রাতের কোকিল, আঁতেল ও পরজীবিদের... পরাজয় এবং তৎসম্পর্কিত উপপাদ্য
গত দুই বছরে রাতের কোকিলেরা প্রতিটি টেলিভিশনে বসে গুরুগম্ভীরভাবে যা কবচাতেন, যে-সব আঁতেলরা না-ভোট দেয়ার জন্য প্রপাগান্ডা চালিয়েছেন আর পরজীবি রাজাকার, আলবদর, জামাতীরা অপরের ঘাড়ে চেপে নির্বাচনী তরী পার হওয়ার যে বাসনা, তার বিরুদ্ধে জনগণ রায় দিয়েছে।
ফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই দলের উপর জনগণের কিছু দাবী ন্যায়সঙ্গত কারণেই বর্তেছে। সংক্ষেপে
আওয়ামী লীগের কাছে:
১. সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানে যেমন খুশি তেমন সাজো নয়।
২. যে-সব ইস্যুতে জনগণ তাদের পক্ষে রায় দিয়েছে তার বাস্তবায়ন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে।
৩. সকল নেতা-কর্মীদের সংযত ও সহনশীল থাকা। বিপক্ষের বিরুদ্ধে অত্যাচার, নির্যাতন না চালানো। যা গতবার বিএনপি চালিয়েছিল।
৪. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা।
৫. আর বিএনপির এবারের ফলাফলকে মনে রাখা। কেননা গত সংসদে তারা প্রায় একই রকম মেজরিটি পেয়েছিল।
৬. এও মনে রাখা দরকার যে, জনগণ এবার চেয়েছিল যে মহাজোটকে ভোট দিতে। কোনো প্রার্থীকে নয়। তা নিশ্চয় তাদের স্মরণে থাকবে কেননা, যারা কোনোকালেই জিততে পারেনি তারাও এবার জিতেছে। এটা শুধু প্রতীকের জন্য। তাই কোনো নেতা যেন মনে করে না বসে যে, তার জনপ্রিয়তাই তাকে জিতিয়েছে।
বিএনপির কাছে:
১. তাদের মনে রাখতে হবে এই পরাজয় তাদের জন্য যথেষ্ঠ হিতকর এইঅর্থে যে, যে জামাত হুঙ্কার দিত , তারা ছাড়া তাদের কোনো গতি নেই। আর যারা এই হুঙ্কার দিত, তাদের পরাজয়। তাদের এখন ভাববার প্রয়োজন আছে যে, জামাতকে সংগে নিলে ভবিষ্যতে কি দশা হবে তাদের। কারণ তরুণ ভোটাররা রাজাকারকে পছন্দ করে না। কিন্তু বিএনপিকে পছন্দ করে।
২. নির্যাতন, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ পার পায় না। এটা তাদের মগজে ভালো মতো ঢোকাতে হবে। নইলে তাদের হেভীওয়েট বক্সাররা সবাই নকআউট হলো কিভাবে?
৩. তারেক, কোকো বিষয়ে তাদের আরো সতর্ক হতে হবে। কেননা শেখ মুজিবের বিপক্ষেও এরকম অভিযোগ ছিল যার প্রেক্ষিতেই কিন্তু বিএনপির জন্মলাভ কিংবা জয়লাভ।
৪. আপোষহীন নেত্রীর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হবে। বিশেষ করে, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির জন্য।
৫. এটা সাময়িক ফলাফল। জনগণ দু দলকেই এখন থেকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছে।
৬. জনগণকে মূল্যায়ন করা, নেতা-কর্মী বাহিনীকে নয়। বিগত সরকারে আপনারা বড় বেশি নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, জনগণকে নয়। এই ফলাফল দেখে নিশ্চয় আপনাদের এটা বিশ্বাস জন্মেছে যে, নেতা-কর্মীরা আপনাদের প্রাপ্ত ভোট কিছুটা বাড়াতে পারবে বটে কিন্তু জেতানোর ক্ষমতা নেই। জেতানোর ক্ষমতাটা আমজনতার উপর নির্ভরশীল।