১
--আব্বা, কেমন আছিস?
--আলহাদুলিল্লাহ, ভাল আছি মা। তোমরা কেমন আছো?
--আমরাও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। শোন, সোয়েটার টা তোর আব্বার খুব পছন্দ হয়েছে।শালটাও খুব ভাল লেগেছে আমার। শালটা নাকি তোর পছন্দের। অনেক দোকান ঘুরে ঘুরে কিনেছিস।তোর আব্বা তো কেডস দেখে কি হাসিটাই না হাসলো। এই বুড়ো বয়সে আবার কেডস পরতে হবে।
-- মা তুমি কি বলছো?
-- আরে শোন, পাশের বাসার রাকিবের মা এসেছিল বিকেলে। এগুলো দেখে তো তার চোখ কপালে। আমার জন্য যে স্যাল্ডেল টা দিয়েছিস , আমার পায়ে হয়েছে। পায়ে দিয়ে হেটে দেখলাম। খুব আরাম।
--মা তোমার কি শরীর খারাপ? প্রেসার টা দেখেছো আজ?
--আরে রাখ তোর প্রেসার। এরকম খুশিতে একটু আধটু প্রেসারে কিচ্ছু হবে না।
--এই প্রথম বার আমার মনে হল তোর মাথায় কিছু থাকে।
--কেন কি করেছি?
--আরে তোর বিয়ের পর সেই কবে বলেছিলাম, উলের সুতা কিনে দিতে, তোর আর তোর বাবার টুপি তৈরি করে দিব। আজ এই বছর দুই পর সেই কথা তোর মনে পড়লো।
--মা আশে পাশে কি আব্বা আছে, আব্বার সাথে কথা বলা দরকার, মনে হচ্ছে তোমার মাথায় গণ্ডগোল হচ্ছে।
--আরে-নাহ। তোর আব্বা কেডস পায়ে দিয়ে হাটার প্র্যাকটিস করছে।
--আব্বার মাথাও কি খারাপ হয়ে গেছে?
--মাথা খারাপ না হয়ে কি উপায় আছে। তোর আব্বা, গত বছর দেওয়া তোর জিন্স টা পরেছে। সাথে সোয়েটার আর কেডস । মনে হচ্ছে তোর আব্বার সিনেমার কোন অডিশন আছে। সত্যি বলতে কি, অনেক দিন পর তোর আব্বাকে এভাবে দেখে আমারো খুব ভালো লাগছে। সাথে পাগলামিটাও। তোকে কত করে বললাম বাড়ি একটু ঘুরে যা। আমার মন অবশ্য বলছিল তুই আজ আসতে পারিস।
-- না মা। এই সপ্তাহে আসা হবে না। আগামী সপ্তাহে দেখবো।
-- আরে পাগল , তুই আমার পেটে হয়েছিস , নাকি আমি তোর পেটে।
-- মা শোনো, অফিসে অনেক ব্যস্ততা। আমি বাসায় গিয়ে তোমাকে ফোন দিচ্ছি।
-- আরে শোন শোন, খেজুরের গুড়, দুধ দিয়ে চিতই পিঠা ভেজানো হয়েছে। তিল , কালাইয়ের পিঠা বানানো চলছে এখন।রাকিব কে বলে রেখেছি, সকালে খেজুরের রস দিয়ে যাবে। চিংড়ি দিয়ে কচুর লতি। দেরি করিস না। সকাল সকাল অফিস থেকে বের হ।
-- হ্যালো মা, হ্যালো হ্যালো।
২
--আমার কিছু টাকা লাগবে।
--কত টাকা ?
--দশ হাজার।
--এত টাকা!
--এত টাকা কই? মাত্র তো দশ হাজার।
--এই মাসে আমার ক্রেডিট কার্ডের বিল দিতে হবে।
--তাতে আমার কি? আমি কি রোজ রোজ টাকা চাই তোমার কাছে।
--না, সেটা বলিনি। আমি আমার সীমাবদ্ধতার কথা বলছি।
--তুমি থাকো তোমার সীমাবদ্ধতা নিয়ে। আমার টাকাটা হলেই হবে।
--কোন ভাবে কি আগামী মাসে করা যায় না?
--না যায় না।
--তুমি কি কোথাও যাবা।
--হ্যাঁ, মায়ের বাসায় যাবো কাল।
--আগামী সপ্তাহে একসাথে যাই।
--না, আমি কাল যাব। এবং একাই যাবো।
--আম্মা কি ভাববে। জামাই ছাড়া তুমি একাই যাবে। আর লোকে বা কি বলবে।
-- মা তো আমার ।এত চিন্তা তোমার করা লাগবে না। তুমি টাকা টা দিলেই হবে।
--বাসা ভাড়ার টাকাটা তুলে এনেছি। মানিব্যাগে আছে। সকালে যাবার আগে নিয়ে যেও।
৩
মায়ের সাথে কথা বলার পর , আমার কেমন যেন খটকা লাগলো। চিংড়ি দিয়ে কচুর লতি শায়লা খুব ভাল রান্না করে। তাহলে কি শায়লা আমাদের বাড়িতে গেছে। মানিব্যাগ খুলে দেখি , সকালে টাকা নেয়ার সময় শায়লা একটা চিরকুট রেখে দিয়েছে। গোটা হাতে লেখা “কয়েকটা গোলাপ”। কয়েক মহুর্ত ভেবে অফিস থেকে বের হলাম। শায়লার আকাশী রঙ খুব পছন্দের। আকাশী রঙের একটা শাড়ি আর কয়েকটা গোলাপ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। বাসে উঠে শায়লা কে টেক্সট করলাম , ধন্যবাদ। কিছুক্ষন পর দেখি শায়লাও টেক্সট করেছে “ ধন্যবাদ দিয়ে ক্রেডিট কার্ডের বিল দাও”।
নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম।
২৭ পৌষ, ১৪২৭,
কুষ্টিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৫