বাবার কথা
একটা জীবনের গাড়ী চালাতে চার চাকা না হোক দু চাকা কিন্তু ভীষণ জরুরি । তাঁর একজন হলেন মা অন্যজন বাবা! আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র । বাবা আমাকে তাঁর বিদেশী সাহায্য সংস্থার অফিস এ প্রথম নিয়ে যাচ্ছেন । পরিচালক স্যার রবার্ট ফক্স । প্রথম দেখা হলে কি বলতে হবে কিভাবে hand shake করতে হবে পথে যেতে যেতে শেখালেন । একটা কথা এখনও আমার মনে আছে তুমি কেমন আছ এই প্রশ্নের জবাবটা ছিল এরকম " I'm fine and feel proud to be a Bangladeshi Bengali " কারনটা এরকম "তুমি তোমার সুন্দর দেশকে নিশ্চয় ভালবাস ?" এই প্রশ্নটা রবার্ট এর স্বভাবজাত ছিল ! সম্ভবত এ কারনে তাই এই উত্তর শিখিয়ে নেয়া যদিও এর তাৎপর্য বুঝেছি অনেক পরে । আইরিশ মুক্তি আন্দোলনের প্রতি (IRA- Irish Republican Army) সহানুভূতিশীল এই ভদ্রলোক আমাদের মুক্তিযুদ্ধকেও বেশ সন্মান করতেন । সিঁড়ি ভাংছি দুরু দুরু বুকে। জীবনে প্রথম একজন বাংলা না জানা লোকের সাথে কথা বলব !
একমনে স্টিক হাতে বিলিয়ার্ড খেলায় মনোযোগী ঝাঁকড়া চুলের মাথা দুর থেকে বড় একটা ব্যালকনির শেষ মাথায় দেখতে পেলাম । অসম্ভব ঝকঝকে চেহারার দেখতে প্রায় তরুন প্রৌঢ় মিষ্টি হাসিতে গুড এভেনিং বলল । রবার্টের হাসিতে কি জানি ছিল ভয়ের মেঘ তাই দ্রুত সরে গিয়ে আমার মুখেও সূর্যের হাসি উঁকি দিল । লর্ড পরিবারের ছেলে অক্সফোর্ড থেকে সাহিত্যে এম এ ও কম্যুউনিটি ডেভেলপমেন্টে পিএইচডি করা রবার্ট তাঁর ফেয়ার ওয়েল পার্টিতে বাবাকে বিনীত উচ্চারণ " You are my master as you taught me things from real life" !
একজন গর্বিত দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযোদ্ধা বাবার আরও গল্প বলি। বাবা ব্রিটিশ রয়্যাল আর্মি তে ছিলেন পরে '৪৭ এ দেশ বিভাগে স্বাভাবিক নিয়মে পাকিস্তান আর্মি তে যোগদান করলেও মনে প্রানে একজন খাঁটি বাঙালি ই ছিলেন। আব্বাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে, ফোন এ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার সহকর্মী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামশ ! পরের সন্তাহে ফোর্স রেটায়ারমেন্ট এর চিঠি ! তখন ৬৯ এর উত্তাল গনঅভ্যুন্থান পরবর্তী অসহযোগ আন্দোলনের প্রাথমিক সময়কাল জানুয়ারী ১৯৭১ ।
ব্রিগেঃ শামস পরবর্তীতে এজন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন ও ধর্মীয় সামাজিক কারনে নিয়মিত আমাদের বাসায় আসতেন প্রটোকল উপেক্ষা করে । মুক্তি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে । আব্বা পুরনো অভ্যাস বশত মাঝে মাঝে অফিস যেতেন । কাঠের দোতালায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আনা যুদ্ধ বন্দীদের ভেসে আসা আর্তনাদের কথা বলতেন । এখানে উল্লেখ্য যে পশ্চিম পাকিস্তান আর্মি সিগন্যালস্ এর হেডকোয়ার্টারের বিপরীতেই আমাদের অফিসার্স কোয়ার্টার ছিল । পরে বিপদ হতে পারে ভেবে সহকর্মীর পরামর্শে আর যান নি । একদিন ব্রিগেঃ শামস বাবার কাছে জানতে চাইলেন " বলত এই যুদ্ধে কে জিতবে" ? "আমরা " বাবার এই সাহসী জবাবে উনি বিন্দুমাত্র অবাক না হয়ে জানতে চাইলেন কারণটা । বাবা বললেন, "দেখ তোমাদের নৈতিক পরাজয় হয়ে গেছে আগেই , এখন বাকি আছে যুদ্ধের মাঠে পরাজয় "! বাঙ্গালীদের আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থনকারী ও বাবার প্রতি অতিরিক্ত স্নেহপ্রবন এই পাক জেনারেল তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে প্রতি উত্তরে বলেছিলেন " We have well trained powerful army but you peoples have united love for freedom which is more powerful than us !! "
