'ধর্ষণ' শব্দটা ব্যবহার করার জন্য এই শব্দটাই যথেষ্ট। কোনো 'তনু নাম বা মুখচ্ছবি' বসানোটা অযৌক্তিক। একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, অথচ তার বিভিন্ন সময়ের নানান অ্যাঙ্গেলের ছবি পোস্ট করে সবাই যেন বিচার চাওয়ার নামে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। কিন্তু এই মুখটা তো কোনো অবয়ব তনুর নয়। মুখটা আমার, আপনার পরম আত্মীয়ার।
.
যদিও ধর্ষণের ফার্স্ট মোটিভ জোরপূর্বক সেক্সুয়াল পেনিট্রেশন, কিন্তু কোনো ধর্ষণই শুধুমাত্র সেক্স কেন্দ্রিক হয় না। সাধারণত রেইপ হিস্ট্রিগুলোর পেছনে থাকে মারাত্মক জিঘাংসা এবং বিকৃত মানসিকতা। নইলে শিশু থেকে বৃদ্ধারাও পর্যন্ত ধর্ষণের স্বীকার হবে কেন? জোর করে শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক করে কোনো ধর্ষককে চলে যেতে শুনি না, বরং বিকারগ্রস্তের মত নির্মম নির্যাতন চালায় তারা, ভয়ংকরভাবে হত্যা করে, এমনকি মৃত শরীরকেও পাশবিকভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে। কারণ শুধুমাত্র দুর্বার শারীরিক আকর্ষণে ধর্ষক ধর্ষণে লিপ্ত হয় না, মূল হেতুই থাকে তার ঘৃণ্য মানসিকতা। আর তাই নারীর পোশাক, চালচলন, পরিস্থিতি কোনো কিছু ম্যাটার করে না। ধর্ষণের মানসিকতা থেকেই ধর্ষণ হয়। কেনো হল, কিভাবে হল সেটার বর্ণনার চেয়ে জরুরি হচ্ছে একটি আরও 'ধর্ষণ' হয়েছে। আমি যে কোনো ধর্ষণের বিবরণ শুনলেই আতকে উঠি, তাৎক্ষণিক ভাবে নিজেকে সেখানে চিন্তা করে ভীষণভাবে আহত হই এবং অসহায় বোধ করি। বিচার না পাওয়া অসহায় বাবা মার মুখে আমার বাবা-মার ছায়া দেখি। বিকৃত মস্তিষ্কের ধর্ষকটিকে নেকড়ের মত হিংস্রবেগে এগিয়ে আসতে দেখি। আর নিজেকে দেখি ক্ষত-বিক্ষতরূপে।
.
এখন মনে হয় ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে কখনো কখনো আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে হয়।
আগে বর্গী, চাখার বলে কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী ছিল। এরা নির্বিচারে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ চালিয়ে যেত। এদেরকে কোনো আইন দিয়ে নির্মুল করা যায় নি। সাধারণে মিলে একযোগে চোখ উপড়ে, পিটিয়ে, ঝেটিয়ে দেশছাড়া করেছিল। সেভাবেই ধর্ষক নিধন করতে হবে। আমাদের আশেপাশেই ঘাপটি মেরে রয়েছে এরা, আমাদের মধ্যে থেকেই কেউ জানি ওই নরকের কীটের খবর। তাই যা করার নিজেদেরই করতে হবে, রুখে দাড়াতে হবে সকলে মিলে। কেউ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসবে না। ক্যান্টনমেন্টের মত একটি রেস্ট্রিকটেড এরিয়ায় কি নির্বিঘ্নে রেইপ, অতঃপর খুন করে চলে গেল ভাবতেই অবাক লাগে। কোনো সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী এগিয়ে আসবে না এদের ধরিয়ে দিতে, শাস্তির ব্যবস্থা করতে, সে জানা কথা। উল্টো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দিবে অবলীলায়। এই যে বলছেন "উই ওয়ান্ট জাসটিস"! একবার বলুন তো বিচার কার কাছে চাচ্ছেন? যদি রাষ্ট্রের সেই বিচার ক্ষমতা থাকতোই তবে আরও একটি ধর্ষণ খবর শুনতে হত কি? ধর্ষকের ফাঁসি কিংবা জেল কোনো শাস্তি হতে পারে না। ধর্ষকের নির্মমতার শাস্তি সর্বোচ্চ নির্মম হওয়া চাই। যেই পুংলাঠির জোর দেখিয়ে নারী নির্যাতন করছে এরা, ধরে ধরে ওদের ওই লাঠিগুলো ভেঙে, চোখ দুটো খেজুর কাটা দিয়ে গেলে দিলে কিংবা খোজা বানিয়ে দিলে বোধ হয় ভিকটিম নারী সামান্য স্বস্তি পেত।
.
আমরা এখন সবজান্তা। সবাই ই কিন্তু জানছি ক্রাইমগুলো সম্পর্কে। শুধু লেখালেখি করে আর কত? ধর্ষকরা নিশ্চয়ই আপনার আমার লেখা পড়ে সচেতন হবার জন্য বসে নেই। এখন সময় এসেছে এক হয়ে ময়দানে দাড়াবার। যেই দেশে দুই কুড়ি বছর পরেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, সেই স্বাধীন দেশে বেজন্মা ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা হবে না, তারা আইনের ফাক গলে বেরিয়ে যাবে - এ কথা মানতে কষ্ট হয়।
হয়তো আগামীকাল সেই মেয়েটির জায়গায় আমি পড়ে থাকবো। ধর্ষক পাশবিক আনন্দ নিয়ে সিগ্রেট টানবে এই আমার নধর দেহের পাশে। আমার লাশ গলে যাবে, ওদের শাস্তি হবে না। দায়ী থাকবেন আপনারা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:০৭