১৩১২ সালে সিংহাসনে বসা মধ্য আফ্রিকার মালির ( বর্তমান বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে একটি) মুসলিম সম্রাট মাসনা মুসাই হল পৃথিবীর সর্বকালের সবচাইতে সেরা ধনী। ধারনা করা হয় তিনি সেই সময় পৃথিবীর মোট সম্পত্তির অর্ধেক পরিমান সম্মত্তির মালিক ছিলেন। ১৩২৪ সালে ৬০,০০০ অনুসারী, ১২,০০০ দাশ এবং প্রচুর পরিমানে সোনা নিয়ে মক্কায় হজের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে তিনি মিশরের কায়রোতে যাত্রা বিরতি করেন। তখন সেখানে সোনার পরিমান এত বেশী হয়েছিল যে, লবণের দাম আর সোনার দাম সমান হয়ে যায়। পুরো মিশরের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়। তার এই ধনসম্পদের গল্প যুগের পর যুগ ধরে আরব দেশ গুলোতে প্রচলিত ছিল।
২) রথচাইল্ড বা রথশিল্ড পরিবার ::
সম্ভবত এরাই বর্তমান পৃথিবীতে সবচাইতে রহস্যময় এবং ধনী পরিবার। গত কয়েকশত বছর যাবত বহু কন্সপিরেসী থিউরী চালু আছে এদের নিয়ে। জার্মান ইহুদী জোসেফ রথশিল্ড ( বা রথচাইল্ড ) 1740 সালে একটি ব্যাংকি সাম্রাজ্য চালু করে। তার মৃত্যুর পর তার চার ছেলে তা পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে দেন। যা আজ্ও অত্যন্ত সাফ্যলের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। পুরো ইউরোপের ব্যাংকিং ও রিয়েল এস্টেস ব্যবস্থা মুলত এরাই নিওন্ত্রন করে। ধারনা করা হয় এদের মোট সম্মত্তির পরিমান ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। তবে অনেকের ধারনা এদের বর্তমান সম্মত্তি ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশী হবে।
৩) জন ডি, রকফেলার ::
প্রথম জীবনে খুবই দরিদ্রের মধ্যে বড় হওয়া জন ডি, রকফেলার মৃত্যুর পূর্বে আমেরিকার সর্বকালের সবচাইতে সেরা ধনী ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল কোম্পানি আমেরিকার সবচাইতে বড় তেল কোম্পানি ছিল। তিনি একবার কর্নেলিয়াস ভানডার্বিল্টের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য ট্রেনে করে নিউইর্য়কে যাবার জন্য রওনা দেন। কিন্তু তিনি স্টেশনে পৌছার পূর্বেই ট্রেন চলে যায় এবং পথে সেই ট্রেন দূর্ঘটনায় সব যাত্রী মারা যায়। এই ঘটনার পর মনে করেন ঈশ্বর তাকে দ্বারা বিশেষ কিছু করার জন্যই বাচিয়ে রেখেছেন। যা তিনি পরে করেও দেখিয়েছেন। তিনি মৃত্যুর পূর্বে ৩১০ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তি রেখে যান। তার বংশধরেরা এখন তার ব্যবসা ধরে রেখেছেন। তাদের বর্তমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হল জন ডি, রকফেলার ফাউন্ডেশন, যা বর্তমানে সিনেটর জন ডি, রকফেলার (৪র্থ) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তার সম্পর্কে একটি গল্প আছে যা অনেকটা এই রকম যে, ছোট বেলায় তার খুব মুরগী পোষার শখ ছিল, তাই পরে তিনি ২০০০ একর জমির উপর একটি মুরগীর খামার করে তার শৈশবের কথা মনে করতেন।
৪) জে, পি, মরগান ::
ব্যাংকার বাবার বিশাল সম্পত্তির যোগ্য উত্তরাধীকারী জে, পি, মরগান, তার সময়ে আমেরিকার সবচাইতে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর আমেরিকা মহা মন্দায় তার অবদানকে আজও অনেক শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করা হয়। তিনি তখন আমেরিকার সরকার ১০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য করে সরকারকে দেউলিয়ার হাত থেকে বাচান। শুধু তাই নয়, সেই সময় বহু ছোট বড় কোম্পানিকে তিনি সাহায্য করেন। টমাস আলভা এডিসনের সাথে প্রতিষ্ঠিত জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি সেই সময় আমেরিকার সব চাইতে বড় বিদ্যুত কোম্পানি ছিল।
৫) এ্যন্ডু কার্ণেগী ::
