লোকটা ষাঁড়ের মত চিৎকার করল, 'হারামজাদা, তুই আমারে চেনস?'
রিকশাওয়ালা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল! কি বলবে সে? লোকটা বাঘের মতন গর্জে উঠল, 'কথা কসনা কেন নাটকির পুত? এখন এই জামা কে ধুইব? তুই? না তোর বাপ?' রিকশাওয়ালা কি বলবে, তার গালের কাছের ত্বক, ঘাড়ের কাছের লোমকূপ চরম মুহূর্তের অপেক্ষায় আছে। এই বুঝি বজ্রাঘাত হবে। দশাসই চেহারার লোকটা নেকড়ের মত লাফিয়ে উঠল, 'জানস? এই পাঞ্জাবির দাম কত জানস? কেদা ছিটাস কেন রাস্তায়? চউক্ষ্যে দেখস না?' রিকশাওয়ালা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে জানে, দোষ তারই। কিন্তু...
তাকে আর 'কিন্তু' অবধি ভাবার সুযোগ দিল না লোকটা, সাপের মতন ফণা তুলে বলল, 'তুই আমারে চেনস নাই, আমি কেডা!! আমি... আমি...
মোটা শরীরে বাজখাই গলার লোকটার কথা জড়িয়ে গেল, সে তার আমি... আমি... শেষ করতে পার্ল না। তার আগেই পাশে দাঁড়ানো ফুটফুটে পরী মেয়েটা টুক করে তার হাত ধরল, তারপর বলল, 'তুমি একটা পচা বাবা। তুমি কি পচা কথা বল! তুমি এতো পচা কেন বাবা? আমি তোমাকে আর বাবাই বলব না, বলব, পচা লোক!'
ষাঁড়ের মতন চিৎকার করা, বাঘের মতন গর্জন করা, নেকড়ের মতন লাফিয়ে ওঠা, সাপের মতন ফণা তোলা লোক'টা নিমিষেই 'বাবা' হয়ে গেল। ফণা নামিয়ে, নিচু মাথায় দাঁড়িয়ে, শান্ত গলায় ফিসফিস করে বলল, 'সরি মা, আর হবে না'।
পরী মেয়েটা বলল, 'তাহলে ওকে আদর করে দাও'।
বাবা হয়ে যাওয়া 'পচা লোক'টা রকশাও্যালার কাঁধে হাত রেখে বলল, 'আমি সরি, আর কখনও এমন হবে না'।
পরী মেয়েটা টুকটুক করে বাবা'র হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে।
সে হয়তো আরেকটু বড় হলে গম্ভীর গলায় বলত, 'বাবাদের পচা হতে নেই, বাবা'।