‘নাস্তিক’ ব্লগারদের শাস্তি দাবিতে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের একদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রতিনিধি দলটি।
‘বাংলাদেশ খাদেমুল ইসলাম জামাতের’ ব্যানারে এই আলেমরা সাতটি দাবি তুলে ধরলে তার অধিকাংশই পূরণের আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা।
হেফাজতকে লংমার্চ করতে দিতে প্রতিনিধি দলটি আহ্বান জানালে ওই কর্মসূচিতে জামায়াতি নাশকতার আশঙ্কার কথা জানিয়ে সে বিষয়ে আলেমদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
গণজাগরণবিরোধী হেফাজতের লংমার্চ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিসহ ২৫টি সংগঠন; যাতে বামপন্থী দলগুলো সমর্থন দিয়েছে।
ইসলামী কয়েকটি দলও ‘জামায়াতঘনিষ্ঠ’ হেফাজতের লংমার্চ কর্মসূচির বিরোধিতা করেছে।
যে কারো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের অধিকার থাকার কথা স্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “কিন্তু, আমার ভয় এই সুযোগে কোনো অপকর্মকারী ঢুকে কোনো অপকর্ম না ঘটায়।”
হেফাজতের এই কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী ঢুকে নাশকতা চালাতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে এই কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়, তবে তাতে সাড়া মেলেনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই খাদেমুল ইসলাম জামাতের পক্ষ থেকে সাতটি দাবি তুলে ধরা হয়।
তাদের প্রথম দাবি হল- মহানবী (স.) কে কটূক্তিকারী বাকি ব্লগারদের গ্রেপ্তার ও ধর্ম ‘অবমাননাকারী’ ব্লগ, ফেইসবুক পাতা, ওয়েবসাইট বন্ধ করা।
সংসদের আগামী অধিবেশনে মহানবীর (স.) মর্যাদা সংরক্ষণ আইন পাসের দাবিও জানায় তারা।
অন্য দাবিগুলো হল- দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, আলেম-উলামা ও ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার; কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি প্রদান; জামায়াতের আদর্শিক গুরু আবুল আলা মওদুদীর সব পুস্তক বাজেয়াপ্ত; আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণাসহ তাদের জন্য আলাদা কবরস্থানের ব্যবস্থা করা; পাঠ্যবইয়ের আপত্তিকর বিষয়গুলো বাতিল এবং ভুল সংশোধন করে নতুন বই প্রকাশ।
শেখ হাসিনা দাবি শুনে আলেমদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের সংগঠন- আওয়ামী লীগ, আমরা ইসলামের জন্য কাজ করি। কিন্তু, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বেশি।”
রেসকোর্স বন্ধ, ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব ইজতেমার স্থান নির্ধারণসহ স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ধর্মের উন্নয়নে কাজ করে। আমরা ধর্মকে রাজনীতি হিসাবে ব্যবহার করি না।”
মহানবী (স.) কে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এবং হজরত মুহাম্মদ (স.) কে কটূক্তি করা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। এজন্য, আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি।
“আমাদের ওপর এইটুকু ভরসা রাখতে পারেন। আমরা এখানে থাকতে এগুলো বরদাশত করব না।”
হেফাজত দাবি তোলার পর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে চার ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা মৌলবাদীদের কাছে সরকারের ‘নতি স্বীকার’ হিসেবে দেখছে শাহবাগের আন্দোলনকারীরা।
মহানবী (স.) এর মর্যাদা সংরক্ষণে আইনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৬ থেকে ৬৬ ধারায়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় এবং দণ্ডবিধির ২৯৫, ২৯৫(ক), ২৯৬, ২৯৭, ২৯৮ ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে যারা আঘাত দেবে- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
কওমী মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির জন্য কারিকুলাম ঠিক করতে হবে।
“কমিশন গঠন হয়েছে। রিপোর্ট দিয়ে দেবে। নিশ্চিত করে বলতে পারেন- আমরা দিয়ে দেব।”
মওদুদীর পুস্তক নিষিদ্ধ করার বিষয়েও একমত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পাঠ্যবইয়ের আপত্তিকর বিষয়গুলো বাতিল এবং ভুল সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, “ভুল সংশোধন হবে এবং তা স্কুলে পৌঁছে দেয়া হবে।”
তবে আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেননি।
এই বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, এই সংক্রান্ত একটি মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। তাই মামলা চলাকালীন নির্বাহী আদেশে কিছু করা সম্ভবপর নয়।
সভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন খাদেমুল ইসলাম জামাতের আমির মুফতি রুহুল আমিন।
তার লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম যে সব কর্মসূচি দিয়েছে, তা সঠিকভাবে পালন করতে দেয়া দরকার। এই কর্মসূচির বিপরীতে অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে।
সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরামসহ হরতাল আহ্বানকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে রুহুল আমীন বলেন, “আপনারা দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবেন না। তাহলে, জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।”
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ও পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ।