সুন্দরের উপমা দিতে গিয়ে বাংলা ভাষায় যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়, সেটি নি:সন্দেহে 'তিলোত্তমা'।
তবে তিলোত্তমা কি সব সময়েই আসলেই সত্যিকরের রূপসী ছিলেন?
সাহিত্যিক উপাদান কিন্তু সেকথা বলে না!
পদ্মপূরাণ অনুসারে তিলোত্তমার আসল নাম ছিল কুবজা। বিধবা কুবজা দেখতে খুবই কুৎসিত ছিলেন। সুন্দর হবার জন্য কুবজা আট বছর কঠোর তপস্যা এবং মাঘ পুজা করেণ। এর ফলে তিনি পরে সুন্দরী তিলোত্তমা রূপে জন্ম গ্রহণ করেন।
তিলোত্তমার পরবর্তী জীবনের কথা জানা যায় ব্রক্ষ্ম বৈর্বত পূরাণ থেকে।
অনেক অনেক কাল আগের দৈত্যরাজ নিকুম্ভের দুই ছেলে ছিল, তাদের নাম সুন্দ আর উপসুন্দ। ও আচ্ছা, এই দৈত্য কিন্তু বড় বড় দাঁত লম্বা লম্বা হাত পা'ওয়ালা ভুত 'দৈত্য' নয়। কশ্যপ আর দক্ষরাজ কন্যা দিতির গর্ভজাত বংশধররাই দৈত্য নামে পরিচিত। দেবতাদের সাথে এদের বিরোধ ও যুদ্ধ চিরন্তন, এদের প্রধান কাজই ছিল দেবতাদের যঙ্গ আর পুজা নষ্ট করা।
যাক সে কথা, এই সুন্দ আর উপসুন্দ ত্রিলোক (পৃথিবী, স্বর্গ আর পাতাল) বিজয়ের জন্য অমরত্ব চেয়ে বিন্ধ্য পর্বতে গিয়ে ব্রক্ষ্মার কঠোর তপস্যা শুরু করেন। তাদের তপস্যায় ব্রক্ষ্মার কিছুটা মন গললেও তিনি তাদের পুরো অমরত্ব দিতে রাজি হননি। তবে তিনি এই বর দেন যে, স্হাবর জঙ্গম কোন প্রাণিই তাদের মারতে পারবে না। আর যদিওবা কখনো তাদের মৃত্যু হয় তবে তা শুধু পরস্পরের হাতেই হবে।
এই বর পেয়েতো সুন্দ উপসুন্দের পোয়াবারো, তারা বিপুল উৎসাহে দেবতা, যক্ষ, মানুষদের উপর অত্যাচার শুরু করে দেয়।
তখন সবাই প্রাণ রক্ষার জন্য ব্রক্ষ্মার কাছে এর একটা সমাধান প্রার্থনা করেন। ব্রক্ষ্মা তখন এদের মারার জন্য বিশ্বকর্মাকে এক পরমাসুন্দরী নারী সৃষ্টি করতে বলেন।
বিশ্বকর্মা ত্রিভুবনের সব ভাল জিনিস তিলে তিলে সংগ্রহ করে অতুলনীয় নারী সৃষ্টি করেন। তিলে তিলে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এই জন্য ব্রক্ষ্মা তার নাম রাখেন তিলোত্তমা।
এখানে একটা কথা না বললেই নয়, পৌরণিক সাহিত্যগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সব সময় কঠিন শত্রু দমনে জন্য দেবতারা নারী শক্তির আশ্রয় নিয়েছে, যেমন মহিষাসুর দমনের জন্য দূর্গা।
সৃষ্টির পরে তিলোত্তমা দেবতাদের চারপাশে ঘুরতে শুরু করেন। তার রূপে দেবতার মোহবিষ্ট হয়ে পরে।
ঘুরতে ঘুরতে তিলোত্তমা যেদিকেই যান, তাকে দেখবার জন্য সেদিক থেকেই ব্রক্ষার একটা করে মুখ তৈরি হয়। এভাবে তিলোত্তমার অতুলনীয় রূপ দেখার জন্য ব্রক্ষ্মার চারদিকে চারটি মুখ আর ইন্দ্রের সহস্র চোখের সৃষ্টি হয়, যার করণে তার নামই হয়ে যায় সহস্র লোচন। শিব তাকে দেখে নড়াচড়া করতে ভুলে যায় বলে তার নাম হয় স্থানু।
তিলোত্তমাকে দেখে ব্রক্ষ্মা আর শিবের ভ্যাবাচেকা অবস্থা.....
দেখা যাচ্ছে দেবতারও মানবিক গুনাবলীর উর্ধ্বে ছিলেন না, নারীর রূপ এদেরকেও টলাতো
এরপর দেবতারা সুন্দ আর উপসুন্দকে প্রলুব্ধ করার জন্য তিলোত্তমাকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেন।
তিলোত্তমা তাদের সামনে গিয়ে এমন নাচ শুরু করেন যে,তার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে পাবার জন্যে দুই ভাই পরস্পরের সাথে যুদ্ধ আরম্ভ করে। মারামারি করতে করতে এক সময়ে একে অন্যকে মেরে ফেলে। দেবতাদের ছলনা আর কুচক্রের কারণে এভাবেই সমাপ্তি ঘটে সুন্দ উপসুন্দ কাহিনীর।
এর কিছুকাল পরে তিলোত্তমা দৈত্য রাজা বলির (ইনি প্রহলাদের নাতি)পুত্র সাহসিকের সাথে খেলায় মত্ত হয়ে ঋষি দুর্বাসার ধ্যান ভঙ্গ করে ফেলেন।
তখন দুর্বাসা তার স্বভাব মতোন রেগে গিয়ে সাহসিকে গাধা বানিয়ে ফেলেন আর তিলোত্তমাকে অভিশাপ দেয় যে তার এরপরে মানুষ জন্ম হবে (এখানেও পক্ষপাতিত্ব)। এই শাপের কারণে তিলোত্তমা পরের জন্মে বাণের কণ্যা উষা রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
সেটা আবার এক অন্য ইতিহাস............
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:১৪