somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনাকান্দা দূর্গ

১৩ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরে অবস্থিত এ জলদুর্গটি ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির একটি নিদর্শণ । নদীপথে ঢাকার সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ নদীপথগুলোর নিরাপত্তার জন্য মুঘল শাসকগণ কতগুলো জলদুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সোনাকান্দা দুর্গ। জানা যায় সুলতান মীর জুমলা ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীতে জলদস্যুদের নিধন করার জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরবর্তী সোনাকান্দা এলাকায় এ দূর্গটি স্থাপন করেন। হাজীগঞ্জ দুর্গের প্রায় বিপরীত দিকেই এর অবস্থান। এ দুর্গটি দেখতে অনেকটা হাজীগঞ্জ দুর্গের মতোই। জনশ্রুতি আছে এ দুর্গ থেকে পাতাল পথে হাজীগঞ্জ দুর্গের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।


(২)

ইতিহাসঃ

মূলত দুর্গের নামানুসারে ওই এলাকার নামকরণ করা হয় সোনাকান্দা। সোনাকান্দা নামের চমৎকার একটি জনশ্রুতি রয়েছে, তবে ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই তাতে। জনশ্রুতিটা হচ্ছে, বার ভূঁইয়াদের অধিপতি ঈশা খাঁ বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের বিধবা কন্যা সোনাবিবিকে জোরপূর্বক বিয়ে করে এই দুর্গে নিয়ে আসেন। বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি সোনাবিবি। তিনি নীরবে নিভৃতে দুর্গে বসে রাত-দিন কাঁদতে থাকেন। সেই থেকে দুর্গের নামকরণ হয় সোনাকান্দা।


(৩)

সোনাকান্দা দুর্গ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে মর্মস্পর্শী আরেকটি কাহিনী। সাংবাদিক ওহিদুল হক খান জানান, প্রথমে সোনাকান্দা ছিল ঈশা খাঁর কেল্লা। রাজা কেদার রায়ের মেয়ে স্বর্ণময়ী এসেছিলেন লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নান করতে। একদল ডাকাত স্বর্ণময়ীর বজরায় হানা দেয়। প্রচুর স্বর্ণালংকারসহ স্বর্ণময়ীকে অপহরণ করে। পরে ঈশা খাঁ তাঁকে উদ্ধার করে কেদার রায়ের কাছে ফেরত পাঠাতে চান। কিন্তু মুসলমানের তাঁবুতে রাত কাটানোয় জাত গেছে_এ অভিযোগে কেদার রায় স্বর্ণময়ীকে আর ফেরত নেননি। এ খবর শুনে স্বর্ণময়ী কেল্লার তাঁবুতে দিনের পর দিন কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছেন। আর তাই এর নাম হয় সোনার কান্দা বা সোনাকান্দা।


(৪)

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ জানান, কেল্লার সঙ্গে স্বর্ণময়ীর কাহিনীর কোনো প্রত্নতাত্তি্বক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর নির্মাণশৈলী দেখলে বোঝা যায় এটি মোগল আমলের। আর ঈশা খাঁর শাসনকাল ছিল এটি নির্মাণের বেশ আগে।



(৫)

এই দুর্গের স্থাপত্যকাল ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়। মূলত জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ইদ্রাকপুর, সোনাকান্দা ও হাজীগঞ্জ_এই তিনটি দুর্গ নির্মাণ করেছেন বাংলার সুবেদার মীর জুমলা। এগুলো মূলত জলদুর্গ, প্রসাদ দুর্গ নয়। ইটের তৈরি এ দুর্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৬ মিটার, প্রস্থ ৫৮ মিটার। দুর্গটি মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি। এর উত্তর দিকে রয়েছে একটি প্রবেশ তোরণ। এটি চওড়া পাঁচ মিটার। দুর্গের দেয়ালের পুরু দেড় মিটার। আর দেয়ালের উচ্চতা সাড়ে তিন মিটার হলেও বর্তমানে উচ্চতা অনেকখানি কমে গেছে। দুর্গের পশ্চিমাংশে রয়েছে সিঁড়িযুক্ত খিলান পথ ও উঁচু বেদি। সেখান থেকে নদীর দিকে মুখ করে কামান বসানো থাকত। উল্লেখ্য, এতদঞ্চলের তিনটি জলদুর্গের মধ্যে সোনাকান্দা দুর্গটি সর্ববৃহৎ। সোনাকান্দা দুর্গের একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য দুটি দুর্গের মধ্যে নেই। এ দুর্গটি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি হলো বুরুজবিশিষ্ট আয়তকার ফোকরযুক্ত অংশ আর অন্যটি পশ্চিম দিকে সিঁড়িপথ খিলানযুক্ত উঁচু বেদি। অন্য দুটিতে এমন খিলানসহ প্রবেশপথ নেই। সোনাকান্দা দুর্গের প্রতিরক্ষা প্রাচীরের চূড়ায় মার্লন নকশা এবং বুরুজ রয়েছে। উঁচু প্রাচীর থেকে বন্দুকের গুলি ও কামানের গোলা ছোড়ার জন্য নির্মিত ফোকরও রয়েছে, যা সুদৃঢ় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য জানান দেয়। সোনাকান্দা ও হাজীগঞ্জ দুর্গ দুটি ১৯৫০ সালে জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নিয়ে সংস্কার করা হয়। সুত্র


(৬)


(৭) দূর্গের একমাত্র প্রবেশ পথের বাহির দিকের ছবি এটা।


(৮) এটা প্রবেশ পথের ভেতরের দিক থেকে তোলা ছবি।


(৯) দুর্গের পশ্চিমাংশের উঁচু বেদিতে উঠার সিঁড়িযুক্ত খিলান পথ এটি, উপরের বেদিতে নদীর দিকে মুখ করে কামান বসানো থাকত।


(১০) দূর্গের আশেপাশে কিছু বানরের আনাগোনাও চোখে পড়ে।


(১১/১২) সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার পর এই সেই গোলাকার বেদি, যার চতুর্দিকেই বন্দুকের গুলি ও কামানের গোলা ছোড়ার জন্য নির্মিত ফোকর রয়েছে।




(১৩/১৪) উপরের বেদি থেকে নিচের সিড়ির দিকে তাকালে এই দূর্গকে যেমন দেখায়।




(১৫) দূর্গ থেকে বেড়িয়ে আসার আগে দূর্গের পশ্চিম উত্তর কোনে দাঁড়িয়ে তোলা একটি ছবি।


(১৬) প্রচন্ড রোদে দূর্গ দেখা শেষ করে যখন বের হলাম তখন মেইন গেইটের বাহিরে এমন টক ফল দেখে কার না জিবে জল আসে?


(১৭) ফেরার সময় আম গাছে বসা টুনটুনিটা টুন টুন করে আমাদের কে বিদায় জানিয়েছিলো B-)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×