ভাত খেতে বসেছি।
আম্মা জিজ্ঞেস করলো, 'তুই এতো শুকাইছস ক্যামনে?'
আমি বললাম, 'টের পান কিছু? প্রত্যেক দিন কয় কিলোমিটার সাইকেল চালাই? মোহাম্মদপুর থেকে গুলশান। প্রত্যেকদিন সাইকেল চালাই যাই আর আসি।'
আম্মা বলল, 'বাজান সাইকেল আর চালাইস না, শরিলের এ কি অবস্থা!'
আমি বললাম, ঢাকার রাস্তার যা অবস্থা! জ্যামেইতো দিন পার, তারপর ধরেন বাস পাওয়া যায় না। আর সিএনজিতে যাইতে গেলে যা বেতন পাই তা ভাড়া দিতেই শ্যাস'।
আম্মা মিনমিন করে বলল, 'যাক, ভাড়াতেই সব টাকা যাক, তাও আর সাইকেল চালাইয়া যাইস না'।
আমি বললাম, 'সমস্যা নাই আম্মা, ছোটবেলায় শোনেন নাই? গায়ে হাড্ডি থাকলে মাংস একদিন হইবই?'
আম্মা বলল, 'না বাজান, খালি হেইডাই না, পরানডা খালি তড়পায়, ডরে খালি কাঁপে। রাস্তা ঘাটে কত গাড়ীঘোড়া। এর মইদ্ধ্যে দিয়া কেমনে আমার বাজানে সাইকেল চালাইয়া যায়! ডরে কইলজাডা শুকাই থাকে।'
আমি বললাম, 'আমি একলাতো আর সাইকেল চালাই না, আরও অনেকেই চালায়'।
আম্মা বলল, 'সেইডাই বাজান। সকাল থেইকা রাইত পর্যন্ত সারাদিন খালি বিড়বিড় করে দোয়া দুরুদ পড়তে থাকি। সব পুতের মা'য়েরাই এমন কইরা পড়ে। সারাডা দিন। এক মুহূর্তের জন্য থামি না। কি যে ডর লাগে বাজান!;
আমি বললাম, 'এতো ডরান ক্যান?'
আম্মা বলল, 'ডরাই ক্যান? কেন ডরাই এইটা খালি দুনিয়াতে একমাত্র মা-ই জানে বাজান। আর কেউ জানে না'।
আম্মা খানিক চুপ করে থাকলেন। আমি কথা বলি না। আসলে বলার মত কিছু খুঁজে পাই না। আম্মা হঠাৎ বলেন, 'আগে রাস্তাঘাটে দেখতাম গাড়ী-ঘোড়ার গায়ে লেখা 'মায়ের দোয়া', এইডা দেইখা কত কিছু বলতাম। বলতাম, এরা আল্লাহ্ রসুলের নাম না লেইখ্যা, লেইখ্যা রাখছে মায়ের দোয়া। মায়ের দোয়া ক্যান লেইখ্যা রাখছে!
এইটুক বলে আম্মা থামলেন, তারপর প্রায় ফিসফিস করে বললেন, 'এহন বুঝি বাজান, মায়ের দোয়া ক্যান লেইখ্যা রাখে। মায়ের দোয়া কি জিনিস! এইডা মা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না বাজান। কেউ না'।
আমি আম্মার দিকে তাকিয়ে থাকি। নিঃশব্দ। আমার হঠাৎ মনে পড়ে, কোথায় যেন পড়েছিলাম, 'God could not be everywhere....so, he created "MOTHER'.