জন ডি, রকফেলারের মত এ্যন্ডু কার্ণেগীও শৈশবে খুবই দারিদ্রের মধ্যে বড় হয়েছেন। তার সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, ছোটবেলায় একবার তিনি একটি পার্কের ভেতর ঢুকতে চাইলে পার্কের দারোয়ান তাকে ভেতরে ঢ়ুকতে দেয়নি তার জামাকাপড় নোংরা বলে। তখন বালক কার্ণেগী দারোয়ানকে বলে যে, সে এই পার্ক কিনেই পার্কের ভেতরে ঢুকবে। পরে ঠিকই তিনি ওই পার্ক কিনেই পার্কের ভেতরে ঢোকেন। তিনি তার সময়ে আমেরিকার সবচাইতে বড় স্টীল কোম্পানির মালিক ছিলেন। ১৯০২ সালে তিনি ৪০০ মিলিয়ন ডলারে তার স্টীল কোম্পানি জে, পি, মরগানের কাছে বিক্রি করে দেন যার বর্তমান বাজার মুল্য ৩১০ বিলিয়ন ডলার।
৬) জার নিকোলাস (২য়) ::
রাসিয়ার শেষ সম্রাট জার নিকোলাস (২য়) এর মোট সম্পত্তির পরিমান ছিল ৩০০ বিলিয়ন ডলার, অথচ তার সময়ে প্রজারা সীমাহীন দারিদ্রের মধ্যে জীবনযাপন করছিল, যার ফলে প্রজারা বিদ্রোহ করে এবং পৃথিবী প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠন করে।
৭) ওসমান আলী খান ::
হায়দারাবাদের শেষ স্বাথীন নিযাম ওসমান আলী খান ছিলেন তার সময়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ধনী। তার সম্পর্কে এরকম কথা প্রচলিত আছে যে, তিনি জীবনে কোনদিন কোন পোষাক দ্বিতীয়বার পরেননি। তার হারেমে ১০০ জন রক্ষিতা থাকত। তার মোট সম্পদের পরিমান ছিল ২৩৬ বিলিয়ন ডলার।
[ হায়দারাবাদের নিযামরা সবসময়ই ইংরেজদের সহযোগীতা করত, বিশেষত সিপাহী বিদ্রোহে তারা ইংরেজদের সব ধরনের সহযোগিতা করে ]
৮) উইলিয়াম দ্যা কনকোরার ::
উইলিয়াম দ্যা কনকোরার (১০২৪-১০৮৭) সর্বপ্রথম সমগ্র ইংল্যান্ড শাসন করেন। তার আরেকটি নাম ছিল উইলিয়াম দ্যা বাস্টার্ড। তার মোট সম্পদের পরিমান ছিল ২২৯ বিলিয়ন ডলার।
৯) মুহাম্মদ গাদ্দাফী ::
আফ্রিকার শেষ সিংহ পুরুষ মুহাম্মদ গাদ্দাফীর মোট সম্পদের পরিমান ছিল ২০০ বিলিয়ন ডলার। তার মৃত্যুর পরে বিভিন্ন দেশে গোপনে জমাকৃত অর্থের হিসাব মতে এই পরিমান আরো বেশী হওয়ার কথা। ধারনা করা হয় আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবীয়ার উপর অবোরোধ আরোপ করলেও তিনি তার অবৈধ বিনিয়োগ দিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছিলেন।
১০) হেনরী ফোর্ড ::
ফোর্ড মটর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হেনরী ফোর্ডের মোট সম্পত্তির পরিমান ছিল ১৭৮ বিলিয়ন ডলার। মুলত তার কারনে জনসাধারনের সাধ্যের মধ্যে মটর গাড়ী চলে আসে। তিনিই প্রথম V8 ইন্জিনের মটর গাড়ী তৈরী করেন যা মটর গাড়ী শিল্পে বিল্পব আনে।
আমার মনে হয় এই লিষ্টটি সম্পূর্ণ নয়। এটি মূলত করা হয়েছে নানা কিংবদন্তী আর ঐতিহাসিক ভাবে প্রকাশিত এবং প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে। যদি সঠিক ভাবে গবেষণা করা হয় তাহলে এই ধনীদের অধিকাংশই লিষ্টে জায়গা হবে না।
আমার মনে হয় এই লিষ্টে আরো অনেকের নাম আসা উচিত ছিল। যেমন::
১) ইংল্যান্ডের রাজপরিবার, যারা ১৫ শতক খেকে এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা থেকে যে সম্পদ লুট করেছে তার কি হিসাব এখানে আনা হয়েছে।
২) স্পেনীয় বা পর্তুগীজ রাজপরিবার যারা শত শত বছর যাবত ল্যাটিন আমেরিকা যে শোষন করেছে তার কি কোন হিসাব আছে।
৩) সুলতান মাহমুদ ১৭ বার ভারত লুস্ঠনের কি কোন হিসাব ধরা হয়েছে।
এই রকম বললে শেষ হবে না ।
আর বর্তমান বিশ্বের সেরা ধনীরা কি আসলেই সেরা ধনী। আমার কিছু নিজস্ব মতামত আছে। যেমন::
১) প্রতিবছর বোয়িং, লকহিড মর্টিন সহ আরো নামী দামী অস্ত্র কোম্পানি গুলো যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করে তাদের শেয়ার হোল্ডার কারা?
২) এক্সন মবিল, বিপি, শেভরন সহ বিভিন্ন তেল কোম্পানি গুলো আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের তেল ব্যবসায় যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করে তাদের মালিকেরা কোথায়?
৩) এইচ, এস, বি, সি , সিটি ব্যাংক যে প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের নিট মুনাফা করে সেগুলোর মালিক কারা।
৪) আর কোকেন, হেরোইন, গাজার যে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা তার মালিকেরা কোথায় ?
এই সব যদি হিসাব করা হয় তাহলে হয়ত বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেটরা লজ্জায় মুখ লুকাবে।