বাবা দেশে ফেরার জন্যে পাগল প্রায় ! ভদ্রলোক আব্বাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন পথে তোমার ভয়ানক বিপদ হতে পারে । তোমাকে লাহোরে DOHS এ প্লট দেয়া হবে , বাড়ি কর লোন এর গ্যারান্টার আমি হব।নাছোড়বান্দা বাবাকে বোঝানোর শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলেন " তুমাহারা চার জোয়ান লাড়কি হ্যায় !" তবুও আব্বার একই জবাব আমার মা বেঁচে আছেন আমাকে যেতেই হবে । পরবর্তীতে আমি উপলব্ধি করেছি এ কথার মর্মার্থ আর তা হল তাঁর মা ও দেশ মাতার প্রতি অগাধ ভালবাসা ও আনুগত্য । অগত্যা তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে "To whom it may cocern " মার্কা একটা চিঠি লিখলেন । এই চিঠি নিয়ে (যাতে পথে কোন বিপদে কাজে লাগান যায় ) PIA flight চালু হলে ঘুরতি পথে সেপ্টেম্বর এ বাবার সপরিবারে অলৌকিক নিরাপদে পরাধীন সোনার বাংলায় ফেরা (তখন ভারতের আকাশ পথ ব্যবহার পাকিস্তানি বিমানের জন্য নিষিদ্ধ ছিল )! বাংগালিদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল এই জেনারেলের পরে কোর্ট মার্শাল হয়েছিল ।
রাতে গ্রামে আমাদের উঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনা প্রনয়ন ও আক্রমন পরিচালনার অন্যতম সংগঠক পরিচালক বাবাকে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নেয়া বা এজন্যে কোন সুবিধা গ্রহন করতে দেখিনি ! মোল্লারহাট থানার চর কুলিয়া বাজারের ঐ যুদ্ধে দুজন পাক সামরিক কর্মকর্তা ও বহু সেনা হতাহত হয়েছিল । সেই সাহসী বীর যোদ্ধাদের একজনের কথা এখনো মনে হয় । ওঁর নাম নওসের । আমার সেজো বোনের ক্লাসমেট । ওকে দেখে গ্রামের ছোটরা ছড়া কাটতো " ডাঁটের বাবূ হাইটে যায় বত্রিশখান জামা গায় আরও একখান কিনতি চায় " এতটাই ধোপ দুরস্ত ছিল যে গ্রামের প্রায় ৮/৯ কিমি পথ হেঁটে গিয়ে সদর থানায় জামা প্যান্ট ইস্ত্রি করে পরত । ধূলি কাদা মাখা ঘামে লেপ্টে থাকা জামা পরা হাতে কালো চকচকে স্টেনগানে সেই নওসেরকে নাকি খুব অচেনা লাগত ! একটা জনযুদ্ধ কিভাবে একজন মুক্তিকামী ব্যক্তি মানুষকে আমুল বদলে দেয় অবাক হয়ে ভাবলাম !
আমিও বাবা একজন রাজকন্যার ! ঘুম থেকে খুব সকালে গাঙ চিল ডাকা ভোরে (এ শহরে কাক দুর্লভ ) সে উঠল আমাকেও জাগালো ! তখনও ভোরের আলো আঁধারির অদ্ভুত খেলা চলছে । তারপর বলল, "চোখ বন্ধ কর বাপিন" । হাতে শক্ত কিছু একটা আমি চোখ বন্ধ করে হাতে শক্ত কিছু অনুভব করলাম। চোখ খুলে দেখলাম তীর আকৃতির এই কার্ডে লেখা " Je t'aime pape " বাপিন আমি তোমাকে ভালবাসি ...সাথে দু গালে উষ্ণ চুম্বন ! এখানে উল্লেখ্য ও ফ্রেঞ্চ স্কুল এ পড়ে , তারপর বাবা দিবসে তুমি কি চাও জানতে চাওয়ায় জানাল তার ছোট্ট সাইকেলে করে আমাকে পৃথিবী পরিভ্রমন করাবে ! বাবার একটা উপদেশ আমি রাজকন্যাকে দেই ‘তুমি যখন কষ্ট পাবে তখন তোমার চেয়ে বেশি কষ্টে যারা আছে তাদের কথা ভাববে তখন তোমার কষ্ট কম লাগবে।“
ওর ছোট্ট কোমল হাত জোড়া ধরে হাঁটবার সময় কোথায় কোন সাইন দেখে কিভাবে হাঁটতে হবে রাস্তায় এ গুলি শেখাতে গিয়ে আমিও ফিরে গেলাম আমার শিশু বেলায় , একই কায়দায় একই বিষয়ে বাবার শিখিয়ে দেয়া শব্দমালায় " সব সময় রাস্তার বাম পাশ দিয়ে হাঁটবে যেখানে ফুটপথ থাকবে না"! মনে পড়লো আদিত্য অনিকের বাবাকে নিয়ে লেখা অসাধারন কবিতাটি :
বাবা তোমার মনে আছে ?
