রিনি জল ঢালছে গ্লাসে।
আমি বললাম, 'আর ঢেলো না, উপচে পড়বে'। বলা শেষ না হতেই গ্লাস উপচে জল পড়লো মেঝেয়।জল-কাদায় মাখামাখি হল চারধার। সে আমার চোখে তাকিয়ে বিব্রত ভঙ্গীতে হাসল, বলল, 'জগের মুখটা বোধহয় বেশিই বড়'।
আমি তাকালাম, আসলেই তাই। গ্লাসে যতটা জল ধরবার কথা, তার তুলনায় জগের মুখটা বাড়াবাড়ি রকমের বড়। জগটা খানিক কাঁত করতেই গ্লাস উপচে জলের লুটোপুটি, জলের তোরে গ্লাসটাও আছড়ে পরে ভাঙ্গল মাটিতে।
আরেক দিনের কথা।
লম্বা সরু নলের জগ। রিনি পানি ঢালছে বহুদিনের পুরনো এক মগে। বেঢপ সাইজের বিশাল মগ। কিন্তু মগটা কিছুতেই ভরছে না। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম মগের তলায় বিশাল বড় ছিদ্র! লম্বা জগের সরু নলের জল ঢালতেই ঝড়ে যাচ্ছে। রিনি হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে।
আমি হাসলাম।
রিনি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল, বলল, 'এই খেলাটা কিসের মতন জানো?
আমি বললাম, না'।
সে বলল, 'ভালোবাসার মতন'।
আমি অবাক গলায় বললাম, 'মানে?'
রিনি ধীর পায়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। বাইরে রাতের অন্ধকার আকাশ। সে সেই অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, 'দু'জন মানুষ যখন ভালোবাসে, তখন তাদের ভালবাসারা বেশিরভাগ সময়ই এমন, কখনও কখনও একজন যা দেয়, অন্যজন তা ধারণ করতে পারে না। সব উপচে পরে। একসময় আছড়ে পরে সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়'।
আমার কি হল জানি না, আমি চোখ নামিয়ে পায়ের নখ দেখতে থাকলাম।
রিনি আমার কাছে এসে দাঁড়ালো, তারপর ঠাণ্ডা শীতল গলায় বলল, 'আবার একজন যা চায়, যতটা শুষে নিতে পারে, অন্যজনের সাধ্য নেই তা দেয়। তখন পাত্রটা ক্রমাগত শুন্যই থাকে। কিংবা, হয়তো, অন্যজনের ভেতর এই মগটার মতন গভীর কিছু ফাঁকিও থাকে লুকানো।'
আমি কথা বললাম না। দেয়ালের দিকে তাকালাম। সেখানে রিনির আর আমার একটা ছবি। জগতের সব ভালোবাসা আর সুখ যেন জমেছিল ওই ছবিতে।
ছবিটা এখন পুরনো। ঝাপসা। বিবর্ণ!
---------------------------------------------------------------
নির্বাসন/ সাদাত হোসাইন
২৫/০৫/২০১৪