১
হাসপাতালের পাশে চিপার ভেতরে একটা চায়ের দোকান। সন্ধ্যার ঠিক আগ মহুর্ত। আমি সিগারেট টানছি। মন ভরে ধোঁয়া ছাড়ছি। আব্বার ফুসফুসের সমস্যাটা আবার হঠাত করে বেড়ে যাওয়াই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। আব্বা এখন বেশ সুস্থ। দুই দিন টানা দৌড়ের উপর ছিলাম। মন ভরে প্রাণ ভরে সিগারেট টানতে না পারায় মনটা বেশ অস্থির হয়ে উঠেছিল। এক বসাতেই দুইটা ব্যনসন লাইট শেষ করলাম। বেশ শান্তি লাগছে। মনে হচ্ছে নতুন করে আবার দুই কিলোমিটার দৌড়ে আসতে পারবো। সিগারেট শেষ করে, আরো কিছুক্ষন বসে থাকলাম। একটা চা খেয়ে বিদায় নিলাম।
২
--তোমার সেজো ছেলে একটা ফাজিল?
--কেন, কি করেছে?
-- বেয়াদপ?
-- কি করেছে বলবা তো?
-- অসভ্য?
-- আরে কি করেছে বলবা তো?
-- কত্ত বড় সাহস। আমার সামনে সিগারেট খায়।
--তাই, এত বড় স্পর্ধা। এবার বাড়ি যায়। বের করবো ওর সিগারেট খাওয়া। কখন দেখেছো?
-- আরে সন্ধ্যা বেলা আমি চা খাওয়ার জন্য বাইরে গেলাম তখন। দেখি মনের সুখে সিগারেটে টান দিয়ে ধোয়া ছাড়ছে।
-- আচ্ছা, তুমি ভুল দেখ নাই তো। তোমার তো বয়স হচ্ছে। আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।
-- তুমি কি বলতে চাও, আমার ছেলেকে আমি চিনতে ভুল করবো।
--যাক, এই জীবনে ছেলে একটা ভুল করার পর তুমি নিজের ছেলে বলে দাবি করেছো। ভুল করলেই তো ছেলে আমার হয়ে যায়। আর ভাল কিছু করলেই তোমার।
-- তোমার আসকারা পেয়েই তো এই বাড় বেড়েছে।
-- তুমি কিছু বল নাই?
-- কি বলবো , দোকানে এত মানুষ, এর মধ্যে বকাবকি করাটা আমার যুক্তি সংগত মনে হয় নি।
-- বাইরে ডেকে বলতা?
-- আসলেই তোমার মাথা ভর্তি গোবর। আমি ওকে সিগারেট খাওয়া অবস্থায় ডাক দিব, তোমার কি মনে বাপ হয়ে আমি ওকে সিগারেট খেতে দেখেছি সেটা ও জানুক।
--তাহলে আর কি। মাথা ঠান্ডা কর। হসপিটাল থেকে বাড়ি যাই। তারপর কিছু বলো।
-- না, আমি কিছু বলবো না। আমি আর বাইরে চা খেতে যাবো না। বাড়িতে গিয়ে বাইরে চা খাওয়া বন্ধ। বড় বেটারবউ কে বলবো প্রতিদিন চা করে দিতে। ও বেশ ভাল চা বানায়।
-- ও তো চা খাওয়াতেই চাইতো। তুমি তো না খেয়ে বাইরে চলে যেতা।
-- আর যাবো না।
৩
এশার পর খাবার নিয়ে হাসপাতালে আসলাম। দেখি মা মিটি মিটি হাঁসছে। বাবা কটমট করে আমার দিকে তাকাচ্ছে। মা তাড়াহুড়ো করে আমার হাত থেকে খাবারের ব্যাগটা নিয়ে বেডের পাশে রেখে আমার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। এসেই জোরে জোরে হেঁসে উঠলেন।
--তোর বুদ্ধি কাজে লেগেছে।
--সত্যি?
-- সত্যি। তোর আব্বা আর বাইরে চা খেতে যাবে না বলেছে। বাড়িতে গিয়েও নাকি তোর বড় ভাবির হাতের চা খাবে। বাইরের চা খাওয়া বন্ধ।
-- যাক তাহলে এত দিন পর এত বড় ঝামেলার সমাধান হল।
-- তা তো হল। কিন্তু তোর কষ্ট হয় নি তো, বেশম লাগে নি তো, ধোয়া ভেতরে নিস নি তো?
-- আরে নাহ মা। শুধু মুখের ভেতরে নিয়েছি আর বের করে দিয়েছি।
-- তুই এখন বাইরেই থাক। তোর আব্বার রাগ কম হোক। আমি ফোন দিব।
-- আচ্ছা। বলেই বের হয়ে এলাম। এসেই আবার সেই দোকানে। মনের সুখে আবারো ব্যনসন লাইট ধরালাম।
৪
আব্বাকে ভর্তি করানোর পরের দিন থেকে কিছুটা ভালো। হাঁটাচলা করতে পারছেন। আব্বা দিনে পাঁচ সাতটা সিগারেট খান। ফুসফুসের সমস্যার জন্য ডাঃ কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ করেছেন ধূমপান না করার জন্য। ভর্তি করানোর পরের দিন বিকেলে আমি চিপার ঐ দোকানের সামনে দিয়ে আসছি। দেখি আব্বা সিগারেট শেষ করে চকলেট মুখে দিচ্ছে। আমাকে খেয়াল করে নি। আমি গিয়ে বললাম , আব্বা আপনি বাইরে? আব্বা বললেন, মুখটা কেমন বেস্বাদ হয়ে আছে। তাই চকলেট খাবার জন্য বাইরে এলাম। পরে মাকে গিয়ে বললাম মা, এই অবস্থা।
মা বলল আমি তো জানি ও এই জন্যই বাইরে যায়। কিন্তু কি করবো বল । তখনই মাকে আমি এই আইডিয়া দেয় । আব্বা বিকেলে যখন বের হবে তখন তুমি আমাকে ফোন দিয়ে জানাবা। আমি ঐ দোকানে গিয়ে সিগারের ধরিয়ে বসে থাকবো। আব্বাকে দেখে না দেখার ভান করে টান দিব। এটা দেখে যদি আব্বা লজ্জা পায় থাহলে হয় বন্ধ হতে পারে। মা বললেন, কিন্তু তুই তো সিগারেট খাস না, হঠাত করে যদি বেশম লেগে যায় বা অন্য সমস্যা হয়। না মা, কোন সমস্যা হবে না। আমি তো ধোঁয়া মুখের ভেতরে নিয়েই বের করে দিব। সমস্যা হবে না। তারপর সন্ধ্যার আগে মা ফোন দিয়ে বলে তো আব্বা বের হল। আর বাকীটা ইতিহাস।
রাত ১১ টা আমি এখন ঐ দোকানেই বসে আছি। আবারো সিগারেট ধরিয়েছি। আকাশে পূণির্মার চাঁদ। চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি । বিকেল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে হলে, আপনাআপনি হাঁসি চলে আসছে। মা জানে তাঁর ছেলে সিগারেট ছুড়েও দেখে নি। কিন্তু মা এটা জানে না , আব্বার প্যাকেট থেকেও আমি সিগারেট সরিয়েছি ।
নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম
২৬ শে আষাঢ়
কুষ্টিয়া।
ছবিটা ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩১