ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপটায় গেলে মনে হয় এটা অনেক প্রাচীন শহর। ৮৫ ভাগ হিন্দু হওয়ায় প্রচুর মন্দির রয়েছে এখানে। উলুয়াতু মন্দিরটা তার মধ্যে অন্যতম। শ্রী হারি মারাকাটা রাজার রাজত্বকালে (১০৩২-৩৬ খ্রিস্টাব্দ) মাজাফাহিত সন্ন্যাসী মপু কুটুরান এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। উলুয়াতু মন্দিরকে বিবেচনা করা হয় বালির আধ্যাত্মিক স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত ছয় মন্দিরের একটি হিসেবে। বালির হিন্দুরা বিশ্বাস তিনটি স্বর্গীয় শক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিভা এখানে এসে এক হয়েছেন। তাই মন্দিরটিকে বালিনীয় হিন্দুরা তাদের সর্বোময় দেবতা শিভার প্রার্থনা কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে। আর তাদের বিশ্বাস রয়েছে যে, মন্দিরটি সমুদ্রের কুপ্রভাব থেকে তাদের রক্ষা করবে। মন্দিরটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াইশ' ফুট উপরে একটা চূড়াতে।
এই মন্দিরের আশেপাশের বনভুমিতে রয়েছে প্রচুর বানর। তারা খারাপ প্রভাব থেকে মন্দির পাহারা দেয় বলে বিশ্বাস করা হয়। বাস্তবে বানরগুলো পর্যটকদের জন্য বেশ বিব্রতকর। কারো চশমা, টুপি, বা মোবাইল নিয়ে যখন তখন ওরা গাছে চড়ে যায় এবং তা ভেঙ্গে ফেলে। আমাদের গাইড টমি মিয়া আগেই বানরদের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছিল ওরা আধুনিকতায় বিশ্বাসী না বলে আধুক সব জিনিস নিয়ে ওরা ভেঙ্গে ফেলে।
ভারত মহাসাগরের দিগন্তজোড়া নিলাভ জলরাশি অনবরত পাহাড়ের পায়ের কাছে আছড়ে পড়ে মাথা কুটে মরছে। উপরে এক পাশে সবুজ বনভূমি আর সমুদ্র পাশের অংশে কাঠ গোলাপও নাম না জানা কিছু ফুলগাছ বেষ্টিত প্রাচীন মন্দির, নিঃসন্দেহে বলা চলে নৈসর্গ। চলুন আমার ক্যামেরায় ভ্রমণ করে আসি উলুয়াতু মন্দির।
(২) কুতা থেকে প্রায় প্রায় দেড় ঘন্টা বাস ভ্রমণ করে চলে এলাম উলুয়াতু মন্দির এলাকায়। বাস পার্কিং এর জায়গাটা বিশাল এবং চমৎকার।
(৩) মন্দিরে প্রবেশ করতে হলে এখান থেকে দুই টুকরো কাপড় পরিধান করতে হয়। বালিনীয়দের পোষাক নিয়ে আমাদের গাইড যতটুকু বলেছিল যে, এক টুকরোর অর্থ আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসি, আর অন্য টুকরোর অর্থ আমরা মানুষ কেও ভালোবাসি। আর ওদের মাথায় যে টুপিটা পরিধান করে এর অর্থ হলো আমরা স্রষ্টায় বিশবাসী। অবশ্য মন্দিরে প্রবেশের জন্য ঐ বিশেষ টুপিটার বাধ্যবাধকতা নাই।
(৪) বিশেষ পোষাক পড়ে পর্যটকরা হেটে যাচ্ছে মন্দিরের দিকে।
(৫) কিছু পর্যটক তখন মেইন গেইট দিয়া বেড়িয়ে আসছিল।
(৬) মেইন গেইট দিয়া ঢুকার পর কিছুটা সামনে হেটে এগোলেই ডানে পড়বে এই উঁচু একটা বেদীর উপর বিশাল একটা রাক্ষস টাইপের মুর্তি, এবং তার নিচেই একটা মা বানরের মুর্তি। বলে রাখা ভালো যে, ওখানকার হিন্দুরা বাংলাদেশ ভারতের মতো মা কালী, দূর্গা এসবের মুর্তি তাদের মন্দিরে রাখেনা। সবই যেন কোন প্রাচীন ধরণের মুর্তি, তাছাড়া ন্যুড নারী মুর্তিও যেখানে সেখানে দেখা যায়।
(৭) নিচের মা বানরের মুর্তি, বুকে ধরা আছে তার ছানা।
(৮/৯) নিচে ভারত মহাসাগরের ফেনীল ঢেউ অনবরত আছড়ে পরছে। দুদিক থেকে তোলা দুটি ছবি।
(১০) আমি সাধারণত নিজের ছবি খুবই কম তুলি, তবে এমন চমৎকার জায়গার একটা স্মৃতি না রাখলে কেমনে হয়?
(১১/১২) ডান বান কিংবা মাঝখান দিয়েও মন্দিরে উঠা যায়, কিন্তু সব দিক দিয়াই অনেকটা সিড়ি পথ বেয়ে ক্লান্ত হতে হয়।
(১৩) এটা মন্দিরের বরাবর মাঝখান দিয়ে উঠার সিড়িপথ। দুইপাশেই অনেক পুরোনো কাঠ গোলাপ গাছে আচ্ছাদিত পথটা সত্যিই অসাধারণ।
(১৪) মূল মন্দির তো এখানটায়।
(১৫) মন্দিরের পাশে সম্ভবত এটা একটা বিশ্রামাগার।
(১৬) ঢোকার আগে দেখেছিলাম অনেক কৃষ্ণচুড়া, মন্দিরের পাশে এসে পেলাম এই ফুলগুলো।
(১৭/১৮) আমাদের গাইড টমি মিয়ার কথা সত্যি প্রমাণ করার জন্যই হয়তো বানরগুলো কারো ক্যাপ কারো বা সানগ্লাস নিয়ে পালাল।
(১৯/২০) সান গ্লাস উদ্ধারে ত্রাণকর্তার ভুমিয়া আসলো এই নারী, তার ঝোলা থেকে কিছু খাবার বের করে দেওয়ার পরই সান গ্লাস ফেলে দিয়ে খাবার নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো বানর।
(২১) সান গ্লাস ফেরৎ দিয়ে কিছু বকশিস ও কামিয়ে নিল এই মহিলা, অনেকে বলে বানরদের সাথে নাকি এমন মহিলাদের চুক্তিপত্র আছে।
(২২) অনেক তো বাদরামী হলো, এবার গলাটা ভেজানো দরকার। কিন্তু বেচারা দাঁত দিয়ে কামড়ে নিচে দিয়া ফুটা করে খাচ্ছে।
(২৩) এখানে মনে হয় আরো কয়েকটি মন্দির আছে, সময় স্বল্পতায় সবগুলো ভালোভাবে দেখা সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৩৫