কুমিল্লা জেলার মধ্যবর্তী স্থানে ও শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ যে অনুচ্চ ও সরু পাহাড়শ্রেণী আছে, তার দক্ষিণ ভাগ লালমাই পাহাড় ও উত্তর ভাগ ময়নামতি পাহাড় নামে পরিচিত। জেলার আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও বরুড়া উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের অবস্থান। পাহাড় ও পাহাড় সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় অর্ধশত গ্রাম রয়েছে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার লম্বা এই পাহাড়শ্রেণী ১ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত। পাহাড়ের উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে আছে রাণী ময়নামতির টিলা এবং দক্ষিণ দিকের শেষ সীমানায় রয়েছে চন্ডীমুড়া। গড়ে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়শ্রেণীর টিলাগুলোর উপরিভাগ প্রায় সমতল।
আদিনা শরীফটা মূলত হয়রত খাজা ওয়াজ আল কুরুনী (রা শাহ কামাল ইয়েমীনি এর মাজার। এটা কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার কালির বাজার ইউনিয়নের লালমাই পাহাড়ের উপর আদিনা মুড়া নামক স্থানে অবস্থিত।
(২) পরিকল্পনা ছিলো গিয়েছিলাম কুমিল্লার শালবন বিহার দেখব। শালবন বিহার দেখে কিছু সময় বেঁচে গেল দেখে কাছাকাছি আর কি আছে জানতে চাইলে আদিনা শরীফ দেখার জন্য কয়েকজন বলল, কথিত আছে আদিনা শরীফ থেকে নাকি মদিনা শরীফ দেখা যায়। সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম আদিনা শরীফ দেখতে। পাহাড়ের উপর আদিনা শরীফ তথা হয়রত খাজা ওয়াজ আল কুরুনী (রা শাহ কামাল ইয়েমীনি এর মাজার, পাহাড়ের নিচে নির্মিত রয়েছে একটা সিমেন্ট নির্মিত গেইট।
(৩) নিচের গেইট পার হয়ে এঁকেবেঁকে উপরের দিকে চলে গেছে অনেকগুলো সিমেন্ট নির্মিত ধাপ। দুই পাশে সবুজ গাছ গাছালী, পাখির ডাক এবং সুনসান, যার শেষে রয়েছে আমাদের কাঙ্খিত আদিনা শরীফ।
(৪) সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার পর মাজারের শুরু যেখানটায় সেখানে আরো একটা গেইট।
(৫) এখানে দুইটা দালান রয়েছে, একটা নীল, ওটা হল মসজিদ অন্যটা গোলাপী রঙের মাজার।
(৬) গোলাপী ঘরের ভেতরটা টাইলস করা, মাঝখানে রয়েছে য়রত খাজা ওয়াজ আল কুরুনী (রা শাহ কামাল ইয়েমীনি এর কবর, যার উপর ঝুলছে কিছু ঝড়ির ফুল।
(৭) এক পাশ দিয়ে পুরুষরা মাজার জিয়ারত করে অন্য পাশ দিয়া মহিলারা, তালা মারা একটা ক্যাশ বাক্স নিয়ে বসা একজন মহিলাদের কিছু পরামর্শ দিচ্ছে।
(৮) বড় এ্যলমুনিয়ামের পাতিলে পানি রাখা আছে, তার উপর ভাসছে একটা মধ্যম সাইজের প্লাষ্টিকের মগ, দর্শনার্থীদের পানি পান করার জন্য এই ব্যবস্থা। পাহাড়ে চড়ার সিড়িগুলো বেয়ে উঠেই পিপাসা লেগে গিয়েছিল, তাই পানি দেখে আর দেরী করলাম না।
(৯/১০) মাজারের বাহিরে পাহাড়ের উপর বেশ কিছুটা সমতল ভুমী রয়েছে, তার মাঝে বেশ কিছু কবর আছে। কোনটা লোহার গ্রীল, কোনটা বাঁশের বেড়া আবার কোনটা সিমেন্ট দিয়া বাধাই করা। কবরের বঁাশের এবং লোহার গ্রীলগুলোতে পূণ্যার্থীদের মনোকামনা পুরনের রশি বা পলিথিন বেধে একেবারে সয়লাব করে রেখেছে।
(১১) অনেক পুরোনো এই মসজিদটা নাকি জ্বীনেরা নির্মান করেছে, এটাতে ১০ জন মুসল্লী ও একজন ঈমাম দাঁড়িয়ে নামাজ পরা যায়, বর্তমানে ওটা মাঝে রেখে নতুন করে মসজিদকে বড় করা হচ্ছে।
(১২) কিছু চেনাজানা এমন ফুলের গাছও আশে পাশে রয়েছে।
(১৩) দুজন মহিলা মনোষ্কমনা পূরণর জন্য মাজারের পাশের কামিনী গাছটায় লাল হলুদ সুতা বাঁধছে।
(১৪) মাদ্রাসার নামে একটা সাইবোর্ডও আছে, যদিও তার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
(১৫) মনিরুল ইসলাম সাহেব আগে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, বর্তমানে এই মাজারের দেখভাল করছেন, মাজারের সাথেই ওনার বাড়ি।
(১৬) পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকালে এমন সারি সারি সবুজের উপরিভাগ দেখে মনটা জুড়ায়, দেখার চোখ থাকলে এখান থেকে নাকি মদিনাও দেখা যায়!!! মানে ওরা বলে "আদিনায় দাঁড়িয়ে মদিনা দেখা যায়"
(১৭) এবার ফেরার পালা, বালা মুসিবত দূর করার জন্য এর চেয়ে কম দামে আর কিইবা পেতে পারি? লাল হলুদ সূতা মাত্র ১০টাকা। পাগলের হাত থেকে সুতা বেধে নিয়ে নেমে গেলাম পাহাড় থেকে, পরবর্তি গন্তব্য মহাতীর্থ চন্ডীমূড়া সেবাশ্রম............
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০৪