হিরোইনচি, গাঞ্জুট্টি, ডাইলখোর... চিনবেন কিভাবে?
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল ব্লগার বন্ধুদের প্রতি। অনেক তো পরিবর্তন হলো দেশে, দুঃশাসন, দুর্নীতি, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে। আসুন এবার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা শুরু করি। আমরা চাইলেই পারি। যেভাবে ভোটবিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল সেভাবেই হোক না আরেকটা যুদ্ধ, মাদকের বিরুদ্ধে। আমার নেশাসক্ত জীবন-এর ধারাবাহিক পোষ্ট তাই এবার সনাক্তকরণ।
হিরোইনচি: এরা সাধারণত নেশাগ্রস্থ অবস্থায় প্রাণোচ্ছল থাকে। দেখলেই মনে হবে, দূর্দান্ত স্পিড, অখন্ড মনোযোগ। তবে মাঝে মাঝেই নাক ঘষবে। নাকে সর্দি থাকুক বা না-থাকুক। একটু অস্থিরও কখনো কখনো দেখা যায়। সাধারণত নেশা গ্রহণের পরপরই এবং নেশা কেটে যাওয়ার সময়। সব কিছুতেই স্মার্টনেস দেখাতে চায় । হরদম মিথ্যে বলে। তাদের পকেটে বা আবাসস্থলে খুজলেই পাবেন, মোমবাতি, রাংতা মোড়ানো কাগজ, ব্লেড, কয়েন, চিকন চিকন কাগজের টুকরো। সব নেশাখোর চেনা যায় চোখ দেখলে। চোখ মনের কথা বলে। তাদের চোখ ঘোলাটে হয়। ফোকাস ঠিক থাকে না। শরীরে চুলকানো দাগ দেখবেন, নিদির্ষ্ট একখানেই চুলকাতে থাকবে। ঘাও হতে পারে। বিছানায় সোজা হয়ে ঘুমাতে পারে না। দ হয়ে থাকে ঘুমের মধ্যে। ঘুম ভাংগার সময় হাত পা বাঁকাবে, মোচড়াবে। টাকা, সোনা-দানা চুরির অভ্যাস থাকে। বাথরুমে ঢুকলে বের হতে চায় না। তার ঘরে ঢুকলে পোড়াপোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। নেশার ব্যাড়া উঠলে অস্থির হয়ে পড়বে, কিছুতেই তাঁকে আটকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হলে যে-রকম উপসর্গ দেখা যায় সে-রকম উপসর্গ থাকবে। কাশি হবে, বেজায় রকম কাশি। কিন্তু কোনো কফ থাকবেনা, বমিও করে দিতে পারে কাশতে কাশতে। নেশা গ্রহণের পরপরই তা কেটে যাবে। দলবদ্ধ আড্ডা দিতে পছন্দ করে না, নেশাখোর পরিমন্ডল ছাড়া। কিংবা করলেও শেয়ারিংটা কমে যায়। ২০-২৫ দিন নেশা করলেই আসক্তির পর্যায়ে যায়।
গাঞ্জুট্টি : এরা সাধারণত নির্জীব থাকে নেশাগ্রহণের পর। উদাস উদাস ভাব থাকে। জোর করে হাসতে চায়। অকারণেই জোরে হেসে ওঠে। কথার যোগসূত্র ভুলে যায়। ভাবতে পছন্দ করে। মাথা নীচু থাকে। কথা বলতে গেলে তোতলানো ভাব লক্ষ করা যায়। পকেটে বা আবাসস্থলে ব্লেড বা কাটারি, সিগারেটের মশলা, কলকে, নারিকেলের ছোবা, ছোট কাঠের টুকরো এসব পাওয়া যায়। চোখ লাল বা হলুদ দেখাবে। মিস্টিজাতীয় দ্রব্য খেতে পছন্দ করবে। দুধ খাওয়ার একটা প্রবণতা থাকবে। কেননা একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, দুধ খেলে গাঁজা ক্ষতি করতে পারে না। কোনো বিষয়ের গভীরে ঢুকে যেতে পছন্দ করে। কিন্তু পূর্বে কি বলেছে বা করেছে মনে করতে পারবে না। ভীতুভাব লক্ষ করা যাবে। একটু আঁধার পছন্দ করবে। গান পছন্দ করে। একটু আধ্যাত্মিক কথা লক্ষ করা যায়। বোটকা একটা গন্ধ তাদের শরীর থেকে বের হয়। জীবন সম্পর্কে উদাসীনতা দেখা দেয়। যৌনতার ব্যাপারেও। ময়লা কাপড় ব্যবহারেও তাদের মধ্যে অনিহা দেখা যায় না। সহজে রাগানো যায় না। তবে নেশার ব্যাপারে কিছু বললে ক্ষেপে যায়। চলনে বলনে জড়তা সুস্পষ্ট।