তুমি লুঙ্গি উল্টাভাঁজে কোমরে গেরো দিয়ে
আগে আগে হাঁটতে আমি পেছনে পেছনে
শিস দিয়ে পথ চলতে চলতে হঠাৎ
গেয়ে উঠতে ----
"খাইও না খাইও না বনের বাঘ
খাইও না আমারে । "
আমার বুকটা ধরফর করে উঠতো
কারো বাবাকে তো বাঘে খতে চায় না
তবে আমার বাবাকে চায় কেন ?
বাঘ যদি সত্যি সত্যি আসে তবে তোমাকে
এই ছোট্ট হাতে কেমন করে বাঁচাবো ?
ভয়ে ঝিম ধরে তোমার কোমর খামছে
ধরতাম । মনে মনে শুধু বলতাম
আমার বাবাকে যেন বাঘে না খায় ।
সময়ের বাঘ সেদিন তোমাকে
সত্যি খেয়ে গেল
আমার হাত এখন অনেক বড়
তবু কিছুই করতে পারিনি তোমার জন্য ।
বাবা তুমিতো জানো আমিও তোমার মত,
বাবা হয়েছি
আর অপেক্ষায় আছি-
বাঘ এলেই তোমার কাছে চলে আসব ।
হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনেরা ফিরে আসে না কেবল তাঁদের স্মৃতিরা ফিরে আসে, মালা গাঁথে আনন্দের বেদনার
আমার অভিবাসী দেশ ক্যানাডাতে বাবা দিবস সম্পর্কে গুগুল সার্চ এ যে তথ্য পেলাম পাঠকের জন্য তা হল ঃ
Father's Day in Canada
Quick Facts
Father’s Day celebrates the contribution that fathers and father figures make to their children’s lives.
Local names
Father's Day English, "Fete Des Peres' French
Father's Day 2012
Sunday, June 17, 2012
Many Canadians observe Father’s Day on the third Sunday of June. It is a day for people to show their appreciation for fathers and father figures. Father figures may include stepfathers, fathers-in-law, guardians (eg. foster parents), and family friends.
Father's Day in Canada is a day to remember fathers and father figures. ©iStockphoto.com/Debi Bishop
What do people do?
Many people in Canada celebrate Father’s Day in a variety of ways to express their love and gratitude to fathers or father figures. Father’s Day activities include (but are not limited to):
Participating in Father’s Day fun runs and other events in which the proceeds go towards charity or prostate cancer research.
Buying presents such as neckties and other items of clothing, chocolates, books or equipment for various types of hobbies.
Giving handmade or purchased cards.
Breakfasts, brunches, lunches, or dinners either at home or in restaurants.
Taking fathers or father figures out to the movies, the park, the zoo, or another place of interest.
Some people organize joint Father’s Day parties and activities with close friends and family. Those who live away from their fathers or father figures may make long-distance phone calls, send an email or online card, or arrange for gifts to be delivered on Father’s Day. Some museums and other venues open to the general public may host special Father’s Day celebrations where fathers and father figures can enter free of charge.
Public life
Father’s Day is not a federal public holiday in Canada. It falls on a Sunday, which is a day off for many workers so many offices and stores are closed. However, some shopping precincts and stores, as well as restaurants, cafes and entertainment venues, may be particularly busy on Father’s Day.
Background
There are some suggestions that the idea of Father's Day may originate in pagan sun worship. Some branches of paganism see the sun as the father of the universe. The June solstice occurs around the same time of year as Father's Day so some people saw a link between the two.
The idea of a special day to honor fathers and celebrate fatherhood was introduced from the United States. A woman called Sonora Smart Dodd was inspired by theAmerican Mother's Day celebrations and planned a day to honor fathers early in the 20th century. The first Father's Day was celebrated in Spokane, Washington on June 19, 1910. Father’s Day has become increasingly popular throughout North America and other parts of the world over the years. Mother’s Day is also celebrated in Canada on an annual basis.
Symbols
Images of fathers or father figures, and the words “Happy Father’s Day” are often seen on marketing material, such as posters, postcards, and advertisements, to promote Father’s Day.