--সারা বাড়ি কান্নার রোল পড়ে গেছে ।
ভদ্র মহিলা আর শব্দ করে কান্না করতে পারছেন না । থেকে থেকে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছেন । মাঝে মাঝে অচেতন হয়ে যাচ্ছেন । সাধারণত সন্তান জন্ম দেবার পর , সন্তানের কান্নার শব্দের সাথে সাথে মায়েদের মুখে হাঁসি ফুটে উঠে । কিন্তু এই মহিলার বেলায় উল্টো ঘটনা ঘটেছে । তিনি কাঁদছেন , আর সন্তান নিশ্চুপ ।
মহিলার বাবার স্বপ্ন ছিল , তার নাতি-নাতনী যাই হোক না কেন তিনি সমস্ত গ্রামের লোকজন দাওয়াত করে খাওয়াবেন । তিনিও মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছেন ।
হঠাৎ করে বাচ্চাটা কেঁদে উঠল । এবার বাড়ির সবাই হাসছে । ভদ্রমহিলা এবার ও কাঁদছেন । তবে এবার আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে না , বেশ জোরে জোরে কাঁদছেন ।
আমি কাঁদছি । পিঠে কুরামিন পড়েছে । মা হাত থেকে বই খাতা গুলো নিয়ে বাক্সে তালা দিয়ে রাখলেন । স্কুলে যাবার আগে সবগুল বই থেকে পড়া ধরতেন । যদি কোন দিন পড়া রেডি না হত বা বলতে দেরি হত , সে দিনকার ফলাফল এমনই হত । পড়ালেখার ব্যাপারে কোন ছাড় নেই । আশির দশকের শুরুর দিকে আম্মু এস এস সি ( তখনকার সময়কার মেট্রিক) পরীহ্মাথী । বিশেষ কারন বশত পরীহ্মা দিতে পারেন নি ।
এমন অনেক দিন গেছে , সন্ধ্যায় আম্মু রান্না করতেন না । সন্ধ্যা বেলা আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে পড়াতে বসতেন । পাড়ানো যখন শেষের পথে তখন রান্না চড়াতেন । তার ধারণা , সন্ধ্যায় রান্না করলে আমাদের পড়াতে পারবেন না , আর রান্না হয়ে গেলেই আমরা খেতে চাইবো , আর খাইলেই ঘুম ।
রাত ৩টা । হঠাৎ খেয়াল করলাম মা আমার পাশে বসে আমার মাথায় পানি দিচ্ছেন । টাইফয়েড জ্বরের ঘোরে ভুল বকতে বকতে কখন যেন অচেতন হয়ে গিয়েছিলাম । মাঝে মাঝে মুখের উপর ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে । খেয়াল করে দেখি মা কাঁদছেন ।
মাঝ রাতে মা মাঝে মঝেই ফোন দিয়ে , কাঁদো কাঁদো গলায় জিঙ্গাসা করে আমার কোন সমস্যা হয়েছে কি না । আমাদের দিয়ে সারাদিন দুঃচিন্তা করে আর রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ।
এমন অনেক দিন হয়েছে যে মেসে রান্না হয়নি । আর অলসতা করে বাইরে খেতে যাওয়া হয়নি । আর ঐ দিনই মা ফোন দিয়ে জিজ্ঞসা করে আমি খেয়েছি কি না ।
সচারাচর বাসা থেকে টাকা নেওয়া হয় না । হাতের অবস্থা ভাল না । পকেটে অটোর ভাড়া দেবার মত টাকাটাও নেই । হঠাত মা ফোন দিয়ে বলে , অমুকে দিয়ে বিকাশ করতে পাঠিয়েছি । টাকা পেলে জানিও ।
যদিও আমি কিছুই হয় নি , তারপরও আমার এই আমি হয়ে ঊঠার পিছনে সবটাই তুমি ।
যে কথাটা হয়ত তোমার সামনে কখনো বলা হয় নি , হয়ত সামনে গিয়ে বলতে পারবো কি না জানি না ।
“মা তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি” ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:০৬