ট্রেনের লম্বা হর্ণটা বাজার সাথে সাথেই আমার ব্যগটা টেনে নিয়ে ভো দৌড়। আগুপিছু না ভেবে আমিও লাফিয়ে নামলাম ট্রেন থেকে, ছুটলাম চোরের পেছনে। সন্ধার অন্ধকার তখন সবে মাত্র শুরু হয়েছে, তবে গাছপালার আঁধারে অন্ধকারটা ভালোই ঝেকে বসেছে। অপরিচিত ঝোপঝাড় ওয়ালা গ্রামীন পথে খুব দ্রুতই চোরটা হারিয়ে গেলো। হতাশ আমি ফিরে এলাম স্টেশনে। কিন্তু ততোক্ষণে আমাকে আরো হতাশ করে দিয়ে ট্রেনটা অনেক দূরের অন্ধকারে হারিয়ে গেলো
চট্টগ্রাম থেকে নরসিংদী আসার পথে একটা আন্তনগর ট্রেনকে সাইট দেওয়ার জন্য ছোট্ট একটা গ্রামীন স্টেশনে আমাদের ট্রেনটা থেমেছিলো, আর সেখান থেকে ট্রেনটা যখন ছাড়বে ঠিক সেই সময়ই ঘটেছিলো উপরোক্ত ঘটনা।
বিদ্যুৎহীন স্টেশনটায় একটা হারিকেন জ্বালিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো, পাশেই একটা হাতল ভাঙ্গা কাঠের চেয়ারে বসা ছিলো মাঝ বয়সী লোক। এই সন্ধ্যায়ই স্টেশনটা এতো সুনসান ছিলো যে কিছুটা ভয়ও লাগছিলো। লোকটার পাশের সিমেন্ট নির্মিত বেঞ্চে গিয়ে বসলাম, কিন্তু ওনার সাথে কথা জমিয়ে তুলতে পারলাম না। তবে এটুকু বুঝতে পারলাম যে এখান থেকে বের হতে হলে সকাল ৮টার আগে আর কোন ট্রেন নাই। আরো দুয়েকটা ট্রেনকে উনি লাল নীল বাতি দেখাইয়া চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে হারিকেনের সলতেটা একটু উস্কে আস্তে আস্তে হাটতে থাকলেন অল্প দূরের ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কলোনীটার দিকে। এতোক্ষণে খেয়াল করলাম সেখানেও একটা টিমটিমে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে।
ঝিঁঝিঁ পোকাগুলো ক্লান্তিহীন ডেকে চলেছে। হারিকেনের আলোটা আস্তে আস্তে কমে আসছে, আলো বাড়াতে গিয়ে দেখলাম কেরোশিন নাই। সিমেন্টের বেঞ্চিটার উপর পা তুলে অনেকটা দুঃস্বপ্নের মাঝেই ঝিমাতে থাকলাম। মাঝ রাতের পর আকাশে আধখানা চাঁদ জেগে উঠেছে। চাঁদের আলোতে কি পরিবেশটা আরো ভৌতিক রূপ ধারণ করলো! গভীর রাত, নানা ধরণের শব্দ, সরাৎ করে কিছু একটা ছুটে গেলো খুব কাছ দিয়েই। কখনো মনে হচ্ছে এই তো কেউ হেটে আসছে। দূরে একটা শিশু কন্ঠের কান্না, তারপর আবার সব সুনসান।
মনে হলো দীর্ঘ একযুগ পর কোথাও একটা মোরগ ডেকে উঠল, তারপর আস্তে আস্তে পুবের আকাশ আলোকিত করে উঠলো সূর্য্য। দেখলাম একটা নিরেট গ্রামে এই স্টেশনটা, অতি চমৎকার একটা গ্রামে রাত কাটাইলাম, অথচ কতো ভয়ে ভয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০