দেখতে কক্সবাজেরের মতো অনবরত ঢেউ তীরের বালিয়াড়িতে এসে আছড়ে পড়ছে, এমন সুন্দর যায়গা আমি বেশ কয়েকটা দেখেছি, ওগুলোর কাছে গেলে মনের অজান্তেই কক্সবাজারের নামটা মুখে চলে আসে। মৈনটঘাটটাও তেমনি। তবে এর ব্যতিক্রম হলো অন্য যেই জায়গাগুলোকে আমি মনে মনে কক্সবাজারের সাথে তুলনা করি সেখানকার নদীগুলোর প্রসারতা মৈনটের চেয়ে অনেক কম। মৈমনঘাটে পদ্মার প্রশস্ততা এতো বেশী যে সত্যিই অবাক হতে হয়। তবে মৈনটের তীরের ভাঙ্গনটা বেশ ভাবনার বিষয়। মিুনটঘাটের অনেক নাম শুনে সেদিন বেড়িয়ে পড়লাম ওখানের উদ্দেশ্যে। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ এর মাজারের সামনে থেকে ছাড়ে মৈনটঘাটের বাস, ৯০ টাকা ভাড়া দিয়া সোজা চলে গেলাম ঢাকার দোহার উপজেলার মিনি কক্সবাজার তথা মৈনটঘাটে। ওখানে যখন আমি পৌছি তখন দুপুর একটা বাজে। বিকাল বেলাটা নাকি খুব জমজমাট হয়। আমি আবার সব জায়গায়ই কম মানুষ থাকলে ঘুরে/দেখে আরাম পাই, মৈনটঘাটেও পেয়েছিলাম। তো আসুন দেখি মৈনটের ছবিব্লগ।
(২) নয়াবাজার দিয়া যখন দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুতে উঠলাম তখন বাসে বসেই বুড়িগঙ্গার উপর একটা ক্লিক।
(৩) বাস থেকে নেমে সামনে এগোতেই এমন সিএনজির সারি।
(৪) এখানে গোসল করতে নেমে পদ্মার স্রোতে মৃত্যুবরণ করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী, তাই এই সতর্ক বার্তা।
(৫) ইদানিং পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হওয়ায় বেশ কিছু খাবার হোটেল এখানে চালু হয়েছে, মাছ ভাত খাওয়ার এই হোটেলগুলোতে দামও তুলনামুলকভাবে বেশ কম।
(৬) ঘাটের একপাশে বাধা রয়েছে বেশ কিছু স্পীডবোড, সাধারণত ওপারের যাত্রীরাই এগুলো ব্যবহার করে, তবে পর্যটকরা ইচ্ছে করলে ভাড়া নিয়া ঘুরেও বেড়াতে পারে।
(৭) অন্যপাশে রয়েছে অনেকগুলো ট্রলার, ওরাও যাত্রী মালামাল এবং রিজার্ভে ব্যবহৃত হয়।
(৮/৯) মৈনটে এমন অনেক খঞ্জনা পাখির দেখা পেয়েছিলাম, সাধারণত অন্য কোথাও আমি এতো খঞ্জনা দেখিনি। এক সময় কোচবিহার রাজ্যের ভাগ্য জানতে বিজয়া দশমীর সকালে হাতির পিঠে চড়ে খঞ্জনা পাখি ওড়ানোর রেওয়াজ ছিল। ওই পাখি যেদিকে যেত, সেইদিকে লক্ষ্য রেখে রাজ পুরোহিত ও গনৎকাররা রাজ্যের ভাগ্য নির্ধারণ করতেন।
(১০) কিছু দোকানপাট পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছিল।
(১১) আবার কিছু দোকানপাট পর্যটকদের আসার আগে খোলা হয়না।
(১২) নদীর পারে মাঠে গরু ঘাস খাচ্ছিল আর তাদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিক গো-বকদের দল। গো-বক মাটির ওপর বা ঘাসবনের ভেতর দিয়ে যেমন মার্চ করতে পারে, তেমনি উড়ন্ত পোকা-পতঙ্গকে লাফ দিয়ে শূন্য থেকে পেড়ে ফেলতে পারে অ্যাক্রোব্যাটদের কৌশলে। মূল খাদ্য এদের পোকামাকড়, গিরগিটি, ব্যাঙ, টিকটিকি; গরু-মহিষ-ভেড়া-ছাগলের শরীরের পরজীবী পোকা-কীটসহ আটালি ও ডাঁশ মাছি। জোঁক এরা খায় না। তবে গবাদিপশুর নাকের ভেতরে, খুরের ফাঁকে, তলপেটে জোঁক লাগলে সেগুলো এরা টেনে বের করে ফেলে শালিকদের মতো। নাকের ভেতরে জোঁক ঢুকলে গবাদিপশু হ্যাঁচ্চো দিতে থাকে। শালিক ও গো-বকেরা আসে। পশুটি মুখ নামিয়ে দেয়। নাকের ভেতরে ঠোঁট ঢুকিয়ে দিয়ে বের করে আনে জোঁক। জোঁকেরাও অতি বুদ্ধিমান। গবাদিপশুর এমন সব জায়গায় লাগে, যেখানে পশুটি জিভ দিয়ে চাটতে পারবে না, চাটা দিলে জোঁকের বাবারও সাধ্য নেই লেগে থাকে। গো-বক তাই গবাদিপশুর পরম বন্ধু। গবাদিপশু কাত হয়ে শুয়ে আছে, গো-বক কানের ভেতরের বা শিংয়ের গোড়ার আটালি বের করে খাচ্ছে বাংলায় আজও এটি সাধারণ দৃশ্য। গবাদিপশু ঘাসবনে চরছে, নড়ছে ঝোপঝাড়, উড়ছে পোকামাকড়, খাচ্ছে গো-বকেরা। এটিও চিরচেনা দৃশ্য। এমনিতেও গো-বকেরা ঘাসবনে পাশাপাশি দলবেঁধে হাঁটে, নিজেরাই পা ও পাখা দিয়ে ঝোপঝাড়-ঘাস নাড়ায়, পোকামাকড় বের হলেই পাকড়াও করে। ঘাসবনের ওপর দিয়ে উড়তে উড়তে এরা দুই পাখার বাতাস ঢেলে পোকামাকড় বের করার কৌশল জানে। শুধু পোষা প্রাণী নয়, বুনো শূকর, হরিণ, হাতি ইত্যাদির সঙ্গে একই কারণে বন্ধুত্ব গো-বকের। এরা দিবাচর। তবে প্রয়োজনে নিশাচর হতে পারে।
(১৩) পাশের বাড়িঘরগুলোর আশেপাশেও বকদের অনেক উড়াউড়ি চোখে পড়ে।
(১৪) তবে একটা ভাবনার বিষয় হলো, পাড়ের বালিয়াড়িতে ভাঙ্গন ব্যপক।
(১৫) কুনি জাল দিয়ে পদ্মায় মাছ ধরছে একজন।
(১৬) কোথাও আবার এমন অযত্নে ফুটে আছে কচুরী পানা ফুল।
(১৭) স্পীডবোড ছুটে চলেছে যাত্রীদের উপারে পৌছে দিতে।
(১৮/১৯) ঘোড়ার গাড়িতে করে ইট পরিবহন করতে মৈনটঘাট ছাড়া আর কোথাও দেখিনি আমি।
(২০) ফেরার আগে বাসে বসে একটা ক্লিক, সবুজ ক্ষেতের ওপাশেই পদ্মা নদী।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০২