ডাইলখোর : এরা চালচলনে স্মার্ট। যে কোনো বিষয়ে অসীম আগ্রহ। বেশি দুধ, চিনিমিশ্রিত চা ঘন ঘন খেতে পছন্দ করে। সিগারেট খায় বেশি। চটপটে হয়। কোনো বিষয়ে না করে না সাধারণত। বিশেষ করে যেখানে উত্তেজনা আছে। হাত কাঁপে। রাত জাগতে পছন্দ করে। হয়ত দেখা যাবে গভীর রাতে সে সারা ঘরের ঝুল ঝাড়ছে, ঝাড়– দিচ্ছে। বেলা করে ঘুম থেকে উঠবে। কথা বলার সময় ঠোঁট ভেজাতেও দেখা যেতে পারে। টাকা চুরির অভ্যাস আছে। অবিরত কথা বলে যেতে পারে। একটু জেদি হয়। দেমাগী মনে হয়। যৌন ব্যাপারে আগ্রহ থাকে। যা পরবর্তিতে অক্ষমতায় পর্যবেশিত হয়। ওদেরও ব্যাড়া উঠলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। হাতের তালু গরম থাকে। মাস খানেক গ্রহণ করলেই আসক্তির পর্যায়ে যায়।
ইঞ্জেকশনিস্ট : এটা অনেকটা হিরোইনচিদের মতোই। তবে খুব রিস্কি। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের বিকলঙ্গ হয়ে যেতে তাছাড়া হেপাটাইটিস তো আছেই। যাই হোক, এদেরও ব্যাড়া উঠলে শরীরের তাপমাত্র বেড়ে যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, হাতপা বাঁকা হয়ে যেতে শুরু করে, শরীর মোচড়ায়। নেশা গ্রহণ করলে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তখন চলনে বলনে স্বাভাবিক। মোটকথা হিরোইনচিদের সাথে এদের সবকিছুতেই মিল। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নিডল ফুটানোর দাগ দেখা যাবে, বিশেষ করে হাতে, পায়ে। নেশার এক পর্যায়ে নিডল ফুটানোটাই একরকম নেশা হয়ে যায় তাদের। শরীরের বিভিন্নখানে তখন ফুটাতে থাকে নিডল দিয়ে কিন্তু পুশ করে একবারই। নেশাটাও প্রায় একইরকম। ১০-১৫দিন একনাগাড়ে কেউ এ নেশা গ্রহণ করলে আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়।
সব নেশার প্রতিক্রিয়া মোটামোটি একই রকম। বলতে চাচ্ছি বাংলাদেশের নেশাগুলোর ব্যাপারে। আমার কাছে একটা বিষয় মনে হয়েছে যে, যারা এসব নেশা সরবরাহকারী তারা মূলত আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করে চলছে। এরশাদ সরকার ছিল এদিক দিয়ে অগ্রগন্য, সেই সময়ে বিভিন্ন নেশার প্রবেশ এদেশে। সে-সময় ছাত্রসমাজ যেভাবে তার বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করেছিল তাতে করে মনে হয় যে, তারা চেয়েছিল যে ছাত্রসমাজ, যুবসমাজটাকে নির্জীব করে রাখতে। যাতে তারা বিদ্রোহ করার ক্ষমতাটাই হারিয়ে ফেলে, আন্দোলন করার ক্ষমতাটাই হারিয়ে ফেলে। যারা এ দেশটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে বা করতে চায় তারাও চায় একটা নির্জীব জাতি। তাতেই তাদের মোক্ষলাভ। খেয়াল করে দেখুন যে নেশাগুলো উত্তেজনা ছড়ায়, সে নেশাগুলো কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ব্যাপক বিক্রি হলেও বাংলাদেশে পাওয়া কষ্টকর। ডাইল, গাঁজা, হিরোইন, সেডিল সব পড়ে থাকার নেশা, নির্জীব করার নেশা, ধ্বংস হওয়ার নেশা।
নেশা মানেই নির্ভরশীলতা, লতা বা আগাছার মতো। দূর্বল মানুষ নেশা করে, যে নেশা করে সে রাজাকারের চেয়েও নিকৃষ্ট। যার আত্মমর্যাদা আছে যে কখনো নেশা করে না। পরাজিতরাই নেশাসক্ত।