চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার। ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে উঠা এই মাজার চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান। জনশ্রূতি অনুযায়ী বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস শুনতে পাওয়া যায়।
চট্টগ্রামে অবস্থানের পরে প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাবার অনুরোধ করলে উনি তাদের ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেঁটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন এবং ঐ স্থানে উনার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান।
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের পাদদেশে একটি সুবিশাল দীঘি অবস্থিত। এর বাসিন্দা হিসাবে বোস্তামীর কাছিম সুবিখ্যাত। বোস্তামীর কাছিম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার প্রাঙ্গন ব্যতীত বিশ্বের আর কোথাও এদের দেখা মিলে না। মাজারের দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা মাজার তত্ত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শো থেকে সাড়ে তিনশো কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রজনন মৌসুমে মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়।
মাজারের ভক্তকূল ও আঞ্চলিক জনশ্রুতি অনুযায়ী মাজার প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন এবং পাপীষ্ঠ আত্মার পদচারণা ছিলো। বায়েজিদ বোস্তামী তার এই অঞ্চলে ভ্রমনকালে এইসব দুষ্ট আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন এবং আজীবন পুকুরে বসবাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
(২) নিচ থেকে পাহাড়ের উপর মাঝারে যাওয়ার জন্য এমন সিড়ি দেওয়া আছে।
(৩) মাঝারে দর্শনার্থী পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা দরজা রয়েছে।
(৪) মাঝারের বাসি ফুলগুলো চত্তরে রাখা আছে, মনের আশা বাসনা পূরণ হওয়ার জন্য ওখান থেকে অনেকেই বাসি ফুলের কিছু অংশ নিয়ে যাচ্ছে।
(৫) গাছগুলোতে লাল হলুদ রঙা সুতা বেধেই মনের আশা পূরণ করে নেওয়া যায়।
(৬) কাঠ গোলাপ গাছগুলো এমন সব আধ্যাত্মিক যায়গায় খুবই জনপ্রিয় কেন জানিনা।
(৭) বার আউলিয়ার আস্তানা শরীফ লেখা রয়েছে এখানে। এটা মাঝারের একেবারে পেছনের অংশে। এখানে বসে নাকি বায়েজিদ বোস্তামী অন্যান্যদের সাথে কথা বলতেন।
(৮/৯) এখানে আরো একটা মজার বিষয় হলো মানুষ ওদের কিছু টাকা পয়সা দান করলে একজন ঝাড়ু দিয়ে মাথায় বাড়ি দিয়ে ওনার মনের আশা পূরণ করার দোয়া করছেন বা মনের সব কালিমা ঝাড়ু দিয়ে দূর করে দিচ্ছেন।
(১০) বারান্দায় একজন ক্যাস বাক্স নিয়ে বসে আছেন, এখানে দানের টাকা ও অন্যান্য সামগ্রী গ্রহণ করা হয়।
(১১) এটা মুল মাঝার। এখানেও অনেকেই টাকা দিচ্ছে, আর একজন আবার সেই টাকা দানকারীকে ময়ুরের পালক দিয়ে বানানো ঝাড়ু দিয়ে ঝেড়ে দিচ্ছে। ক্যামেরা দেখে মাঝারের উপর থেকে টাকা ফেলে ঝাড়ু রেখে সে চলে যায়। অবশ্য আমাকে সে ছবি তুলতেও বাধা দিয়েছিল, কিন্তু আমার অনমনীয় ভাব দেখে নিজেই সরে পড়ে।
(১২) দক্ষিণ পাশের চত্ত্বরে নিরন্তর জ্বলে চলছে এমন আগর বাতি আর মোমবাতি।
(১৩) পাহাড় থেকে নেমে আসার আগে মাঝারের পূর্ব পাশে দাঁড়িয়ে তোলা একটা ছবি।
(১৪) সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে এবং দীঘির পাড়ে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ মোঘলরীতির আয়তাকার মসজিদ। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয় মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আমলে মসজিদটি নির্মিত। বর্তমানে সামনে দিয়ে আরো নির্মান কাজ করে মসজিদটাকে সম্প্রসারন করা হচ্ছে।
(১৫/১৬) দীঘির পাড়ে বোস্তামী কচ্ছপের জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে ভক্তকুল। এই কচ্ছপ যার খাবার খাবে তার মনের আশা পূরণ হবে।
(১৭/১৮) কোন একটা কচ্ছপ কাছাকাছি আসলে ওর মুখে খাবার ঠেকে দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। মনের বাসনা পূরণ না করে কেউ যেন এখান থেকে যাবেনা।
(১৯) কেউ আবার হাতের নাগালে এলে ওদেরকে ডলে ডুলে গায়ের শ্যাওলা পরিস্কার করে দিচ্ছে।
(২০) আর কচ্ছপের খাবার বিক্রির ব্যবসাটাও এখানে বেশ জমজমাট।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