১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রমত্তা পদ্মাতীরে গড়ে উঠেছিল রাজশাহী শহরটি। রাজশাহী জেলা শহরের মর্যাদা পাবার আগে রানীভবানীর স্মৃতি বিজড়িত নাটোরই ছিল সদর। এরপরে অনেক শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, সমিতি, সংগ্রহশালা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়- এসব এখন রাজশাহী শহরের গৌরবময় অতীতের সাক্ষ্য। এখন রাজশাহীর অনেক কিছুই নেই, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে কান্তকবি রজনীকান্তের বাসভবন, সিরাজদ্দৌলা গ্রন্থখ্যাত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়র বাড়ি, ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের স্মৃতি বিজড়িত বাসভবন। এতসব ভেন্ডালিজমের পরেও যে কীর্তি গুলো এখনও টিকে আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো তার মধ্যে অন্যতম হলো দিঘাপতিয়ার জমিদার, যা এখন উত্তরা গন ভবন নামে পরিচিত।
নাটোর রাজবংশের দেওয়ান দয়রাম রায় ১৮০২ সালে এই প্রসাদ নির্মাণ করেন। ৪০ একর জমির উপর নির্মিত প্রসাদের বর্তমান ভবন গুলো নির্মিত হয়েছে ১৮৬৭ সালে।
১৯৪৭ সালে রাজ পরিবার ভারতে চলে গেলে দীর্ঘদিন এটি অরক্ষিত ছিল। পরে দিঘাপতিয়ার মহারাজাদের এই বাসস্থানকে ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর আব্দুল মোনায়েম খাঁন "দিঘাপতিয়ার গভর্ণরের বাসভবন" হিসেবে উদ্বোধন করেন।বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটিকে উত্তরা গনভবন হিসাবে ঘোষণা দেন।
১৯৮৯ সালে উত্তরা গনভবনের "কুমার প্যালেসটি" মোটেল হিসাবে ব্যবহারের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনকে দেয়া হয়েছিল । এখন আর নেই আফসুস...........
রাজধানীর বাইরে উত্তরা গনভবন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে।
সমগ্রা প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি ৪১ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এর চারপাশে আছে পরিখা ও উঁচু প্রাচীর।
প্রাসাদের পূর্বপাশে পিরামিড আকৃতির চারতলা প্রবেশদ্বার রয়েছে যার উপরে একটি ঘড়িও রয়েছে।
দিঘাপতিয়ার জমিদার বাড়িটির বাইরের রূপতো অনেক দেখা হলো, আসুন এবার দেখে নেই প্রাসাদের ভেতর কি আছে............
খালি টেবিলের সামনে দাড়িয়ে হতাশ আমার ক'জন......
রাজকীয় আয়নাতেও কিন্তু চেহারা একই রকম থাকে
বিছানাটা তেমন জাঁকালো না কিন্তু......
কত না প্রেমময় পত্র লেখার সাক্ষী এই টেবিল....
বসার ঘরের বর্তামন ডেকোরেশন....
এটা আমার খবু পছন্দ হয়েছিল, ইচ্ছা করছিল চুরি করে নিয়ে যাই
মধ্যযুগীয় বাংলাদেশের অন্যান্য প্রাসাদের মতোই নাটোরের রাজবাড়ীতেও রয়েছে দীর্ঘ প্রবেশ পথ। রাস্তার যার দু পাশে পামের গাছের সারি।
প্রাসাদের পিছন দিকে রয়েছে ফোয়ারা সহ একটি সুদৃশ্য বাগান। ফোয়ারা ছাড়াও বাগানে মার্বেল পাথরের তৈরি নারী মূর্তি আছে।
এই মূর্তি গুলোর সাথে ঢাকার রোজ গার্ডেনের মূর্তি গুলোর সাথে অনেক মিল!!
প্রসাদ চত্বরে একটি বেশ বড় পুকুর আছে। এরপাশেই এখনও বেশ ভাল অবস্থায় ছোট ছোট দুটো আরও দুটো প্রাসাদ আছে। এর মধ্যে ডেকার রীতিতে তৈরি এই চমৎকার ভবনটা জেলা জজের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
চারিদিকে সুউচ্চ প্রাচীর ও পরীখা ঘেরা মাঝখানে রাজপ্রাসাদ প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অপূর্ব নিদর্শন। রাজ প্রসাদের ভিতরে মার্বেল সাদা পাথরের মূর্তি, কামান, ঘড়ি আজও যেন জীবন্ত ইতিহাস।
দর্শনার্থিদের জন্য বিশেষ দ্রস্টব্য: বর্তমানেএই বাড়িটি দেখতে চাইলে আগে থেকে জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:১৪