মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদার বাড়ির পাশাপাশি আরেকটি খুব চমৎকার স্থাপত্য কমপ্লেক্স আছে যার নাম তেওতা জমিদার বাড়ি।
বালিয়াটির মত এত বিশাল না হলেও এর স্থাপত্যিক কাঠমো আর সৌন্দর্য কিছু কম নয়।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার এই জমিদার বাড়িটি বাবু হেমশংকর রায় চৌধুরী, বাবু জয় শংকর রায় চৌধুরী, দুই ভাইয়ের নিজ বসতবাড়ী ছিল। এখান থেকেই তারা জমিদারি পরিচালনা করতেন। মুল বাড়িতে ৫৫ টি ঘর ছিল, এর বেশির ভাগই বর্তমানে ছিন্নমুল মানুষরা দখল করে ফেলেছে।
যদিও এটা প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত স্থাপনা, তবে কারো এ দিকে কোন নজর আছে বলে মনে হয় না।
এই বাড়ির বেশ কয়েকটা সিড়ি আছে যা, দিয়ে ছাদে ওঠা যায় এখনও।
প্রতিটি বাড়ির ছাদ এত কাছাকাছি যে, ইচ্ছা করলেই একটা থেকে আরেক টা তে যাওয়া যায়। ছাদের উপর থেকে পুরো বাড়িটা দেখা যায়, এক কথায় দারুন।
তবে ছাদে ওঠা আর হাটার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে, কারণ ফ্লোরে মাঝে মাঝে গর্ত হয়ে গেছে।
এই বাড়িতে সেই সময়ের দুটো পুকুর ছিল, এর একটি এখন মজে গেছে।
আরেক টি রয়েছে মন্দিরের পাশেই।
বাড়িরই মধ্যে ছিল দুটি মন্দির আর একটি মঠ।
এই চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর নবরত্ন মন্দিরটি এখনও বেশ ভাল আছে।
তবে ভেতরটা ভয়াবহ রকমের নোংরা......
এই মন্দিরটা কিসের মন্দির জানি না, ফেরার পথে দেখছিলাম
তেওতা জমিদারি নিয়ে এলাকায় কিছু উপকথা প্রচলিত আছে।
উপকাথা অনুযায়ি, তেওতা গ্রামের পাঁচু সেনেরবাল্য বয়সে তার পিতৃহারা হন। বিধবা মা এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে অনেক কষ্টে পাঁচুকে বড় করেন। একদিন পাচু মায়ের কাছে মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার বায়না ধরে। তাই একদিন গ্রামেরই এক জেলের কাছ থেকে বাকিতে দুই পয়সার পুঁটি মাছ কেনেন মা। দুপুরে জেলে যখন বাড়ি যাবে তখন পয়সা দেবেন। দুপুরে মাছ রান্না করে পাঁচুকে ভাত বেড়ে দিয়েছেন মা, ঠিক তখনই জেলে বাড়িতে হাজির পয়সা নিতে। কিন্তু মায়ের তখনো পয়সা জোগাড় হয়নি। বদমাইশ জেলে তখন রান্না করা মাছই তুলে নিয়ে যায়। ক্ষোভে-দুঃখে পাঁচু ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। যমুনা পার হয়ে হাজির হয় গোয়ালন্দ ঘাটে। সেখানে এক মাড়োয়ারির কাছে কাজ শুরু করে।তারপর নিজ বুদ্ধি আর পরিশ্রমে একসময় পাঁচু নিজেই ব্যবসা শুরু করে। এরপর টাকা-পয়সার মালিক হয়ে তেওতায় মায়ের কাছে ফিরে আসে। আশে পাশের দশ গ্রামের বেশির ভাগ জমিই কিনে নেয় মায়ের জন্য। পাঁচুর পরবর্তী বংশধররাই তেওতা জমিদারি প্রতিষ্ঠা করে।
সিনেমাটিক তাই না?
যেভাবে যেতে হবে: ঢাকা থেকে অরিচাগামি যেকোন বাসে উঠে শিবালায় নেম যেতে হবে অথাবা মানিকগঞ্জ থেকে বাস করে শিবালয় যেতে হবে। এরপর সেখান থেকে টেম্পু /রিক্সাযোগে যাওয়া যায়।
আর নিজেরা গাড়ি নিয়ে গেলে শিবালয়ে পৌছে সোজা ডানের রাস্তা ধরতে হবে।
এবং যারা হেলিকাপ্টার বা সিপ্লেনে যেতে চাইছেন, তার ইচ্ছা করেল নবরত্ন মন্দিরের পাশের পুকুরটিতে ল্যান্ড করতে পারবেন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:২১