রহ থাকে রায়হান এর দিকে। কেউ কোন প্রশ্ন করেনা তবে উত্তরটা আশা করে। সে ছোট্ট ডেস্ক কেলেন্ডারটাতে যেখানে মাসের শেষ দিন আছে তার আশেপাশের জায়গা জুড়ে মার্কার পেন দিয়ে একটা শুণ্য আঁকে একটু বড় করে। তারপর বৃত্তের দুইপাশে দু্ইটা চোখ, মাঝখানে নাক, পরের অংশটাই সবাই খোঁজে তার টেবিলে আসা যাওয়ার সময়। ঠোটটা দুইভাবে দেয়া যায়। চাঁদের মতো করে ইউ রেখা টেনে দিলে হাসিমুখের ইমু হয়ে যায়, আর উল্টোটা দিলে মনে হবে মনবেজার। প্রতিবছর সে এই ছবিটাই আকেঁ। হাসিমুখের ছবিটা।
আজ ইনক্রিম্যান্ট এবং বোনাস দুটোই হয়েছে বেতন এর সাথে। সবাই তাই হিসেব করছিল কার কতোপার্সেন্ট বেড়েছে। প্রথম প্রথম রায়হানও তাদের সাথে মিলে হিসাবটা করতো। এখন আর করা হয়না। কারন সে মনে করে তাকে শতভাগটাই দেয়া হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। এটার আর পার্সেন্টেজ বের করার কি আছে।
সবসময় উদ্ভট সব অভিযোগ উঠে রায়হানের বিরুদ্ধে অপিষে। কোনটা সে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, ইচ্ছে করেই কাজটা করেনি অনিচ্ছিাতেই হয়ে গেছে, সরি। আবার কখনো কখনো অভিজোগটাই সে বুঝে উঠতে পারেনা, তখন সে হা করে তাকিয়ে থাকে। এটা নিয়ে সে অনেক ভেবেছে, কেন এমন হয় তার সাথে কিছুদিন পরপর। যে জবাবটা সে পেয়েছে সেটা আংশিক সত্য হতে পারে তবে পুরোপুুরি না। তারও কিছুটা দোষ আছে, সে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনা, তালগোল পাকিয়ে ফেলে। আর যে জবাবটা সে বের করেছে সেটাও সম্ভবনা কোন ভাবেই। সে যেহেতু একবার জন্মগ্রহণ করেই ফেলেছে শুতরাং ম্যানেজার এর নিকট আত্মীয় হয়ে আবার জন্মগ্রহণ করাটা কোন ভাবেই সম্ভব না। তাছাড়া এটা উপর ওয়ালার ইচ্ছের উপর বর্তায়। সে যেটা পারে সেটা হলো সাদিক সাহেব এর মতো ম্যানেজার এর শালী কিংবা অন্য কোন আত্মীয়কে বিয়ে করে পরমাত্মিয় বনে যাওয়া। সেখানেও তার হাত নেই, সে চাইলেইযে হান্ডি পাতিল কেনার মতো পাত্রী কিনে ঘরে নিয়ে আসতে পারেনা। তাছাড়া সে বিবাহীত। ঘরে তার দু'দোটো সন্তান।
বার্তাটা খুব সহজ। ভালো লাগলে থাকো না'হলে আসতে পারো। কোথায় যাবে সে? ছয়টা চোখ তার দিকে তাকিয়ে থাকে নিয়ত। তাদের এড়িয়ে কোথাওকি যাবার আর জায়গা আছে? হাসতে হাসতে সেলারীর খামটা ছিড়ে রায়হান। ইনক্রিম্যান্ট বোনাস নাইবা হলো, বেতনটা পাচ্ছে সেটাইবা কম কিসের। তার চাকরীটা চলে যায়না এটাইতো বড় বোনাস। আজ ঘরে যাবার আগে কিছু মিষ্টি ফলমূল নিয়ে যাবে সে। সবাইকে সঙ্গে নিযে উপভোগ করবে তার সুখের বেদানগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